শুভ জন্মদিন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

শুভ জন্মদিন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইমানুল সোহান: ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা ৬টা। প্রধান ফটকে শিক্ষার্থীরা সেলফি ও ছবি তুলতে ব্যস্ত। কারণ রাত পেরুলেই ১৭৫ একরের জন্মদিন। সেই উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়কে নবরুপে সাজানো হয়েছে। প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়াতেই রংবেরং এর আলো সবার নজর কাড়ছে। ফটক পেরিয়ে পা বাড়ালেই চোখে পড়ে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা জাতির পিতার মুর‌্যাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। মুর‌্যালের সামনে দাঁড়িয়ে ডানে তাকালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক ‘মুক্তবাংলা’। আর বামে তাকালেই দুটি স্তম্ব। দেখেই মনে হয় রক্তাক্ত শহীদদের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্তম্ব দুটি। যা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ভাষা শহীদ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। অর্থাৎ শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ। এছাড়াও দুই স্মৃতি স্তম্বের মাঝে রয়েছে সততা ফোয়ারা।
বৃহস্পতিবার একটু বেশি চকচকে মনে হচ্ছিল এই এলাকা। মুর‌্যালের পিছনে সবুজের চাদরে মোড়ানো ডায়না চত্তর। সেই চত্তরের প্রতিটি গাছে জ¦লছে লাল-নীল বাতি। তার পাশ দিয়ে দুটি রাস্তা দুই দিকে চলে গেছে। রং বেরং আলোয় রাস্তা দুটিও ভিন্ন প্রাণ পেয়েছে। বাম পাশের রাস্তা ধরে কিছু দূর এগিয়ে গেলেই সাদ্দাম হোসেন হল। হলের দেয়ালে ঝুলন্ত অবস্থায় রংবেরং আলো জ্বলছে। সামনের ফুল বাগানটিও রকমারি আলোয় ডুবে আছে।
এরপর একটু এগিয়ে হাতের বাম পাশে তাকালে জিয়াউর রহমান হল ও লালন শাহ্ হল চোখে পড়ে। তাকাতেই চোখ আটকে গেল। নবরূপে সাজানো হয়েছে হল দুটিকে। সোজা রাস্তা ধরে এগুলোই শেখ রাসেল হল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। ঝলমলে আলোয় এই এলাকার দৈনন্দিন রাতের দৃশ্য একদম পরিবর্তন হয়েছে।
হলের সামনের রাস্তা ধরে আর একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে দেশরতœ শেখ হাসিনা হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল ও খালেদা জিয়া হল। এই হলগুলোও বর্ণিল সাজে সেজেছে। গায়ে মেখেছে নতুন রং। ঝাড়বাতি গায়ে জড়িয়ে আলোয় ঝলমল করছে।
এসব হলের সামনে ছবি তুলতে ভিড় করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো বেশ পরিষ্কার লাগছে। রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন রংয়ের পতাকা লাগানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের ফুল গাছগুলোও যেন নতুনত্ব পেয়েছে। সব কিছু যেন বলে দিচ্ছিল রাত পোহালেই শুক্রবার ১৭৫ একর এলাকার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্মদিন। ২২ নভেম্বর ২০১৯।
৪১ বছরে পা দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৪০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তির ঝুড়ি অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। চরম সংকটাপন্ন মূহুর্ত মোকাবেলা করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। এর মধ্যে পার হয়েছে ১১ জন উপাচার্য। বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধিন ৩৪টি বিভাগে চলছে পাঠদান। বাংলা বিভাগের আওতায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। যেখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তর পঠন, পাঠন ও গবেষণা চলবে। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নির্মাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। যা দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল। মুক্তিযুদ্ধের উপর বিস্তর জ্ঞান অর্জনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার এবং একুশে কর্ণার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়াও সেশনজটের গ্লানি থেকে মুক্ত হয়েছে বিশ^বিদ্যালয়টি। গত আগস্ট মাসে একনেকের মাধ্যমে পেয়েছে ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগাপ্রকল্প। এর আওতায় নির্মিত হবে ৯টি দশতলা ভবন। তৈরি হবে একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার। ওই মেগাপ্রকল্পের অধীনে কিছু ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।
আন্তজার্তিকীকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে অর্ধশতাধিক বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাশ হয়েছে অর্গানোগ্রাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহস চলতি বছরের ৭ জানুয়ারী হয়ে যাওয়া ৪র্থ সমাবর্তন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের উপস্থিতিতে এতে অংশ নিয়েছিলেন এগারো হাজার শিক্ষার্থী।
এত প্রাপ্তির মাঝেও কিছু অপ্রাপ্তির কথাও আছে। আবাসন সংকট এর মধ্যে অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। তবে মোট আটটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী বাস করছেন প্রায় আট হাজার। এরমধ্যে ছাত্রদের পাঁচটি আর ছাত্রীদের তিনটি। আবাসিক বিশ^বিদ্যালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও তা আজও সম্ভব হয়নি। ফলে পরিবহন নির্ভরতা দিনদিন বাড়ছে। বছর বছর শিক্ষার্থী বাড়লেও আবাসিক হলের অপর্যাপ্ত রয়েই যাচ্ছে। যার কারণে প্রত্যেক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ব্যয়ের দশ শতাংশ গুণতে হয় পরিবহনের পিছনে। এছাড়াও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজ, অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতিসহ বেশকিছু বিষয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ^বিদ্যালয়টি।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, বিশ^বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ আবাসিক হবে। গবেষণাকাজে প্রশাসন তাদের মানসিক ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবে। একইসাথে দুই অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে ছাত্র রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়া।’
এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, ‘ বিশ^বিদ্যালয়ের ৪১ তম জন্মদিনে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়টিকে সম্পূর্ণ আন্তজার্তিকমানেরম হিসেবে গড়ে তোলা। একইসাথে আবাসিক বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে পূর্ণতা দেওয়া। এছাড়াও অবকাঠামো এবং একাডেমিক কারুকুলামগ সংস্কার সাধিত হয়েছে।

প্রেরক: ইমানুল সোহান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

দ্য ক্যাম্পাস টুডে

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *