রসায়ন গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে ‘কেমফিউশন’

রসায়ন গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে ‘কেমফিউশন’
  1. একটা সময় পৃথিবীতে তারাই রাজত্ব করেছে যাদের জাগতিক সম্পদ ছিলো,বিশাল সেনাদল ছিলো। একবিংশ শতাব্দীর দুনিয়া ঠিক তার বিপরীত। আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক পৃথিবীতে তারাই সেরা যাদের রয়েছে মেধাশক্তি, মৌলিক গবেষণা আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা। গবেষণার প্রেষণার উপর ভর করেই ছোট্ট সিংগাপুর বা অনুর্বর সুইডেন আজ স্বপ্নের গন্তব্যে। গবেষণার নেশা মানবসভ্যতাকে পৌঁছে দিয়েছে ভূপৃষ্ঠ পেরিয়ে সুদূর মহাকাশে।

    বিজ্ঞানের মৌলিক শাখাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রসায়ন৷ বিশ্বজগত সৃষ্টির শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষ এবং তার পারিপার্শ্বিক সকল কিছুর কারণ এবং ব্যাখ্যার সাথে রসায়ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।তবে দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে রসায়ন চর্চা এখনো যথাযথ প্রসার লাভ করেনি। এই পিছিয়ে পড়ার গল্প থেকেই তারুণ্যের হাত ধরে নতুন গল্পের শুরু।এক ঝাঁক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের হাত ধরে জন্ম নেয় রসায়নভিত্তিক ছোট্ট এক সংগঠন ‘কেমফিউশন’।

    কেমফিউশনের মূল লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয় এ রসায়ন পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করে তোলা। একজন আদর্শ রসায়নবিদ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা। এছাড়াও স্কুল কলেজে রসায়নের প্রায়োগিক দিকসমূহ তুলে ধরা। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে রসায়নের সৌন্দর্য তুলে ধরা।

    কেমফিউশন বিশ্বাস করে দূষণমুক্ত দেশ গঠনে রসায়ন সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়াও রাসায়নিক বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

    কেমফিউশন বৈজ্ঞানিক সংগঠনের আদলে গঠিত। তাদের আছে রিসার্চ এন্ড পাবলিকেশন , ইনোভেশন এন্ড সায়েন্টিফিক প্রজেক্ট ম্যানেজম্যান্ট টিম, ওয়েবসাইট এন্ড ব্লগসহ আরো চারটি টিম। এইসব টিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশে রসায়নের উৎকর্ষের জন্য।

    অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বিজ্ঞান,‌ রসায়ন, রাসায়নিক প্রকৌশল এর বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সংগঠনটি। ক্ষুদ্র পথচলায় এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের প্রথম রসায়নভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট www.chemfusion.net ।রসায়নের নানাবিধ বিষয়কে বাংলায় সহজ-সাবলীলভাবে তুলে ধরতে,রসায়নের নতুন গবেষণা সম্পর্কে ধারণা দিতে, সেই সাথে রসায়নকে আকর্ষণীয় করতে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে এই ওয়েবসাইট।

    পাশাপাশি ‘কেমফিউশন ‘ এর আরেকটি অর্জন হলো তাদের ম্যাগাজিন। সেপ্টেম্বর এ প্রকাশিত হয়েছে তাদের প্রথম ম্যাগাজিন ‘হাইড্রোজেন’ যা ইতোমধ্যে ৫৫০০ কপির বেশি ডাউনলোড হয়েছে।এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সর্বদা সচেষ্ট এই সংগঠন। Journey of a chemist নামক অনলাইন সেমিনারে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন, ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল এর সফল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তরুণদের যথাযথ দিক নির্দেশনা প্রদান এবং আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।এটি দেশে মৌলিক গবেষণায় আগ্রহী প্রজন্ম গড়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।একটি দেশ এগিয়ে যায় গবেষণায়।তাই নতুন প্রজন্মের সামনে গবেষণার প্রেষণা তুলে ধরার এ প্রচেষ্টা বাহবা অর্জন করেছে শিক্ষানুরাগীদের কাছে।পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত একটি ইনফরমেশন হাব তৈরির কাজ করছে ‘কেমফিউশন’। সেই সাথে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাডেমিক নলেজ ও রিসোর্স শেয়ার এর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে সংগঠনটি।

    এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা নানা ধরণের একাডেমিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।এক্ষেত্রে তাদের জন্য যথাযথ গাইডলাইন প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনের সদস্যরা। এছাড়া রসায়নভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে বিজ্ঞানমনা ও সৃজনশীল প্রতিভা অন্বেষণ করছে সংগঠনটি। পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সমস্যা সমাধানে লাইভ আলোচনার সূচনাও করেছে তারা।

    ‘কেমফিউশন’ এর সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,দেশে বিজ্ঞান বিশেষত রসায়নকে জনপ্রিয়করণই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। সেই সাথে গবেষণায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করা তাদের লক্ষ্য।পাশাপাশি রসায়ন, ফলিত রসায়ন, রাসায়নিক প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা যেন হতাশায় না ভোগে সেজন্য তারা এই বিষয়ভিত্তিক সম্ভাবনার পরিধিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।কেমফিউশন এর অনেক সদস্য বর্তমানে গবেষণায় যুক্ত আছেন।অনেকের বিভিন্ন প্রকাশনা আন্তর্জাতিক জার্নালে জায়গা করে নিচ্ছে।

    কেফিউশনের উপদেষ্টা হিসেবে দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত অনেক শিক্ষক,গবেষক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন যাদের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।

    একটি দেশ এগিয়ে যায় বিজ্ঞানমনস্ক ও গবেষণায় আগ্রহী প্রজন্মের হাত ধরে।বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, এনার্জি সংকট ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত।এ সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলায় বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে রসায়নবিদরা রাখতে পারেন অসামান্য অবদান। নবায়নযোগ্য শক্তি,গ্রিন কেমিস্ট্রি, গ্রিন হাউজ ইফেক্ট এর সমাধান ইত্যাদি নানা বিষয়ে রসায়ন ও এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বর্তমান প্রগতিশীল পৃথিবীতে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।এজন্য আমাদের দেশে বিজ্ঞানচিন্তার জোয়ার প্রয়োজন। রসায়ন এর প্রসার এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে।এটিই ‘কেমফিউশন’ এর স্বপ্ন।কেমফিউশন কোনো ব্যক্তি বা বিশ্ববিদ্যালয় নয়।কেমফিউশন একটি সম্ভাবনার গল্প,এগিয়ে যাওয়ার গল্প।কেমফিউশন গুটিকয়েক মানুষ নয়,এটি বিজ্ঞানভিত্তিক,গবেষণামুখী, উন্নত এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *