শরতের ক্যাম্পাসে একদিন

শরতের ক্যাম্পাসে একদিন

সুপর্ণা রহমান


এই শীত, এই বর্ষা, আবার কখনো রোদের খরতাপ। বছর জুড়ে এ নেশাই মেতে থাকে বাঙলার প্রকৃতি। তার রুপের মাধুর্যের বর্ণিল সাজে লুকোচুরি খেলে আমাদের মন।

ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে শরৎ বাঙলার ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু। এ ঋতুতে সকালে ফোটে শিউলি ফুল, বিকেলে ঢেউ খেলে সাদা কাশবন। নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ এবং ঘটে আচমকা বর্ষণ।

শরতের এই রোদ্রছায়ায় এক পশলা বৃষ্টিতে মনের প্রতিচ্ছবিগুলো রূপকথার মতো ভেসে বেড়ায়। এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন, যিনি একটু সময় দাড়িয়ে ফেলে আসা স্মৃতিতে চোখ বুলাবেন না।

রাতের আকাশে জ্বলজ্বলে মায়াবী চাঁদ দেখতে দেখতে কখনো নামে বৃষ্টি। টিনের চালের টুপটাপ শব্দ! আবার ক্ষনিকের চলে যাওয়া। সবটা অজস্র মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করে ফেলে পরিবেশ। হালকা বাতাসে কাশফুল দোল খাচ্ছে, আবার বৃষ্টি এসে তা কাক ভেজা করে দিচ্ছে। তাই বলা হয়- শরত মানেই রোদ বৃষ্টির খুনসুটি।

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাজ্ঞণে আগমন ঘটেছে এ ঋতুর। গোটা ৩২ একর জুড়ে নানা রঙের ফুল ও গুচ্ছ গুচ্ছ কাশবন শোভা পেয়েছে।

একাডেমিক ভবনের সামনে পিছনে, টেনিস মাঠের দুপাশে, হিটলার চত্বরে, সবুজ ছাউনির ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কাশফুলের দেখা মেলে। ক্লাসের ফাঁকে এ জায়গাগুলো গল্পে আড্ডায় জমে থাকে। সেখানে এখন কাশবনের রাজত্ব। কাশফুলের মাঝে যেন উকি দেয় বিশাল ক্যাম্পাস।

প্রায় অর্ধ বছর (২০০ দিন) পরে ক্যাম্পাসে পা দিতেই শিউরে উঠলো মন। শরতের বাতাস আর সাদা সবুজের মেলা চারদিকে। দূর থেকে দেখলাম একদল বাচ্চারা কাশফুল নিয়ে ছোটাছুটি করছে। কিছু সময় অপলক তাকিয়ে থাকলাম। আবার হাটতে শুরু করলাম।

খেলার মাঠ ছোট বড় আগাছায় টইটুম্বুর। বসবার জায়গাগুলোর দুপাশে কাশফুলে ভরে গেছে। ক্যাফেটেরিয়া সামনে বৃষ্টির পানিতে জমে আছে। সবুজ ছাউনির ক্যান্টিনের সামনের কাশফুলগুলো যেন সেই মিঠা পানিতে উঁকি দিচ্ছে। একটা কাশফুল ছিড়ে আমার মাথায় গুঁজে নিলাম।

কাশবনের মধ্যে রাস্তাও তৈরি হয়ে গেছে দেখলাম। কাশবনের রাস্তা ধরে ট্রান্সপোর্ট চত্বরে এগুতেই দেখা হলো এ বিদ্যাপীঠের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক রুপালি রাণীর সঙ্গে। একদম করে হেঁটে তিনি বলেন, শরতের কাশফুল খুবই প্রিয় আমার। শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাসে কাশফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বেড়োতে কাশফুল দেখতে দারুণ লাগে।

করোনা মহামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ভিড় নেই এখন। রৌদ্রদীপ্ত কাশবনে গিয়ে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে কেউ ক্লাসে যায় না! মেয়েরা মাথায় কাশফুল গুজে ঘুরেও বেড়ায় না!

একসময় ক্লাস শেষে ঢু মেরে আসা ছিল সকলের নিত্য দিনের সঙ্গী। বন্ধু বান্ধব, কপোত কপোতি কিংবা আনমনা হয়ে অনেকে একাও ঘুরে বেড়াতো ক্যাম্পাসে। প্রকৃতি তার আপন মনে-ই চলছে, তবে নেই প্রাণের স্পন্দন।

ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ আরিফ বলেন, এবারের শরৎ একটু আলাদা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই। শিক্ষার্থী ফেরার অপেক্ষায় মনকাড়া কাশবনগুলো। কাশফুলের সাথে ছবি তোলা, কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা এগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। প্রাণহীন ক্যাম্পাসে প্রাণের সঞ্চার করেছে কাশবন। কাশফুল ধরে রেখেছে সৌন্দর্য।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *