অবসরে হতাশা কাটিয়ে উঠতে বেরোবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

সাকীব খান
বেরোবি প্রতিনিধি


বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কবলে প্রিয় মাতৃভূমি। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আজ নিয়মের বেড়াজালে বন্দি। বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবে খুলবে এমন কোন আভাস ও নেই।

এমন পরিস্থিতিতে ক্লাস, এসাইনমেন্ট এর চাপমুক্ত হয়ে অধিকাংশ সময় ঘরে বসে কাটাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এই অফুরন্ত অবসরে অনেকে হচ্ছেন নিজের প্রতি বিরক্ত কেউবা হচ্ছেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

এমন সব বিরক্তি কিংবা হতাশা কাটিয়ে নানাভাবে উপভোগ করতে পারেন এই অবসর।করতে পারেন নিজের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি কিংবা ব্যক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন। এসব নিয়েই নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন শিক্ষার্থী।



তরিকুল ইসলাম পিয়াস
লোকপ্রশাসন বিভাগ
সভাপতি-বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটি ডিবেট ফোরাম।

“করোনা কালে মানসিক বিষণ্ণতা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এই দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন আমাদেরকে কিছু সুযোগও দিয়েছে বটে। ক্যাম্পাসে থেকে বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা,গান,গল্প হতো। ভার্চুয়াল জগতে এগুলো কিন্তু থেমে নেই। অপরদিকে মা বাবা তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তেমন কিছু বুঝতেন না। সেজন্য তাদেরকে খুব বেশি সময় দেয়া হতো না। এই সময়ে মা বাবার পাশে থেকে যতটুকু পারেন সময় দিন। দেখবেন তাদেরও মন ভালো থাকবে আপনারও।

নতুন কিছু শেখার আনন্দও আমাদের মানসিক বিষণ্ণতা কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।বাড়িতে মায়ের পাশে বসে কিংবা ইউটিউব দেখে বিভিন্ন রান্না শেখা,হ্যাণ্ড ক্রাফটস বানাতে শেখার আনন্দ আপনাকে অবশ্যই মানসিক প্রশান্তিতে রাখবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি,করোনাকালে আমাদের অনেকেই এমন আছেন যারা ইন্টারনেট লিটারেসিতে সমৃদ্ধ হচ্ছেন।

বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও বিনামূল্যে অনেকগুলো সমৃদ্ধ কোর্স অফার করছে।সেই সুযোগ গুলো লুফে নিলে অর্জনের পাল্লা ভারি হবে। জুন-জুলাই মাস কিংবা বর্ষা কালের কথা যদি বলেন, এটি গাছ লাগানোর সর্বোত্তম সময়। সারা বিশ্ব যে করে পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে। সেই মূহুর্তে গাছ লাগানো,গাছের পরিচর্যা করে যেমন প্রফুল্লচিত্তে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন,তেমনি জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলায় অংশীদারও হতে পারবেন।

আমার মতো অলস প্রকৃতির যারা আছেন,তারা অন্তত এই সময়ে বই পড়ার দারুণ অভ্যাসটিও রপ্ত করতে পারেন।বই পড়ার নির্মল আনন্দ অনুভব করবেন,পাশাপাশি নিজেকে সমৃদ্ধও করতে পারবেন। যদি এক বাক্যে বলার চেষ্টা করি তবে,নিজেকে ব্যস্ত রাখুন,প্রতিটি কাজেই আন্তরিক ও মানবিক থাকার চেষ্টা করুন মানসিক বিষণ্ণতা অবশ্যই পালিয়ে যাবে।

করোনা কালে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠবেই একদিন,ততদিন পর্যন্ত আপনি ভালো থাকলে পৃথিবীটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আমরা আবারও একত্রিত হতে পারবো।”



সোহানুর রহমান সোহান
ইতিহাস ও প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ
সভাপতি-গ্রীন ভয়েস(পরিবেশবাদী যুব সংগঠন)

“একটি কথা চিরন্তন, আমাদেরকে এই করোনা কালীন অবস্থাটি মানতে হবে। আমাদের বিষন্নতা, ভাল্লাগেনা, বিরক্তিকর, অসহ্য এসকল বিশেষণ প্রকৃতি এক বিন্দুও তোয়াক্কা করে না। প্রকৃতি তার আপন ধারায় ছুটে চলছে। আমাদেরকেও সেই অনুকূল ধারায় সামিল হতে হবে তবেই মুক্তি সম্ভব।

অর্থাৎ এই বিষয়টিকে অন্তরস্থ করা উচিত যে, যা ঘটছে তার পেছনে অবশ্যই মঙ্গল নিহিত আর সেটি আমার জন্যই অঙ্কুরিত। কেবল এই বিশ্বাসটি হৃদয়ে ধারণ করলেই যে কোনো কাজই সহজলব্ধ হয়ে উঠবে অলসপূর্ণ এই সময়কে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে।প্রথমত আমার প্যাশনটাকে অগ্রাধিকার দিয়েই এ সময়কালে আগানো উচিত।

ধরে নিলাম কারো লিখতে ভালো লাগে, কিংবা মুভি দেখতে ভালো লাগে, কিংবা পড়তে ভালো লাগে কিংবা অন্য কোনো একটা কাজ করতে খুব ভালো লাগে।এই ভালোলাগার কাজগুলো মানুষ ভেদে ভিন্ন এবং একের অধিকও হতে পারে। তবে সেটিকে কেন্দ্র করে একটা টার্গেট করে ফেলুন ১৫ দিনের। যাতে করে ঐ ১৫ দিনে আপনি আপনার পছন্দের কাজটির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ উন্নয়ন ঘটাতে পারেন।

১৫ দিনের পূর্বেকার টার্গেটে সফল হলে ছোট করে হলেও নিজেকে পুরষ্কৃত করুন। আবার ১৫ দিন পর নতুন টার্গেট প্ল্যান নির্ধারণ করুন। তবে হ্যাঁ, প্যাশনে যাতে কোনো ভাবেই বিরক্তির ছাপ না লাগে তাই আইস ব্রেকিং বা নিজ পছন্দ অনুযায়ী ঘরোয়া চিত্ত বিনোদনের খোরাক রাখতে হবে।

আরাধনা এইসময়ের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী হলে মানসিক প্রশান্তি টিও নিশ্চিত হবে এ বিষয়ে পরিপূর্ণ আস্থা রাখি। সর্বোপরি বলবো আমাদের শুদ্ধ কাজগুলোকে এগিয়ে নেবার এটিই মোক্ষম সময়।”


রুবেল হোসেন আদনান
লোকপ্রশাসন বিভাগ

“পুরো বিশ্ব যখন এই মহামারিতে ভুগছে তখন আমরাও এর বড় অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়েছি। সবাই ক্যালেন্ডারের পাতায় প্রতিদিন নিয়ম করে চোখ রাখছি, কতদিন দিনই না হল প্রিয় মানুষ গুলোকে দেখি না, প্রিয় আড্ডা জমে ওঠে না। কবে সুস্থ হবে পৃথিবী কবে আবার একসঙ্গে গেয়ে উঠব জয় গান।

আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি আমাদের যে বয়স এই বয়সে পরিবারের সাথে মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে খাপ খাইয়ে নিতে পারি না। তাই দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে এই ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে। অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে স্কিল বাড়ানোর জন্য অনলাইনে ফ্রি কোর্স সমূহ চালু করেছেন যে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়তে সাহায্য করছে। ই-মার্কেটিং, জয়েন্ট বিজনেস কেউ কেউ আবার বাসায় সবজি বাগান কিংবা ছোট নার্সারী গড়ে তুলেছেন।

অনেকেই সময়ের অভাবে পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেল, ওয়ার্ডের কাজ সমূহ শেখা হয়ে উঠে না, সেটা এই দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে আমরা শিখে নিতে পারছি। কমিউনিকেশন স্কিল ডেভলপ করতে পারেন বিভিন্ন অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে। এসবে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি হতাশা কিংবা একাকিত্বকে ঘুচাবে বলে আশাবাদী।”



হাশেম বাধন
ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ

“বর্তমানে কোভিড ১৯ এর কবলে পড়ে সব কিছু স্থবির হয়ে গেছে। স্থবির হয়ে গেছে সকলের জীবন। বন্ধ হয়ে রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনলাইন ক্লাসও তেমন ফলপ্রসূ নয়। আমেরিকার এক জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে বিশ্বে কোভিড ১৯ এর ফলে ২০ কোটি মানুষ তার কর্মসংস্থান হারাবে,তার মধ্যে বাংলাদেশে ১.৫ কোটি মানুষ বেকারে পরিণত হবে।

তাই কোভিড ১৯ এর পর যারা বেশি দক্ষ তারাই এগিয়ে থাকবে প্রতিযোগিতায়।তাই নিজের পছন্দমত যেকোনো একটি বিষয়ে পুরোপুরি দক্ষ হতে হবে। এজন্য ইন্টারনেটে বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা থাকলেও তারা উদ্যোগ গ্রহণ করতে সংকোচ বোধ করে।কিন্তু উন্নত দেশগুলো প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

অবশ্যই নিজেকে উদ্যোক্তা রূপে তুলে ধরার জন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।যেমন এই সময়ে বাড়িতে বসে করতে পারেন বাগান।”

Scroll to Top