বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা

বাংলাদেশের সেরা ১০ পেশা। বর্তমানে তরুণরা একদিকে যেমন প্রচলিত পেশার দিকে ঝুঁকছে, তেমনি বিভিন্ন সৃজনশীল ও চ্যালেঞ্জিং পেশাও বেছে নিচ্ছে। আবার অনেকে সুবিধাজনক পেশা বেছে নিয়েই থাকছে চিন্তামুক্ত। নিজেদের স্বকীয়তা ঠিক রেখে মেধা ও মননের সমন্বয় ঘটিয়ে পেশাজীবন শুরু করতেও ইচ্ছুক বেশির ভাগ তরুণ। বর্তমান চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের পছন্দের ১০টি পেশা নিয়ে আজকের এই আয়োজন

ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স

বর্তমান দেশে ব্যাংকিং খাতে চাকরির চাহিদা অনেক বেশি। এ পেশাতে প্রতিনিয়ত তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। পাশাপাশি সমাজের কাছে সম্মানজনক পেশা হিসেবে স্বীকৃত। ব্যাংকিং সেক্টরে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো ঢুকে পড়ার কারণে এটি তরুণ-তরুণীদের পছন্দের চাকরি তালিকায় অন্যতম প্রধান বলে গণ্য হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশের সঙ্গে বেতন কাঠামো অনেক ভালো। এখানে চাকরির নিরাপত্তা আছে এবং পেনশনের ব্যবস্থা আছে।

আমাদের দেশে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি এখন অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সেবার মান সরকারি ব্যাংকের তুলনায় ভালো বলে গ্রাহকসংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে বাড়ছে বেসরকারি ব্যাংকের নতুন শাখা। সেই সঙ্গে সেবার মান উন্নত করতে হলে অধিক কর্মী প্রয়োজন।

বর্তমানে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। এখানে বিভিন্ন পোস্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়। তবে এমবিএ, এমবিএম, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, সিএ ডিগ্রিসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। আপনি যদি ব্যাংকিং সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে উল্লিখিত অভিজ্ঞতা অর্জন করে চেষ্টা করে যান।

টেলিকমিউনিকেশন

বর্তমানে আমাদের দেশে টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়ার একটা ধুম পড়ে গেছে। এখানে চাকরি করার কারণে একজন কর্মী অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটি সরকারি ছুটির সঙ্গে মিল রেখে ধরা হয়। বেতন ও কাজের পরিবেশও ভালো। তাই শিক্ষিত বেকারদের পছন্দের প্রথম সারিতে পড়ে এ সেক্টরের চাকরি এবং এখানে কাজ করার সুযোগও অনেক বেশি। আপনি যদি টেলিকমিউনিকেশনে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে প্রতিটা কোম্পানির একটা নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, সেখানে অথবা পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেখে সিভি জমা দিতে পারেন।

সিভি জমা দিয়ে রাখলে লিখিত পরীক্ষার ডাক আসতে পারে। লিখিত পরীক্ষার পর ভাইবা বোর্ডের সম্মুখীন হতে হবে। সেখানে উত্তীর্ণ হলে আপনার কাঙ্ক্ষীত চাকরিটি পেয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশে যে কয়েকটি সম্ভাবনাময় শিল্প আছে তার মধ্যে টেলকো কোম্পানিগুলো অন্যতম। এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে গ্র্যাজুয়েটসহ নেটওয়ার্কিং ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল, কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশন জানা থাকলে ভালো।

সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং

এ পেশাটি খুব চ্যালেঞ্জিং অথচ সম্ভাবনাময়। যারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং সেক্টর উপযুক্ত স্থান। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত নতুন প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে এবং তাদের পণ্য বাজারজাত করতে প্রচুর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। যদিও এক সময় সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং একই ডিপার্টমেন্ট ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেলস ও মার্কেটিং আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট হয়েছে।

দেশীয় কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশী অনেক কোম্পানিও বাংলাদেশে তাদের পণ্য বাজারজাত করছে। ফলে বাড়ছে এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান। তাই এসব ডিপার্টমেন্টে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে চাকরির জন্য সাধারণত বিবিএ, এমবিএ, মার্কেটিং, ফিন্যান্স ও হিসাববিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েট চাওয়া হয়। বর্তমান সময়ের সেরা ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অন্যতম।

মেডিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস

বর্তমানে আমাদের তৈরি ওষুধ দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। তাই এ সেক্টরে প্রতিনিয়ত দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন হচ্ছে। এ সেক্টরে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া এমএসসি, এমবিএ, এম ফার্ম, বি ফার্ম ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। মেডিকেল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো মাসিক নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি টার্গেট পূরণের ওপর অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয়।

বর্তমানে অনেকেই ডিগ্রি পাস করে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। কাজের ক্ষেত্র অনেক বড় হওয়ায় এ সেক্টরে চাকরি পেতে তেমন কষ্ট পোহাতে হয় না। সেলসম্যান থেকে শুরু করে রিজিওন্যাল ম্যানেজার পর্যন্ত খুব সহজেই পাড়ি দেয়া যায়। থাকতে হয় অধ্যবসায় ও ইচ্ছা। তবে পরিশ্রমীরা এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যায়। কাজের অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকলে এখানে খুব দ্রুত বেতন বেড়ে যায়- তাই নতুন যারা চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে তাদের জন্য উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার মেডিকেল অ্যন্ড ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টর।

ক্রিয়েটিভ মিডিয়া

আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে কর্মসংস্থানের দিকও পরিবর্তন হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ের সেরা ক্যারিয়ারের মধ্যে মিডিয়া সাইড উঠে এসেছে। মিডিয়া সাইডের মধ্যে রয়েছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে রয়েছে-সাংবাদিকতা, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, আইটি প্রভৃতি এবং ইলেকট্রিক মিডিয়ায়ও সাংবাদিকতা, ক্যামেরাম্যান, প্রোগ্রাম তৈরি করা অর্থাৎ ডিরেক্টর, অভিনয়, উপস্থাপনাসহ অনেক সাইড।

বর্তমানে এ সেক্টরের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ জড়িত রয়েছে এবং দিন দিন কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ সৃষ্টিতে এ সেক্টরের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা থাকার কারণে বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোর্সের ব্যবস্থা করছে এবং কিছু বেসরকারি ইউনিভার্সিটি স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালু করছে। এ সেক্টরের চাকরির জন্য সাংবাদিকতা বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট এবং অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রিসহ বিভিন্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়। তাই এখানে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান। ওপরের প্রতিটি সেক্টরই বর্তমানে ক্যারিয়ার গড়ার উপযুক্ত স্থান। তাই যারা নতুন পেশা জীবনে প্রবেশ করছেন তাদের আগে নিজের সম্পর্কে জেনে এবং নিজের কর্মদক্ষতা নিজেকেই যাচাইপূর্বক এসব সেক্টরের যেটি উপযুক্ত মনে হয় সেখানে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেক্ট

বিশ্বের চাহিদার ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও এ সেক্টরের প্রতি নতুনদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণরা ঝুঁকছে এখন এ পেশায়। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেক্টের ওপর বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। একটা সময় হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হতো। দিন পাল্টেছে। লেগেছে বদলের ছোঁয়া। দেশে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখান থেকে যে কেউ ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেকচার হিসেবে ভবিষ্যৎ গড়তে পারেন।

এ সেক্টরে চাকরি করতে হলে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ, মাস্টার্সসহ বিভিন্ন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যোগ্যতা চাওয়া হয়। আর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অন্য সেক্টর থেকে এখানে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন নিশ্চিন্তে। শুধু প্রয়োজন নির্দিষ্ট এ যোগ্যতা ও কিছু কারিগরি অভিজ্ঞতা। এ পেশায় রয়েছে অর্থ-বিত্তের পাশাপাশি সম্মান-সমীহ এবং সামাজিক মর্যাদা।

হিউম্যান রিসোর্স

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সব কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া এবং তাদের কাজের তদারকি করা হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের কাজ। একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চাহিদা অনুযায়ী এইচআর বিভাগ কোম্পানির প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে এবং কর্মীদের বেতন কাঠামো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে এইচআর ডিপার্টমেন্ট। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা এবং এরা যাতে ঠিকভাবে কাজ করে সেদিকেও নজরদারি করে এ বিভাগ। চাকরিটি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই মাস্টার্স, এমবিএ মেজর-ইন-এইচআরএস ডিগ্রিধারী হতে হবে। তাহলে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। কিছু কাজের আগে অভিজ্ঞতা থাকলে আরও ভালো হয়।

টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ

আমাদের দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং দিন দিন এ সেক্টরে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বর্তমানে অনেক কোম্পানি রিসার্চ সেন্টার চালু করছে সেখানেও কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। টিচিং অ্যান্ড রিসার্চে ক্যারিয়ার গড়তে হলে নিষ্ঠাবান হওয়া বঞ্চনীয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা- প্রয়োজন স্নাতকোত্তর এমবিএ, পিএইচডি, সিএসই, ইইউ ইত্যাদি। এ সেক্টরে কাজের মাধ্যমে অনেক সম্মান অর্জন করা যায় এবং ভালো পারফর্ম করতে পারলে ভালো অর্থ উপার্জন সম্ভব। তাই যারা টিচিং অ্যান্ড রিসার্চে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করে এ সেক্টরে আসা উচিত।

গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং

বর্তমানে আমাদের দেশের প্রধান রফতানি খাতই হল গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং। দেশের মোট রফতানি আয়ের অধিকাংশই এ খাত থেকে আসছে। বিশাল এ সেক্টরে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন পড়ছে। সেই তুলনায় কোম্পানির মালিকরা লোকবল পাচ্ছেন না। এ সেক্টরে যেমন প্রয়োজন হচ্ছে সাধারণ শ্রমিক, তেমনি প্রয়োজন দক্ষ ও শিক্ষিত লোকবল- যারা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ে কাজ করবেন। গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশে অনেক বায়িং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যারা বিদেশ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করে দেশীয় গার্মেন্টে কাজ পরিচালনা করে থাকে। এখানেও দক্ষ লোকবলের সংকট। এ সেক্টরে বর্তমানে উচ্চ বেতন দিয়ে দক্ষ লোকবল নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এ সেক্টরে গ্র্যাজুয়েটসহ বিবিএ, এমবিএ ইত্যাদি যোগ্যতা চাওয়া হয়। পাশাপাশি মার্চেন্ডাইজিং জানা থাকলে চাকরি পেতে সহজ হয়।

এনজিও

আমাদের দেশে চাকরির ক্ষেত্র তৈরিতে এনজিও এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এনজিওগুলো শহর থেকে গ্রামে সব স্থানেই চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিদেশী এনজিওগুলোর পাশাপাশি দেশীয় অনেক এনজিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সেক্টরে চাকরির প্রতি তরুণদের আগ্রহ বেশি। আর এর প্রধান কারণ হল এখানে বেতন অনেক বেশি দেয়া হয়। যদিও একটু পরিশ্রম করতে হয় এ সেক্টরে, তার পরও ভালো একটি অবস্থানে যেতে পারলে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। এ সেক্টরে চাকরির জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি, সিএ, এমবিএ ইত্যাদি শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। ইংরেজিতে লেখা ও বলা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *