শুভ জন্মদিন ভালোবাসার ৭৫ একর

শুভ জন্মদিন ভালোবাসার ৭৫ একর

স্বপন মাহমুদ


এ যে এক সবুজের পৃথিবী,
চারিদিকে সবুজ আর সবুজ,হঠাৎ মাঝে এক টুকরো লাল,
যা সবারই মন কেড়ে নেয়।
ঘাসফুলের মাঝে বসে প্রিয়জনের সাথে প্রতিনিয়ত বন্দী হয় হাজারো স্মৃতিকথা,গল্প এবং সৃষ্টি হয় নতুন করে ভালোলাগার,ভালোবাসার।
এখানে বৃষ্টিস্নাত কৃষ্ণচূড়ার লাল গালিচার রাজ্যে হেঁটে চলে হাজারো স্বপ্নচারী। কখনোবা ক্যাফেটেরিয়ায় বেজে উঠে গিটারের টুংটুং শব্দে বেশুর গলার চেনা-পরিচিত সব গান।

এখানে,
প্রতিদিন কৃষ্ণচূড়া সড়ক দিয়ে ডুকে,
বন্ধুর সাথে হাসাহাসিতে কিংবা ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে সৌন্দর্যময় এই কৃষ্ণচূড়ার লালগঞ্জে আগমন ঘটে হাজারো রঙ্গিন স্বপ্নচারীর।

ক্যাফেটেরিয়া,বিজয় সড়ক,স্বাধীনতা স্মারক,শহীদ মিনার,বকুলতলা,দেবদারু রোড,কৃষ্ণচূড়া সড়ক,শেখ রাসেল চত্বর,একাডেমিক ভবন,বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি সৌন্দর্যময় স্থানে প্রতিনিয়ত যে প্রশ্ন,গল্প গুলো উঠে আসে-

-বাড়ি কই?
-কোন ডিপার্টমেন্ট?
-কোন ব্যাচ?
-কেমন আছিস?
-অমুক বড় ভাইকে চিন?তোমার এলাকার
-দোস্ত,পরীক্ষা কি হবে?
-অ্যাসাইন্টমেন্ট করছিস? আমারটাও করে দেনা দোস্ত
-হতাশা চত্বর থেকে হতাশ হয়ে ফেরা
-দোস্ত কই যাস?
-সেমিনার আছে,ল্যাব আছে
-ভাই/আপু আসসালামু আলাইকুম
-তোর ডিপার্টমেন্টে জট আছে?ক্লাস হচ্ছে?
– মাঝেমধ্যে “জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগান শোনা যায়
– তোর সিজিপিএ কত?
– পরীক্ষা ভালো হয়নি রে
– চল,ক্যাফেটেরিয়া যাই
-চায়ের কাপে ঝড়
– বন্ধুত্ব,ভালোবাসা
– আড্ডা,গান,গিটারের টুংটুং শব্দ।
এরকম হাজারো ছোট ছোট প্রশ্ন কিংবা গল্প শোনা যায়।

প্রতিদিনের মত,
এখানে সকাল আসে এক টুকরো সোনালী নিয়ে,হল,
শিক্ষক আবাস্থলে পাখির কিচিরমিচির শব্দ, ক্যাম্পাস-ক্যাফেটেরিয়ায় মাঝবয়সী,বৃদ্ধ,নারী,ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যায়ামের আশর,সেন্ট্রাল মাঠসহ সব মাঠগুলোতে ভরে যায় ক্রিকেট প্রেমী,ফুটবল প্রেমীদের পদচারণায়।

ক্লাস,ব্যস্ততা, অ্যাসাইন্টমেন্ট,ল্যাব,সেমিনার, ইনকোর্স,মিডটার্ম,কনসার্ট আড্ডা,গ্রুপ স্টাডি,ছাত্র আন্দোলন,রাজনীতি,ইত্যাদিতে সময় অতিবাহিত হবার পর গোধুলী আকাশে রক্তিম সূর্যের ধীরে ধীরে অস্ত যাওয়া,পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং সুমধুর কণ্ঠে আজানের ধ্বনিতে নেমে আসে সন্ধ্যা। এসময় দুই শ্রেণীর লোকের পদচারণা দেখা যায় ক্যাম্পাসে। একদল ক্যাম্পাসে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে কৃষ্ণচূড়া দিয়ে আগমন করে,অন্যদল তখন ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
সন্ধ্যার পর- স্বাধীনতা স্মারক,বিজয় সড়ক,শহীদ মিনার,সেন্ট্রাল মাঠে হঠাৎ করেই বেজে উঠে বেশুর গলার গান এবং গিটারের টুংটুং শব্দ।সিনিয়র-জুনিয়র, বন্ধু-বান্ধবী মিলে ছোট আশর।
পার্কেরমোড়,চকবাজারে চায়ের কাপে ঝড় উঠে, সাথে পাল্লা দিয়ে নিকোটিনের ধোয়াও ভেসে বেড়ায়।

স্নিগ্ধ সকাল,দুপুরের ব্যস্ততা,বিকেলে আড্ডা,গোধুলী আকাশ,পাখির কিচিরমিচির,আজানের সুমধুর কণ্ঠ পেরিয়ে রাত হলে কৃষ্ণচূড়ার বৃক্ষতলে কমলা সুন্দরীগুলো যখন ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত হয়ে নিরবতা পালন করে,তখন শুধু রাতে হাটা ক্যাম্পাস প্রেমীরাই তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

রাত বাড়তে থাকলে বাহিরের ভীড় কমতে থাকে, হলে জমে ওঠে আড্ডা। কেরাম আর কার্ড খেলাও জমে ওঠে। সেই সাথে ছাদে চলে গিটার নিয়ে গানের আসর। এভাবেই রাতভর চলে প্রাণের উৎসব।

এই জাদুনগরীতে রাত মানে যেন এক নতুন শুরুর গান, যে গানে আছে মায়াবী রহস্যময়তার ডাক আর তা উন্মোচনের আমন্ত্রণ। এখানকার রাতে ভয় নেই, শংকা নেই, এখানকার রাতে শুধুই মুগ্ধতা।

ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় বেরোবি। বর্ষার আগমন ঘটে বৃষ্টি ফোটার টুপটাপ শব্দে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, মৃদু আবহাওয়া, হঠাৎ ঝড়ো বাতাশ তৈরি করে অসম্ভবত এক ভালোলাগার।
এখানে শরতের আগমন ঘটে আকাশের বুকে সাদা মেঘের ভেলা নিয়ে। হতাশা চত্বরে কুয়াশার আবরণে মুখ ডেকে লজ্জাবতী নারীর বেশে আগমন ঘটে হেমন্তের।অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতি সাজিয়েছে ভালোবাসার এই ৭৫ একর।

হুম,এটাই আমার বেরোবি…
শুভ জন্মদিন ভালোবাসার ৭৫ একর❣️
১২ পেরিয়ে ১৩ তে পদার্পণ করল ভালোবাসার বেরোবি।

আরও পড়ুনবাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেটাই শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থীর ‘বড় যোগ্যতা’!
যদিও এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটা পালিত হবে হৈহুল্লোর, নাচানাচি, অসাধারণ সব আয়োজন ছাড়া,
তবুও জন্মদিনে জানাই বেরোবির প্রতি ভালোবাসা
এবং আমি চাই বেরোবির এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশটা অব্যাহত থাকুক,বেরোবির সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী সকলেই সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন।

স্বপন মাহমুদ
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *