রোগ প্রতিরোধে শারীরিক কসরতের বিকল্প নেই

রোগ প্রতিরোধে শারীরিক কসরতের বিকল্প নেই

হৃদয় কুমার পাল


অনেক গবেষক ইতিমধ্যে ধারনা করেছেন যে ,খুব তাড়াতাড়ি এই মহামারী ভাইরাস আমাদের পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাবে না।যারা ভাবছেন শুধু ঘরের মধ্যে থেকেই করোনা কাল পার করে ভাইরাস মুক্ত থাকবেন তারাও আছেন মহা ভুলে।

আপনি মানুষ ; অনন্তকাল বাহিরের বাজার ছাড়া ,মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া, সূর্যের রোদ ছাড়া বাঁচাতে পারবেন না।এবার কাজের কথায় আসি।

সৃষ্টিকর্তা আপনাকে আমাকে যেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েছেন সেটাই সাধারণত মাইক্রোবস অর্থাৎ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া মারতে সমর্থ। বর্তমান সময়ে আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন হলো এন্টিবডি৷ একটু সহজ করে বলি। এন্টিবডি হলো প্রোটিন মলিকিউল যেটা হোয়াইট ব্লাড সেল থেকে তৈরি হয় । যখনি কোন এলিয়েন বস্তু দেহের মধ্যে প্রবেশ করে তখন আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেটাকে চিহ্নিত করে এন্টিবডি নিঃসরন করে৷

বাংলা সিনেমার ফাইটিং এর মত ডিসুম ডিসুম করে ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়া মেরে ফেলে এন্টিবডি।অনেক উপায়ে আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে পারি।চলুন শারীরিক ব্যায়াম আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর কি প্রভাব ফেলে এই বিষয়ে একটু আলোচনা করি।আসলেই কি ব্যায়াম অথবা শারীরিক পরিশ্রম আমাদের ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলে?

নিয়মিত হাটাচলা আর হালকা ব্যায়াম আমাদের অনেক ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।স্থূলতাজনিত বিভিন্ন সমস্যা এবং রোগ এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের দৈহিক কসরত অবশ্যই করতে হবে।নিয়মিত ব্যয়াম আপনাকে শক্তিশালী করবে, হার্ট ভালো রাখবে এবং স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করবে।সবসময় ক্লান্ত? অথবা ঠান্ডা কাশিতে ভুগছেন?নিয়মিত কিছুক্ষণ ব্যয়াম করুন অথবা হাঁটাহাটি করুন।

আপনার ভালো অনুভব হবে।ব্যয়াম আমাদের ফুসফুস থেকে ছোটখাটো ভাইরাস বের করে দিতে পারে, যা আমাদের বারবার ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করবে।আবার পরিশ্রম এর পরে শরীরে যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় সেটা কিছু জীবাণুর বৃদ্ধিতে বাধা দেয়, যা পরিমানে খুব অল্প।আবার ধারনা করা হয় যারা অন্তত ২০ মিনিট প্রতিদিন ব্যায়াম করেন তাদের আপার রেস্পাইরেটরী ইনফেকশন এর ঝুকি কম। পরিশ্রম শুরু করার কিছুক্ষণ পর, রক্ত স্রোতে ইমিউনো সেল কিছুটা কমে যায়।

প্রথম দিকে গবেষকরা মনে করতেন এটা ইমিউনিটি দুর্বল হওয়ার একটি লক্ষন। কিন্তু এখন অনেক টেকনিশিয়ান ধারনা করেন, পরিশ্রম শুরু করার পর রক্ত থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ গুলোতে ইমিউনো সেল গুলো প্রবেশ করে, যেমন ফুসফুস অথবা ত্বক। যেটা মাইক্রোবস দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটা কৌশল হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পরিশ্রম করার ফলে বা ব্যয়াম করলে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করবে, আপনি কিভাবে ব্যয়াম করছেন, ব্যয়াম করার সময় এবং মাত্রার উপর।

আমাদের ইমিউনিটির উপর ব্যয়াম এর পজেটিভ এবং নেগেটিভ দুই ধরনের প্রভাবই আছে।অতিরিক্ত পরিশ্রম আমাদের ইমিউনিটি দুর্বল করে দিতে পারে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক।অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে একটানা তীব্র শারীরিক পরিশ্রম এর পর এথলেট দের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্বাভাবিক সময় এর চেয়ে কিছুটা কম অনুভূত হয়।

হাড়ভাঙা খাটুনির ফলে অনেক সময় আমাদের ইমিউনো সেল তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না।এজন্য আগে আমাদের দেহে পর্যাপ্ত এনার্জি সাপ্লাই দিতে হবে।।অবশ্য এই বিষয়ে আমাদের আরো পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। আরো ভালো গবেষনা করতে হবে। কিন্তু ব্যয়াম আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে।সেরোটোনিন এবং ডোপামিন সহ অনেক কেমিক্যাল নিঃসরণ হয় যেগুলো আমাদের আনন্দের জন্য দায়ী।

বলে রাখা ভালো, মানসিক শক্তি আমাদের অনেক কঠিন রোগ থেকে মুক্তি দেয়।এটা হচ্ছে পাওয়ার অব মাইন্ড। তাই অযথা আতংকিত হয়ে লাভ নাই।মন ভালো রাখার জন্য হলেও সবার হালকা ব্যায়াম করা উচিৎ।

পরিশেষে বলবো, এমন কোন ম্যাজিক পিল নাই যেটা হঠাৎ করে আপনার আমার ইমিউনিটি বা এন্টিবডি বাড়িয়ে দিবে। প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এর মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারি।শারীরিক কসরত কে ইমিউনিটি বুস্টার ভাবা যাবে না বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।।


লেখকঃ শিক্ষার্থী (৩য় বর্ষ), ফার্মেসী বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *