স্বপ্নভূমি নোবিপ্রবি

স্বপ্নভূমি নোবিপ্রবি

ফজলে এলাহি ফুয়াদ


নোবিপ্রবি অথবা NSTU নামে পরিচিত সবার কাছে। পুরো নাম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সাফল্যের অগ্রযাত্রার ১৫ বছরে রয়েছে পেলে আসা হাজারো স্মৃতি।

রাজধানী থেকে ১৬০ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত দেশের উপকূলীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যা সকলের নিকট উপকূলীয় অক্সফোর্ড নামেও পরিচিত।

প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের ভাস্কর্য দন্ডায়মান। বামে পাউন্টেইন পেইন খ্যাত শহীদ মিনার। একটু সামনে গেলেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেখা পড়বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য নির্মিত ভাস্কর্য।

এখানে রয়েছে দুটি নির্মিত এবং একটি নির্মাণাধীন সহ মোট তিনটি একাডেমিক ভবন। এ ছাড়া হাজী ইদ্রিস আলী অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরি ভবন, পাঁচটি হল সহ আরো অনেক স্থাপনা।

এখানে প্রতিনিয়ত গল্প সাজে। ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন বুনে তরুন প্রজন্ম। এক দিন বড় হবে, খুব বড়! যেখানে দাড়িয়ে গাছের মত ছায়া দেবে নিজ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের মানুষগুলির। বিশেষত্ব দিবে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের।

নাইম উদ্দিন এই তরুন প্রজন্মের একজন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখি নোবিপ্রবি কে নিয়ে, নিয়ে যেতে চাই নতুন এক উচ্চতায়। জীবন যুদ্ধে এক জন সফল মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাড়াতে চাই।

স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের এপ্রিল। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে প্রতিদিনই নোবিপ্রবির সামনে দিয়ে আসতাম আর স্বপ্ন দেখতাম, একদিন ঘুরে দেখব পুরোটা ক্যাম্পাস। ১০১ একরে কি আছে? সারাদেশের শিক্ষার্থীরা কেন আসে এখানে! তখনো একদমই মাথায় আসেনি যে, মাত্র কয়েক দিন পরে এই জায়গাই হবে আমার নিজের ঠিকানা!

সম্ভবত ২০১৪ সালের অক্টোবর। সকাল ৮ টায় ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উপস্থিত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী ইদ্রিস আলী নামের বিশাল অডিটোরিয়ামে। জীবনের নতুন এক অধ্যায়, নতুন সব মুখ। নোবিপ্রবি নিয়ে কল্পনাটা ছিল একটু ভিন্ন। এখানে ক্লাস করার চেয়ে ঘোরাফেরা এবং আড্ডা দেওয়া বেশি। স্কুল কলেজের মত ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই।

কিন্তু কোথায় কিসের কল্পনা, এসে দেখি এ এক নতুন জগত! প্রথম দিনের প্রথম ক্লাসেই স্যারের নিয়ম কানুন নিয়ে বিশাল এক লেকচার। ঠিক সময়ে না আসলে ক্লাস এ ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই এই করলে এই এই শাস্তি। আবার উপস্থিতির জন্যও ৫ নাম্বার বরাদ্দ। এ কথা শুনে তো রীতিমত চোখ কপালে!

লাল সাদা বাসের কথা মনে পড়তেই মনে হলো এখানে আছে কিছু সুখের স্মৃতি। লাল বাসের দোতলায় বসে বাসায় ফেরার পথে সম্মিলিত কন্ঠে গান গাওয়া তো ছিলো নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা। সোনাপুর ডিগ্রি কলেজের সামনে দিয়ে যখন নোবিপ্রবির লাল সাদা বাস গুলো সর্বোচ্চ গতিসীমায় চলতো, তখন কিছু অসহায় চোখ তাকিয়ে থাকতো নোবিপ্রবির বাসের দিকে। হয়তো তারাও ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু নোবিপ্রবিতে চান্স হয়নি। চান্স পায়নি বলে হয়তো অনেক কষ্টও পেত তারা।

এত শত গল্পে স্মৃতি যে আরো আছে শান্তি নিকেতনে বসে চায়ের কাপে ঝড় তোলা, সালাম হলের বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখা, ব্যাকলগ বনে বসে ক্লাস মিস দেওয়া, সেন্ট্রাল ফিল্ডে বসে গিটারে সুর তোলা, নীল দীঘীর পাড়ে জন্মদিন সেলিব্রেশন করা বাসের সিট রাখতে হুড়োহুড়ি করা এসব আমদের দৈনিক রুটিনে ছিলো

প্রতিদিন কতশত গল্পের জন্ম হত। কত সব চিন্তা আসতো। আড্ডায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া এই বন্ধুরা শিক্ষাজীবন শেষে কে কোথায় যাবে তার কি কোনো হদিছ থাকবে! গানে আড্ডায় ঘোরাঘুরি আর হালকা পড়াশুনোয় আর শত নিয়ম কানুনের বেড়াজালে ৪টি বছর পার হয়ে গেল। শুরু হল সমাপ্তির সূচনা।

চার বছরের এত স্মৃতি, এত সুখ দুঃখ, হাসি কান্না সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বিদায় বেলায়। দীর্ঘ ৪ বছর আগে যে যাত্রার শুরু হয়েছিল, নিমিষেই তা শেষ হয়।

আজও লাল সাদা রঙের সেই বাসগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি চোখে পড়লেই। আহা… আবারো যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই দিনগুলোতে! হয়তো এ রকম আশায় ব্যক্ত করে করে নোবিপ্রবি ছেড়ে আসা সকল শিক্ষার্থী।

বাস্তবতার জাঁতাকলে পিষ্ট প্রতিটি মানুষের মনেই থাকে জীবনে সফল হওয়ার ভাসনা। সে পালে হাওয়া দেয় নোবিপ্রবি নামক এই স্বপ্ন রাজ্য। অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। কেউ সে যুদ্ধে সফল হয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় কেউ বা হারায়। তবে নোবিপ্রবি উজ্জল তার স্বমহিমায়।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *