রাবি প্রতিনিধি
গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়।
এক বছর পর ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় তৃতীয় চূড়ান্ত পরীক্ষা। রুটিন অনুযায়ী ২৩ মার্চ পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১১ মার্চ পরীক্ষা হওয়ার পর করোনা সংক্রমণ রোধে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। আটকে যায় দুটি বিষয়ের পরীক্ষা। এভাবে ২০ মাস অতিবাহিত হয় ওই শিক্ষার্থীদের। চলতি হিসাব অনুযায়ী তাদের এখন চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল।
এদিকে করোনার মধ্যে চতুর্থ বর্ষে অনলাইন ক্লাস চালু করার আবেদন জানালেও শিক্ষকরা তা নাকোচ করে দিয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, চাইলেই স্থগিত থাকা পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যদি নির্দেশনা দেয় তাহলে সে অনুযায়ী তারা পদক্ষেপ নেবে।
জানতে চাইলে ২০১৬-১৭ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাসের জন্য আবেদন দিতে চেয়েছিলাম। শিক্ষকরা বলেছে তার দরকার নাই। পরীক্ষা শেষ না করে অনলাইন ক্লাস সম্ভব না। শিক্ষকরা বলেছেন, মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরাও একইভাবে ১৯ মাস ধরে একই বর্ষে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে ৫টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি থাকতেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় কোথাও চাকরির আবেদন করতে পারছে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা আইনে পড়াশুনা করি তাদের মোটামুটি অনেকেরই ইচ্ছে থাকে জুডিসিয়াল অফিসার হওয়ার। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তার সার্কুলার বের হবে। পরীক্ষা শেষ না হওয়ার কারণে আমরা আবেদন করতে পারবো না। আমাদের স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া যেতো তাহলে আমরা বঞ্চিত হতাম না। এতে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষাতে আমরা সুযোগ হারাচ্ছি।
জানতে চাইলে আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, স্থগিত হওয়া পরীক্ষার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে এ ব্যাপারে আলোচনা হবে। অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় অনলাইন ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এবিষয়ে আইন অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক এম আহসান কবির বলেন, আমরা চাইলেই কোন বিষয়ে হুট করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এর জন্য ইউজিসি, উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ আছে।
এদিকে আটকে থাকা পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে গত সোমবার উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
করোনার কারণে স্থগিত পরীক্ষাগুলোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এমএ বারী বলেন, সরকারী ঘোষণা এলেই কেবল এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব। তাছাড়া, যেসব শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে সীমিত পরিসরে তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যদি নির্দেশনা দেয় তাহলে সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেব। আসন্ন একাডেমিক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
ওয়াসিফ রিয়াদ