বাজেট ব্যবস্থাপনায় টাকা বৃদ্ধির চেয়েও সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


গত বুধবার আমি রিকশায় করে আমার বোনের বাসা মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিং যাচ্ছিলাম। রিকশাওয়ালার নাম ইয়াছীন মিয়া, বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর। আমি সবসময় চেষ্টা করি রিকশা উঠে রিকশাওয়ালার সাথে টুকটাক কথা বলতে।

কথার এক পর্যায়ে হঠাৎ রিকশাওয়ালা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো স্যার আগামি মাসে চালের দাম কী বাড়বে? আমি বললাম, কেমন বাজেট চান? জবাবে তিনি উত্তর দেন, ‘পেট ভইরা খাইতে পারলেই হয়, বাজেটের খোঁজ রাখি না। করোনায় তেমন আয় নেই। পরিবারের অনেক লোক বেকার হইয়া গেছে।’ এটা শুধু ইয়াছীন মিয়ার কথা হয় করোনাকালীন সকল নিম্ন ও মধ্যবিত্তলোকের অধিকাংশ লোকের এটাই স্বাভাবিক কথা।

বাংলায় একটি কথা আছে যত গর্জে তত বর্ষে না। এটি বাংলাদেশের বাজেটের ক্ষেত্রে এটা সত্যি যে, বাজেট নিয়ে সংসদে ও সংসদের বাইরে এতো আলোচনা-সমালোচনা করে নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে আমজনতা সবাই ক্লান্ত হয়ে যায়। আর দেশে বাজেটের অনেক আলোচনা হলেও প্রান্তিক মানুষের সমস্যার তেমন সমাধান হয় না বললেই চলে। বাজেটে কৃষকের সমস্যা তেমন দেখা হয়নি। যাদের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন হয়ে থাকে, তাদের জন্য কতটা সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে তা দেখা দরকার।

দেশের উন্নয়নের জন্য বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য কিছু থাকবে না– এটা হতে পারে না। বাজেটে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি থাকা দরকার। যার মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যার সমাধান করতে পারি। দরিদ্র মানুষের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগও বাড়াতে হবে।

সূত্রগুলো বলছে, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হারে। গত ১০ বছরে তা বেশ কয়েকবার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হারেও বেড়েছে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বাড়ছে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হারে।

করোনা ভাইরাসের আঘাতে প্রায় সবকিছু স্থবির থাকলেও আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ ঠিকই চলছে। আগামী ১১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। সংবাদপত্রের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো। আগামী বাজেটেও এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো।

চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় তা মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে শেষ মুহূর্তে এ আকার আরও বাড়তে পারে। তবে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদগন, করোনাকালীন ১ বছরের পরিবর্তে প্রথম ৬ মাসের জন্য বাজেট চেয়েছেন। এতে একটি সুবিধা হবে, প্রথম ৬ মাস পর্যবেক্ষন করে পরবর্তী ৬ মাস একটি কার্যকরি বাজেট দেওয়া যাবে।

আমি চেষ্টা করছি দেশের কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনামূলক চিত্র ‍তুলে ধরার জন্য।


কৃষি খাত

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের উন্নতি অনেকাংশে নির্ভর করে কৃষিখাতের উপর। তাই এদেশের বাজেটে প্রাধান্য দিতে হবে কৃষি খাতকে। দেশের মানুষের দারিদ্র্য মোচন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট সবসময়ই আমাদের কাম্য। বর্তমান সরকারের আমলে বাজেটের আকার বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি কৃষি বাজেট।

কৃষি খাতে সমস্যাসমূহ

কৃষকদের কোন সুনির্দিষ্ট ডেটাবেজ নেই, এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রে পেশা উল্লেখ নেই এবং কৃষকদের অন্য কোন প্রকার ডিজিটাল কার্ডও নেই। যার ফলে অনেকাংশে কৃষির ভর্তুকি সুবিধা সাধারণ কৃষক পান না। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া,দেশে শস্য বীমার প্রচলন নেই, জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে কৃষিতে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি, শ্রমিক সংকট, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা পরিকল্পনার অভাব, কৃষি গবেষণার বাজেট প্রতুলতা, কৃষি উদ্যোক্তা তৈরিতে কোন প্লাটফর্ম না থাকা, কৃষি বিপনন অধিদপ্তরে দক্ষ লোকবলের অভাব, জাতীয় কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন গঠনে জটিলতা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের অভাব, কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণে স্বীকৃতি প্রদানসহ স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানে ব্যবস্থার অভাব।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬১৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে প্রায় ২৬ শতাংশ। এ খাতে এডিপি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে প্রায় ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দ বাড়ছে ২৬ শতাংশ বা প্রায় ১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা।


স্বাস্থ্য খাত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, একটি দেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। গত ৪৯ বছরে, বাংলাদেশে বাজেটে জিডিপিতে স্বাস্থ্যখাতে ১%ও কম ধরা হয় যা সেটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবার আসি দেশের স্বাস্থ্য খাতে।

২ জুন ২০১৮ যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটের গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও মান-সূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবার নিচে। গবেষণায় যে ১৯৫টি দেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩।

স্বাস্থ্য খাতে সমস্যাসমূহ

ডাক্তার-নার্স-এর পেশাদারিত্বের অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ক্যাডার বৈষম্য, সেকেলে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মেডিক্যাল টেকনোলজি ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি, স্বাস্থ্য সেক্টরে জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব, হাসপাতালের নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পেশাজীবীদের সংগঠনের অপরাজনীতি চর্চা।

নেপালের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির কত জানেন? ২.৩%, পরিমাণে যা খুব বেশি নয়। তবে নেপালের অর্থনীতির চেয়ে তা কমও নয়। আলাদা করে নেপালের কথা বলছি, কারণ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ০.৯%।

নেপালের চেয়ে বাংলাদেশের ১.৪% কম। মালদ্বীপ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে জিডিপির ১০.৮%। শ্রীলঙ্কা ২%, ভিয়েতনাম ৩.৮ %। বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ বাংলাদেশে ৩২ ডলার, ভারতে ৬১ ডলার, নেপালে ৩৯ ডলার, ভিয়েতনামে ১১১ ডলার, মালদ্বীপে ৭২০ ডলার, শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১০০০ ডলার। যার ফলে বাংলাদেশে বাজেট স্বল্পতা ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় আজকের স্বাস্থ্যখাতের ভঙ্গুর অবস্থা।

কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখেছি, দুই সেক্টরে শতকরা হার বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি মিলে একসাথে টাকার পরিমান দিয়ে বাজেট ঘোষনা করা হয়েছিল। কারো যদি স্বদিচ্ছা না থাকে সেই সেক্টর কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। তবে জাতীয় ব্যর্থতার জন্য কোন মতেই ডাক্তার ও শিক্ষকদের এককভাবে দায়ী করা যাবে না। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমনভাবে জড়িত যে তারা অবিচ্ছেদ্য। অল্পস্বল্প যতটুকুই এই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছি, স্বাস্থ্যখাতে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে তারও বড় অংশ দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করছে। করোনার চেয়েও বেশি মারাত্নক ভাইরাসে আক্রান্ত স্বাস্থ্যখাত। সম্প্রতি দুদক স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ১১ উৎস চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ না করে বাজেট বাড়ালেও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন হবে না। উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে ৪৩ জন দলীয় কর্মী, সংসদ সদস্য, মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছিলেন দুর্নীতি আর অযোগ্যতার কারণে। আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য কঠোরভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক হিসাব মতে, বিদেশে চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশিরা বছরে ২.০৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যে আমরা নিজেরাই নিজেদের তৈরী ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল না। তার প্রমাণ হলো আমরা সন্তানের শিক্ষার প্রশ্ন যখন আসে তখন আমাদের তৈরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাই না। আমাদের পরিবারের স্বাস্থ্যসেবার প্রশ্ন আসলে আমাদের তৈরী সরকারি হাসপাতালে আমরা যেতে চাই না। সুতরাং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দেশে স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত না করা গেলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র কখনোই পরিবর্তন হবে না।


শিক্ষা খাত

ইউনেসকো ও বিশ্বব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলে আসছে। গত ৪৯ বছরে, বাংলাদেশে বাজেটে জিডিপিতে শিক্ষাখাতে ২% এর কম। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে এ দুটি খাতে বাংলাদেশের ব্যয় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে জিডিপি নেপালের বরাদ্দ ৩.৭% যা বাংলাদেশের চেয়ে ১.৭% বেশি। পাকিস্তানের বরাদ্দও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ২.৬ %। মালদ্বীপ শিক্ষা খাতে ব্যয় করে ৫.২%, ভারত ৩.৮%, শ্রীলঙ্কা ২.২%, ভিয়েতনাম ৫.৭%।

২০১৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেটের শতকরা হার কমানো হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দুই-তৃতীয়াংশই ব্যয় হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে, আর এক-তৃতীয়াংশ হয় শিক্ষার উন্নয়নে। আমরা যদি সত্যি সত্যি শিক্ষার উন্নয়ন চাই, তাহলে বেতন-ভাতার চেয়ে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে।

শিক্ষা খাতে সমস্যাসমূহ

স্কুলগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত অনেক বেশি এবং আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষার অভাব, ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া, স্কুলগুলোর ম্যানেজিং কমিটিতে অপরাজনীতি এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমের অভাব, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন সমস্যা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের প্রাথমিকের শিক্ষকতায় অনাগ্রহ।

দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য নিয়োগের পৃথক কর্ম কমিশন নেই, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোন ট্রেনিং ইন্সটিটিউট নেই এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল নেই, গবেষনার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট নেই, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি এবং স্থানীয় অঞ্চলের শিক্ষকদের অতিরিক্ত সুবিধা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থা চালু হয়নি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম ও পরীক্ষা ব্যবস্থা ধীরগতি, ছাত্রদের ৪র্থ শিল্প বিপ্লব অনুযায়ী দক্ষতার অভাব, পাবলিক ছাত্রদের উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ডিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে।

উল্লেখ্য, ২০ বছর আগেও মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থী পড়তে আসত বাংলাদেশে। বর্তমানে বাংলাদেশের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এখন মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করে। ১৯৮৯ সালেও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো ছিল না মালয়েশিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখন মালয়েশিয়া মেডিকেল ট্যুরিজমের বিজ্ঞাপন করে জানান দেয়, চিকিৎসা সেবায় তারা পৃথিবীতে তৃতীয়।

আমাদের প্রচুর পরিমাণে হিউম্যান ক্যাপিটাল দরকার। যেটা আসবে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য থেকে। অর্থনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের গবেষকরা মনে করেন, যদি এই দুই খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকে তাহলে একটি কর্মক্ষম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা কোন মতেই সম্ভব নয়। (MDG) এর সফলতার ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের অবস্থানে থাকার সময় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে। তার সুফল এখন তারা পাচ্ছে। আমরা মুখে বলছি, বাস্তবে প্রয়োগ করছি না। তাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়েনি। তবুও যা দিয়েছে তা দিয়ে জিপিএ ৫ না বাড়িয়ে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব অনুযায়ী কর্মসংস্থানের উপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। এ জন্য বাজেট বাস্তবায়নে জোর দেওয়া উচিত।


লেখকঃ পিএইচডি গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট এন্ড ফাইন্যান্স বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

Scroll to Top