গ্রাজুয়েশন শেষে ঢাবি ছাত্র ইলিশের কারবার করে লাখটাকা আয়

সানজিদা আরা বিথী, ঢাবি


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের ইংরেজি ভাষা বিষয়ে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা টগবগে তরুণ ; স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধনের একনিষ্ঠ কর্মী, বিএনসিসির ক্যাডেট সার্জেন্টসহ অসংখ্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ সিয়াম।

ইলিশের দেশ চাঁদপুর সিয়ামের বাড়ি হওয়ায় তাজা আসল ইলিশের ব্যবসায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল।মানুষের টিটকারিমূলক সকল কথা উপেক্ষা করে পিছপা না হয়ে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে’ইলিশের বাড়ি’ নামক ফেইসবুক পেইজ খুলে ইলিশের কারবার শুরু করে সাহসী সিয়াম।

এই সাহসী উদ্যোক্তার বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্যাম্পাস টুডের ঢাবি প্রতিনিধি সানজিদ আরা সরকার বিথী।

করোনার এই সময়ে আপনি কি ভেবে ব্যবসায়টা শুরু করলেন?

‘আমি খুবই কনফিডেন্ট একটি ছেলে।বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন করে পরিচিতি পেয়েছি। ‘বাঁধন’করে আমার নাম হয়ে গেছে রক্তচোষা।বিএনসিসি করে সার্জেন্ট, মেজর বলে ডাকে সবাই।কিন্তু অনার্স ফোর্থ ইয়ারের দিকে আমার একটিভিটি কমে গেলে একটি খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়।হলের অস্থিতিশীল পরিবেশ কাটিয়ে,কিছু নেগেটিভ পিপুল থেকে মুক্তি পেয়ে করোনায় বাসায় আসার পর খোলা বাতাস পেয়ে মনে হয়েছে জীবনের উদ্যম ফিরে পেয়েছি।

গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে গেছে সেহেতু চাকরির জন্য রাতে ঘুম হতনা।ভাবতাম কি করা যায়!ভাবতে ভাবতে ১১-১২ টা প্ল্যান রেডি করে প্রতিদিন আগাইতাম। তারপর ‘WE (Women and e-commerce forum)’ নামক গ্রুপে ফ্রেন্ডের মাধ্যমে এড হয়ে গ্রুপটা পর্যবেক্ষণ করে মানুষের বিজনেসের বিভিন্ন লেসন শুনে ইতিবাচক প্রেষনা সঞ্চয় করলাম। হলে ইলিশের মত দেখতে কি খাইতাম কোনো স্বাদ পেতাম না।সবমিলিয়ে ভাবলাম ইলিশ নিয়ে কাজ করা যায় কিনা এবং এখানে ‘WE’ এর একটা বড় অবদান আছে।’

ইলিশের কারবার শুরু করতে গিয়ে কি কি বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন?

‘শুরু করতে গিয়ে আব্বু, বোনেরা বলেছে,’এগুলো নিয়ে কাজ করবি;এর থেকে ভালো কাপড় বিক্রয় কর!’, ‘পড়ালেখা করাইছি এজন্য?’ শুরুতে সবদিক থেকেই ডিমোটিভেশন পাচ্ছিলাম।আমি সবদিক দিয়ে ভালো সোর্স খুঁচ্ছিলাম।

আব্বুর দেখানো নানা যুক্তি শুনে পিছপা না হয়ে দিন ফিক্সড করে বিভিন্ন ইলিশের হাটে গিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করে খোঁজখবর নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনে করে ভাবলাম ইলিশ নিয়ে কাজ করা যেতে পারে; মানুষকে ভালো জিনিসটা দেয়া যাবে।’

ইলিশের সোর্স খোঁজার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

‘যার কাছ থেকে প্রথমদিন মাছ নিয়েছি সে সবকটা মাছ ভালো দিলেও সেইম সাইজের মাছ না থাকায় বলল’ একটা ছোট সাইজ মাছ চলবে!’আমি বললাম আমার কোয়ালিটি আর ওয়েটে কোনো হেরফের হওয়া চাইনা।তারপর সে অন্য জায়গা থেকে মাছ এনে দিয়ে বলল,’ আজ তো প্রথম দিন সমস্যা নাই।’ কথাটি আমার ভালো লাগেনি; হয়তো সে আমার সাথে চিট করবে এই ভেবে পরে ওনার কাছে আর গেলামনা।

এরপর ভালো সোর্স খুঁজতে খুঁজতে এলাকার পরিচিত একজনের সোর্স খুঁজে পেলাম।আসল ইলিশ দেয়ার শর্তে সেখান থেকে এখন নিচ্ছি এবং সে ও আমার ভরসা বজায় রাখছে এবং অন্যান্য সোর্স ও ম্যানেজ আছে।’

প্রথমদিকে কাস্টমার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, কাস্টমার হতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন কি?

‘প্রথম ডেলিভারি দেই আমার বন্ধুর কাছে। দ্বিতীয় অর্ডার ছিল দুই কেজির দুইটি ইলিশ(খুবই রেয়ার,পাওয়া যায়না)এবং এক কেজির একটি ইলিশ;এক সিলেটের আপুর কাছে। ওনার সমস্যা থাকায় এডভান্স ছাড়াই মাছ কিনে আনলাম।কিন্তু পরেরদিন সকালে ওনার মামা মারা যাওয়ায় আপুটা গ্রামের বাড়ি চলে গেছে ওনি জানাল, সিলেটে আত্মীয় কেউ মারা গেলে মাছ খায়না।ওনার দিক থেকে ওনি ঠিক থাকলেও ব্যবসায়ের শুরুতেই আমি মেন্টালি বড় একটা ধাক্কা খেলাম যেহেতু চাঁদপুরের আসল ইলিশের দাম অনেক বেশি।

তারপর আব্বু ইলিশগুলা কিনে নিল।আব্বু প্রথম দিকেও আপত্তি জানালেও পরে আমাকে সাপোর্ট করেছে। এরপর আমি নিজেকে আরো গুছালো করলাম।এরপর থেকে প্রতি অর্ডারে ৫০% এডভান্স নেয়া শুরু করলাম।আলহামদুলিল্লাহ এরপর আর এ ধরনের কিছু হয়নি এবং প্রতিনিয়ত আমি উন্নত করার চেষ্টা করছি।প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সটা কিভাবে আরো ভালো করা যায়। ‘

সাড়া পাচ্ছেন কেমন, কত টাকার মাছ বিক্রয় হলো?

‘ঢাকায় প্রথম প্রি-অর্ডারে নয়টা জায়গায় অনেকগুলো ইলিশ বিক্রয় হয়।দ্বিতীয় প্রি-অর্ডারে চট্টগ্রামে দুইটা জায়গায় ডেলিভারি দেই।সর্বোপরি আস্তে আস্তে মানুষের বিশ্বাসটা অর্জন করতে পারছি।নিজেই ছুটে যাই মানুষের বাসায় হোম ডেলিভারি দেয়ার জন্য।অনেকেই হোলসেলে নিতে চাচ্ছে।এখন আমি প্রি-অর্ডার নিচ্ছি এবং মানুষের খুব ভালো রেসপন্স পাচ্ছি।

১১৭ কেজির আরো বেশি মাছ বিক্রয় হয়েছে।লাখ টাকার মত সেল হয়ে গেলেও প্রফিট অত বেশি না।কারন আমি কোয়ালিটিটা এনসিউর করি যেটা বাজারে করেনা ফলে কস্টটা ও বেশি।’

শেষ প্রশ্ন, ‘ইলিশের বাড়ি’নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

‘আমার’ইলিশের বাড়ি’ চাঁদপুরের তাজা ইলিশের দেশীয় ব্র‍্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই।মানুষের মুখে যতদিন ইলিশের নাম থাকবে ততদিন ‘ইলিশের বাড়ি’র নাম ও থাকবে।

দেশের প্রতিটা জেলার মানুষ চাঁদপুরের তাজা ইলিশটা পাবে।চাঁদপুরের ইলিশের ঘ্রাণ নিয়ে কোনো প্রতারনা হবেনা এমনকি বিদেশেও পৌঁছে যাবে।ব্র‍্যান্ড হওয়ার পর ও ইলিশের কোয়ালিটি এবং মানুষের বিশ্বাস ধরে রাখব।সবাই আমার মত করে স্বপ্ন দেখেনা। আমি যেভাবে স্বপ্ন দেখি আল্লাহর রহমতে ভবিষ্যতে কোয়ালিটিটা ধরে রাখতে পারব; ভালো কিছু করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। ‘

লেন্স

ছোটবেলায় একবার শখ করে আব্বুর চশমা চোখে দিয়েছিলাম৷ দেখি সবকিছুই ঘোলা হয়ে গেল৷ আব্বু বাসায় এলে জিজ্ঞাসা করলাম

— আব্বু তুমি চশমা পরো কেন?
— চোখ খারাপ হয়ে গেছেতো বাবা, তাই চশমা ছাড়া ভালভাবে দেখতে পাইনা৷
— কিন্তু একই জিনিষ, তোমাকে ভাল দেখায়, আর আমাকে দেখতেই দেয়না কেন??

— আব্বু হাসলেন, আর আমাকে বললেন, এটা সাধারণ কাঁচ না বাবা, এটা হল লেন্স৷ সাধারন কাঁচকে অনেক ঘষে-মেজে, কষ্ট দিয়ে এই লেন্স বানানো হয়৷ আর এত কষ্ট সহ্য করেও এরা হাসিমুখে “লেন্স” হয়…. শুধুমাত্র অন্যের জগৎটাকে স্বচ্ছ এবং পরিস্কার করে দেবার জন্য৷

— কিন্তু আমি তো দেখতেই পাচ্ছিনা, তোমার এই লেন্স দিয়ে৷ ও কি আমাকে পছন্দ করেনা?

এবার আমাকে হাসতে হাসতে বুকে জড়িয়ে ধরলেন আব্বু৷ বললেন, এই লেন্সগুলো তৈরীই হয়… দূর্বল চোখের শক্তি ফিরিয়ে দেবার জন্য৷ তোমার চোখতো ভাল৷ তাই তুমি যখনই ওকে চোখে দাও — ও তোমাকে দেখায় এবং বোঝায়, চোখ খারাপ হয়ে গেলে…. চারপাশটা কেমন অস্পষ্ট-ঘোলা হয়ে যায়!

তার মানে, লেন্স দূর্বল চোখকে শক্তি দেয়…. আর ভাল চোখকে, দূর্বল চোখের কষ্টগুলো বুঝতে সাহায্য করে৷

আমি চাই, তুমিও তোমার জীবনটাকে কষ্টের আগুনে পুড়িয়ে, নিজেকে “লেন্স” বানাবে! যেই লেন্স হবে … অসহায়দের সহায়, আর অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা!!

জানি, আব্বুর স্বপ্নকে এখনো বাস্তব করতে পারিনি আমি৷ কিন্তু এখনো স্বপ্ন দেখি … আমাদের এই ঘুনেধরা স্বার্থপর সমাজে, বিভিন্ন অন্যায়ের মাঝেও — প্রত্যেক পেশাতেই, এমন কিছু মানুষ তৈরী হবে… যারা হবে, অসহায়দের সহায়… আর অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা!

লিখেছেন: ডা. এজাজ বারী চৌধুরী,
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ।

নাম একই হলেও অর্জনের পথ তাদের ভিন্ন

সানজিদ আরা সরকার বিথী, ঢাবি


সোনার কাঠি বনাম কাল যাদু; দুইজন শাহেদ; একজন ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে পথচালকদের পিষে নিজের রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করাতেন। দেশ বিদেশের স্বনামধন্য মানুষদের সাথে সেলফি তুলে বেড়াতেন।

এই করোনা মহামারীর সময় ও ভূয়া রিপোর্ট দিয়ে বেড়াতেন; সোনার বাংলাকে নিজের অপরাধের সম্রাজ্য বানিয়ে হয়েছেন কুকর্মের বাদশা।দেশটাকে অপরাধের রসাতলে ঢেকে দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি, সম্মান নষ্ট করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি।

আরেকজন শাহেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগের (সিএসই)ছাত্র; সম্প্রতি চাকরি পেয়েছেন গুগলে। নিজের দেশকে বিশ্বের বুকে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য বয়ে এনেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা গুগলের মত প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার মত সম্মান। নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে শাহেদ পেরেছেন নিজের দেশকে আরো একধাপ এগিয়ে দিতে; পৌঁছে দিয়েছেন এক অনন্য মাত্রায়।

আমরা এই দুইজন শাহেদের কথা জানি; মানসিকতা ভিন্ন হওয়ার কারনে একজন শাহেদ বিদ্বান, আরেকজন শাহেদ পশুর চেয়েও অধম। এমন হাজারো শাহেদ দেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে।

কোনো শাহেদ নিজের স্বার্থে কালযাদু দিয়ে অপরাধের সম্রাজ্য পরিনত করছেন বাংলাকে আবার কোনো শাহেদ নিজের পরিশ্রম ও মেধাকে সোনার কাঠি বানিয়ে দেশের জন্য বয়ে আনছেন গৌরব এবং সম্মান।

আমাদের উচিত বিদ্বান শাহেদকে আবিষ্কার করে দুর্জন শাহেদকে পরিত্যাজ্য করা যাতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার মাটি নরপিশাচের ছায়ায় আর কলঙ্কিত না হয়।

বাংলাদেশের ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জনক প্রীত: ‘জিরো থেকে হিরো হবার গল্প’

সানজিদ আরা সরকার বিথী
ঢাবি


মুহাম্মদ জাহিদ রেজা প্রীত। তবে প্রীত রেজা বললেই সবাই চেনেন। বাংলাদেশের ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জনক হিসেবে খ্যাত।

বিয়ের ছবি তোলা যে বাংলাদেশে সম্মানজনক পেশা হতে পারে, সেই স্বীকৃতিও আদায় করে ছেড়েছেন ইউ এস স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রফেশনাল ফেলো।

ওয়েডিং ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য করছেন সামাজিক আন্দোলন। একক প্রদর্শনী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম পিএএসইও আর্ট ফেস্টিভালে। চলুন জেনে নিই প্রীত রেজার জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ক্যাম্পাসে রাস্তার পাশে মানুষের ছবি তুলে প্রিন্ট করে দিয়ে ২০ টাকা পেয়ে ১০ টাকা লাভ করত; সেখান থেকেই শুরু। ভার্সিটির পুরোটা সময় দৃঢ় মনোবলকে সম্বল করে এই কাজটি চালিয়ে যান তিনি।

কথায় আছে, ভালো কাজ করতে চাইলে নিন্দুকেরা পাছে কিছু বলবেই।প্রীত রেজার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বন্ধুরা তার এই কাজকে সহজ ভাবে নিতো না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র রাস্তায় বসে মানুষের ছবি তুলে উপার্জন করছে এবং সে ছেলেটি তাদের বন্ধু; বিষয়টি তাদের আত্মসম্মানে লাগাতো। এমন অনেক বন্ধু ছিল যারা আশ্বাস দিত টাকা দরকার হলে তারা দিবে কারণ একজন ’স্ট্রিট ফটোগ্রাফারের’ বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেয়া তাদের জন্য সুখকর ছিলো না।

আস্তে আস্তে যখন পরিধি বড় হলো তখন ইভেন্ট ফটোগ্রাফি শুরু করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন বিয়েতে গিয়ে ছবি তুলা শুরু করল। পরিচিত আত্মীয়-স্বজনের সাথে বিয়েতে দেখা হলে তারা তাকে দেখে অন্য দিকে চলে যেতো। কারণ একজন সামান্য ‘ক্যামেরাম্যান’ তাদের আত্মীয় বা পরিচিত সেটা তারা প্রকাশ করতে চাইতো না।

যখন নিজের একটা ফটোগ্রাফি ফার্ম গড়ে তুলল তখন প্রতিযোগী অনেক প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের শাখা খুলেছিলো। আর তার মাত্র একটি ব্রাঞ্চ ছিলো। মজা করে অনেকে জিজ্ঞেস করতো যে পরের ব্রাঞ্চটা কোথায় করবে? সে তখন বলত পরের ব্রাঞ্চটা হবে আমেরিকায়। আর আজকে তার দুটি ব্রাঞ্চ একটি ঢাকায় অন্যটি আমেরিকায়।

তিনি পাঠশালা, সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারি প্রীত আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক ইত্তেফাক, দি নিউ এইজ, দ্য ডেইলি স্টার এবং দৃক নিউজের জন্য। ফটো এডিটর ছিলেন আইস মিডিয়া লিমিটেডের বিভিন্ন ম্যাগাজিনের (আইস টুডে, আইস বিজনেস টাইমস, চারবেলা চারদিক এবং বেঙ্গল বার্তা)।

নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান “ওয়েডিং ডায়েরী” ও “প্রীত রেজা প্রডাকশন” -এ দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান নির্বাহী / ডিরেক্টর/ ফটোগ্রাফার হিসেবে।

দেশের একমাত্র ফটোগ্রাফি নির্ভর লাইভ টিভি শো ‘ডার্করুম’ – এর উপস্থাপনার পাশাপাশি কাজ করছেন ‘কাউন্টার ফটো’র ফ্যাকাল্টি হিসেবেও। রেডিওতে তার ফটোগ্রাফি নির্ভর শো ‘ফটো টকউইত প্রীত রেজা’ ভীষণ জনপ্রিয় তরুণদের কাছে।

মেয়ে পথশিশুদের জন্য শেল্টার ”হ্যাপি হোম” নিয়ে একশন এইড বাংলাদেশ এর শুভেচ্ছা দ্যূত হিসেবে কাজ করছেন। ইউনেস্কো বাংলাদেশের ক্রিয়েটিভ কনসালটেন্ট হিসেবে ও কাজ করেছেন প্রীত।আন্তর্জাতিক পরিসরে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার পাশাপাশি প্রীত রেজা আলোকচিত্র সংশ্লিষ্ট একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মিলনীর বক্তা প্রীত পাবলিক স্পিকার হিসেবে ও জনপ্রিয়।

ফুজিফিল্মের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, হুয়াওয়ের ফটোগ্রাফার অ্যাম্বাসেডর প্রীত রেজা বাংলাদেশের আলোকচিত্র ইন্ডাস্ট্রির এক বড় অনুপ্রেরণার নাম।শুধু প্রীত রেজা নয়; প্রত্যেক সফল মানুষের সফলতার চাবিকাঠি হল পরিশ্রম।

কোন চেতনায় জাগ্রত সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য?

সানজিদ আরা সরকার বিথী
ঢাবি


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টি.এস.সি. প্রাঙ্গণ সংলগ্ন অবস্থিত ঢাকার অন্যতম প্রধান একটি ভাস্কর্য রাজু স্মারক ভাস্কর্য;যেটি সকলের কাছে রাজু ভাস্কর্য নামে পরিচিত।

রাজু ভাস্কর্যে নিয়ে অনেকের ভুল ধারনা রয়েছে;অনেকে ভাবে এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর ধারনা, রাজু ভাস্কর্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি স্মারক।

তাই পাঠকদের উদ্দেশ্যে রাজুর দৃপ্তকণ্ঠে সম্মিলিত প্রতিবাদের ইতিহাস আরো একবার তুলে ধরা হল-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানের কৃতি ছাত্র ছিলেন মঈন হোসেন রাজু। যুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাথে। এ সময় তিনি ৯০’র স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত থাকার সময় প্রথমে তিনি শহীদুল্লাহ হল কমিটির সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং ওই বছরই ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৯১)।

১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ, দিনটি ছিল শুক্রবার। একজন শিবিরকর্মীর প্রহৃত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রদের সাথে পুলিশের ঝামেলা হয়। সেখানে রাজু কনুইতে আঘাত প্রাপ্ত হন। তাই বাসায় গিয়ে খাওয়ার কথা থাকলেও বাসায় না গিয়ে চলে যান তার হলের রুমে। শহীদুল্লাহ হলের ১২২ নং কক্ষ। বিকেলে ক্যাম্পাসের দখলদারিত্বের রাজত্ব নিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে শুরু হয় গোলাগুলি।

ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী রাজু ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্য’র ব্যানারে সংগঠিত সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলে যোগ দেন। হঠাৎ সন্ত্রাসীরা সেই মিছিলে গুলি বর্ষণ করে। সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া একটা বুলেট রাজুর মাথা ভেদ করে। রাজুর রক্তে রঞ্জিত হয় টি.এস.সি.র সামনের রাজপথ। তাঁর আর ঘরে ফেরা হয় না। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে প্রিয় ক্যাম্পাসকে বাঁচাতে চেয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দেন ।

ডাকসুর সংগ্রহশালায় এখনো সংরক্ষিত আছে শহীদ রাজুর রক্তমাখা শার্ট ও ব্যাগ। সেই ব্যাগ, যা গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় স্লোগানরত রাজুর কাঁধে যে ব্যাগ ছিল আর সেই ব্যাগে ছিল নোটখাতায় নিজ হাতে টুকে রাখা জীবনানন্দের কবিতা এবং রং করার ব্রাশ ও হকিয়ার।
সেই রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদের স্মরণে নির্মিত হয় সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য। ভাস্কর্যে বৃত্তাকারে স্থাপিত আটজন নারী-পুরুষ একে অন্যের হাত ধরে হার না মানা প্রতিবাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ পাচ্ছে।

যাদের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে তারা হলেন সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের শহীদ মুনীম হোসেন রানা, শাহানা আক্তার শিলু, সাঈদ হাসান তুহিন, আবদুল্লাহ মাহমুদ খান, তাসফির সিদ্দিক, হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, উৎপল চন্দ্র রায় ও গোলাম কিবরিয়া রনি।

রাজু ভাস্কর্যটি ১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ. কে. আজাদ চৌধুরী উদ্বোধন করেন। এই ভাস্কর্য নিমার্ণে জড়িত শিল্পীরা ছিলেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী ও সহযোগী গোপাল পাল।

নির্মাণ ও স্থাপনের অর্থায়নে ছিলেন – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আতাউদ্দিন খান (আতা খান) ও মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি, লায়ন নজরুল ইসলাম খান বাদল। ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।

কবি শামসুর রাহমানের রচিত “পুরাণের পাখি” কবিতায় কবি এই ঘটনাটি তুলে ধরেন-

“দিনদুপুরে মানুষ শিকারীরা খুন করেছে তোমাকে। টপকে-পড়া, ছিটকে-পড়া তোমার রক্তের কন্ঠস্বরে ছিল পৈশাচিকতা হরণকারী গান।

ঘাতক নিয়ন্ত্রিত দেশে হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলে তুমি, মধ্যযুগের প্রেতনৃত্য স্তব্ধ করার শুভ শ্লোক উচ্চারিত হয়েছিল তোমার কন্ঠে তোমার হাতে ছিল নরপশুদের রুখে দাঁড়াবার মানবতা-চিহ্নিত প্রগতির পতাকা …”

বিসিএসে নিজের আইডেন্টিটি তৈরী করা গর্বের

বৈশ্বিক মহামারির থাবায় থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। কোথাও নেই সুসংবাদ। গোটা বিশ্ব যেন মৃত্যুপুরী। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও ভালো নেই। এই দুঃসংবাদের সময় জাতিকে সুসংবাদ দিয়েছে পিএসসি। কারো মুখে জয়ের আনন্দের উচ্ছ্বাস। কারো চেহারায় গ্লানির ছাপ। বলছিলাম ৩৮ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের কথা।

৩৮ তম বিসিএসের চূড়ান্ত মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন। তিনি শিক্ষা ক্যাডারে (আইসিটি, মেধা ক্রম ১০) সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।

বর্তমানে তিনি জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আইটি ডিভিশনে কর্মরত আছেন। নাসির উদ্দিনের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সিয়াম

কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

বিসিএসই কেন আপনাকে দিতে হবে মনে হলো?

অন্যান্য টেকনিক্যাল স্টুডেন্টদের মতো প্রথম দিকে আমারও কোন পরিকল্পনা ছিলনা, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া। সেই সাথে আইসিটি বিষয়ে ব্যাপক কাজের ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় বিসিএস এর প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়।

আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বিসিএসে আসলেন কেন?

আমি কিন্তু আমার টেকনিক্যাল ফিল্ডেই আছি। এই সেক্টরকে ডেভেলপ করার জন্য কিছুটা হলেও আমার টেকনিক্যাল জ্ঞান কাজে লাগাতে পারবো।

আপনার কাজ ছিল পৃথিবীব্যাপী কিন্ত আপনি একটা গন্ডির মধ্যে চলে আসছেন। এরকম সীমাবদ্ধ জায়গায় আসার কারণ কী?

আমি আসলে সেটা মনে করি না। আমার কাছে মনে হয় কোন বেসরকারি সফটওয়্যার ফার্মে কাজ করলে আমি বরং সেখানেই আবদ্ধ হয়ে যেতাম। আইসিটি শিক্ষা ক্যাডারে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ আছে। প্রফেশনাল স্কীলকে ডেভেলপ করে দেশকে সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে রুপান্তর করে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারবো বলে আশা করি।

বিসিএসে আসার গল্পটা যদি বলতেন ?

বিসিএস আশার ইচ্ছেটা কখনোই ছিলোনা। তারপরও বন্ধুদের সাথে শখ করে ৩৫ তম বিসিএস এ আবেদন করি। খুব বেশি পড়ার সুযোগ হয়নি। প্রশ্ন খুব কঠিন হওয়ায় ম্যাথ, ইংলিশ ও বিজ্ঞান ভালো করায় টিকে যাই। এর পর আসলে নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।

বিসিএসের প্রস্তুতি কীভাবে নিলেন?

সত্যি করে বলতে গেলে বিসিএস এর জন্য খুব প্লান করে, রুটিন করে পড়াশোনা কখনো করা হয় নি। তবে যতটুকু করেছি তা ইফিশিয়েন্ট ওয়েতে করেছি, সারা দিন-রাত বই নিয়ে পড়ে থাকি নি। যতক্ষণ ভালো লেগেছে ততক্ষণ পড়েছি। কোন কোচিং এ ভর্তি হইনি। যতটুকু পড়তাম, যে বিষয়ে পড়ছি সেটা ভালোভাবে জানার চেষ্টা করতাম এবং জানাটাকে উপভোগ করতাম। পড়াশোনার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়াটাই মনে হয় যেকোন পরীক্ষায় ভালো করার আসল সিক্রেট।

বিসিএসকেই কেন আইডেন্টি হিসেবে নিতে হবে বলে আপনার মনে হলো?

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে ক্যাডার সার্ভিসে নিজের আইডেন্টিটি তৈরী করা গর্বের। সেজন্যই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।

সংসার ও চাকরী সামলিয়ে বিসিএসের পড়াশোনা কীভাবে কন্টিনিউ করলেন?

পড়াশোনা তো সারা শিক্ষাজীবন ব্যাপিই করতে হয়েছে। সংসার যে শুধুই সামলাতে হয়েছে এরকম না সংসার প্রিপারেশন নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল। চাকরি করে পড়াশোনা করাটা বেশ টাফ। তবে এর মধ্যেও যতটুকু সম্ভব চেস্টা করেছি।

৩৮ তম বিসিএসে বিবাহিতদের জয় জয়কার। আপনার স্ত্রীর থেকে সাপোর্ট ছিল কীরকম।

স্ত্রীর সাপোর্ট ছাড়া আসলে কতটুকু সম্ভব হত বলা মুশকিল। বিশেষ করে পড়াশোনা না করতে চাইলে বার বার পড়তে বসার কথা। একটা বিষয় না বললেই নয়, যখন রাত জেগে পড়তাম আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করতো, পড়া কোনভাবেই মাথায় ঢুকতো না তখন আমার স্ত্রী মাথা ম্যাসাজ করে দিতো এবং মাথার ব্যাথা ভালো হয়ে যেত। ফলে আমি আরও বেশি সময় পড়তে পারতাম।

গত ১০ বছরে বিসিএসের প্রতি যে মোহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হলো সেটা আগে দেখা যায় নি। বিসিএসে এর প্রতি এই মোহের কারণ কী?

আর্থিক নিরাপত্তা (বিশেষ করে সর্বশেষ জাতীয় বেতন কাঠামোতো বেতন বৃদ্ধি) সামাজিক মর্যাদা, জব সিকিউরিটি।

বিসিএস মানেই কী ট্যালেন্টের মাপকাঠি?

ট্যালেন্ট অবশ্যই সহায়ক। কিন্তু বিসিএসই একমাত্র ট্যালেন্টের মাপকাঠি না।

আপনি কর্পোরেট কোম্পানিতে যে পরিমান অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারতেন। শিক্ষা ক্যাডারে তো সেই সুযোগ নেই। কেন ভালো সুযোগ ছেড়ে তার চেয়ে কম সুযোগ সুবিধায় চলে আসলেন?

আর্থিক বিষয় দেখেই যে ক্যারিয়ার প্লান করেছি বিষয়টি সেরকম না। কারও কারও পছন্দের কিছু জায়গা থাকে যেখানে সে আর্থিক সুবিধা কম পেলেও কমফোর্ট ফিল করে। আমার ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে। তাছাড়া সরকারি জবে বর্তমান সুযোগ সুবিধা যেকোনো কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর চেয়ে কোন অংশে কম না।

বেসরকারি সেক্টরে কী সিকিউরিটির অভাব না অন্য কিচ্ছু। না সামাজিকভাবে ইনসিকিউরড?

জব ইনসিকিউরিটি, কাজের প্রেসার, বসের ঝাড়ি। বর্তমান সিচুয়েশনে এটা আরও প্রকট হয়েছে। মহামারীর মধ্যে বেসরকারি চাকরিজীবিদের কে স্যাক করার ঘটনা ঘটছে, বেতন ঠিকমতো পাচ্ছে না পেলেও ফুল বেতন দেয়া হচ্ছে না।

বিসিএস শিক্ষায় আসার কারন কী?

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বিসিএস শিক্ষা আমার ক্যাডার চয়েস লিষ্টের ২য় তে ছিল। আগ্রহ এবং প্যাশানের কারণেই আসা।

একাডেমীক ও বিসিএস কোনটাকে গুরুত্ব দিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছেন?

আসলে আমি একাডেমিক লাইফ শেষ হওয়ার আগে চাকরির কোন পড়াই পড়ি নাই। যখন যেটার গুরুত্ব দেয়া উচিৎ ছিল সেটাই করেছি। যদিও এখন কম্পিটিশন অনেক বেশি যারা বিসিএস দিতে চায় তাদেরকে একাডেমিক এবং জব রিলেটেড পড়াশোনা সমন্বয় করে পাশাপাশি চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। তবে কোনভাবেই একাডেমিক পড়ালেখাকে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়।

বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত সংগ্রাম-স্ট্রাগলের গল্পটা কিরকম ছিল।

আসলে স্ট্রাগল ছাড়া ভালো কিছু অর্জন করা কঠিন। আমি বিসিএস শেষ করার আগেই বিয়ে করেছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই আমার স্ট্রাগলটা একটু বেশিই ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রচুর টিউশনি করতে হতো। তবে টিউশনি ধারুন কাজে দিয়েছে আমায়।

আপনার কী মনে হয় বিসিএসে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন সাবজেক্টকে আলাদা করে দেখা হয়?

এটা খুব ম্যাটার করে না। কেউ যদি ভালো পরীক্ষা দেয় সে যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং যে সাব্জেক্টরই হোক না কেন ফলাফল অনুকুলে আসবে।

অন্য ক্যাডারের জন্য আবার বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা আছে?

আমার শেষ বিসিএস ছিল এটা। এজ শেষ তাই আর অংশগ্রহণের সুযোগ নাই।

নবীনদের বিসিএস প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া উচিত?

সিলেবাসটা ভালো করে বুঝে সিলেবাস ধরে ধরে বেসিক বইয়ের সাথে যেকোনো রেফারেন্স বই পড়লে সুযোগ বেশি থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিজের দূর্বল সাইট টা খুঁজে বের করা এবং সেটা রিকোভার করার চেষ্টা করা। কমবেশি যতটুকুই পড়ুন না কেন সেটা যেন ইফিশিয়েন্ট ওয়েতে হয়।

প্রিয় ক্যাম্পাসের ছোটদের প্রতি পরামর্শ কী?

জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলব, বাস্তবতা ও পছন্দের ভিত্তিতে আগে নিজের ক্যারিয়ার ভিশন ঠিক করে ফেলতে হবে। আর সেটা অর্জনের যা যা করা দরকার সেটাই করতে হবে।

সিয়াম
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

থানায় এজাহার বা মামলা করার পদ্ধতি ও গুরুত্ব

মোঃ খায়রুল ইসলাম


আমরা সবাই জানি যে ফৌজদারি মামলা দুইভাবে করা যায়। কোর্টে ও থানায়। কোর্টে যে মামলা করা হয় সেটাকে C.R (Complaint Register) বা নালিশি মামলা বলা হয়।থানায় যে মামলা করা হয় তাকে G.R (General Register) মামলা বলা হয়।

আপনি যদি কারো বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে চান তাহলে আপনাকে এজাহার দায়ের মাধ্যমে মামলা করতে হবে। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে, জিডি (সাধারণ ডায়েরি) আর এজাহার এক বিষয়।কিন্তু বাস্তবে এ দুটি বিষয় এক নয়। জিডি হচ্ছে থানায় কোনো ঘটনা সম্পর্কে অফিসারকে অবগত করা মাত্র, আর এজাহার হচ্ছে সরাসরি মামলা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া।

এজাহারে উল্লিখিত অপরাধ যদি আমলযোগ্য কিংবা এমন কোনো ঘটনা সংক্রান্ত হয়,যা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলে আসামিদের ধরা যাবে বা শনাক্ত করা যাবে, সে ক্ষেত্রে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে।আর যদি এজাহারে বর্ণিত অপরাধ বা বিষয়টি আমলযোগ্য না হয়,তবে পুলিশ এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করবে।সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নেবে।এমনও হতে পারে,এজাহারকারীকে সরাসরি মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ দাখিল করার পরামর্শ দেবে। জিডি করা হয় অপরাধ সংঘটনের আশংকা থেকে, অপরদিকে এজাহার করতে হয় অপরাধ সংঘটনের পরপর।

এজাহার কেবলমাত্র আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেই দায়ের করা যায়,কিন্তু জিডি যেকোন অপরাধ এমনকি কোন কিছু হারিয়ে গেলেও করা যায়।ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কত দিনের মধ্যে পুলিশকে সংবাদ দিতে হবে বা এজাহার করতে হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় আইনে দেওয়া নেই।তবে এজাহার করতে দেরি করা উচিত না।দেরিতে এজাহার মামলার গুণাগুণ নষ্ট করতে পারে বা আশংকা থাকে।কোনো কারণে এজাহার করতে যদি দেরি হয় তবে তার সুনির্দিষ্ট কারণ এজাহারে উল্লেখ করতে হয়। এজাহারের আবেদন থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) বরাবর লিখতে হবে।যেকোন ব্যক্তিই অপরাধ সংঘটন স্থলের নিকটবর্তী থানায় এজাহার রুজু করতে পারেন।তবে কোন কারণে থানা এজাহার নিতে না চাইলে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে নালিশি (Complaint Register) মামলা রুজু করা যায়।

ফৌজদারী মামলার বিচারে এজাহার অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।ঠিকমতো এজাহার দায়ের করতে না পারায় প্রতিনিয়ত অনেকেই বিচার পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।বিচারকালে এজাহারে কোন ত্রুটি ধরা পড়লে তা আর সাধারণত সংশোধন করা যায় না।এজাহারের ওপর যেকোনো মামলার ভাগ্য অনেকটা নির্ভর করে।একটি শক্তিশালী এবং শুদ্ধ এজাহার একদিকে যেমন আইনের শত ব্যাখ্যার মধ্যেও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারে অন্যদিকে ঠিক তেমনি দুর্বল ও অসঙ্গতিপূর্ণ এজাহার মামলার গুনগত মান নষ্ট করে বিচার বিলম্বিত করে আসামীদের জন্য বেকসুর খালাসের ব্যবস্থা করতে পারে। তাই বাদী হিসাবে এজাহার দায়ের করার পূর্বে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।

এজাহার কী?

এক কথায় সংঘটিত অপরাধ সমম্পর্কিত অভিযোগ করাকে এজাহার বলে।অপরাধী ও সংঘটিত আমলযোগ্য অপরাধের বিস্তারিত বিবরণসহ শাস্তি দাবী করে বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে থানায় অপরাধের সংবাদ লিপিবদ্ধ করাকে এজাহার বলে। যা FIR (First Information Report) বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নামেও পরিচিত। অপরাধ সম্বন্ধে এ বিবরণ প্রথম দেয়া হয় বলে একে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলে। আমলযোগ্য অপরাধ (Cognizable offence) হচ্ছে সেই অপরাধ যে অপরাধের দরুণ অভিযুক্তকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যায়।

এজাহার লিখিত বা মৌখিক দুভাবেই করা যেতে যায়। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে – কোন থানার অফিস-ইন-চার্জ-এর (OC) নিকট কোন আমলযোগ্য অপরাধ সংঘঠিত হওয়া সম্পর্কে কোন সংবাদ মৌখিকভাবে প্রদান করা হলে তিনি বা তার নির্দেশক্রমে অন্য কেউ সাথে সাথে তা লিখে তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনাবেন এবং তথ্য প্রদানকারীর স্বাক্ষর নিবেন। লিখিতভাবে প্রদত্ত সংবাদের ক্ষেত্রেও তথ্য প্রদানকারী স্বাক্ষর করবেন। এই তথ্য বিবরণী উক্ত অফিসার সরকার কর্তৃক নির্দেশিত (বিপি ২৭) ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন। তবে অপরাধের সংবাদটি বিস্তারিত না হলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী বাহিনী ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্ত করতে পারবে।

এজাহার কে করতে পারেন?

কোথাও কোন ফৌজদারি অপরাধ যেমন খুন, মারামারি, ডাকাতি, চুরি ইত্যাদি সংঘঠিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে যে কেউ থানায় সংবাদ দিতে পারে। অপরাধ সংগঠিত হলে থানায় সাদা কাগজে একটি লিখিত অভিযোগ (এজাহার) দাখিল করতে হয়।ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন, তিনি থানায় এজাহার করতে পারেন। মূলত এজাহার করার মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। এজাহারটি থানার অফিসার ইনচার্জ-এর নিকট জমা দিতে হবে। এজাহার দাখিলের পর থানার অফিসার -ইন-চার্জ FIR (First Information Report) (একটি নির্দিষ্ট ফরম) এনট্রি করার ব্যবস্থা করবেন এবং একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন। এজাহার প্রাপ্তির ২৪ ঘনটার মধ্যে FIR (First Information Report) ফরম পুরন করে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দাখিল করবেন। যাকে আমলী আদালত বলে। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত শুরু করবেন। মামলা করতে থানায় কোনো ফি দিতে হয় না।

মামলার এজাহারে যেসব বিষয় উল্লেখ করা জরুরিঃ

সঠিকভাবে এজাহার করতে না পারায় অনেকেই বাধ্য হয়ে অর্থের বিনিময়ে দালালের সাহায্য নিয়ে থাকে। এতে দেখা যায়,ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী না হওয়ায় এজাহারে এ সকল দালালেরা ঘটনার প্রকৃত বিবরণ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়।যার কারণে এজাহার দুর্বল হয়ে যায় এবং আসামির বিপক্ষে মামলা প্রমান করা কঠিন হয়ে পড়ে।ফৌজদারী মামলার ভিত্তিই হচ্ছে এজাহার,তাই এজাহারে অপরাধী ও অপরাধের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সতর্কতার সঙ্গে তুলে জরুরি।

এজাহারে কোন ঘষা-মাজা, কাটা-কাটি বা লেখা অস্পষ্ট করা যাবে না। এজাহার লিখিত হলে সাদা কাগজের এক পিঠে লিখতে হবে। কম্পোজ করেও দেওয়া যায়।এজাহারে (১) স্পষ্টভাবে অপরাধীর নাম ও ঠিকানা (জানা থাকলে) উল্লেখ করা;(২) ঘটনার পূর্ণ বিবরণ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা যৌক্তিকভাবে লিপিবদ্ধ করা;কীভাবে ঘটনা ঘটল তার বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে।(৩)অপরাধ সংঘ্টনের তারিখ ও সময় উল্লেখ করা;(৪) অপরাধ সংগঠনের স্থান উল্লেখ করা;(৫) অপরাধ সংঘটনের কোন পূর্ব সূত্র বা কারণ থেকে থাকলে তার বর্ণনা তুলে ধরা;(৬) অপরিচিত ও সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিদের সম্পর্কে ধারণা দেয়া;(৭) অপরাধ পরবর্তী অবস্থা যেমন -সাক্ষীদের আগমন, আহত ব্যক্তির চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা;(৮) সাক্ষীদের নাম,ঠিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করা;(৯) অপরাধীদের কেউ বাধা দিয়ে থাকলে তার ধারাবাহিক বর্ণনা করা;(১০)অপরাধীদের কেউ এজাহার দায়েরে বাধা দিয়ে থাকলে তার ধারাবাহিক বর্ণনা;

(১১)কোন বিষয় তাৎক্ষনিকভাবে লেখা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে সে বিষয়টি সংযোজন করা হবে এমন একটি কৈফিয়ত রাখা প্রভৃতি বিষয়াবলী উল্লেখ করা জরুরি।(১২)এজাহারকারীর পূর্ণ ঠিকানা ও সই থাকতে হবে।(১৩)বাদী কোন কারণে থানা সরাসরি না যেতে পারলে কার মাধ্যমে এজাহার থানায় পাঠানো হলো তার নাম ঠিকানা ও থানা না যেতে পারর কারণে উল্লেখ করতে হবে।(১৪)লিখিত এজাহার লেখকের নাম ঠিকানা এজাহারের উল্লেখ করতে হবে।(১৫)চোরাই যাওয়া মালের তালিকা শনাক্তকরন সহ উল্লেখ করা।(১৬)এজাহার দাখিলে বিলম্ব হলে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা (অযৌক্তিক বিলম্ব মামলার গুণগত মান নষ্ট করে)।

যদিও ফৌজদারী অপরাধের কোন তামাদি(নির্দিষ্ট সময়) নেই,তথাপি এজাহার দায়েরে বিলম্ব মামলার গুনগতমান বিনষ্ট করে থাকে।লিখিত এজাহারের বেলায় সংঘটিত অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ স্বাক্ষরসহ দরখাস্ত আকারে সংশ্লিষ্ট থানায় দাখিল করতে হয়।প্রাপ্ত দরখাস্তের তথ্যাদি থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) এজাহারের জন্য নির্ধারিত বিপি ২৭ ফরমে তুলে মামলার জন্য প্রয়োজনীয় পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেন।যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়,তাহলে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা লিখবেন।ঘটনার বিবরণ তিনি তথ্য প্রদানকারীকে পড়ে শুনিয়ে আপত্তি না থাকলে তাতে তার স্বাক্ষর নিবেন।আর যদি তথ্য প্রদানকারী কোন সংশোধন আনতে চান তবে তা আনার পর স্বাক্ষর নিবেন।

নিয়ম অনুযায়ী,কোনো এজাহারকারী যদি মৌখিক কোনো বিবৃতি দেন,তাহলে তা লিখিত আকারে নিয়ে এজাহারকারীকে পড়ে শোনাতে হবে এবং তাঁর স্বাক্ষর নিতে হবে।যে কর্মকর্তা এজাহার লিখবেন,তিনিই সিল ও সই দেবেন।কোনো আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনা থানায় এলে তা মৌখিক আর লিখিত—যা-ই হোক,এজাহার হিসেবে নিতে থানা বাধ্য থাকবে।কোনো ঘটনার সংবাদ টেলিফোনে বা ই-মেইলে মাধ্যমে থানায় এজাহার দায়ের করা যাবে না।ফৌজদারী মামলার বিচারে এজাহার অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।তাই বিচারকালে এজাহারে কোন ত্রুটি ধরা পড়লে তা আর সাধারণত সংশোধন করা যায়না।এজাহারের ওপর মামলার ভাগ্য অনেকখানি নির্ভর করে।একটি শক্তিশালী এবং শুদ্ধ এজাহার একদিকে যেমন আইনের শত ব্যাখ্যার মধ্যেও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারে অন্যদিকে ঠিক তেমনি দুর্বল ও অসঙ্গতিপূর্ণ এজাহার মামলার গুনগত মান নষ্ট করে বিচার বিলম্বিত করে আসামীদের জন্য বেকসুর খালাসের ব্যবস্থা করতে পারে।

তাই এজাহার দায়ের করার পূর্বে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যাবশ্যক। ক্রুটিজনিত এজাহারের কারণে বিচার বঞ্চিত হয়ে চোখের জল ফেলতে হবে।একটি শক্তিশালী এবং নিরেট এজাহার লিখার জন্য একজন আইন বিজ্ঞ পুলিশ অফিসার কিংবা আইন বিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নেয়া শ্রেয়।

লেখক: মোঃ খায়রুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী সাইফের দুই কিডনি অচল, বাঁচাতে প্রয়োজন ১২ লাখ টাকা

মাইনুদ্দিন পাঠান,
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি


‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’। মানুষের সম্মিলিত সহায়তায় বেঁচে যেতে পারে কারও জীবন। হৃদয়বান মানুষের এমন সাহায্যে বেঁচে থাকতে চান জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সাইফ উদ্দীন(সাইফ)।

সাইফ উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন সায়েন্স লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট (আইএসএলএম) বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা না গেলে বাচাঁর সম্ভাবনা খুবই কম জানালেন চিকিৎসক। সুস্থ করতে চিকিৎসায় ব্যয় হবে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। সম্পূর্ণ খরচ বহন অসম্ভব বিধায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সকলের নিকট সহায়তা চেয়েছেন মো.সাইফ উদ্দীনের স্বজনরা।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে তার শারীরিক অসুস্থতা শুরু হলে দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে গ্রাম্য চিকিৎসায় নির্ভর হন সাইফ। তবে এটি বিরাট কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। সময়ের ব্যবধানে জটিল আকার ধারণ করে তার শারীরিক অসুস্থতা। মানুষের বাঁচার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অত্যন্ত ১ টি কিডনি। কিন্তু ২টি কিডনিই ড্যামেজ হয়ে যায় সাইফের।

জানতে চাইলে সাইফ জানান, মার্চের শেষ দিকে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয়। তবে দেশে করোনাভাইরাসের ভয় প্রকোপ আকারে থাকায় গ্রাম্য ডাক্তারের চিকিৎসায় চলতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে নোয়াখালীর মাইজদীতে ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করে জানতে পারি আমার দুটি কিডনি ইনফেকশন হয়ে প্রায় শেষ অবস্থায়।

এরপর ইমার্জেন্সী ঢাকা উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হসপিটালে চলে যাই। সেখানে প্রখ্যাত নেপ্রোলজিস্ট ডা. ইউশা আল আনসারী এর অধীনে কিছুদিন চিকিৎসা চলে। শারীরিক কোন পরিবর্তন দেখা না গেলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এতে ডাক্তার হতাশার কথা শুনিয়ে জানালেন, ঔষধ খেয়ে কিছুদিন বাঁচলেও সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে।

এইদিকে পরিবারের কারো সাথে সাইফের ব্লাড গ্রুপ ম্যাচিং না হওয়ায় সাইফের পরিবার কিডনি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তার বাবা জানান, সাইফের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে প্রায় ১২ লাখ টাকা প্রয়োজন। এখন পরিবারের পক্ষে এতো টাকা ম্যানেজ করে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তাই এই ব্যাপারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃষ্টি অাকর্ষণ করছেন এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. দিদার-উল-আলমকে পরিবারের সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ও ডাক্তারের সাপোর্টিং নিয়ে একটি দরখাস্ত করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করে সাধ্যানুযায়ী সহায়তা প্রদান করা হবে।

এছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে সাইফের স্বজনদের পক্ষ থেকে। সহযোগিতা প্রদানে আগ্রহীদের নিম্নোক্ত মাধ্যমে সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ রইল:

09412100008761
হাবিবুর রহমান
এক্সিম ব্যাক, চরবাটা
খাসেরহাট,ব্রাঞ্চ।

বিকাশ -০১৬৩৬৭০৭১৪৯ (পার্সোনাল)
নগদ-০১৭৭১৯৬২০৯৪ (পার্সোনাল)

মেয়েদের হল গুলো প্রয়োজনে খুলে দেওয়া হতে পারে

সানজিদ আরা সরকার বিথী,
ঢাবি প্রতিনিধি


করোনা ভাইরাসের থাবায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সকল শিক্ষার্থী নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। ছেলেদের হলে প্রয়োজনে ছেলেরা ঢুকতে পারলেও বিপাকে পরেছে মেয়েরা।

কারন মেয়েদের হলগুলো বরাবরই কঠোর নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হল রয়েছে ৫ টি।

এই মুহূর্তে হলগুলোতে কর্মচারী রয়েছে হাতেগোনা কয়েকজন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে মেয়েদের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করা দেখে যে তাড়াহুড়োয় প্রয়োজনীয় জিনিস হলে ফেলে রেখে এসেছি।এরপর হল সংসদের নেত্রীরা হল কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে মেয়েদের সমস্যার বিষয়গুলো জানিয়েছে।

ইতোমধ্যে হল কতৃপক্ষ অনুমতি ও দিয়েছে যে মেয়েরা হলে ঢুকতে পারবে কিন্তু বেঁধে দিয়েছে শর্ত।আগে থেকেই ম্যামদের সাথে যোগাযোগ করে সময় ঠিক করতে হবে এবং একটি দরখাস্ত আনতে হবে সাথে।

নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছে এরপর আসলে হলে ঢুকতে দেয়া হবেনা। কিছু কিছু হল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে শিক্ষার্থীদের রুমে প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা, কর্মচারী রুমে রুমে গিয়ে মেয়েদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে দিবে।
এতে মেয়েরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।

এই বিষয়ে ঢাবির এক শিক্ষার্থী দ্যা ক্যাম্পাস টুডেকে জানিয়েছেন, হলে ল্যাপটপ রেখে এসেছি; এতদিন চার্জ ছাড়া হয়তো নষ্ট হয়ে গেছে। জানিনা কি হবে!

আরেকজন শিক্ষার্থী দ্যা ক্যাম্পাস টুডেকে বলেন, আমার বাড়ি বগুড়া।হলে ভুলে আমি আমার ফোন রেখে এসেছি।জানিনা সার্টিফিকেট গুলো কি ইঁদুরের কবলে কিনা!এত দূর থেকে করোনার ঝুঁকি নিয়ে হলে একবার যেতে হবে গিয়ে যদি ঢুকতে না পারি তাহলে কি করব!

প্রসঙ্গত, করোনার আক্রমণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ১৮ মার্চ হতে। সকল শিক্ষার্থী তাড়াহুড়োয় নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছে প্রয়োজনীয় জিনিস হলেই ফেলে রেখে গেছে।

তাছাড়া, হল প্রশাসন উদ্বিগ্ন যে হলে বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েরা হলে ঢুকলে করোনার ঝুঁকি থেকেই যায়। এখন দেখার পালা হল প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কি হয়!

প্রথম বিসিএসেই স্বপ্নপূরণ আরমান শাহেদের

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে প্রশাসন ক্যাডারে (বিসিএস-এডমিন) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে প্রথম বিসিএসেই বাজিমাত করেছেন শাহেদ আরমান।

তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় শাহেদ আরমান ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে ইলেক্ট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক শেষ করে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিলেন বিসিএস এ।

আরমান জানান, সেই ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করব। দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করব। আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

প্রশাসন ক্যাডারে নতুন মুখ শাহেদ আরমান খাগড়াছড়ি জেলা সদরে টিঅ্যান্ডটি গেট এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফুল্লাহ ও আরজুমান আকতারের বড় ছেলে। বাবা মো. সাইফুল্লাহ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নাজির (উচ্চমান সহকারী) ও মা আরজুমান আকতার টিঅ্যান্ডটি গেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

তার দুই ভাইয়ের একজন শিফাত আরমান ঢাকা কলেজে প্রথম বর্ষে আর অন্যজন খাগড়াছড়ি নতুন কুঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট হাইস্কুলে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আছে।

ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী শাহেদ আরমান এই স্কুল থেকেই ২০১০ সালে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০১২ এইচএসসি ও ইসলামীক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই প্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তর করছেন পাহাড়ের মেধাবী মুখ শাহেদ আরমান।

সন্তানের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পুরো পরিবার। তার বাবা মো. সাইফুল্লাহ বলেন, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এ প্রাপ্তি আমাদের পরিবারের জন্য অনেক বড় অর্জন। পরিবারের আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সন্তানের এ অর্জনে সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

শাহেদ আরমান বলেন, ‘বিসিএস আমার স্বপ্ন ছিল। আজ আমার যা প্রাপ্তি সবটুকু আমার মা-বাবার জন্যই পেয়েছি। অসামান্য পরিশ্রমের পর এমন ফলাফল পেয়ে খুব ভালো লাগছে।

এমন অর্জন পরিবার ও নিজের জন্য অনেক সম্মানজনক। দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’