যুবসমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

দ্যা ক্যাম্পাস টুডেঃ যুবসমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে,বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২২ মে) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশে গ্রামীণ উদ্যোক্তা উন্নয়নে ই-কমার্সের চ্যালেঞ্জ

হোসনে আরা খান নওরীন: নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পেয়াঁজ, আলু ও চিনি এবং কোরবানীর গরুও যে অনলাইনে কেনা যায়, তা এই করোনাকাল শিখিয়ে দিল দেশের মানুষকে। বিশেষত শহরের মানুষকে। করোনাকালীন সময়ে শহর অঞ্চলে এখন অনেকেই অনলাইনে কাঁচাবাজার সারছেন। পাশাপাশি ওষুধ ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, পোশাক, গৃহস্থালির বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনছেন।

করোনাকালে তাঁরা অনলাইনে পণ্য কিনেছেন। ফলে অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে তাঁদের একটা অংশ অনলাইনের ক্রেতা হিসেবে থাকবেন। যারা ক্রেতাদের ভালো সেবা দিচ্ছে, তারাই ভালো করবে। কিন্তু গ্রাম অঞ্চলে ই-কমার্সের কোন অস্তিত্ব নাই বললে চলে।

অথচ আমাদের দেশে প্রায় ৮০% লোক গ্রামে বাস করে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ই-ক্যাবের তথ্যমতে-দেশের ই-কমার্সের ক্রেতারা মূলত শহরকেন্দ্রিক; তন্মধ্যে ৮০% ক্রেতার ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের। এদের মধ্যে ৩৫% ঢাকার, ৩৯% চট্টগ্রামের এবং ১৫% গাজীপুরের অধিবাসী। অন্য দু’টি শহর হলো ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ এবং আরেকটি মেট্রোপলিটান শহর সিলেট। ৭৫% ই-কমার্স ব্যবহারকারীর বয়স ১৮-৩৪-এর মধ্যে। তবে গ্রামে গ্রামে পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা চালু হয়নি।

অনলাইনে বিক্রির প্রবৃদ্ধি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ দেশে করোনাকালে ই-কমার্সে লেনদেন বেড়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মধ্যে গত ৮ মাসে ই-কমার্স সেক্টরে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় এক লাখ পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে প্রতিদিন এবং ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে জাতিসংঘের ট্রেড বডি হিসেবে পরিচিত ইউএনসিটিএডি বিজনেস-টু-কনজুমার (বিটুসি) ইলেকট্রনিক কমার্স নামের একটি সূচক প্রকাশ করেছে, যেখানে ১৩০টি দেশের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার, নিরাপদ সার্ভার, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ার হার ও পোস্টাল ডেলিভারি সিস্টেম এই চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।

১৩০টি দেশের মধ্যে অবশ্য বাংলাদেশের ঠাঁই হয়নি। ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলো এই সূচকের শীর্ষে রয়েছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। উন্নয়নশীল ও বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ঠাঁই করে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোরিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুর। অবশ্য অনলাইনে কেনাকাটার দিক থেকে ব্রাজিল, চীন ও রাশিয়া ফেডারেশন ভালো করছে। আফ্রিকা অঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহার কম হওয়ায় ই-কমার্সের প্রসার হচ্ছে না।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে দেশে শুরু হয় ই-কমার্স ব্যবসা। প্রথম দিকে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন, মানুষকে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবেলা করে বিগত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অনলাইনে কেনাকাটা। বিভিন্ন গবেষনাপত্র বিশ্লেষন করে আমার কাছে গ্রাম অঞ্জলে ই-কমার্সের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ ৩টি মনে হয়েছেঃ

১। গ্রাম অঞ্চলে ইন্টারনেট অপ্রতুলতা এবং ইন্টারনেট থাকলেও নেটওয়ার্ক দুর্বল।

২। পেমেন্ট পদ্ধতি নিয়েও গ্রাম পর্যায়ে অনেকক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। এলাকাভিত্তিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও বর্তমানে দেশে প্রচলিত ক্যাশ অন ডেলিভারী, কন্ডিশন ডেলিভারী, মোবাইল ব্যাংকিং, চেক, টিটি, ডিডি, পেমেন্ট গেটওয়ে এগুলোর প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে বেশভালো ভাবে ব্যবসা করা সম্ভব।

৩। সঠিক সময়ে ডেলিভারী দেওয়া অনেকক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভব নয়। তবে এটি সত্যি যে, অযথা টেনশন না করে প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে থেকে কিভাবে ভালো সার্ভিস পন্য ও মান নিশ্চিত করে বেশী বিক্রি করা যায় সে কথাই সকলের ভাবা উচিত।

উল্লেখ্য যে, প্রথাগত ব্যবসায়িরাও এসব ঝামেলায় রয়েছেন যশোরের একজন নকশীকাথা প্রস্তুতকারক কিন্তু খুব সহজে চট্টগ্রামে তার পাইকারকে স্যাম্পল পাঠাতে পারছেন না। কিন্তু যশোরের নকশীকাথা কিন্তু ঠিকই ঢাকায় চাহিবামাত্র পাওেয়া যায় এমনকি ফুটপাতে পর্যন্ত। তাহলে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে রাস্তা বের করে নিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের বেচাকেনা বা ব্যবসা কোনেটাই থেমে নেই।

স্থানীয় পর্যায়ে ই-কমার্সে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাইটে ক্রেতা ধরে রাখা। ক্রেতাদের আস্থা ফেরানো গেলে তাদের ধরে রাখা যাবে। সুতরাং দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা আর ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের তৈরি অনেক পণ্যের আমরা নামই জানি না। দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে চাইলে সবার আগে নজর দিতে হবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দিকে। বর্তমানে করোনাকালীন গ্রামীন উদ্যোক্তা হতে পারে প্রায় ২ কোটি কর্মহীনদের সমস্যার সমাধান।

লেখকঃ ফাউন্ডার ও সিইও, নওরীন’স মীরর।

‘অল্প বয়স তোর, তুই পারবি না’, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের আয় মাসে ৩০ হাজার টাকা

করোনা সংকট সময়ে অনেক শিক্ষার্থী যেখানে অর্থকষ্টে জর্জরিত, আবার কেউ বা নিজের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেখানে
অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অসিত মন্ডল।

অসিত মন্ডল করোনার এই অবসরে কাছের এক সহপাঠীর বড় ভাইয়ের পরামর্শে চীনা প্রজাতির বেইজিং হাঁস পালন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এখন সে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মালিক এবং মাসিক আয় ১৫ থেকে ৩০ হাজার।

বেইজিং হাঁস পালনে সফলতা নিয়ে অসিত মন্ডলের সাথে কথা বলেছেন দ্য ক্যাম্পাস টুডের স্টাফ রিপোর্টার সাগর দে

করোনার এই সময়ে হঠাৎ কি ভেবে হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন?

আমি এই হাঁস সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য দীর্ঘ ছুটিতে থাকায় মার্চের প্রথম সপ্তাহে এই হাঁস পালন শুরু করি যাতে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে পারি।

একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে হাঁস পালনে পরিবার থেকে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল?

প্রতিবন্ধকতা তো ছিলোই। যখন আমি উদ্যোগের কথা পরিবারকে প্রথমে জানাই তখন বলছিলো- ‘অল্প বয়স তোর, তুই পারবি না’। এই প্রজাতির হাঁসের চল আমাদের এদিকে নাই। যদি হাঁসের বাচ্চা বাঁচাতে না পারিস? ডিম ফোটাতে পারিস না একেবারে নতুন কি দিয়ে কি হবে তার থেকে এসব বাদ দে। কিন্তু এসব কথা না শুনে আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে হাঁস পালন করি। শুধু বলেছিলাম আমি বিস্তারিত শুনেছি এক বড় ভাইয়ের থেকে দেখি কি হয়!

প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও অনুপ্রেরণা পেলেন কিভাবে?

ওই যে বললাম এক ভাই। তিনি আমার এক বন্ধুর বড় ভাই। বন্ধুর মুখে শোনা আর তার ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে।

বেইজিং হাঁস কোথায় পেলেন, প্রথমে কত হাঁস নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু ?

ওই বড় ভাইয়ের থেকে প্রথমে ২০০ হাঁস কিনে খামারের যাত্রা শুরু। যার দাম প্রায় ২০০০০ টাকা।

শুরুতে এতগুলো টাকা কিভাবে পেয়েছিলেন?

আমার সঞ্চয়ের কিছু টাকা আর বাকি টাকা পরিবার থেকে দিয়ে ছিল।

বেইজিং হাঁস সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

বেইজিং হাঁসকে অনেকে রাণী হাঁস বলে। ৫ মাস পর বড় হলে এর ওজন প্রায় ৩-৩.৫ কেজি এবং ৬ মাস পর এরা ডিম পারা শুরু করে।প্রতিটি ডিমের দাম ২০ টাকা। এর মাংস খেতেও অনেক সুস্বাদু এবং মাংসের কেজি ৩৫০ টাকা। এছাড়া ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করলে প্রতি পিস হাঁসের দাম ১০০ টাকা।

এখন আপনার মাসিক ইনকাম কত?

শুধু ডিম বিক্রি করলে মাসে ১৫ হাজার মতো থাকে তবে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করলে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে বর্তমানে খামারে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার হাঁস আছে।

ডিম কি তা দিয়ে ফুটান না মেশিন আছে?

প্রথমে তা দিয়ে ফুটাতাম। যখন আমি সফল হলাম তখন আমার অনির্বাণ মামা খুশি হয়ে ফ্রি একটি মেশিন বানিয়ে দেন যার দাম প্রায় ২ লক্ষ টাকা। এই মেশিনে একসাথে প্রায় ৫০০০ ডিম ফুটানো যায়।

ভবিষ্যৎ খামার নিয়ে পরিকল্পনা কি?

সফল হওয়ার পর পরিবার থেকে এখন বলছে বড় আকারে করতে।আমার ইচ্ছেও এই খামার বড় পরিসরে করার। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বড় করে খামার ঘর করবো বাড়ির আঙিনায়।

শেষ প্রশ্ন, প্রতিবন্ধকতার পেরিয়ে আজ আপনি সফল উদ্যোক্তা, এব্যাপারে আপনার অভিমত?

আজ আমি সফল হতে পেরে অনেক খুশি। আরও বেশি ভালো লাগে যখন আমার সহপাঠীরা এব্যাপারে আগ্রহী হয়, আমার কাছে পরামর্শ নেয়। শুধু পরামর্শ বা সহপাঠী নয় আগে এলাকার যারা সমালোচনা করতো তারও এটা করতে আগ্রহী।

ইতিমধ্যে পরিচিতদের মধ্যে অনেক ৭০০ থেকে ৮০০ হাঁসের অর্ডার পেয়েছি। আর শেষে এটাই বলবো অনেকে আছে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পায় না, বেকার থাকে। তাদের উদ্দেশ্য বলবো কোন কাজই ছোট নয়, শুধু চাকরির পিছনে না দৌড়াদৌড়ি করে সময়টাকে কাজে লাগাতে পারলে যে কেউ সফল হতে পারবে।

গ্রাজুয়েশন শেষে ঢাবি ছাত্র ইলিশের কারবার করে লাখটাকা আয়

সানজিদা আরা বিথী, ঢাবি


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের ইংরেজি ভাষা বিষয়ে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা টগবগে তরুণ ; স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধনের একনিষ্ঠ কর্মী, বিএনসিসির ক্যাডেট সার্জেন্টসহ অসংখ্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ সিয়াম।

ইলিশের দেশ চাঁদপুর সিয়ামের বাড়ি হওয়ায় তাজা আসল ইলিশের ব্যবসায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল।মানুষের টিটকারিমূলক সকল কথা উপেক্ষা করে পিছপা না হয়ে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে’ইলিশের বাড়ি’ নামক ফেইসবুক পেইজ খুলে ইলিশের কারবার শুরু করে সাহসী সিয়াম।

এই সাহসী উদ্যোক্তার বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্যাম্পাস টুডের ঢাবি প্রতিনিধি সানজিদ আরা সরকার বিথী।

করোনার এই সময়ে আপনি কি ভেবে ব্যবসায়টা শুরু করলেন?

‘আমি খুবই কনফিডেন্ট একটি ছেলে।বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন করে পরিচিতি পেয়েছি। ‘বাঁধন’করে আমার নাম হয়ে গেছে রক্তচোষা।বিএনসিসি করে সার্জেন্ট, মেজর বলে ডাকে সবাই।কিন্তু অনার্স ফোর্থ ইয়ারের দিকে আমার একটিভিটি কমে গেলে একটি খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়।হলের অস্থিতিশীল পরিবেশ কাটিয়ে,কিছু নেগেটিভ পিপুল থেকে মুক্তি পেয়ে করোনায় বাসায় আসার পর খোলা বাতাস পেয়ে মনে হয়েছে জীবনের উদ্যম ফিরে পেয়েছি।

গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে গেছে সেহেতু চাকরির জন্য রাতে ঘুম হতনা।ভাবতাম কি করা যায়!ভাবতে ভাবতে ১১-১২ টা প্ল্যান রেডি করে প্রতিদিন আগাইতাম। তারপর ‘WE (Women and e-commerce forum)’ নামক গ্রুপে ফ্রেন্ডের মাধ্যমে এড হয়ে গ্রুপটা পর্যবেক্ষণ করে মানুষের বিজনেসের বিভিন্ন লেসন শুনে ইতিবাচক প্রেষনা সঞ্চয় করলাম। হলে ইলিশের মত দেখতে কি খাইতাম কোনো স্বাদ পেতাম না।সবমিলিয়ে ভাবলাম ইলিশ নিয়ে কাজ করা যায় কিনা এবং এখানে ‘WE’ এর একটা বড় অবদান আছে।’

ইলিশের কারবার শুরু করতে গিয়ে কি কি বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন?

‘শুরু করতে গিয়ে আব্বু, বোনেরা বলেছে,’এগুলো নিয়ে কাজ করবি;এর থেকে ভালো কাপড় বিক্রয় কর!’, ‘পড়ালেখা করাইছি এজন্য?’ শুরুতে সবদিক থেকেই ডিমোটিভেশন পাচ্ছিলাম।আমি সবদিক দিয়ে ভালো সোর্স খুঁচ্ছিলাম।

আব্বুর দেখানো নানা যুক্তি শুনে পিছপা না হয়ে দিন ফিক্সড করে বিভিন্ন ইলিশের হাটে গিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করে খোঁজখবর নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনে করে ভাবলাম ইলিশ নিয়ে কাজ করা যেতে পারে; মানুষকে ভালো জিনিসটা দেয়া যাবে।’

ইলিশের সোর্স খোঁজার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

‘যার কাছ থেকে প্রথমদিন মাছ নিয়েছি সে সবকটা মাছ ভালো দিলেও সেইম সাইজের মাছ না থাকায় বলল’ একটা ছোট সাইজ মাছ চলবে!’আমি বললাম আমার কোয়ালিটি আর ওয়েটে কোনো হেরফের হওয়া চাইনা।তারপর সে অন্য জায়গা থেকে মাছ এনে দিয়ে বলল,’ আজ তো প্রথম দিন সমস্যা নাই।’ কথাটি আমার ভালো লাগেনি; হয়তো সে আমার সাথে চিট করবে এই ভেবে পরে ওনার কাছে আর গেলামনা।

এরপর ভালো সোর্স খুঁজতে খুঁজতে এলাকার পরিচিত একজনের সোর্স খুঁজে পেলাম।আসল ইলিশ দেয়ার শর্তে সেখান থেকে এখন নিচ্ছি এবং সে ও আমার ভরসা বজায় রাখছে এবং অন্যান্য সোর্স ও ম্যানেজ আছে।’

প্রথমদিকে কাস্টমার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, কাস্টমার হতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন কি?

‘প্রথম ডেলিভারি দেই আমার বন্ধুর কাছে। দ্বিতীয় অর্ডার ছিল দুই কেজির দুইটি ইলিশ(খুবই রেয়ার,পাওয়া যায়না)এবং এক কেজির একটি ইলিশ;এক সিলেটের আপুর কাছে। ওনার সমস্যা থাকায় এডভান্স ছাড়াই মাছ কিনে আনলাম।কিন্তু পরেরদিন সকালে ওনার মামা মারা যাওয়ায় আপুটা গ্রামের বাড়ি চলে গেছে ওনি জানাল, সিলেটে আত্মীয় কেউ মারা গেলে মাছ খায়না।ওনার দিক থেকে ওনি ঠিক থাকলেও ব্যবসায়ের শুরুতেই আমি মেন্টালি বড় একটা ধাক্কা খেলাম যেহেতু চাঁদপুরের আসল ইলিশের দাম অনেক বেশি।

তারপর আব্বু ইলিশগুলা কিনে নিল।আব্বু প্রথম দিকেও আপত্তি জানালেও পরে আমাকে সাপোর্ট করেছে। এরপর আমি নিজেকে আরো গুছালো করলাম।এরপর থেকে প্রতি অর্ডারে ৫০% এডভান্স নেয়া শুরু করলাম।আলহামদুলিল্লাহ এরপর আর এ ধরনের কিছু হয়নি এবং প্রতিনিয়ত আমি উন্নত করার চেষ্টা করছি।প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সটা কিভাবে আরো ভালো করা যায়। ‘

সাড়া পাচ্ছেন কেমন, কত টাকার মাছ বিক্রয় হলো?

‘ঢাকায় প্রথম প্রি-অর্ডারে নয়টা জায়গায় অনেকগুলো ইলিশ বিক্রয় হয়।দ্বিতীয় প্রি-অর্ডারে চট্টগ্রামে দুইটা জায়গায় ডেলিভারি দেই।সর্বোপরি আস্তে আস্তে মানুষের বিশ্বাসটা অর্জন করতে পারছি।নিজেই ছুটে যাই মানুষের বাসায় হোম ডেলিভারি দেয়ার জন্য।অনেকেই হোলসেলে নিতে চাচ্ছে।এখন আমি প্রি-অর্ডার নিচ্ছি এবং মানুষের খুব ভালো রেসপন্স পাচ্ছি।

১১৭ কেজির আরো বেশি মাছ বিক্রয় হয়েছে।লাখ টাকার মত সেল হয়ে গেলেও প্রফিট অত বেশি না।কারন আমি কোয়ালিটিটা এনসিউর করি যেটা বাজারে করেনা ফলে কস্টটা ও বেশি।’

শেষ প্রশ্ন, ‘ইলিশের বাড়ি’নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

‘আমার’ইলিশের বাড়ি’ চাঁদপুরের তাজা ইলিশের দেশীয় ব্র‍্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই।মানুষের মুখে যতদিন ইলিশের নাম থাকবে ততদিন ‘ইলিশের বাড়ি’র নাম ও থাকবে।

দেশের প্রতিটা জেলার মানুষ চাঁদপুরের তাজা ইলিশটা পাবে।চাঁদপুরের ইলিশের ঘ্রাণ নিয়ে কোনো প্রতারনা হবেনা এমনকি বিদেশেও পৌঁছে যাবে।ব্র‍্যান্ড হওয়ার পর ও ইলিশের কোয়ালিটি এবং মানুষের বিশ্বাস ধরে রাখব।সবাই আমার মত করে স্বপ্ন দেখেনা। আমি যেভাবে স্বপ্ন দেখি আল্লাহর রহমতে ভবিষ্যতে কোয়ালিটিটা ধরে রাখতে পারব; ভালো কিছু করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। ‘

কুবি ছাত্রীর শূন্য থেকে উদ্যোক্তা হবার গল্প

ফেনীর মেয়ে মৌরি বৈদ্য। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে বিবিএ এমবিএ শেষ করেছেন। চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছন না ছুটে চিন্তা করেছেন নিজেই কিছু করবেন। সেই চিন্তা থেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠা। বাসায় বসেই শুরু করেছেন অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা।

গড়ে তুলেছেন ‘মর্ত্যের অপ্সরী’ নামের প্লাটফর্ম। লক্ষ্য তাঁর বহুদূর যাবার। পড়াশোনা করে শুধু চাকরি নয়, হওয়া যায় উদ্যোক্তাও। নিজের উদ্যোক্তা হবার গল্পটাই শেয়ার করেছেন মৌরি।

‘চিন্তাশক্তি আর রুচিবোধ প্রকাশের সুযোগ নেই যেখানে সেই কাজগুলো কখনোই ভালো লাগতোনা তবুও খুব ইচ্ছে ছিলো MTO পদেই কোন ব্যাংকে জয়েন করে ৬-৭ বছর অনেক টাকা কামিয়ে বুটিক হাউজ দেবো অসাধারণ করে ।

ছোটবেলা থেকেই সাজতে যেমন পছন্দ করতাম তার চেয়েও বেশি ভালো লাগতো নিজের পছন্দে অন্যকে সাজাতে। মানে কাজিনরা, বান্ধবিরা যখন আমার পছন্দে জিনিস পরতো অন্যরকম সুখ পেতাম সত্যিকার অর্থে!

পড়াশোনার বিষয়টা বলি একটু,আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছি ২০১৬ সালে।ঢাবিতে ডি ইউনিটে চান্স পেয়েও পড়িনি বিবিএ এমবিএ করে ব্যাংকার হবো ভেবে।

পড়াশোনা শেষ করে ইন্টার্নশীপ এর সময় কনসিভ করি,২০১৭ সালের জানুয়ারিতে পুত্রসন্তান হয়।

পুরো ২০১৬-১৭ জার্নিটা একদম একা কষ্ট করার সময়েই টের পেয়েছিলাম সব সামলিয়ে চাকরি হয়তোবা করা হবেনা আমার,তাও আশা ছাড়িনি। অপেক্ষা করছিলাম ছেলেটা একটু বড় হলে চাকরি করবো। কিন্তু যেহেতু পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছিলাম না, প্রিপারেশন ছাড়া একটা পরীক্ষাও কখনো দেইনি।

কয়েকটা প্রাইভেট স্কুল কলেজের পরিচিত চেয়ারপার্সন অফার করেছিলেন কিন্তু সব ছিলো আমার জন্মস্থান ফেনীতে।বিবিএ ২য় বর্ষে বিয়ে হয়।তার মানে দীর্ঘ সময় বর থেকে আলাদা ছিলাম, বাচ্চাটা বাবা থেকে আলাদা থাকবে সেটা মেনে নিতে পারছিলাম না একদমই।

আমি ফেনীর মেয়ে, ছোট্ট অতি আধুনিক মফস্বল এলাকাটায় একটা সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্ম, যেখানে মা রিটায়ারমেন্ট এর পরেও স্কুল কর্তৃপক্ষ এক্সটানশন করিয়ে উনাকে রেখে দিচ্ছেন বছরের পর বছর উনার অসাধারণ যোগ্যতার কারনে, আর বাবা ফেনী সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। (এখন প্রাইভেট কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে আছেন) ফেনীজুড়ে একনামেই সুপরিচিতি দু’জনেই।

এমন ঘরের মেয়ে অন্তত বিসিএস না দিয়ে চাকরি না করে ব্যবসাটা ঠিক মানা যায় না, এই কটু কথাগুলো শুনতে শুনতে এখন সয়ে গেছে আসলে।

আমি ভেবেছিলাম ৬ বছর পর যেটা শুরু করবো সেটা যদি শূন্য থেকেই চেষ্টা করা যায় ক্ষতি কি?

মা বাবা মেনে নিতে পারছিলোনা পাবলিক থেকে পড়াশোনা করে মেয়ে জুয়েলারি বানাবে অথবা কাপড় বিক্রি করবে! প্রথমে ঝামেলা হলেও এখন বাবা নেট প্রফিট জানতে চাইলে বেশ গর্ব হয় ।

শুরুটা কঠিন ছিলো খুব।সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিলো যখন দেখছিলাম ব্যাচ এর সবাই জব করে,আমি পাবলিক থেকে পরে যে কাজ করবো সেটা পড়াশোনা না করেও করা যায় এই ধরনের কথা হজম করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ।

তোমার লজ্জা লাগেনা? আসলেই চাকরি করবা না? এতো পড়ে কি লাভ? এই আজেবাজে মন্তব্য গিলে ফেলার সাহস না থাকলে এই লাইনে পা না বাড়ানোই ভালো।

খুব কেঁদেছিলাম যেদিন ২ হাত ভর্তি করে সুন্দরবন কুরিয়ারে যাওয়ার সময় মা বলেছিলো কত স্মার্টলি চলতো মেয়েটা হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে কেমন লাগছে এখন (ফেরিওয়ালা ভেবেছিলো হয়তো )
সীমাহীন কষ্ট পেয়েছিলাম আসলে, কারন নিজের মনের সাথে নিজেই যুদ্ধ করছিলাম আমার সিদ্ধান্ত সঠিক তো? কতটুকু যেতে পারবো এভাবে এসব কোন্দোল চলছিলো নিজের সাথেই সে সময় মায়ের এমন মন্তব্য কষ্ট দিয়েছিলো,কারন আমার মা বাবা অতি আধুনিক,আমরা ২ভাই বোন যেভাবে বড় হয়েছি অনেক উচ্চবিত্তের ঘরেও অনেক সন্তান সেই সুযোগ সুবিধে পায়নি আমি সিউর।

মাকে এখনো অনেক কষ্ট দেই ফেনীতে ডেলিভারি চার্জ নেইনা পিক পয়েন্ট আমাদের বাসা তাই মাকেই অনেক কষ্ট করে স্কুল থেকে ফেরার পথে পার্সেল নিয়ে বাসায় যায়।হিসেব রাখে আবার সেই টাকা পাঠায় ।

আরেকবার ভার্সিটির প্রিয় ম্যাম অনেক কেনাকাটা করার পরে একদিন বলেছিলেন মৌরি আপনার প্রোফাইল এর সাথে এটা যাচ্ছেনা আপনি ভালো জব পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন, অনেক খারাপ লেগেছিলো আবারো চিন্তাভাবনা টালমাটাল অবস্থা কি যে করি!

২০১৮ এর এপ্রিলে শুরু করি ফেনী থেকেই। জুয়েলারি মেটারিয়াল কিনলাম, নিজেদের মধ্যেই শুরু করলাম বিক্রয়। প্রথম ক্লায়েন্ট কাজিন ঝুমুদি, বান্ধবিদের মধ্যে আফরিন।ওদের দারুন উৎসাহ না পেলে ধরে রাখতেই পারতাম না।পরে দেখলাম বাচ্চার জন্য জুয়েলারি বানাতে পারছিনা,শুরু করলাম কাপড়ের ব্যবসা ছোট মামা থেকে এনে বিক্রয় করতাম।

এরপর প্রতিবেশি, বান্ধবীরা, কাজিনরা কেনা শুরু করলো,নিজের উপর আস্থা এলো। এরপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এর টিচার থেকে শুরু করে পরিচিত অপরিচিত অনেকেই।

আমি নিজের একটা অবস্থান তৈরী করতে চাইতাম সবসময়, ক্যাম্পাসে সুপরিচিত ছিলাম বলে হয়তো বিষয় টা পজিটিভ হলো। খুব কম ইনভেস্টমেন্ট দিয়ে শুরু করে রিইনভেস্ট করে করে এতোটুকু এসেছি বাকিটা আপনাদের দোয়া আর আশির্বাদ।

করোনাকালে খুব বেশি সেল না হলেও,বেঁচে থাকলে আমি জানি আবার জমবে মেলা যদি সততা ধরে রাখতে পারি বরাবরের মতো।অনেক কিছু লেখার একটাই উদ্দেশ্য, জীবনে হতাশ হওয়া যাবেনা।গর্ব করে বলতে হবে আমি যাই করিনা কেনো যে পথেই হাঁটিনা কেনো সফল হতে জানি।

কর্মজীবী মায়ের সন্তানকে দেখার কেউ না থাকলে মা আর সন্তান দুইজনেরই কষ্ট,সব ব্যালেন্স করতে গিয়ে আমার মাকেও অনেক কষ্ট করতে হয়েছিলো তবুও শান্তি একজন বিশ্বস্ত সাহায্যকারী ছিলো আমাদের বাসায় ২০ বছর যা এই যুগে মেলা দুষ্কর।

তাই সব মিলিয়ে মাতৃত্বকেই প্রাধান্য দিয়ে ৬ বছর পরে যা শুরু করতাম তা শূন্য থেকেই শুরু করলাম।এখনো আমার সন্তানের কথা মাথায় রেখে আমার অনেক কাজই করা হচ্ছেনা, বাঁধা আসে তবে মস্তিষ্ক কে অলস করে রাখলে হতাশার জন্ম নেয়, তাই সকল নারীদের বলবো ইনকাম্বেন্ট হতে হবে।বর থেকে ফোনে রিচার্জ করে দাও এটা বলতে যদি সংকোচ হয় তারমানেই আপনি আয় করার প্রয়াসী,এই সংকোচবোধের যোগ্যতাকে পুঁজি শুরু করে দিন আজকেই।

আমার জন্য সবাই আশির্বাদ করবেন যেনো নিজের পছন্দে সবাইকে সাজাতে পারি।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: কর্মজীবী নারীদের জন্য করণীয়

আবু জাফর আহমেদ মুকুল
ইসরাত জাহান ইতি


স্ট্রেস এক ধরনের শারিরীক, মানসিক ও আবেগ সংক্রান্ত ফ্যাক্টর যা শারিরীক কিংবা মানসিক টেনশনের সৃষ্টি করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি এমন কিছু হয় যা সম্ভবত আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। দুর্ভাগ্যবশত স্ট্রেস অনেক মানুষের জীবনের নিয়মিত অংশে পরিণত হয়েছে।

ফোর্বস ম্যাগাজিনে জানিয়েছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্ট্রেসকে “একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ স্বাস্থ্য মহামারী” বলে অভিহিত করেছে।

দ্য আমেরিকান মনস্তাত্ত্বিক এসোসিয়েশন রিপোর্ট যে ৫০% এরও বেশি আমেরিকান চাপে ভুগছেন বিভিন্ন কারণে. উপরন্তু, প্রাপ্তবয়স্ক অস্ট্রেলিয়ানদের ৯১% তারা রিপোর্ট করেছেন যে মানসিক চাপ অনুভব করেন, তাদের জীবনের কমপক্ষে একটি ক্ষেত্রে। প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নির্বাহী, কাজের-যুক্ত চাপের কারণে যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর ১২.৫ মিলিয়ন কর্ম দিবস হারাতে হয়। এই অবিরাম মানসিক চাপ সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হলে হার্ট অ্যাটাক বা আলসার হতে পারে।

স্ট্রেস কখনও কখনও করতে পারেন অব্যবস্থাপনা কারণ এটি তখন স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে শক্তির উত্সকে লক করে দেয়। খারাপ চাপ থেকে প্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা। সেখানে তিন ধরণের চাপ, যার প্রত্যেকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, উপসর্গ এবং সময়কাল রয়েছে; তীব্র চাপ, এপিসোডিক তীব্র চাপ এবং দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস। বাস্তব ক্ষেত্রে, স্ট্রেস ব্যক্তির পারিবারিক ইতিহাস, আর্থিক স্ব-ক্ষমতা ও আয়ের বিন্যাস এবং সামাজিক মর্যাদার উপর নির্ভর করে।

স্ট্রেসের কারণেও কর্মজীবি নারীরা অনেক ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত ছয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে , ঢাকা শহরে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে ডিভোর্সের আবেদন করা হচ্ছে অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) হিসাবে প্রতি দুই ঘণ্টায় সেখানে একটি করে ডিভোর্সের আবেদন করা হচ্ছে । ডিভোর্সের আবেদন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়-প্রায় ৭৫ শতাংশ আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত সাত বছরে ডিভোর্সের প্রবণতা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, স্ত্রীর পক্ষ থেকে ডিভোর্সের আবেদন বাড়ছে। উত্তর ও দক্ষিণে ডিভোর্সের আবেদনের প্রায় ৭০ শতাংশই স্ত্রীর পক্ষ থেকে এসেছে। শিক্ষিত ও কর্মজীবীদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার তুলনামূলক বেশি। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও উত্তরার অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও বিত্তবান নারীরা বেশি ডিভোর্সের আবেদন করছেন। দক্ষিণ সিটিতে মোহাম্মদপুর, কাওরান বাজার এলাকায় পেশাজীবী নারীরা বেশি ডিভোর্স দিচ্ছেন।

এক হিসাবে দেখা যায়, বিভাগীয় শহরে বিচ্ছেদের হার ৪৯.০৩ শতাংশ আর জেলা শহরে ৩৫.৫ শতাংশ। এ ছাড়া একক পরিবারে থাকা দম্পতিদের যৌথ পরিবার থেকে আসা দম্পতিদের তুলনায় ডিভোর্সের হার বেশি। ডিভোর্সের আবেদনকারীদের মধ্যে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তাদের সংখ্যা বেশি (হাজারে এক দশমিক ৭ জন)। আর অশিক্ষিতদের মধ্যে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৫।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য নারী নিজেই এখন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পারিবারিক বন্ধনের চেয়ে অনেকে নিজের পেশাজীবনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে আগের চেয়ে বিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক কারনের পাশাপাশি আছে অনেক ধনীর দুলালীর আত্মঅহমিকাও।

নারীরা সংসারের বিপুল ঝক্কি সামলান বিনামূল্যে। যে কাজে কোনো অর্থ দেওয়া হয় না, সেটা জিডিপিতে যুক্ত হবে না। এটাই নিয়ম এর বাইরে অর্থের বিনিময়ে বাজারজাতযোগ্য উৎপাদন ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। নারী-পুরুষের অবদান আলাদাভাবে দেখানো হয় না সরকারি কোনো তথ্যে। তবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে নারী-পুরুষের অবদান পৃথকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

এরই অংশ হিসেবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের করা গবেষণা ‘রিয়ালাইজিং দ্য ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট ইন বাংলাদেশ প্রমোটিং ফিমেইল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন’-এ বের করেছে, জিডিপিতে নারীর ভূমিকা ২০ শতাংশ। এটি একজন নারী বছরে যত কাজ করেন, তার মাত্র ১৩ থেকে ২২ শতাংশের হিসাব। বাকি ৭৮ থেকে ৮৭ শতাংশ কাজের বিনিময়ে কোনো মূল্য পান না তারা। তাই ওই কাজের হিসাব জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় না। এটি যুক্ত হলে জিডিপিতে নারীর অবদান হতো পুরুষের সমান।

উদাহরণ বলা যায় ‘এখন নারী বাসায় যে কাজ করছে, যেমন কাপড় ধোয়া, সেটা হিসাবে আসছে না। যদি লন্ড্রির দোকানে ধোয়া হতো, তাহলে তার জন্য দোকানদারকে টাকা দিতে হতো। এখন গৃহস্থালি বা গৃহস্থালির বাইরেও নারী অনেক কাজ করছে, যেটা হিসাবে আসছে না।

আমরা অন্য একটি গবেষণায় দেখেছি, নারীরা পারিবারিকভাবে যে সহিংসতার শিকার হয়, তাতে তারা অনেক কাজ করতে পারে না। ফলে মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা কমাতে পারলে এই ক্ষতিটা হতো না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নারীকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও কাজের আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ যত বাড়বে, উন্নয়নের গতিও তত বাড়বে। কারণ জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তাছাড়া বর্তমান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) এর ৫ নম্বর লক্ষ্য- লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং সব নারী ও মেয়ের ক্ষমতায়ন করা। সে পথ ধরে তর তর করে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এর ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে চলতি জিডিপিতে নারীর গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ৭২ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। দক্ষতার অভাব, পারিবারিক কাজের চাপ ও নিয়োগকর্তাদের মানসিকতার কারণে নারীরা প্রাতিষ্ঠানিক খাতের বড় পদে আসতে পারছেন না বলে দাবি করেছে বিবিএস।

সংস্থাটি বলেছে, কৃষি খাতের ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার শ্রমিকের মধ্যে নারী ৯৬ লাখ ৪৪ হাজার, যা মোট কৃষিশ্রমিকের ৪৯ শতাংশ। সরকারি তথ্য অনুসারে গৃহস্থালির কাজে একজন পুরুষ যেখানে দেড় ঘণ্টা সময় ব্যয় করে, সেখানে একজন নারী ব্যয় করে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। গবেষণায় আরও দেখানো হয়েছে যে প্রতিদিন একজন নারী গড়ে একজন পুরুষের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সময় এমন কাজ করেন, যা জাতীয় আয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। সুতরাং অর্থ রোজগারের জোরে পুরুষ যে ক্ষমতা চর্চা করেন, তা কতটা যুক্তিসংগত?

ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই দেশের নারীরা। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এমআরআই) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুনে দেশে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার। এর ৯০ শতাংশই নারী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের মোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৩৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। একটি দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে কতজন নারী এ হিসাবে বিশ্বের ৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে ৬ নম্বরে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা ২৩ লাখ।

জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। জিডিপিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান শতকরা ৩৪ ভাগের বেশি। সেই তৈরি পোশাক শিল্পে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ নারী কর্মী কাজ করছে। বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ১০ কোটি ৯১ লাখ মানুষের মধ্যে নারীর সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। মোট কর্মক্ষম জনশক্তির অর্ধেকের বেশি নারী হলেও কর্মবাজারে আছেন মাত্র ২ কোটি।

এ হিসাবে নারী জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ সরাসরি কর্মবাজারে আছেন। বাইরে থাকা সাড়ে ৩ কোটি নারী কাজে যোগ দিলে দেশের মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি ঘটবে- এ কথা বরাবর বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে উপযুক্ত পরিবেশের অভাব ও পারিবারিক কাজের চাপে তাদের বড় অংশ শ্রমবাজারের বাইরেই থেকে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গৃহস্থালির কাজ নারীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়ার পথে বড় বাধা। কর্মবাজারে যোগ না দেওয়া নারীর ৮১ দশমিক ১০ শতাংশই এর জন্য ঘরের কাজের চাপকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে একই কারণে কর্মবাজারে প্রবেশে বাধা পাচ্ছেন ৮ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ। উপযুক্ত কাজ পেলে শ্রমবাজারে যোগ দিতে ইচ্ছুক এমন নারীর সংখ্যাও পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে শ্রমবাজারে যোগ দেবেন আরো ১৫ লাখ ৮৭ হাজার নারী। আর কাজ পেলে যোগ দেবেন এমন পুরুষের সংখ্যা ৮ লাখ ৪৬ হাজার।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ব্যবস্থাপক পর্যায়ে শ্রমজীবীদের মাত্র ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী। এ ছাড়া পেশাজীবীদের ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ, কারিগরি সহযোগীদের ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ, পাইকারি বাণিজ্যে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ নারী। শীর্ষ ব্যবস্থাপক পর্যায়ে নিয়োজিতদের মাত্র ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ নারী। দায়িত্বের পাশাপাশি বেতনের ক্ষেত্রেও নারীরা বৈষম্যের শিকার।

সম্প্রতি উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন পুরুষ প্রতি মাসে গড়ে ১৩ হাজার ৫৮৩ টাকা বেতন পেলেও নারীরা পান ১২ হাজার ২৫৪ টাকা। ব্যবস্থাপক পর্যায়ে পুরুষরা গড়ে ৩৬ হাজার ১৩৩ টাকা বেতন পেলেও নারীরা পান ৩২ হাজার ৫৮৮ টাকা।

এ ছাড়া পেশাজীবীদের মধ্যে মাসিক আয়ে ২ হাজার ২৮ টাকা, টেকনিশিয়ানদের ৮৭২ টাকা, করণিক পর্যায়ের সহযোগীদের ১ হাজার ৪৭৯ টাকা, পাইকারি সেবায় ৭৯৪ টাকা, কৃষি ও বনায়নে ১ হাজার ৭০৬ টাকা, খুচরা ব্যবসায় ৮৫৩ টাকা, যন্ত্রপাতি পরিচালনায় ৯০৯ টাকা ও অন্যান্য কাজে ৩ হাজার ৭৫৪ টাকা কম পাচ্ছেন নারীরা। গৃহস্থালি কাজেও নারীরা তুলনামূলক কম বেতন পাচ্ছেন। এ খাতে পুরুষের গড় বেতন ৯ হাজার ৪৪১ টাকা। আর নারীর ৭ হাজার ৬৪৪ টাকা।

কর্মজীবী নারীদের নিরাপত্তার জন্য আবাসন, পরিবহন ও বাচ্চাদের ডে-কেয়ার সেন্টারের অপ্রতুলতা। তাদের চলাচলের পথে নারীদের জন্য পৃথক ওয়াশরুম, নামাযের ঘর ও বাচ্চাদের খাওয়ানোর পৃথক ব্রেস্ট ফিডিং রুম নেই বললেই চলে। খোদ রাজধানীতেই নারীদের ব্যবহার উপযোগী মাত্র ২৬টি টয়লেট রয়েছে।

সাম্প্রতিককালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৩.৩ শতাংশ কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী বান্ধব টয়লেট এক শতাংশও নেই। যার ফলে সর্বোপরি অনেক ক্ষেত্রে ঢাকা শহরেও নারী বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়নি। অনেক নারী নানারকম জটিল রোগে ভুগছেন।

উল্লেখ্য যে, সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস নির্ধারন করে দিলেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৩ মাসের বেশি ছুটির অনুমোদন দেয় না। গত ১০ই মে, ২০২০ইং সারা বিশ্বে মা দিবস পালন করা হয়। মা শব্দটি ছোট হলেও এর পরিধি বিশাল। নিষ্ঠা সহকারে দায়িত্ব পালনে মায়েরা থাকেন সন্তানদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। মা হিসেবে একজন নারীকে যেমন আমরা সকলে শ্রদ্ধা করি। তেমনি সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব। যার ফলে পরিবারে নানারকম মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

সুতরাং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে বৃহত্তর স্বার্থে উভয়কে ত্যাগ স্বীকার করে এগিয়ে চলা প্রয়োজন। পাশাপাশি কর্মজীবি নারীদের জন্য কর্মজীবনের সহকর্মীদের হিংসা-বিদ্বেষ বাদ দিয়ে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল মনোভব পোষণ করাও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কর্মজীবনে নারীরা হতাশায় ভোগেন, তার বড় একটা কারণ হচ্ছে পরিবারের অসহযোগিতা।

ফলাফল, হয় ব্যক্তিগত জীবনে টানা অশান্তি, নয় শেষমেশ কাজটাই ছেড়ে দেয়া। ভাবুনতো, একজন পুরুষকে তো তার বাইরের কাজের জন্য এত ভেবে চিন্তে পা ফেলা লাগে না, তবে একজন নারীকে কেন ভাবতে হবে প্রতি পদে? অথচ, চাইলেই পরিবার সবচেয়ে বড় সমর্থন হয়ে উঠতে পারে মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রে। বিষয়টা খুব কি কঠিন?


লেখকবৃন্দঃ আবু জাফর আহমেদ মুকুল, পিএইচডি গবেষক ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট এন্ড ফাইন্যান্স বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এবং ইসরাত জাহান ইতি তরুণ নারী উদ্যোক্তা।

চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হাওয়ার পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদানি এভিনিউস্থ ক্যাম্পাসে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের পক্ষে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে বেকার যুবকদের জন্য চাকরি তৈরি করুন। নিজেরা সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখুন। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে ধৈর্য ধারণ করুন। ঝুঁকি নেয়ার সাহস রাখুন। নিজের উপর কখনও অতিমাত্রায় চাপ নিবেন না।”

এ সময় তিনি আরো বলেন, সমকালীন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

এ দিন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমান শিক্ষার্থীদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার পাশাপাশি সমাজ ও দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেদেরকে আত্বনিয়োগ করার আহবান জানান।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২ হাজার ৩৫২ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোষ্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য চারজন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।

চাকরি না পাওয়া রুয়েট ছাত্র আতিকুর ৪ বছরেই কোটিপতি!

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ বর্তমানে আতিকুরের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা হলেও পুঁজিসহ নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সব খরচ বাদে মাসিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় থাকছে।

পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করার পরও তিনি উপযুক্ত চাকরি নিয়ে হতাশায় পড়ে যান।

তার স্বপ্নগুলো যখন ফিকে হয়ে আসছিল তখন উদ্যোক্তা হয়ে উঠার সিদ্ধান্ত নেন আতিকুর। তার ওই সিদ্ধান্তই জীবনটা পাল্টে দিয়েছে। চাকরি নিয়ে হতাশায় থাকা সেই ইঞ্জিনিয়ার এখন কোটিপতি হয়ে উঠেছেন। আর এরজন্য তিনি সময় নিয়েছেন মাত্র ৪ বছর।

ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হয়ে দেশের সেবা করার। জয়পুরহাট জেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের বাদাউস গ্রামের কৃষক আতাউর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০১৪ সালে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তিনি।

এরপর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিলেও চাকরি না হওয়ায় সমাজ ও পরিবারে নিজেকে অযোগ্য মনে হতে থাকে তার। এমন সময়ে আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মার সেই ডায়লগ মনে পড়ে যায় আতিকুরের। যদি একটি বানরের সামনে একটি কলা ও একশ ডলার ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে বানর কলাটিকেই নেবে। কারণ বানর জানে না একশ ডলার দিয়ে আরো অনেকগুলো কলা কিনা যায়।

আতিকুর সিদ্ধান্ত নেন চাকরি নয় ব্যবসা করবেন তিনি। মানুষকে চাকরি দেবেন তিনি।২০১৫ সালে ৭ দিন মেয়াদি গবাদি পশু পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এরপর পরিবারের নিকট থেকে সামান্য কিছু আর টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে চারটি গরু নিয়ে পথচলা শুরু করেন আতিকুর। এসময় যুব উন্নয়ন থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন।

এরপর ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া ও করিমপুর এলাকায় ভাড়া নেওয়া সেডে টার্কি, তিতির, কেদারনাথ ও কোয়েল পাখি চাষ করেন আতিকুর। পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে কিছু ঋণ ও লাভের টাকা দিয়ে সোনালী, ব্রয়লার ও মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর তাহেরা মজিদ মাল্টিপারপাস এগ্রো ইন্ডা. লি. নামে একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন।

এর অধীন রয়েছে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান। মণ্ডল হ্যাচারি এন্ড চিকস, মেসার্স আদি ট্রেডার্স ও মেসার্স মণ্ডল ট্রেডার্স। এছাড়া সায়ান ফার্মেসি নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার সত্ত্বাধিকারী তার স্ত্রী শিউলী খাতুন। সব মিলে বর্তমানে ৪৫ জন স্থায়ী এবং ৩৫ জন অস্থায়ী কর্মচারী রয়েছে তার। অনেক বেকার যুবক এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তাদের বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন আতিকুর রহমান।

তার ফার্মে এখন প্রায় এক লাখ সোনালী মাংসের মুরগী, ১০ হাজার সোনালী ডিমের মুরগী, ৫০ হাজার ব্রয়লার মুরগী, ৬টি পুকুর যাতে প্রায় এক হাজার মণ ওজনের রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া মাছ রয়েছে। এসব কারণেই সফলতার স্বীকৃতিও মিলেছে আতিকুরের। জাতীয় যুব দিবস-২০১৮ জেলা পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ সফল আত্মকর্মী ও উদ্যোক্তা’ হয়েছেন তিনি।