রেজিস্ট্রার উপস্থিত থাকায় রাবি ভর্তি কমিটির সভা পণ্ড

রেজিস্ট্রার উপস্থিত থাকায় রাবি ভর্তি কমিটির সভা পণ্ড

রাবি প্রতিনিধিঃ ইউজিসির তদন্ত কমিটির সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অব্যাহতির নির্দেশের পরও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারী উপস্থিত থাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সভা বর্জন করেছেন পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে আর কোনো ধরনের সভায় অংশ করবেন না।

বৃহস্পতিবার সকালে উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত মূল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেখানে রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দিয়ে মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা কার্যকর করতে উপাচার্যকে আহ্বান জানান শিক্ষকরা।

এর আগে ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক নোটিশে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা-২০১৫ শিথিল করে পরিবর্তিত নীতিমালায়-২০১৭ অনুযায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের মেয়ে ও জামাতাকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটিকে অধ্যাপক আব্দুল বারী বিভিন্ন পর্যায়ে অসহযোগিতা করেছেন। যা অসদাচরণের সামিল। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাকে রেজিস্ট্রার পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুল বারীর উপস্থিতি নিয়ে সভার শুরুতেই আপত্তি তোলেন বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকার পরও ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সভায় তার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন তারা। এ সময় তারা রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে কোনো ধরনের সভায় অংশ না নেয়ার কথাও জানান। সভার ৪০ মিনিটের মধ্যে উপাচার্য সভা স্থগিত করেন বলে পরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন, বিভাগের সভাপতি, ইন্সটিটিউট পরিচালক ও নির্বাচিত প্রতিনিধি শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি সুলতানুল ইসলাম টিপু বলেন, সভার শুরুতেই আমি উপাচার্যকে সরকারের দেয়া নির্দেশনা সম্পর্কে প্রশ্ন করি। উপাচার্যকে বলি সরকার আপনাকে কিছু চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিছু নির্দেশনা কার্যকর এবং কিছুর কৈফিয়ত চেয়েছেন। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার নিয়োগ বন্ধ করা, উপাচার্যকে ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়াসহ বর্তমান রেজিস্ট্রারকে অব্যহতির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেহেতু সরকারের দৃষ্টিতে সে অপরাধী। তাকে নিয়ে তো আমরা মিটিং করতে পারি না। আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত কে অমান্য করতে চাই না। এ সময় সভা স্থগিত করতে অন্যান্য শিক্ষকরাও সম্মতি জানালে স্থগিত করেন উপাচার্য।

ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আজকের সভায় আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি, রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তারপর সভা ডাকতে হবে। তার উপস্থিতিতে আমরা আর কোনো সভা করব না।’
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক জানান, কমিটির শিক্ষকদের দাবি ছিল রেজিস্ট্রার সভায় উপস্থিত থাকলে সভা বর্জন করা হবে, তারপরেও উনি উপস্থিত ছিলেন। এ জন্য সভায় উপাচার্যকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ কার্যকর করতে অথবা সভা থেকে রেজিস্ট্রারকে বের করে দেয়ার দাবি জানানো হয়। বাধ্য হয়ে সভা স্থগিত করেন উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, অনিবার্য কারণবশত সভা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত তারিখে পুনরায় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *