রাবি: সরব ক্যাম্পাসে নিরব প্রশাসন!

রাবি: সরব ক্যাম্পাসে নিরব প্রশাসন!

ওয়াসিফ রিয়াদ, রাবি


করোনার কারণে গত বছর মার্চে বন্ধ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ ছুটিতে জৌলুস হারায় ক্যাম্পাসটি। বন্ধের ১০ মাস পর ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়া ক্যাম্পাস ফের সরব হয়েছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি চত্বর প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে পেলেও বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো খোলার ব্যাপারে নিরব রয়েছে প্রশাসন। প্রশাসন বলছে- ‘সরকারি নির্দেশনা পেলেই খুলবে ক্যাম্পাস’।

ক্যাম্পাস খোলার প্রস্তুতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান জানান, ‘বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম অনেকদিন থেকেই চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য নতুন করে প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয় ও হল খোলার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা পেলেই খুলে দেয়া হবে। এছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।’

এদিকে বন্ধ ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। গল্প-আড্ডা, গ্রুপ স্টাডিসহ নানা ধরণের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আড্ডায় মেতেছে তারা।

সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন মার্কেট, আমতলা, শহিদ মিনার, জোহা চত্বর, প্যারিস রোডে জনসমাগম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, প্রাণহীন সেই টুকিটাকি চত্বরও ফিরে পেয়েছে তার যৌবন। চায়ের কাপের টুংটাং শব্দে আড্ডা, গানে মেতেছে শিক্ষার্থীরা।

ছবিঃ গল্প-আড্ডায় রাবি শিক্ষার্থীরা

এদিকে আটকে থাকা পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও হল খোলার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফেব্রুয়ারিতেই বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খোলার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এনামুল হক বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কিছুই চলছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে কি সমস্যা সেটা আমাদের বুঝে আসে না। ঢাবির হল খুলছে ১৩ মার্চ, ইবির হল খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেখানে রাবি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হয়েও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না, এটা অনেক দুঃখজনক।’

প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবাই দেশের প্রথম সারির নাগরিক। তারা নিজেদের সুরক্ষার ব্যাপারে যতেষ্ঠ সচেতন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়া সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। আর এর মাসুল দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। দিন দিন পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় রাবি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হয়েও কিভাবে সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকে?’

এদিকে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারাও হল খুলে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত অবিবেচক। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তাদের সমর্থন রয়েছে।

রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দ্রুত হল ও ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানিয়েছিলাম। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা হলে থেকে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুক।’

রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলন বলেন, ‘দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবি জানাই।’

ছাত্র ইউনিয়ন রাবি সংসদের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে সামগ্রিক দিক থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা একটু পিছিয়ে গেছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পাস খোলা জরুরি। তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে দ্রুত ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন
fb-share-icon
Tweet

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *