বিজয়ের মাসে তারুণ্যের ভাবনা

বিজয়ের মাসে তারুণ্যের ভাবনা

বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মোট সংখ্যার এক বৃহৎ অংশ জুরে ছিলো তরুণরা। সে সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল। বিজয়ের ৪৯তম বছরে এসে বিজয়ের মাসে বর্তমান তরুণরা কি ভাবছে,তাদের অঙ্গীকার কি, রাষ্ট্রের প্রতি তাদের প্রত্যাশা কি, এসব নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন – নুরুদ্দিন আহমেদ।

দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়ে নিয়েছে প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিজয়ী জাতী হিসেবে বাংলাদেশে যে প্রখরতার প্রদীপ প্রজ্বলন করার কথা ছিল,তা কি সত্যিকার রূপ দিতে পেরেছে?

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়ময়ের আখড়ায় পরিণত হওয়ায় বিজয়ী জাতি হয়েও সেই বিজয়ের স্বাদ ৪৯ বছরেও আস্বাদিত হচ্ছে না। তাই বিজয়ের এই মাসে তরুণ প্রজন্মের এক প্রতিনিধি হয়ে প্রত্যাশা করব, এসব অনিয়মের শৃঙ্খল খুব দ্রুতই বিনষ্ট করে সত্যিকারের বিজয়ী জাতির উত্তরসূরি হয়ে বিশ্বকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে প্রিয় ভূমি বাংলাদেশ।

তানভীর আহমেদ রাসেল
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে

শত-সহস্র ত্যাগের বিনিময়ে যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি,সে বিজয়ের মূল্যায়ন করতে জানা জরুরী। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোনো অপশক্তি যেন আমাদের ভুল পথে পরিচালিত না করে। তার জন্য তরুণ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে এবং শক্ত হাতে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের দমন করতে হবে। কারণ তরুণরা যেভাবে স্বদেশের হাল ধরবে, তার উপর দেশের ভবিষ্যৎ অনেকাংশেই নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র, প্রবীণ, নাগরিক সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সকলেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা আবশ্যক। সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।

সাফায়েত সিফাত
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

যুদ্ববিদ্ধস্ত বাংলাদেশ নানান চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অবস্থান করে নিয়েছে। এছাড়াও সেরা উদীয়মান অর্থনীতির দেশের তালিকায় সেরা দশে স্থান করে নিয়েছে। নারীরাও শিক্ষা,চাকরি,বাণিজ্য,রাজনীতিতে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নতির পথে হাঁটছে।

এতদসত্তেও নারীরা সম্পূর্ণ নিরাপদ নই। কিছুদিন পরপর পত্রিকার পাতা খুলতেই ধর্ষণের মতো ঘৃণ্যকর ঘটনার খবর চোখে পড়ে। সরকারে প্রতি আহ্বান; ধর্ষণ রোধকল্পে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হোক। ধর্ষণমুক্ত সমাজ চাই,এ হোক তারুণ্যের অঙ্গীকার।

মারুফ আহমেদ,
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্ন

১৯৭১ সালে বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, আমরা যেন সেই স্বাধীনতার সম্মান সমুন্নত রাখতে পারি সেটাই হওয়া উচিত প্রতিটা তরুণ যুবকের ভাবনা। দেশকে ভালোবেসে দেশের মাটিকে ভালোবেসে শহীদদের রক্তের মান রাখতে আমাদের সকলের উচিত দেশকে উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধশালী গড়ার লক্ষ্য নিজেকে প্রস্তুত করা। বাংলাদেশ যেনো বিশ্বের বুকে শির উঁচু করে থাকে।

সেই লক্ষ্য বাংলার সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সমাজের সকল অন্যায়-অনিয়ম,সুদ,ঘুষ, দুর্নীতি,মাদক,সন্ত্রাস,জঙ্গির রুখে দিতে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত কাম্য। একজন সন্তান তার মাকে যেমন ভালোবাসে, তেমন করে দেশ দেশের মাটিকে ভালোবাসতে হবে।

হাসানুর রহমান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন করতে হবে

একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এত বেশি মানুষের আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। প্রবাদ আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। বিজয়ের অর্ধশতকের প্রান্তে এসেও রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত দেখা যায় দুর্নীতি,অপরাধ,ধর্ষণ,খুন। এছাড়াও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে অর্থ পাচারকারী,অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী, প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ আমলাদের সংখ্যা।

এজাতীয় সকল অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা, চিকিৎসা,কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিটি নাগরিকের জন্য। তরুণদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে প্রতি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদগণের স্মৃতিতে পাঠাগার ও সড়কের নামকরণ করতে হবে। তবেই বিজয়ের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য অর্জিত হবে।

আব্দুল্লাহ আলম নুর
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ট্যাবু ভাঙার কাজে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে

ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অগণিত প্রাণের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের রাষ্ট্র, স্বাধীন বাংলাদেশ। এ দেশে স্বাধীনতা অর্জন হলেও সর্বস্তরের মানুষের আজও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়নি। বর্তমান তরুণ সমাজই পারে সর্বস্তরের মানুষদের মুক্তি দিতে।

আজকের তরুণরা যদি পিছিয়ে পড়া সমাজের জন্য লড়াই করে,প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে,দেশ থেকে বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের মতো ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে একটি মেয়েকে নবজীবন দান করতে পারে,অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দিতে পারে তাহলেই স্বাধীনতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। অধিকন্তু তরুণরা যদি নিজেদের রাজনৈতিক চেতনার সুষ্ঠু বিকাশ ঘটাতে পারে,তাহলে অভ্যন্তরীণ দুষ্টচক্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা ও সর্বোপরি উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারবে।

অনবিলা অনা
শিক্ষার্থী, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment