দ্রুতই শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করা উচিত
নাসির উদ্দীন: গতবছর মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের পর আলরেডি ১৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। মাঝখানে করোনার অবস্থা যথেষ্ট ভালো থাকার পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার ব্যাবস্থা নেয়া হয় নি। অনলাইন ক্লাস পরিক্ষা অবশ্যই অফলাইনের বেস্ট অলটারনেটিভ নয়, কিন্তু এর চেয়ে তো ভালো বিকল্প আমাদের হাতে নেই।
প্রথমদিকে অলনাইনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে অনেকেই অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন এবং এটিই এই প্যান্ডামিক সিচুয়েশনে অনেকাংশেই যৌক্তিক সমাধান। তবে এই ক্লাস পরিক্ষা নেয়ার জন্য জাতীয়ভাবে বা বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নিজস্ব ভাবে নির্দিষ্ট রুলস তৈরি করতে না পারার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও শিক্ষকদের একাংশ অনলাইনে ক্লাসের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ক্লাস নিতেও খুব বেশি আগ্রহ দেখান নি। আবার ক্লাস নিতে গিয়ে উপস্থিতি কম থাকার কারনে অনেক শিক্ষক ক্লাসে আগ্রহ পান নি। আবার শিক্ষকদের একাংশ যথেষ্ট গুরত্ব দিয়েই পড়িয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশ অনলাইন ক্লাসের সুযোগকে ফাঁকি দেয়ার অপশন ভেবে গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে যার দরুন শিক্ষকদের আগ্রহ কমেছে।
অন্যদিকে আপদকালীন সময় বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিম কোম্পানি গুলোর সাথে কথা বলে সাশ্রয়ী রেটে ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারনেটের ব্যাবস্থা করতেও ব্যর্থ হয়েছে। মোটাদাগে বলা যায় শিক্ষা নিয়ে কোনো পক্ষই যথেষ্ট আগ্রহী ছিলো না। যাইহোক তারপরেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যুথবদ্ধ চেষ্টায় অন্তত এক সেমিস্টারের ক্লাস সবারই হয়েছে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, খাদ্য, বস্ত্রের মতই শিক্ষা আমাদের মৌলিক চাহিদা। করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেমন জরুরি, শিক্ষার সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত রাখাও সমান জরুরি বলে মনে করি। আমার কাছে মনে হয়েছে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে যথেষ্ট উদাসীনতা ছাত্রছাত্রীদের হতাশ করছে যার ফলে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।
এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও একটি সমাধান হয়েছিলো পরিক্ষা গুলো অফলাইনে নিয়ে নেয়া। সেটিও ভাল ভাবেই শুরু হয়েছিলো। একটি/দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা হল খুলে দেয়ার জন্য আন্দোলন করার জন্য সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।
ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার প্রধান স্টেক হোল্ডার এটি ভুলে গেলে চলবে না। তাদের জন্য শিক্ষকদের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের দায় আছে এটি এড়িয়ে গেলে হবে না। দ্রুতই একটি রূপরেখা তৈরি করে সেটির বাস্তবায়ন করা উচিত। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে এই মূহুর্তেই পরিক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। যেহেতু ভারতীয় ভ্যারিয়ান্ট আমাদের সাবকন্টিনেন্টে আঘাত হেনেছে সুতরাং আরও কিছুদিন ক্লাসগুলো অনলাইনেই চলুক। তবে অফলাইনে ল্যাব ক্লাস এবং পরিক্ষা শুরু হোক। এই পরিক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিমত।
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ একটি ব্যাচকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার অনুমতি দেবে। মাস্টার্স, চতুর্থ বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ এভাবে। এদের ল্যাব ক্লাস এবং পরিক্ষা অফলাইনে নেয়া শেষ হলে পরের ব্যাচ আসবে। একটি ব্যাচের ল্যাব ক্লাস ও পরিক্ষা নেয়ার জন্য এক মাস সময় বরাদ্দ থাকবে। তবে মাস্টার্স থিসিসের ছাত্রছাত্রীরা সবসময়ই তাদের গবেষণা চালিয়ে যাবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে ফ্রি মাস্ক, টেমপারেচার রিডার এবং ডিসইনফেক্টেড দ্রবণ থাকবে। টেমপারেচার ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি হলে শিক্ষার্থী আইসোলেশনে চলে যাবে। কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থায় সহায়তা করবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজন ছাড়া বহিরাগত কেউ প্রবেশ করবে না। ছাত্রছাত্রীরাও অহেতুক আড্ডা দেবেনা। তাদের ল্যাব ক্লাস বা পরিক্ষা শেষ হলে তারা নিজ হল বা মেসে চলে যাবে।
৪. হলে থাকা শিক্ষার্থীরা হলেই থাকবে। তবে যে ব্যাচের পরিক্ষা হবেনা তারা হলে থাকতে পারবে না। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্স নীতি ফলো করবে। অন্য ব্যাচের কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. অনলাইনে কুইজ/ওপেন বুক এক্সাম/এসাইনমেন্ট/এটেন্ডেন্স ইত্যাদির মাধ্যমে কোর্সের অর্ধেক মার্কের ইভালুয়েশন করে নেয়া। বাকি অর্ধেক মার্কের কিছুটা শর্ট সিলেবাসে অফলাইনে এক্সাম হবে।
এভাবে শিক্ষা-কার্যক্রম আপাতত চালানো যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সক্রিয় রাখুক। তারা নিজেরা গ্রহনযোগ্য সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, ইউজিসির চেয়ারম্যান, সদস্যদের সাথে আলাপ করুক। দায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের অবশ্যই নিতে হবে। আপনারা অভিভাবকদের স্থানে থাকতে চাইলে দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মোদ্দা কথা, শিক্ষা-কার্যক্রম দ্রুতই শুরু করা হোক। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা মানসিক পীড়ন থেকে মুক্তি পাক। সবাই ভালো থাকুক।
লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) ও পিএইচডি গবেষক তহকু ইউনিভার্সিটি, জাপান।