সার্টিফিকেট দৌড়ে হারিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনার আলো

সার্টিফিকেট দৌড়ে হারিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনার আলো

কাজী মুহসিনা তামান্না


“জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে চিরস্থির কবে নীড়, হয়রে জীবন নদে ” আমরা সবাই জন্মগ্রহণ করেছি যখন, তাহলে একদিন মৃত্যুবরণ করব সেটাই স্বাভাবিক। মহান সৃষ্টিকর্তার সব সৃষ্টির মধ্যে মানুষ হলো সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। তাই, আমাদের মনে রাখা উচিত, জন্ম হোক তথা কর্ম হোক ভালো।

আমার আজকের লেখাটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য।বাংলাদেশে সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষারর ফলাফল প্রকাশের পর জিপিএ ফাইভ না পেয়ে অথবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে সম্প্রতি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা ঘটনা।

এছাড়াও প্রতি বছর মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর প্রায়শই এসব ঘটনা শোনা যায়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং চিন্তার বিষয়। পড়াশোনা আজ পরীক্ষার রেজাল্ট কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ভালোমানুষ হবার বদলে রেজাল্টই যেন সব কিছুর চাবিকাঠি, মানদণ্ড।

প্রাথমিকভাবে একাডেমিক পরীক্ষার খারাপ ফলাফলের কারণে যে কারণগুলো আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে সেগুলোর মধ্যে আছে।

প্রথমত ডিপ্রেশনঃঃ ডিপ্রেশন একটি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি, যা একজন মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। আশেপাশে লোক থেকেও কথা বলার লোক মানুষের শারীরিক এবং মানসিক কর্মক্ষমতা মারত্নক কমিয়ে দেয় এই ডিপ্রেশন। এই ডিপ্রেশন এর ফলে আপনি যেকোন ঝূকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও নিতে পারেন,, ডিপ্রেশন এর প্রধান কিছু লক্ষণ হলো: সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকা, উদ্যম হারিয়ে ফেলা,ঘুম কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, কাজকর্মে মনোযোগ না পাওয়া,মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত মা – বাবার উপর অভিমান : পিতামাতার স্বপ্ন পূরণ করা সন্তানদের একটি অন্যতম কাজ। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে লোকলজ্জার ভয়ে পিতামাতা তাদের সন্তানদের সাথে অসদাচরণ করে,, যা ঐ পরিস্থিতি তে তাকে আত্মহননের দিকে ধাবিত করে।

তৃতীয়ত প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা : বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

চতুর্থ ব্যর্থতা : যখন আপনারা পরীক্ষার সাময়িক ব্যর্থতাকে জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা মনে করেন। তখন আপনি যে পরবর্তী তে সফল হতে পারতেন সে মানসিকতাকে হারিয়ে দেন।

পঞ্চম সিদ্বান্ত : উপরের চারটি ধাপ অতিক্রম করে একজন শিক্ষার্থী,, সর্বশেষ পদক্ষেপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় এবং যে কোন সিদ্ধান্তে পৌছে যায়, যেটা আত্মহত্যাও হতে পারে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা যেসব পদক্ষেপ নিতে পারি

১. আত্মাবিশ্বাসী হতে হবে,

পরীক্ষার ফলাফল যাই আসুক না কেন, কখনোই মনখারাপ করা যাবে না, পরীক্ষা বার বার আসবে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবে, কিন্তু এমন কোন কাজ কোরো না, যেটা তোমার কাছ থেকে সেই সুযোগটা কেড়ে নেবে।

২. কখনোই নিজেকে ডিপ্রেশন এ ফেলবেন না।

৩. নেতিবাচক চিন্তা করবেন না।

৪. দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন।

৫. সবসময় নিজেকে নিজে বলবেন, আপনি সেরা, আপনি সব পারেন, শুধু সময়ের অপেক্ষা।

৬. আর, সর্বোপরি হাসিখুশি থাকুন।

পাঠকদের এবং স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে বলব, নদীকে যেমন তার গন্তব্যে পৌছাতে শত বাধা বিপত্তি পাড়ি দিতে হয়। তেমন আমাদেরকেও স্বপ্ন পূরণে উদ্যমী হতে হবে, সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রমকে পূজি করে এগিয়ে যেতে হবে, সাফল্য একদিন আসবেই।

মনে রাখব সবাই চীনা দার্শনিক এর এই উক্তিটি


“কখনোই না হারাটা আপনার বীরত্ব নয়,
বরং বার বার হেরে গিয়ে উঠে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় সাফল্য।”


লেখকঃ শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *