শিক্ষার্থীরা মেধাবী নাকি সংগ্রামী, রাষ্ট্রই কি সংগ্রামী বানাচ্ছে?

শিক্ষার্থীরা মেধাবী নাকি সংগ্রামী, রাষ্ট্রই কি সংগ্রামী বানাচ্ছে?

ইকবাল মুনাওয়ারঃ সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। পলাশীর আমবাগান থেকে আজ পর্যন্ত বহু চড়াই-উৎরাই পার হয়ে মানচিত্রের বুকে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার আগে যখন পুরো দেশ পরাধীন ছিল তখনকার সমসাময়িক পরিস্থিতির নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রসমাজ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার আগে বিভিন্ন অধিকার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে আদায় করার জন্য একচ্ছত্র ভূমিকা পালন করে ছাত্রসমাজ। যদি স্বাধীনতার আগের কথা বলা হয়, এই জাতি পরাধীন ছিল তখনকার অধিকার চিনিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম যথার্থই যুক্তিযুক্ত।

৭১ এর পর থেকে যদি স্বাধীন বাংলাদেশের দিকে চোখ দিই এবং ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাইলে স্পষ্টত দেখা যায় একটা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষতি পূরণ করার জন্য চূড়ান্ত কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। অন্যান্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যে বিষয়ে বিশেষ করে নজর দেয় তাহলো পরিশ্রম এবং শিক্ষা।

প্রবাদ আছে, “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড”। যদি আমরা ভালভাবে অনুধাবন করি তাইলে স্পষ্টতই দেখতে পাই স্বাধীনতার পরে ছাত্ররা গবেষণা কিংবা শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে তার চেয়ে বেশি অবদান রেখেছে আন্দোলন সংগ্রামে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে চান্স পাওয়ার পরে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের শুরু হয়ে যাই অন্যায় কিংবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুংকার তোলার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি.সি. থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ের ব্যক্তিদের অপকর্মের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই করতে হয়।



বশেমুরবিপ্রবির ভি.সি বিরোধী আন্দোলন, জাবির ভি. সি বিরোধী আন্দোলন, ববির ভি.সি বিরোধী আন্দোলন এবং বুয়েটে আবরার হত্যার বিচারের আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশে ঘটে যাওয়া নানা আন্দোলন শিক্ষার্থীদের এক প্রকার মুক্তির আন্দোলন।



যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে পড়াশোনা করতে তাদের কাজ হয়ে দাড়ায় তাদেরকে পড়াশোনা করার দায়িত্ব নেওয়া শিক্ষকদের শিক্ষা দিতে। বিগত দু-এক বছরের কথা পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সংগ্রাম মেধাবী বানানো তো দূরের কথা বানাচ্ছে সংগ্রামী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের কথা ছিল গবেষণা কিংবা শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রাখা।

বশেমুরবিপ্রবির ভি.সি বিরোধী আন্দোলন, জাবির ভি. সি বিরোধী আন্দোলন, ববির ভি.সি বিরোধী আন্দোলন এবং বুয়েটে আবরার হত্যার বিচারের আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশে ঘটে যাওয়া নানা আন্দোলন শিক্ষার্থীদের এক প্রকার মুক্তির আন্দোলন। নাসায় ইনভাইট পাওয়া ছাত্রদের নিয়ে যে প্রতারণা রাষ্ট্রযন্ত্র তার ফল একদিন ভোগ করতে হবে। দেশের অবস্থা দেখে উদীয়মান বহু বিজ্ঞানী পাড়ি জমায় ভিনদেশে। বহু শিক্ষকের চারিত্রিক ত্রুটির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি হয়ছে বহু শিক্ষার্থী।

যদি প্রশ্ন করা হয়, স্বাধীনতার পরেও কেন একের পর এক ছাত্র আন্দোলন? হয়তো রাষ্ট্র ভিন্ন উত্তর দিবে কিন্তু ভালভাবে দেখলেই অনুভূত হয়, শিক্ষার্থীদের নানা রকম ঠকানো, দলীয় লোভী রাজনৈতিক শেল্টারে নিয়োগপ্রাপ্ত সব শিক্ষকদের নানা রকম অপকর্ম, শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, আঞ্চলিক নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে একচ্ছত্র প্রভাব এবং তাদের অনুগত করতে বাধ্য করা, গবেষণার যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টিতে কর্তৃপক্ষের অবহেলা, শিক্ষার আন্তর্জাতিক মানকরনে ব্যর্থ হওয়া সহ নানা কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে। আমাদের দেশ মেধাবীদের সম্মান করতে জানেনা, বহু মেধাবী মেধার যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় পাড়ি জমায় ভিনদেশে।

দেশকে বাস্তবিক উন্নত বানাতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সর্বপ্রথম লোভী এবং দুর্নীতিগ্রস্থ কর্তাব্যক্তিদের পরিবর্তন করতে হবে যাতে মেধাবীদের রাজপথ বাদ দিয়ে লাইব্রেরিতে স্থান করে নিতে পারে। দেশেই প্রতিষ্ঠিত হোক বড় বড় গবেষণাগার। শিক্ষার্থীরা আরো হয়ে উঠুক মেধাবী।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *