স্কুলশিক্ষিকা ধর্ষণের ঘটনায় রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতিকে বহিস্কার

স্কুলশিক্ষিকা ধর্ষণের ঘটনায় রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতিকে বহিস্কার

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক

স্কুলশিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনিকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে সুমন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, রংপুর নগরীর কেরানীপাড়া মহল্লার এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, ২০১৭ সালে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। রনির বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুরের ফতেহপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু বক্কর। পরিচয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

মেয়েটি জানায়, রনি তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কাজের কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগও করেন তিনি।

এজাহারে তিনি আরও বলেন, বিয়ে করার কথা বললে টালবাহানা শুরু করে রনি। পরে তার বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের চাপে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল মেয়েটিকে নীলফামারীতে বিয়ে করার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজল কুমারের বাসায় নিয়ে গিয়ে ভুয়া কাজী এনে তাকে বিয়ের নাটক সাজানো হয়। এরপর ওই বাড়িতেও তাকে ধর্ষণ করে রনি।

বাদীর অভিযোগ, বিয়ের পর তাকে রনির বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে আবার টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে সে। এর মধ্যে রনি জানায়, ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করায় আর ছাত্রলীগ করা হয়তো সম্ভব হবে না। সে কারণে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ২০ লাখ টাকার দরকার। সেই টাকা তাকে জোগাড় করে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় রনি। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বাদীকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের জন্য বাদী চাপ দিলে চলতি বছরের ৫ জুন রনি তাদের কেরানীপাড়ার বাসায় আসে এবং আবার তাকে ধর্ষণ করে।

এই শিক্ষিকার অভিযোগ, রনি তাকে সরে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে। সে হুমকি দেয়, তার হাত অনেক লম্বা এবং প্রশাসন তার কথামতো চলে। গত ১২ জুলাই তারিখে রংপুর নগরীর গনেশপুর ক্লাব মোড় এলাকায় রনির ফুফুর বাড়িতে তাকে নিয়ে গিয়ে বলে তার সঙ্গে কোনও বিয়ে হয়নি রেজিস্ট্রি হয়নি এবং কোনও কাবিননামাও সম্পাদিত হয়নি। এরপর তার সহযোগীদের দিয়ে তাকে তার ফুফুর বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

অবশেষে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন ওই নারী। সোমবার (১২ অক্টোবর) রাতে এ প্রতিনিধিকে বাদী জানান, তার মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে অনেক দিন হলো, কিন্তু এখনও প্রতিবেদন পায়নি বলে পুলিশ তাকে জানিয়েছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, অভিযোগ দায়েরের এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও পুলিশ রনিকে গ্রেফতার করছে না। বরং তার ক্যাডাররা তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় সে থানায় জিডিও করেছে। তিনি অবিলম্বে রনিকে গ্রেফতার ও তার নিরাপত্তা দাবি করেন।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, রনিকে অব্যাহতি দেওয়ার চিঠি আজ ঢাকা থেকে এসে পৌঁছেছে। ১০ অক্টোবর থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *