ঘরের সাপে দংশিত আওয়ামী লীগ : বামপন্থীদের সতর্কতা জরুরি

জি. কে. সাদিক: আমাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ঘটনা খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ করা হয়েছিল মৌলবাদী শক্তির সন্তুষ্টি লাভের আশায়। এয়ারপোর্টের সামনে থেকে মরমি সাধক লালন শাহের ভাস্কর্য অপসরণও করেছিল মৌলবাদী শক্তি।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে স্থাপিত ইতিহাসের সাক্ষী প্রিয় মধু দা’র (দাদা) ভাস্কর্যের কান ভেঙে দিয়েছে এবং সেটাকে নষ্ট করেছে। এবার কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছে। কে বা কারা ভেঙে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যে বা যারাই ভাঙেছে তাদের উদ্দেশ্যে যে চরম অসৎ সেটা স্পষ্ট।

সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ, এয়ারপোর্টে সামনে থেকে লালনের ভাস্কর্য অপসরণ, মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধু দা’র ভাঙচুর এসব নিয়ে দেশের প্রগতিশীল সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছে, আন্দোলন করেছে। লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ও ছাত্র ইউনিয়নে অনেক নেতাকর্মী পুলিশের হামলার শিকার হয়েছিলেন। হামলা, মামলা, গ্রেফতারসহ নানা নিপীড়ন তাদের উপর হয়েছে।

বেশি দিন আগের কথা নয়। এই তো ২০১৭ সালের কথা। লিটন নন্দী ও অন্যান্যদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘ছিঃ ছিঃ হাসিনা লজ্জায় বাঁচি না’ স্লোগান দেয়ার কারণে ছাত্র লীগ রেগে মেগে ক্ষোভে গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের উপর হামলাও করেছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে ছিলেন তিনিও সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ চান। জাতীয় ইদগাহের সামনে এমন ভাস্কর্য তিনি পছন্দ করেন না।

এই ভাস্কর্য অপসরণ করিয়ে তিনি মৌলবাদী গোষ্ঠীর অভিনন্দন বার্তাও পেয়েছিলেন। মাত্র বছর তিনেক আগের ঘটনা। এখনও তরতাজা মনে আছে। পুলিশের পিটুনিতে লিটন নন্দীর হাত ভেঙে গেছিল তিনি সে ভাঙা হাত নিয়ে ঘুরছেন এমন দৃশ্য এখনও চোখে ভাসছে।

২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক মুরতাদের ফাঁসির দাবিসহ ১৩ দফা দাবিতে ঢাকায় শাপলা চত্বরে সমাবেশ করেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতকে জঙ্গি, জামাতের আরেক নাম, মৌলবাদী, সন্ত্রাসীসহ নানা অভিধা দিয়ে তাদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা বা আপোষ নয় এমন বক্তব্য মিডিয়া ছেয়ে গেছিল। চোখের সামনে এসব এখনও ভাসছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যগুলো এখনও কানে বাজছে।

জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটার বিহীন নির্বাচনের পর তার ফ্যাসিস্ট, অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ ক্ষমতা দখল টিকিয়ে রাখতে ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরে গিয়ে হেফাজতে ইসলামকে কোলে তুলে নিলো। বর্তমানে ৭৫ শতাংশ ইসলামপন্থী দলগুলো আওয়ামী লীগের কোলে। মাত্র ৭ বছর আগের কথা। যে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছিল সেই হেফাজতে ইসলামের সাথেই সখ্যতা গড়েছে।

‘১৪ সালেও হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নেতাদের নামে মামলা ছিল। এখন তাদের মামলাগুলো আর চলছে কি না এই সংবাদ আর দেখি না। ২০১৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অফিস হেফাজতে ইসলামের দেয়া আগুনে পুড়েছিল। সে নিয়ে কোনো টু শব্দ এদেশের তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। এর বিচারও হয়নি।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামকে কোলে তুলে নিয়েছে এটা বিস্ময়কর কিছু নয়। ইতিহাসে অনেক ঘটনা আছে। অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট ও অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারী দলগুলো তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মৌলবাদী শক্তির সাথে হাত মিলায়। তারা নিজেদেরকে ধর্মরক্ষাকারী দাবি করে, তারাই সব চেয়ে ধার্মিক এবং তাদের আমলেই ধর্ম নিরাপদ, তারাই ধর্মের আইন অনুযায়ী চলতে একেবারে প্রস্তুত, তাদেরকে সমর্থন করলেই ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ পাক্কা হবে এমন প্রতিশ্রুতি ও কতিপয় কাজের মাধ্যমে মৌলবাদী শক্তিকে কোলে তুলে নেয়। আওয়ামী লীগও সেটাই করেছে।

মজার বিষয় হচ্ছে এভাবেই অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট ও অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়ে। এটাও ইতিহাসের সাক্ষ্য। বর্তমান আওয়ামী লীগ মৌলবাদী শক্তিকে কোলে তুলে নিয়ে তাদের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কাজটিকে ধর্মের আবরণে জায়েজ করতে চেয়েছিল। ধর্মরক্ষীরা জায়েজের সনদ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এতোটাই ধর্মরক্ষী হয়েগেছিল যে মদিনার সনদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা, শরিয়া বিরোধী কোনো আইন হবে না মর্মেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় হেফাজতের ১৩ দফা দাবির অনেকগুলো মেনে নিয়েছে। ইন্টারনেট জগতে তথাকথিত ধর্মাবমাননা বন্ধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। সে আইনের বলির শিকার শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কে বাদ যায়নি এই কালো আইনের থাবা থেকে!

২০১৭ সালে মৌলবাদী শক্তির দাবির মুখেই তাদেরকে খুশি করতে সরকার সেকুলার শিক্ষানীতি থেকে সরে এসেছে, পাঠ্য বই থেকে হিন্দু লেখকদের লেখা বাদ দিয়েছে। একই বছর ১১ এপ্রিল সরকার কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই কওমী সনদের স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমী সনদের স্বীকৃতি অবশ্যই দেয়া দরকার। সেটার জন্য শিক্ষাবিদ ও কওমী মাদ্রাসার নেতৃবৃন্দের সমন্বয় করে একটা পদ্ধতিগত দিক মেনে দেয়া উচিত ছিল।

কিন্তু সরকার হেফাজত ও অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোকে খুশি করতে হেফাজতের ইচ্ছে মতো যেনতেনভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ ২০১৮ সালেই ছিল জাতীয় নির্বাচন। তার আগে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন আদায় করে নেয়া খুব দরকার ছিল। হেফাজতে ইসলাম তখন খুশি হয়ে আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমী জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। শফি হুজুরও ২০১৩ সালের ৫ মে’র ঘটনা ভুলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার নেক নজর দিয়েছিলেন। সরকার সেই নেক নজরের মরতবা বুঝে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার অনেক সিদ্ধান্তই হেফাজতের রাজি-খুশির প্রতি দৃষ্টি রেখেই নিয়েছে। এখনও নিচ্ছে।

সম্প্রতি সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলো ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনে নেমেছে। দেশে কোনো ভাস্কর্য থাকবে না। রাজধানীর ধোলাইখাল তীরে বঙ্গবন্ধুর একটা ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে এই আন্দোলন শুরু হয়। সারাদেশে কোনো ধরনের ভাস্কর্য স্থাপন করতে দিবে না। এরই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও স্থাপন করা যাবে না। সম্প্রতি সারাদেশে এই নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে।

একদিন লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ বিরোধী আন্দোলন করে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হামলা মামলার স্বীকার হয়েছিল এদেশের প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সেদিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্র লীগসহ আর যা লীগ আছে সবাই প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর উপর দারুণ ক্ষেপে ছিল। ‘মুসলমানদের দেশে এসব ভাস্কর্য না থাকাই ভালো’ এই ছিল তাদের অবস্থান। স্বয়ং আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনাও মৌলবাদী শক্তির সাথে সুর মিলিয়ে ছিল।

এই লেখায় উপরে বলেছিলাম যে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট দলগুলো ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মৌলবাদী শক্তির সাথে হাত মেলায়। সেই মৌলবাদী শক্তির সাথে স্বার্থ সংঘাতও অনিবার্য। আওয়ামী লীগও ক্ষমতার রাজনীতির জন্যই মৌলবাদীদের সাথে হাত, পা, গলা, পেট সব মিলিয়ে কোলে তুলেছিল দেখতে শুনতে সুন্দর নাদুসনুদুস কাল সাপ।

ক্ষমতার স্বার্থে আওয়ামী লীগ যে সাপ কোলে তুলে নিয়েছিল ইতিহাসের নিয়মেই এখন তারা দংশনের শিকার হচ্ছে। সামনে এই দুই প্রগতি বিরোধী, জনস্বার্থ বিরোধী, অগণতান্ত্রিক শক্তির সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা সেই সংঘাতের একটি আলামত মাত্র। আওয়ামী লীগ শফি হুজুর ও অন্যান্য মৌলবাদীদের যে পানি পড়া খেয়েছিল সেটা বিষ হয়ে কাজ করতে শুরু করছে। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ কারবালার প্রান্তের পানি পানি করে মরতে বাধ্য হবে।

বিশেষ কিছু কথা বলা দরকার। বাংলাদেশে ভাস্কর্য নির্মাণ নতুন কিছু নয়। এটা বহু পুরনো সংস্কৃতি। এর বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের প্রতিবাদও বহু পুরনো। কিন্তু তাদের প্রতিবাদটা ছিল খুবই ক্ষীণ স্বরে, মৃত নালার ন্যায়। এখন যেভাবে ভয়ংকর আওয়াজ দিচ্ছে তেমন ছিল না। এই ভয়ংকর আওয়াজ দিতে পারছে কারণ তারা ক্ষমতার কোলে।

হঠাৎ করে এমন সময় এই ভাস্কর্য অপসরণ আন্দোলন শুরু করেছে যখন সারাদেশে ধর্ষণ ও বিচার হীনতার বিরুদ্ধে জোর আন্দোলন চলছে। সরকারের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। ভোটার বিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। সম্প্রতি ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কল বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। মাদ্রাসা ও মসজিদে শিশু বলাৎকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়া নিয়ে আন্দোলন চলছে। চিম্বুক পাহাড়ের ম্রোদের ভূমি দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে।

এমন সময় হঠাৎ করে ভাস্কর্য বিরোধী এই আন্দোলন শুরু করার হেতুটা কী সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কুষ্টিয়ায় কে বা কারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হাত দেয়ার সাহস করলো সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতার কথা সকলের জানা।

কোথাও সরকার বিরোধী আন্দোলন কিম্বা নাশতামূলক পরিকল্পনা হচ্ছে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করে সব ঠেকিয়ে দেয়ার দুর্দান্ত সামর্থ্য তাদের রয়েছে। এটা আমরা দেখেছি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দিচ্ছে আর তারা সেটা নিয়ে কিছুই জানছে না, তাদের তৎপরতা তো প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মতো।

গত কিছুদিন থেকে যুবলীগ, ছাত্র লীগ ও অন্যান্য আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসরণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা সেখানে যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে ও যে সুরে কথা বলছে সেগুলোও খেয়াল করার মতো। সেখানেও তারা মৌলবাদীদের কোলে রেখেই কথা বলছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে এরা ধর্মের নামে এই দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, এরা উগ্রবাদী তাই এই দেশের শান্তি প্রিয় ধর্মভীরুদের সাথে নিয়ে এসব উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভাস্কর্য করা নিয়ে ইসলামের মধ্যে হালাল ফতোয়া খুঁজছে।

মোট কথা তারা ধর্মরক্ষাকারীর ভূমিকা ছাড়েনি। মৌলবাদের আতুড়ঘরে বসে মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন হাস্যকর! আওয়ামী লীগ এই হাস্যকর আন্দোলন শেষ করবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে সমঝোতা ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে। সেটা হবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর অন্য একটা দাবি মেনে নিয়ে আপাতত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করার কাজ সমাধা করবে। বাকি কারো ভাস্কর্য বানাতে দিবে না। সে জন্য আইনের ফাঁকফোকর সৃষ্টি করবে। এটা একটা ভবিষ্যৎ বাণী। সত্য মিথ্যা বুঝতে আরও সময় লাগবে।

আওয়ামী লীগ যেভাবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে সমঝোতা করেছে সে দৃষ্টান্তগুলো এই ভবিষ্যৎ বাণীই করছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যে আন্দোলন শুরু করেছে তারা এটা কখনই করতো না যদি না বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসরণ করার কথা না উঠতো। তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির যে ধুনো তুলেছে এটা তাদের একটা গুটি মাত্র। এখন পর্যন্ত তারা অন্যান্য ভাস্কর্য অপসরণ নিয়ে অফিসিয়ালি কোনো কিছু বলেনি। তাদের এই আন্দোলন কেবলই দলীয় স্বার্থে। তারা এই দলীয় স্বার্থের জয় করতে গিয়ে সেকুলার রাজনীতির আরও বড় ধ্বংস সাধন করতে হলেও করবে।

প্রগতিশীল সংগঠনগুলো যদি মৌলবাদী গোষ্ঠীর উস্কানী ও আওয়ামী লীগের গুটির চালে পরে আখেরে আবারও ক্ষতির স্বীকার হবে। জিতবে আওয়ামী লীগ হারবে সমাজ প্রগতির সংগ্রামকারী প্রগতিশীল সংগঠনগুলো। তাই তাদের আন্দোলনের ফল যেন আওয়ামী লীগের ঘরে না যায় সেটা মাথা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়েছে যে আওয়ামী লীগ গিরগিটির চরিত্র নিয়ে রাজনীতি করে।

বিএনপি ডাইরেক্ট মৌলবাদীদের নিয়ে রাজনীতি করে এটা তারা খোলাখুলি স্বীকার করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ মৌলবাদী শক্তিকে কোলে নিয়ে পানি পড়া খেয়ে রাজনীতি করলেও কখনও স্বীকার করে না। তারা গলায় মৌলবাদের তাবিজ ঝুলিয়ে সেকুলার রাজনীতির ওয়াজ করে। এটা ভয়ংকর চরিত্র।

প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর জন্য এই ভয়ংকর চরিত্রের দল থেকে সাবধান থাকা জরুরি। কারণ বাংলাদেশের অনেক প্রগতিশীল বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও অনেক শীর্ষস্থানীয় বামপন্থী নেতার মধ্যে আওয়ামী লীগের কাঁধে সওয়ার হয়ে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার চিন্তার মতো ভয়ংকর স্বপ্নদোষ আছে। কী বিচ্ছির ধরণের মতিভ্রমের শিকার!

লেখক- কলামিস্ট ।

করোনা আক্রান্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি: ডা. জাফরুল্লাহ

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার করোনায় আক্রান্ত ধর্ষণ আর দুর্নীতিতে। বিএনপি করোনায় আক্রান্ত কোমরভাঙা রাজনীতিতে। বিএনপির মাঠে নামার মেরুদণ্ড নেই। এই করোনা থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। ধর্ষণের বিরুদ্ধে এ কর্মসূচির আয়োজন করে গণতন্ত্র ফোরাম।

মানববন্ধনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে মা-বোনেরা আর শান্তিতে থাকতে পারছেন না। কোথাও শান্তিতে বের হবেন, তারও উপায় নেই। অন্যদিকে দুর্নীতি যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতেও সাধারণ মানুষের আর বাঁচার উপায় নেই। দেশে সুশাসন থাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সারাদেশে এভাবে ধর্ষণের মহোৎসব চালাতে পারত না।

সরকারপ্রধানের উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এনাফ ইজ এনাফ। আর নয়। এবার ক্ষমতা ছাড়েন। অনেক হয়েছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। কোথাও কেউ শান্তিতে নেই। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে মূলত বঙ্গবন্ধুকেই অপমান করেছে সরকার। কারণ, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষমতা সবসময় জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকবে। বঙ্গবন্ধু শোষণহীন সমাজব্যবস্থার জন্য লড়াই করেছেন।’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি এতটাই করোনা আক্রান্ত যে রাস্তায় নামতে পারে না। বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জাতি চরম দুর্দশায় আছে। এ থেকে মুক্তির একটাই পথ আমি দেখি- আমাদের সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ারও আহ্বান জানান।

দ্রব্যমূল্যের প্রসঙ্গ টেনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে তেলেসমাতি খেলছে সরকার। আগেই ব্যবস্থা নিলে এ রকম পেঁয়াজকাণ্ড হতো না। ভারতনীতি পরিহার করতে হবে। নিজের উৎপাদন বাড়ানো এবং অন্যান্য দেশের পেঁয়াজ আনতে হবে।বিএনপিকে আবারও রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিকে রাজপথে নামতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে জনগণের পক্ষে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার একটি সাধারণ শিশু থেকে কী করে একটি জাতির মুক্তির প্রধান দিশারী হয়ে উঠলেন, চলুন জানা যাক তার জীবনের সেই ধাপগুলো।

শেখ মুজিবুর রহমানঃ

(১৭ মার্চ১৯২০ – ১৫আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” বলা হয়ে থাকে। তিনি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব এবং শেখ সাহেব হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু”। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

জন্ম ও শিক্ষাঃ

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন এবং মা’র নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

বাংলা ভাষা আন্দোলনঃ

বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা ঘটে। ১৯৪৮ সনের ফেব্রুয়ারি ২৩ তারিখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণ-পরিষদের অধিবেশনে বলেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই মন্তব্যে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদী শেখ মুজিব অবিলম্বে মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। এই বছরের ২ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয় যাতে শেখ মুজিব একটি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। এখান থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পরিষদের আহ্বানে ১১ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিবসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মীকে সচিবালয় ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ছাত্রসমাজের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্য ছাত্র নেতাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। এদের মুক্তি উপলক্ষে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় র‌্যালি হয় যাতে মুজিব সভাপতিত্ব করেন। পুলিশ এই র‌্যালি অবরোধ করেছিল। পুলিশী কার্যক্রমের প্রতিবাদে শেখ মুজিব অবিলম্বে ১৭ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ১৯ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। এতে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ তারিখে তাকে আবার আটক করা হয় এবং বহিষ্কৃত হন। উল্লেখ্য যে ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট তার হৃত ছাত্রত্ব (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ফিরিয়ে দেয়া হয়।

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন যার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি এই জরিমানাকে অবৈধ ঘোষণা করে তা প্রদান থেকে বিরত থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ এপ্রিল মুসলিম লীগ বিরোধী প্রার্থী শামসুল হক টাঙ্গাইলে একটি উপ-নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। শেখ মুজিব তার সেই আন্দোলনের সফলতার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনের ধর্মঘট করেন যার জন্য তাকে আবার আটক করা হয়। এ সময়ই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাঃ

২৩ জুন সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করার পর শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন দলে যোগ দেন। তাকে দলের পূর্ব পাকিস্তান অংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। জুনের শেষ দিকে জেল থেকে ছাড়া পান। ছাড়া পাওয়ার পরই খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে আটক করে রাখা হলেও অচিরেই ছাড়া পেয়ে যান। এর পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে মিলে লিয়াকত আলি খানের কাছে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের চেষ্টা করায় ভাসানী এবং তাকে আটক করা হয়। এটি ছিল অক্টোবরের শেষদিকের কথা।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমনকে উপলক্ষ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ ঢাকায় দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেয়ার কারণে এবারও শেখ মুজিব আটক হন। সেবার তার দুই বছর জেল হয়েছিল। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে। এ ঘোষণার পর জেলে থাকা সত্ত্বেও জেল থেকে নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আয়োজনে তিনি ভূমিকা রাখেন। এরপরই ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষার দাবী আদায়ের দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সময়ে শেখ মুজিব জেলে থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তার এই অনশন ১৩ দিন কার্যকর ছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি

৬ দফা

সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই বৈঠকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শেখ মুজিব তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মহাসচিব ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১১ মার্চ ১৯৬৪ একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় যার মাধ্যমে মুজিব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেনাশাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, রাজনীতির নামে মৌলিক গণতন্ত্র প্রচলন (বেসিক ডেমোক্রেসি) এবং পাকিস্তানের কাঠামোতে এক-ইউনিট পদ্ধতির বিরোধী নেতাদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন শেখ মুজিব। এই পদ্ধতি অনুযায়ী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং প্রদেশগুলোকে একত্রে জুড়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কাজ করতে গিয়ে মুজিব আইয়ুব-বিরোধী সর্বদলীয় প্রার্থী ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করেন। যথারীতি নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পূর্বে তাকে আটক করা হয়। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং আপত্তিকর প্রস্তাব পেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করত এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অবশ্য উচ্চ আদালতের এক রায়ে তার আগেই তিনি মুক্তি পেয়ে যান। এ সময় সামরিক বাহিনীর গণহত্যা আর বাঙালিদের চাহিদা পূরণে সামরিক শাসকদের ঔদাসীন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবী পেশ করেন যা ছিল কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা। শেখ মুজিব এই দাবিকে আমাদের বাঁচার দাবী শিরোনামে প্রচার করেছিলেন। এই দাবির মূল বিষয় ছিল একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত পাকিস্তানী ফেডারেশনে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। এই দাবি সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রত্যাখান করেন এবং শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ কারণে তিনি উক্ত সম্মেলন বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ১৯৬৬ সালে মার্চ মাসের এক তারিখে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর তিনি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রচার কার্য পরিচালনা করেন। প্রায় পুরো দেশই ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের সময় তিনি সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকায় বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে বন্দী হন। বছরের প্রথম চতুর্থাংশেই তাকে আটবার আটক করা হয়েছিল। এই বছরের মে ৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জে পাট কারখানার শ্রমিকদের এক র‍্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তার মুক্তির দাবিতে ৭ জুন দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ এই ধর্মঘট চলাকালে গুলিবর্ষণ করে যার কারণে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে আনুমানিক তিনজনের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতাঃ

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে ইয়াহিয়া খান সংসদ ডাকতে দেরি করছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা এর ফলে বুঝতে পারে যে, মুজিবের দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেন।

ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং মুজিবসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ও জনসাধারণের অসন্তোষ দমনে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে। সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ধানমণ্ডির ৩২ নং বাড়ি থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ:

“এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।”

মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ফয়সালাবাদের একটি জেলে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। পাকিস্তানি জেনারেল রহিমুদ্দিন খান মুজিবের মামলার পরিচালনা করেন। মামলার আসল কার্যপ্রণালী এবং রায় কখনোই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় নি। এ মামলাটি “লায়ালপুর ট্রায়াল” হিসাবে অভিহিত।

১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও অস্থায়ী সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিচালিত অভিযান অল্প সময়ের মধ্যেই হিংস্রতা ও তীব্র রক্তপাতে রূপ নেয়। রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করে। বাঙালি ও অবাঙালি হিন্দুদেরকে লক্ষ্য করে বিশেষ অভিযানের কারণে সারা বছরজুড়ে প্রচুর হিন্দু জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় গ্রহণ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ও পুলিশ রেজিমেণ্টে কর্মরত পূর্ব বাংলার সদস্যবৃন্দ দ্রুত বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং লীগ সদস্যবৃন্দ কলকাতায় তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব প্রবাসে বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তি বাহিনীর নেতৃত্ব বড় রকমের বিদ্রোহ সংঘটিত হতে থাকে। আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানি সরকার মুজিবকে ছেড়ে দিতে এবং তার সাথে সমঝোতা করতে অস্বীকৃতি জানায়।

যুদ্ধবর্তী সময়ে মুজিবের পরিবারকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। তার সন্তান শেখ কামাল মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি এবং একজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার ছিলেন। মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনীর ভিতরে সংঘটিত যুদ্ধটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় সরকারের অংশগ্রহণের পর, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং লীগ নেতৃবৃন্দ ঢাকায় ফিরে সরকার গঠন করেন। ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো মুজিবকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি দেন। এরপর তিনি লন্ডন হয়ে নতুন দিল্লিতে ফিরে আসেন এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী’র সাথে সাক্ষাতের পর জনসমক্ষে “ভারতের জনগণ, আমার জনগণের শ্রেষ্ঠ বন্ধু” বলে তাকে সাধুবাদ জানান। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে এসে তিনি সেদিন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সামনে বক্তৃতা দেন।

জাতীয় শোক দিবস:
হত্যাকাণ্ড (শোকাবহ আগষ্ট)-

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যূষে একদল সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধানমণ্ডিস্থ বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার এবং তার ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে। কেবল তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে বেঁচে যান। তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সামরিক কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে ছিলেন শেখ মুজিবের প্রাক্তন সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন।

২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ তারিখে মুজিব হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে খন্দকার মোশতাক সরকার ইমডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন এবং জেনারেল জিয়াউর রহমান ও পাকিস্তানপন্থী প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে তার বৈধতা দেয়া হয়। যা ১২ অগাস্ট ১৯৯৬ তারিখে সংসদে রহিত করা হয়। সংবাদ মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-কে দায়ী করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ইউজিন দিয়ে লরেন্স লিফসুল্জ সিআইএ-কে সামরিক অভ্যুত্থান ও গণহত্যার জন্য দোষারোপ করেন। তার মরদেহ তার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সামরিক তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়। অন্যান্যদের ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মুজিবের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে বহু বছরের জন্য চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের সূচনা ঘটে। সেনাঅভ্যুত্থানের নেতারা অল্পদিনের মধ্যে উচ্ছেদ হয়ে যান এবং অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান আর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দেশে চলমান অচলাবস্থা তৈরি হয় এবং সেনাবাহিনীতে ব্যাপক অরাজকতা দেখা দেয়। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর তৃতীয় সেনা অভ্যুত্থানের ফলশ্রতিতে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা আসীন হয়। সেনাঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানসহ ১৪ জন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিরা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে খুনি সৈয়দ ফারুক

আমার মুজিবঃ

‘মুজিব’ এটা কি কোনো নাম?
নাকি তিন অক্ষরের শব্দ! মনে হয়,
‘মু জি ব’ তিন অক্ষরের এমন একটি শব্দ – যে শব্দটি শুনলেই আবেগে চোখে পানি এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মাথা অবনত হয়ে আসে। আমার কাছে মুজিব হলো ত্যাগই মহাপুরুষ। জন্মের পরই হয়তো নদীমাতা তার স্রোতধারায় বলে দিয়েছিল,

“হে মুজিব তুমি আমাদের স্বাধীনতা বইতে দাও, আমাদেরকে সকল পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত কর।

আরও পড়ুনতারুণ্যের ভাবনা: বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ
তাইতো মধুমতির তীরে আবির্ভূত হওয়া মুজিব আঙ্কা পেয়েছিল poet of politics হিসেবে।
যে সকলের জন্য নিজের ব্যাক্তিগত চাহিদাকে হত্যা করে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারাটাই মহত্ত্ব মনে করতেন। তিনি তার ৫৪ বছরের জীবনে ৪৬৮২ দিন কারাবন্দী কাটিয়েছেন। যা ছিলো তার জীবনের এক – চতুর্থাংশ। মুজিব হলেন এক অসম্পূর্ণ মহাকাব্য। যার রচয়িতা যিনি নিজেই। ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ সেই মহাকাব্যের জন্ম। এই মহাকাব্যকে যদি বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়, তবে ছয় দফা আন্দোলন তার মূল, ৭-ই মার্চের ভাষন তার কান্ড, ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষনায় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ তার পাতা এবং ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় হলো তার ফুল। সে ফুলের নাম বাংলাদেশ। আর মুজিব ফুলের সুবাস। যার উপস্থিতি দেখা যায় না কিন্তু অনুপস্থিতি ফুলকে করে সুভাষিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট অসম্পূর্ণ অবস্থায় এই মহাকাব্য রচনা থামিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে এই মহাকাব্য অসম্পূর্ণ কিন্তু মনের মণিকোঠায় সদা মুজিব মহাকাব্য বিদ্যমান। আমার মুজিব তার বজ্রকন্ঠে পুরো বিশ্বে তার স্থান করে নিয়েছেন। শুধু একটা কথাই বলবো,

“মুজিব কোনো দলের না
ক্ষমতা বা বলের না।
মুজিব সমগ্র জাতির।
মুজিব আমার।

মুজিব আমার ভালোবাসার নাম। আমার প্রিয় কবির নাম, আরে তিনি তো কবিই! ৭ কোটি বাঙালিকে নিয়ে তিনিই তো বাংলাদেশ নামক জাগ্রত কবিতাটি লিখেছেন।আমার স্বপ্ন, আমার মুজিবের মতো একদিন আমিও বলবো, হ্যাঁ আমিও দৃঢ়কন্ঠে বলে উঠবো –

“চলো সব হানাহানি দূর্নীতি বন্ধ করি
শেখ মুজিবের সোনার বাংলা গড়ি।

আরও পড়ুন বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম চির অম্লান

লেখকঃ তাসফীর ইসলাম (ইমরান)

অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী

বা সা ই (রামমালা,কুমিল্লা)

বিঃ দ্রঃ- আমি ছোট মানুষ। বিশ্বনেতাকে নিয়ে লিখলে আমার কিছু ভুল হতেই পারে। তবুও তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’,গুগল,উইকিপিডিয়া, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনে স্মরণীয় ঘটনা’, আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘শেখ মুজিব ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি’ এবং অন্যন্য বই ও নথির সূত্র ধরে সেই ইতিহাস হাজির করার চেষ্টা করেছি। ভুল হলে মার্জিত করবেন।

প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা প্রচার বিমুখ আ. লীগের ‘খোকা ভাই’

মোঃ মেজবাহুল ইসলাম


খােকা, তাের ওপর আমি নির্ভর করি। তুইতাে জানিস, যে জীবন আমি বেছে নিয়েছি তার কোনাে নিশ্চিত স্থিতি নেই, কখন কোথায় থাকি। জানি আমার বহু আত্মীয় আছে, আছে অসংখ্য সুহৃদ, অগণিত ভক্ত কিন্তু তােকেই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে হয় । তাের ওপরই দিয়েছি তাের ভাবী আর আমার দেখাশুনার ভার। সেই নির্ভরতা— “খােকা, তুই এদেরকে দেখিস।”

উপরোক্ত উক্তিটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তাঁর ফুফাতো ভাই মমিনুল ইসলামের কাছে আকুতি ছিল।

মমিনুল ইসলাম যিনি খোকা নামেই সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করছিলেন কারণ বঙ্গবন্ধু তাঁকে আদর করে খোকা ডাকতেন। সেই ১৯৪৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির ছায়াসঙ্গী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন মমিনুল ইসলাম খোকা।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের চরম দুর্দিনে একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি।বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর পরমাত্মীয়র বাসা অর্থাৎ জেলে যেতেন তখন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের হাতের লাঠি ছিল খোকা। ১৯৫৩ সনের দিকে বঙ্গবন্ধু ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ঢাকায় এসে সর্বপ্রথম খোকার বাসাতেই উঠেন। এরপর বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীত্ব পেলে সরকারি বাসভবনেও উঠেন। ৩২ নম্বরের বাসা তৈরি হওয়ার আগে প্রায়ই বেগম মুজিবকে নিয়ে তাঁর বাসা পরিবর্তন করতে হত।

১৯৬৭ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিবাহের কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল খোকার প্রতিই।১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁর গাড়িতে করেই আসেন। ৭১ এর অগ্নিঝরা মার্চে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎকালেও বঙ্গবন্ধুর পাশেই থাকতেন মমিনুল ইসলাম খোকা।

৭১ এর ২৫শে মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করলে শেখ পরিবারে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। সেই দুঃসময়ে খোকা বেগম মুজিবকে নিয়ে ঢাকার এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি এভাবেই দিন কাটাচ্ছিল। ৭১ এর ২৭শে জুলাই শেখ হাসিনা পুত্র সন্তান জন্ম দেন এ কথা খোকা বেগম মুজিবকে জানানোর সাথে সাথেই বেগম মুজিব তাঁর নিজের হাতের আংটি খোকাকে দেন।

৭১ এর ৫ই আগস্ট শেখ জামাল ১৮ নম্বর রোডের বাড়ির দেয়াল টপকিয়ে পালালে খোকার প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাঁকে হত্যার আদেশ দেন এক ক্যাপ্টেনকে। সেই ক্যাপ্টেন তাঁকে হত্যার জন্য গোপনীয় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ একটি ফোন আসলে ক্যাপ্টেন খোকাকে জড়িয়ে ধরে বলেন “তুম বাচ গায়ে খোকা সাহেব, তুম বাচ গ্যায়ে।” খোকার সহজ সরলতার কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও দুর্বল ছিল।

স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে থাকা চাটুকার ও তেলবাজদের কারণে অভিমানেই স্বদেশ ত্যাগ করে লন্ডনে পাড়ি জমান। তবে মাঝে মাঝেই দেশে আসতেন।৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার প্রতিবাদে সুদূর লন্ডনেই আন্দোলন চালিয়ে যান।তখন প্রায় প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতারা বৈঠক করতেন কিভাবে বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদীদের হাত থেকে করা যাবে, কার নেতৃত্বে করতে করা যায় ইত্যাদি।

উপস্থিত প্রায় সকলের ভরসা তখন ড.কামাল হোসেন।কিন্তু খোকা সাহেব বলে উঠলেন সামরিক জান্তাদের পতনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা,একথা শুনে প্রায় সকলেই দ্বিমত পোষণ করে বলেন,হাসিনার তো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই কিন্তু খোকা সাহেব জোর দিয়েই বলেন হাসিন ইডেন কলেজে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত ছিল এবং সেখানকার নির্বাচিত ভি.পি ছিল।

১৯৭৬ সালে শেখ রেহেনা লন্ডনে আসলে সে তাঁর প্রিয় খোকা কাকার বাসাতেই উঠে। কিছুদিন পর খোকা সাহেবের অভিভাবকত্বে শেখ রেহেনার আকদ সম্পন্ন হয়।এছাড়া দিল্লিতে প্রায় শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে যেতেন ও তাদের আর্থিক ও মানসিকভাবে সার্পোট দিতেন।

মমিনুল ইসলাম খোকা বঙ্গবন্ধুর ড্রাইভার, রাজনৈতিক সফরসঙ্গী, বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন।তৎকালীন সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সকল কর্মসূচিতে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল। ক্ষমতার লোভ তাঁর কখনোই ছিল না। অফুরন্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার মোহ তাঁকে টানেনি। সারাজীবন সাদামাটা জীবনযাপন করে গেছেন।

২০১৪ সালের ২৩শে মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন প্রচার বিমুখ আওয়ামী লীগের খোকা ভাই। তাঁর এই মৃত্যুদিবসে মহান আল্লাহতায়ালা নিকট আর্জি আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন। আমিন।

জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু।


লেখকঃ সহ-সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।