ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক
প্রাণঘাতী ক্যানসারের বিশ্বমানের ওষুধ এখন পাওয়া যাবে বাংলাদেশেই।
সম্প্রতি দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন ও কঠোর মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসের (ইইউ জিএমপি) অনুমোদন পেয়েছে দেশের অন্যতম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের অনকোলজি ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটি (প্ল্যান্ট)।
এশিয়ার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির এই অনুমোদন রয়েছে। ইইউ জিএমপি অনুমোদন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্যরাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইইউ জিএমপির অনুমোদনকে ‘পাসপোর্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
এ বিষয়ে এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান বলেন, ‘মানুষের ক্যানসার নিয়ে একটা চরম ভীতি রয়েছে। ক্যানসার হয়েছে শুনলেই অনেকে বেঁচে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে। তবে ক্যানসার মানেই কিন্তু জীবনের শেষ নয়। এর চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক চিকিৎসায় এর প্রতিরোধও সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় দেখা যায় এই চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল হয়। আমরা দেখি প্রিয়জনের চিকিৎসায় একটি পরিবারকে নিঃস্ব হয়ে যেতে। তাই সব সময় চেয়েছি, বাংলাদেশে বসেই একজন ক্যানসার রোগী যেন সুলভে বিশ্বমানের চিকিৎসা পান।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এসকেএফের অনকোলজি ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটি অবস্থিত। এটি ক্যানসারের চিকিৎসার ইনজেকশন ও মুখে সেবনের ওষুধ—উভয় ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএমপি অনুমোদন পেয়েছে। এর অর্থ হলো কোম্পানিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্যিক পর্যায়ে উৎপাদন–সুবিধা এবং মান ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে।
এই স্বীকৃতি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক দেশে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে এসকেএফ অনকোলজির দক্ষতা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিমিন রহমান আরও বলেন, ‘এসকেএফ অনকোলজি ক্যানসার চিকিৎসার ওষুধ তৈরির লক্ষ্যে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বমানের ওষুধ দিয়ে যদি সঠিক সময়ে ক্যানসারের চিকিৎসা করা যায়, তাহলে অবশ্যই তা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসার ওষুধ দেশে সুলভ মূল্যে সরবরাহ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের খুবই উচ্চমানের ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এ ছাড়া ক্যানসারের চিকিৎসায় বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তির ওষুধ বাংলাদেশে আনার ক্ষেত্রেও কাজ করছি আমরা।’
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোম্পানি হিসেবে এসকেএফের ইইউ জিএমপি অনুমোদন অবশ্যই গর্বের বলছেন চিকিৎসকেরা।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) পরিচালক অধ্যাপক কাজী মুশতাক হোসেন বলেন, ‘দেশের একটি প্রতিষ্ঠান ক্যানসারের চিকিৎসার ওষুধ তৈরিতে এমন একটি স্বীকৃতি পেল, যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের সংবাদ। এর মাধ্যমে আমাদের ওষুধের মান ও চিকিৎসা নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকলে তা দূর হবে। এ স্বীকৃতি দেশের মানুষের জন্য, চিকিৎসাসেবার জন্য স্বস্তির।’
২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের অনকোলজি ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটি। ইউরোপভিত্তিক লাইফ সায়েন্স সলিউশন টেলস্টারের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এই অত্যাধুনিক অনকোলজি ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটি তৈরি হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ক্যানসার চিকিৎসকদের জন্য এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি চমকপ্রদ সংবাদ। এই ধরনের সাফল্যের সুফল জনগণের কাছেই যায়।’ .
তিনি বলেন, মানের কারণেই এই স্বীকৃতি পেয়েছে তারা। এটি একটি বড় অর্জন। ইইউ জিএমপির এই স্বীকৃতির মাধ্যমে চিকিৎসক ও জনগণের আস্থার জায়গা তৈরি করবে তারা।
এসকেএফের ইইউ জিএমপি অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের জন্য একটি বিশাল অগ্রগতি বলে মনে করেন ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কাজী মঞ্জুর কাদের।
তিনি বলেন, ‘ক্যানসারের ওষুধের বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আনতে হয়। এখন দেশে ভালো মানের ওষুধ তৈরি হচ্ছে, যা আমাদের দেশের রোগীদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক।’
এসকেএফ জানায়, উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে এসকেএফ অনকোলজিই প্রথম আইসোলেটর প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ওষুধ তৈরিতে ইউরোপের দেশগুলো থেকে উচ্চমানসম্পন্ন কাঁচামাল আনা হয়।
এ ছাড়া দেশব্যাপী ৩১টি সেবাকেন্দ্র রয়েছে এসকেএফ অনকোলজির, যেখান থেকে রোগী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সহজেই ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। এসকেএফ অনকোলজি বর্তমানে স্তন ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, মলাশয় ক্যানসার, মূত্রাশয় ক্যানসার, রক্ত ক্যানসার, রেনাল ক্যানসার, হেপাটো-সেলুলার ক্যানসার, হেড-নেক ক্যানসারসহ নানা ধরনের ক্যানসার চিকিৎসার ওষুধ তৈরি করেছে।