১৯৮১ সালে প্রকাশিত বইয়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আভাস!

১৯৮১ সালে প্রকাশিত বইয়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আভাস!

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


করোনা-ভাইরাসে সারা বিশ্ব যখন আতঙ্কগ্রস্ত, এমন কি এই ভাইরাসে হারিয়েছে অনেক প্রাণ। আলোচনা কেন্দ্র যখন এই ভাইরাস ঠিক সেই সময়ে ১৯৮১ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ডিন কুনজ নামে একজন ফিকশন লেখকের একটি বই সামাজিক যোগাযোগ আলোচনার ঝড় তুলেছে।

ডিন কুনজের থ্রিলার ‘দ্য আইজ অফ ডার্কনেস’ বইয়ের প্রচ্ছদ এবং বইয়ের একটি পৃষ্ঠা তুলে দিয়ে বলা হচ্ছে, চীনের উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের কথা নাকি ওই বইটিতে লেখা হয়েছিল। কুনজের লেখা বইটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে যে পোস্ট দেওয়া হয়েছে, সেগুলো এরইমধ্যে হাজার হাজার বার শেয়ার ও রি-টুইট হয়েছে।

বইটিতে একজন শোকার্ত মায়ের ছেলের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে রহস্যময় এক পরিবেশে ঢুকে পড়ার কাল্পনিক কাহিনী তুলে ধরে লেখা একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসের কথা বলা হয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘উহান-৪০০’। ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকলে মৃত্যু অনিবার্য বলে বলা হয় বইটিতে।

সম্প্রতি নভেল করোনা-ভাইরাস ছড়িয়েছে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকেই। এদিকে কভিড-১৯ নাম পাওয়া এই রোগে মৃতের সংখ্যা তিন সহস্রাধিক ছাড়ানোর মধ্যে উহান শহরটি এখনও রয়েছে চীন সরকারের বিশেষ নজরদারিতে। ‘উহান-৪০০’ ও নভেল করোনাভাইরাসের মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছেন সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ। এ ভাইরাস নিয়ে ডিন কুনজ চার দশক আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে চলতি বছরের গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে রয়টার্স বিষয়টি সম্পর্কে বলছে, আংশিক মিথ্যা দাবি। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, কুনজ আসলে একটি কাল্পনিক ভাইরাস নিয়ে লিখেছেন যার নাম চীনের ওই শহরের সাথে মিল রেখে তিনি দেন ‘উহান-৪০০’। উহান থেকেই কভিড-১৯ এর শুরু হলেও এই রোগের উপসর্গ ও আচরণের সঙ্গে বইয়ে উল্লেখিত ভাইরাসের কোন মিল নেই। এছাড়া পৃষ্ঠাটি সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দাবি করা হচ্ছে, কুনজের বইয়ে ২০২০ সালে নিউমোনিয়ার মতো এই রোগটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে বলে লেখা আছে; সেই পৃষ্ঠাটি আসলে ওই বইয়ের নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ছড়িয়ে পড়া লাইনগুলো ২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘এন্ড অফ ডেজ: প্রেডিকশন অ্যান্ড প্রফেসিস অ্যাবাউট দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড পেপারব্যাপ’ থেকে নেওয়া।

বইয়ের লেখক সিলভিয়া ব্রাউনি নিজেকে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করেন। বইটিতে তিনি লিখেছেন, “২০২০ সালের দিকে তীব্র নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর একটি রোগ ছড়িয়ে পড়বে এই ব্রহ্মাণ্ডে। এতে মানুষের ফুসফুস আর শ্বাসনালী আক্রান্ত হবে, কিন্তু কোনো চিকিৎসাই কাজে আসবে না।”

এদিকে সম্প্রতি আলোচিত ডিন কুনজের বইয়ের যে পৃষ্ঠাটির কয়েকটি লাইন নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে সেখানে বলা হয়েছে, ”ওরা এর নাম দিয়েছে ‘উহান-৪০০’; কারণ উহানের বাইরে একটি আরডিএনএ ল্যাবে এই ভাইরাসের জন্ম। এবং ওই গবেষণাগারে মনুষ্যসৃষ্ট অনুজীবের মধ্যে এটি চারশতম।”

ডিন কুনজের বইয়ে ‘উহান-৪০০’ কে কুনজ বর্ণনা করেছেন ‘এক দশকের মধ্যে চীনের সবচেয়ে গুরুতর আর ভয়ঙ্কর অস্ত্র’ হিসেবে।

এছাড়া উহান-৪০০’ ভাইরাস মানুষের শরীরে সুপ্ত থাকতে পারে মোটে চার ঘণ্টা। কিন্তু ভাইরাস শরীরে ঢুকলে কভিড-১৯ রোগে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে এক থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। কুনজের বইয়ে বলা হয়েছে, উহান-৪০০ আক্রান্ত হলে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা শতভাগ।

এদিকে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, উহান-৪০০ এবং কভিড-১৯ রোগের উপসর্গও একেবারে আলাদা। দ্য আইজ অফ ডার্কনেস-এর প্রথম মুদ্রণে ডিন কুনজের এই ভাইরাসের নাম ‘উহান-৪০০ ছিল’ না। বরং সেখানে এই ভাইরাসের নাম ছিল রাশিয়ার একটি শহরের নামে ‘গোরকি-৪০০’। গুগলে খোঁজ চালিয়ে বইটির ১৯৮১ সালে ছাপা সংস্করণ থেকে এই তথ্য উদ্ধার করেছে রয়টার্স। ওই মুদ্রণে ‘গোরকি-৪০০’ থাকলেও ‘উহান-৪০০’ বলে কোনো ভাইরাস লেখা নেই। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের (এসসিএমপি) বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাসের নাম বদল করা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে বইটির পুনঃমুদ্রণের সময়। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধ ছিল তখন সমাপ্তির পথে। আর এরপর ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তিও ঘটে। পুনঃমুদ্রণের সময়েই ‘গোরকি-৪০০’ হয়ে যায় ‘উহান-৪০০’ ভাইরাস।

ডিন কুনজে তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে বলা হয়েছে, আগামী ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলসে পাঠকের সাথে ‘লাইভ টক’- এ অংশ নেবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *