রাজধানী যেন করোনা ভাইরাসের অভয়ারণ্য

রাজধানী যেন করোনা ভাইরাসের অভয়ারণ্য

মুহম্মদ সজীব প্রধান


বিশ্বজুড়ে চলছে করোনার তাণ্ডব। বাংলাদেশেও বিদ্যুত গতিতে বেড়েই চলছে মৃত্যু মিছিল ও আক্রান্তদের হাহাকার। বিশেষত, রাজধানী ঢাকা যেন করোনা ভাইরাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর তথ্যানুযায়ী দেশে মোট করোনা আক্রান্তের ৮৫ ভাগ ঢাকাতেই।

অন্যদিকে, ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট এর তথ্যানুসারে, শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ ছাড়িয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ঢাকা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে সে কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

আর এর কারণ হিসেবে লকডাউন শিথিলতা সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন-যাপন না করাকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। লকডাউন শিথিল হওয়া মানে গার্মেন্টস, কল কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল হওয়া। রাজধানীর দেড় হাজার গার্মেন্টসে কাজ করে প্রায় কয়েক লক্ষ শ্রমিক। যাদের অধিকাংশই অশিক্ষিত হওয়ায় তারা স্বাস্থ্য সচেতনতায় সম্যক জ্ঞান রাখেনা।

এমনকি গার্মেন্টস মালিকরাও বৈশ্বিক মহামারির দুঃসময়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আন্তরিক নয় বললেই চলে। বস্তুত, গার্মেন্টস চালুর নোটিশ পেয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গার্মেন্টস শ্রমিকরা পিঁপিলিকার মতো ঢাকামুখী হয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গার্মেন্টস চালু হওয়া এবং শ্রমিকদের যাতায়াতের পথে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে বেশি। আর এতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এছাড়াও দিনমজুর, হতদরিদ্রদের মাথা রাখার একমাত্র ঠিকানা বস্তি। শুধু ঢাকা শহরে বস্তিতে বাস করে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের বস্তিগুলোর নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। যেখানে ছোট্ট ঘরগুলোয় গাদাগাদি করে ৫-৬ জন মানুষ বসবাস করে, সেখানে হোম কোয়ারেন্টাইনে কথা যেন আকাশ কুসুম ভাবনা।

ফলে এসব বস্তি এলাকায় কেউ আক্রান্ত হলে অতি সহজেই ছড়িয়ে পড়বে করোনা। কল-কারখানা, বাসাবাড়ি কিংবা পরিবহণে কাজ করা এসব মানুষকে পেটের দায়ে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। এ কারণে করোনা সংক্রমিত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন তারাই।

অন্যদিকে, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকার বিকল্প নেই কিন্তু যাদের ঘরই নেই তাদের জীবনে করোনার চেয়ে বড় অভিশাপ আর কিছুই হতে পারেনা। আমি নগরীর বিভিন্ন রেলস্টেশন, বাস স্টেশনে থাকা পথ শিশুদের কথাই বলছি যারা এক মুঠো খাবারের জন্য সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে দৌড়াদৌড়ি করে। এসব শিশুরা দলবদ্ধভাবে দিনাতিপাত করে। দেশে আনুমানিক ৭-৮ লাখ পথশিশু রয়েছে যার সিংহভাগই ঢাকা শহরে বসবাস করে বলে জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন।

করোনাময় শহরে এসব শিশুরা খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। দিন-রাত লোকসমাগমে থাকায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে পথ শিশুরা। এসব শিশু যদি করোনায় আক্রান্ত হয় তাহলে তারা করোনা বিস্তারের বড় ধরনের বাহক হিসেবে কাজ করবে। ফলে পুরো নগরবাসী হিমশিম পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।

প্রকৃতপক্ষে, মানুষের আগমনে ফাঁকা ঢাকা জনসমুদ্রে রূপ ধারণ করেছে। শহরের অলিগলি, ফুটপাত, হাঁট-বাজার, শপিংমলে মানুষের উপচেপড়া ভীর ফলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের কোনো জো এখন আর নেই।

তাছাড়া গণপরিবহনের চলাচল করোনার সংক্রমণ বাড়াবে কেননা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কোনো কিছু অন্য কেউ ব্যবহার করলে অন্যরাও আক্রান্ত হবে আর সে দৃষ্টিকোণ থেকে গণপরিবহনের সিট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যেখানে নেই কোনো জীবানুনাশকের ব্যবস্থা।

সত্যি বলতে, উপসর্গহীন করোনা বাহী অজস্র দেহের সংস্পর্শে লাফিয়ে লাফিয়ে শহরজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে চলছে করোনা ভাইরাস। আর যেহেতু বর্তমানে গণপরিবহন অবাধ চলাচল করছে সেহেতু রাজধানী করোনার করাল গ্রাসে পতিত হলে স্বভাবতই দেশের অন্যান্য শহরেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

ফলে ধীরে ধীরে পুরো দেশ করোনার কাছে পরাজিত হয়ে মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত হবে। তাই দেশ ও জাতিকে করোনার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে সরকার দূরদর্শী পদক্ষেপ নিবে বলে আশাবাদী।


লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *