ধর্ষণকারীর অধিকার দিতে হবে, এই দাবি দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক

আশরাফুল আলম খোকন


ধর্ষণকারীর অধিকার দিতে হবে…। ধর্ষকের সহযোগীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে…। এই দাবিতে আন্দোলন দেশ ও জাতির জন্য শোভন না, খুব লজ্জাজনক। আর অনেকটা এইরকম আন্দোলনই করছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের কিছু শিক্ষার্থী। কিছুদিন আগেও ধর্ষণ বিরোধী একটি আন্দোলন হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজধানীর জোয়ার সাহারা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি ছাত্রী ধর্ষিত হয়েছিল। তখন এই আন্দোলনকারীরাও ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছিল।

কিন্তু আজ তারাই আবার ধর্ষণের পক্ষে আন্দোলন করছে। অভিযোগকারিণী আবার তাদের সংগঠনেরই নারী কর্মী। সে সুর্নিদিষ্টভাবে দিন তারিখ উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক ভিপিসহ তার ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সত্য মিথ্যা প্রমান সাপেক্ষ বিষয়। প্রমানের আগেই আসিফ নজরুল সাহেবরা বলে দিলেন অভিযুক্তরা এই কাজ করতেই পারেন না।

তিনি নাকি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক। আসিফ নজরুল সাহেব কি করে নিশ্চিন্ত বলেন অভিযুক্তদের ধর্ষণকারী হবার সক্ষমতা নেই? এইরকম শিক্ষক যেখানে আছে, সেখানে ধর্ষণের পক্ষে কিছু শিক্ষার্থী থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

ধর্ষণকারী সংগঠনটির নারী কর্মীটি তার মামলায় সুর্নিদিষ্ট অভিযোগে বলছেন, কোথায় কবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। অসুস্থ হবার পর কবে, কে কে, কখন, কোন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে। কবে, কোথায় তাকে ডেকে নিয়ে কে মুখ না খোলার হুমকি দিয়েছে। কোন কোন অনলাইন কর্মীকে দিয়ে মেয়েটির চরিত্র হনন করার হুমকি দেয়া হয়েছে।

ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অধিকাংশ অভিযোগেরই সত্য মিথ্যা নিশ্চিত করা সম্ভব। কারণ ঢাকা মেডিকেলেও সিসি ক্যামেরা আছে। পুরান ঢাকার যে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিশ্চয়ই ওই বাসার আসে পাশেও কোথাও সিসি ক্যামেরা আছে।

আমি এখানে ধর্ষিতা কিংবা ধর্ষণকারী কারো নামই উল্লেখ করিনি। কারণ কোনোটাই প্রমাণিত নয়। কিন্তু সত্য-মিথ্যা প্রমাণের আগেই অভিযুক্ত ধর্ষণকারীদের পক্ষে আন্দোলন করা প্রমাণ করে… ‘ডাল মে কুচ কালা হে।’

লেখক: উপপ্রেস সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় গোড়ায় গলদ: নেই কারো মাথা ব্যথা

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় এর কতটুকু যথোপযুক্ত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশা করা যায়? পিএসসি পরীক্ষার নামে প্রাথমিক শিক্ষায় চলছে জিপিএ পাওয়ার প্রতিযোগিতা। তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ডজনখানেক বই।

অথচ মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে, এই বয়সে এতগুলো বই সম্পর্কে ওরা বোঝে কি? তাদের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টির গুণগুলো জোর করে চাপা দেয়া হচ্ছে। মূল্যবোধ ও নৈতিকতার বিপরীতে চর্চা করা হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকের পড়া। প্রতিদিন ভোরবেলা দেখা যায়, ছোট ছেলেমেয়েরা কাঁধে বইয়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে কোচিংয়ে যাচ্ছে।

তবে মজার বিষয় হলো, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রস্তুতির পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ওদের মা-বাবা অভিভাবকেরাও। প্রতিযোগিতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের চেয়ে মায়েদের ‘পড়ালেখার প্রস্তুতি’ই বেশি। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক শিক্ষায় রূপান্তরিত হলেও সেটার ভার সহ্য করার মতো ক্ষমতা যে কোমলমতি শিশুদের নেই, এ কথা সরকারি মহলের কেউ ভাবেন বলে মনে হয় না।

ওই মহলের চিন্তা কিভাবে শিক্ষাটাকে আপডেট করা যায়। শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার ব্যবস্থা ও মূল্যবোধ সৃষ্টিতে বর্তমান শিক্ষা কতটুকু যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকে নজর দিলেই এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যায়।

প্রাথমিক স্কুলগুলোতে চলছে ম্যানেজিং কমিটির অনিয়ম। রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্যের বিস্তার ঘটাতে ঘটাতে ইউনিয়ন থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে ওয়ার্ড, এমনকি তৃণমূলপর্যায়ে রাজনীতিটা এমনভাবে প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, তার প্রভাব থেকে প্রাথমিক স্কুলগুলোও বাদ যাচ্ছে না। ম্যানেজিং কমিটিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা লড়ছেন রাস্তাতে আর তাদের ছেলেমেয়েরা এরই কুফল ভোগ করছে স্কুলে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে সঙ্ঘাত ও দ্বন্দ্ব।

বাড়ি থেকে শিখিয়ে দেয়া হয়, অমুকের ছেলে কিংবা মেয়ের সাথে মিশতে পারবে না। ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাটা স্কুল থেকেই তার সহপাঠীকে কথিত দুশমনে পরিণত করে দিচ্ছে। এর ফল ভবিষ্যতে মনুষ্যত্ব বিকাশে অনুকূল হবে না।

বেশির ভাগ স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির সমস্যা নিয়ে উপজেলা-জেলাকর্তা ব্যক্তিরা রয়েছেন মহাবিপাকে। সরকারি কারিকুলামের চাপিয়ে দেয়া শিক্ষা প্রদানের বিভিন্ন পদ্ধতি স্কুলে প্রয়োগের ফলে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর ম্যানেজিং কমিটি গঠনে হানাহানি রেষারেষি ইত্যাদি থেকেও বর্বরতার শিক্ষা পাচ্ছে এই ছোট ছেলেমেয়েরা। ফলে তাদের মূল্যবোধ সৃষ্টির বদলে জায়গা করে নিচ্ছে হিংসার বিষয়টি।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিষয়টি। এ পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী নিজের সম্পর্কে কতটুকুই বা ধারণা নিতে পারে? সবেমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না হতেই ওদের নিতে হচ্ছে ছাত্র সংসদের মতো নেতৃত্বের ভার।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা শুধু শিক্ষাঙ্গনেই পাওয়া যায় না। শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে মূল্যবোধ সৃষ্টির চর্চাকেন্দ্র। এই শিক্ষাঙ্গনে সঠিক মূল্যবোধ পেতে দরকার শিক্ষকদের যথাযথ ভূমিকা।

পরিবেশ থেকে সৃষ্ট যেসব অনৈতিকতা শিশুকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, আজ সেই অনৈতিক প্রভাব যদি কোনো শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করে তাহলে সেই শিক্ষাঙ্গনে প্রদত্ত নৈতিকতা শিক্ষার্থীকে কখনো খুব ভালো উপহার দিতে পারে না।

ইউনিসেফ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেদারল্যান্ডসে প্রাথমিক স্কুলে শিশুদের কোনো বাড়ির কাজ দেয়া হয় না; হলেও খুব কম। লেখাপড়া করতে শিশুদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয় না। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের গুরুগম্ভীর কোনো পরীক্ষায় বসতে হয় না। দেশটির শিশুরা সবচেয়ে বেশি সুখী জীবন কাটায়।

শিশুদের জন্যে এই সুখী জীবন নিশ্চিত করাটাই সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রোজকার হোমওয়ার্ক নিয়ে মাথা ব্যথা নেই ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের। ষোল বছর বয়সে গিয়ে তাদের মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। আর আমরা প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কী করছি? বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

ফ্রান্স যেমন স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি যোগ্য শিক্ষক বাছাই, শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে মনোযোগী। জাপানে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বাছাই করার ক্ষেত্রে দেয়া হয় বিশেষ গুরুত্ব। ভুটান থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে শতভাগ প্রশিক্ষিত শিক্ষক।

এ রাষ্ট্রগুলো দায়িত্ব নিয়ে তাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করেছে। অথচ এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান অনেক দূরে। ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমারে যেখানে ৮০-৯০ শতাংশেরও বেশি প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশে এ হার মাত্র ৫০।

একটি বিষয় স্পষ্ট, একটি জাতি ধ্বংস হওয়ার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার গলদই যথেষ্ট। শিক্ষা ব্যবস্থা তখনই ভালো হবে যখন দেশের নীতি নির্ধারকের সন্তান থেকে শুরু করে দিন মজুরের সন্তান সরকারি স্কুল, সরকারি কলেজ ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যবস্থায় পড়বে।

আর এখন এই ব্যবস্থার প্রতি কেউ সিরিয়াস না হলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো ভঙ্গুর হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু বেকার গ্রাজুয়েট তৈরি করবে।


লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ।

গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা ওষুধ বিজ্ঞানী, টেকনোলজিস্ট নয়

তানভীর আহমেদ রাসেল


প্রতি বছর প্রায় তের থেকে চোদ্দ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। এর মধ্যে মাত্র ৬৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি যুদ্ধে সফল হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যেই প্রথম সারির র‍্যাংকিংয়ে থাকা বেশিরভাগ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রথম চয়েজ থাকে ফার্মেসী বিভাগ।

আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও অন্য বিভাগের চেয়ে অনেক মোটা অংকের টিউশন ফি দেওয়ার পাশাপাশি মেধার জানান দিয়ে জায়গা করে নিতে হয় ফার্মেসী বিভাগে ।

তাহলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় ফার্মেসী বিভাগই কেন? কারণ ফার্মেসী স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। ফার্মেসীতে চার কিংবা পাঁচ বছর মেয়াদি কোর্স করা গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের বলা হয় ওষুধ বিজ্ঞানী।

শুধু ওষুধ বিশেষজ্ঞই নয়, ফার্মাসিস্টদের কাজের মধ্যে রয়েছে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা প্রেসক্রিপশন পুনঃপরীক্ষণ, ওষুধ কোন রোগের জন্য, কী কী উপাদান কী পরিমাণে মিশিয়ে ওষুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ, ওষুধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য বিতরণ এবং এর সঠিক ব্যবহার ও প্রভাব নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসাগত প্রয়োগ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও রোগীকে পরামর্শ প্রদান।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে, উন্নত স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করার জন্য ফার্মাসিস্টদের ৫৫ শতাংশ কমিউনিটি ফার্মেসি, ৩০ শতাংশ হসপিটাল ফার্মেসি, ৫ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং, ৫ শতাংশ সরকারি সংস্থায় এবং ৫ শতাংশ অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের কাজের পরিধি অত্যন্ত সীমিত। কমিউনিটি কিংবা হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের কাজের ক্ষেত্র এখনো তৈরী হয়ে উঠেনি।

ফলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও চলমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতেও হিমশিলা খাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমতবস্থায় দেশের সবমহল থেকে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের জোর দাবি উঠেছে।

সম্প্রতি একটি টকশোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ফার্মাসিস্টরা ফার্মেসীতে কাজ করে এবং তাঁরা মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মতই। মাননীয় মন্ত্রীর ফার্মাসিস্টদের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে ফুঁসে উঠেছে ফার্মেসী বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থী, নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ও দেশের সচেতন জনসাধারণ। তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকের দেশের অন্যতম মেধাবী সন্তান গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের মেধা, প্রজ্ঞা ও সক্ষমতাকে গভীর ভাবে অনুধাবন করে অতি দ্রুত হাসপাতাল ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োগের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি। তা নিশ্চিত করতে পারলেই হাতের নাগালে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চয়তা পাবে দেশের জনসাধারণ। নতুন সূর্য উদিত হবে স্বাস্থ্যখাতে।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার

প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা

উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার গড়ে ওঠে রাজশাহী কলেজ হোস্টেলে। ২১ ফেব্রুয়ারির ১৯৫২ সন্ধ্যাতে আন্দোলনকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে গড়ে তোলেন ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নামে দেশের প্রথম শহীদ মিনার।

প্রাণের আবেগ দিয়ে গড়া এই শহীদ মিনার পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি সকালে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেটি ভেঙ্গে ফেলে পাকিস্তান সরকারের পুলিশ।

২৩শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাও ভাষা শহীদের স্মরণে এক রাতের শ্রমে নির্মাণ করেন ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, যেটি ঢাকার প্রথম শহীদ মিনার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সহসভাপতি গোলাম মাওলা ও সাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিনের অনুরোধে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নামের এই শহীদ মিনারের নকশা করেছিলেন ডা. বদরুল আলম।

২৪শে ফেব্রুয়ারি এই স্মৃতিস্তম্ভ প্রথম উদ্বোধন করেন ভাষাশহীদ শফিউর রহমানের বাবা মাহবুবুর রহমান। ২৬শে ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন একুশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আইন পরিষদ থেকে পদত্যাগকারী প্রথম সদস্য ‘আজাদ’ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। কিন্তু ভীত পাকিস্তান সরকার সেদিনই পুলিশ দিয়ে রাজশাহীতে নির্মিত পূর্ব বাংলার প্রথমটির মতো ঢাকার প্রথম শহীদ মিনারও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়।

১৯৬৭ সালে রাকসুর উদ্যোগে শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে নির্মিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ মিনার ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিস্ফোরকের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেয়।

১৯৭৫ সালের ২৩শে এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এম. মনসুর আলী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার দেশের অন্যান্য শহীদ মিনারের গড়নের দিক থেকে আলাদা। এ মিনারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এর ম্যুরাল চিত্র, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, উন্মুক্ত মঞ্চ, সুবিস্তৃত খোলা প্রান্তর ও ফুলের বাগান- এসব কিছুর সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে শহীদ মিনার চত্বর।

শহীদ মিনারটি কৃত্রিমভাবে তৈরি মাটির টিলার উপর অবস্থিত। অনেকগুলি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় মিনারের ভিত্তিমূলে। মিনারের পশ্চাতে রয়েছে দীর্ঘ একটি ম্যুরাল চিত্র। ‘অক্ষয়বট’ শীর্ষক ম্যুরালটি নানা বর্ণের পোড়া ইট, পাথর ইত্যাদি নানা অক্ষয় মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। এ চিত্রটিতে রূপ দেওয়া হয়েছে এক স্নেহময়ী মা ও তাঁর বীর সন্তানদের অবয়ব।

ম্যুরালটিতে সূর্যের উপস্থিতিতে শহীদ সন্তানদের বীরত্ব ও তেজস্বিতাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে মায়ের অঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গঠনশৈলী ও উপাদানের বৈচিত্র্যে অনন্য এ ম্যুরালটি নির্মাণ করেন শিল্পী মুর্তজা বশীর।

শহীদ মিনারের পাদদেশে পূর্বদিকে যেদিক থেকে উদিহ হয় নতুন দিনের সূর্য, সেদিকে রয়েছে একটি শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। এ সংগ্রহশালার ডিজাইন করেন স্থপতি মাহবুবুল হক। এই সংগ্রহশালায় রয়েছে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নানা রাজনৈতিক ঘটনাবলির আলোকচিত্র, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নানা শিল্পকর্ম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আলোকচিত্র, তাঁদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পাকিস্তানিদের ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্নসহ অনেক কিছু। মোটকথা বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে আছে এ সংগ্রহশালা- শুধু ধারণ নয় মুক্তিসংগ্রামের চেতনাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।

১৯৮৯ সালের ২১শে মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রদর্শনী কক্ষের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রফেসর আমানূল্লাহ আহমদ, মাননীয় উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সংগ্রহশালার কোল ঘেঁষে রয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এর পিছনের দেয়ালে রয়েছে গ্রাম বাংলার আবহমান দৃশ্য যা রিলিফ ওয়ার্কে নানা রঙের মাধ্যমে রূপ দেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণ করেন শিল্পী ফণীন্দ্রনাথ রায়। এ মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- যার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের ধারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের নকশা করেন স্থপতি খায়রুল এনাম। ১৯৭২ সালের ৯ই মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এই শহীদ মিনারে রয়েছে চারটি বাহু যা উল্লম্বভাবে উঠে গেছে উপরের দিকে। বাহু চারটি উপরের দিকে বন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ। এখানে চারটি বাহু দ্বারা ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূলনীতি- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। সুউচ্চ এ শহীদ মিনার চত্বর বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার করে সর্বপ্রাণে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরটি বর্তমানে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত। এ মুহূর্তে তেমন কোলাহল নেই। নীলাভ সবুজ ঘাসকে কেউ পদদলিত করছে না। অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন আসবে আত্মার আত্মীয়। বন্ধুরা যখনই ফিরে আসবে তোমাদের নিজস্ব মতিহার ক্যাম্পাসে- ভুল করবে না একবার শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রদর্শন করতে। নতুনভাবে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’। বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত প্রায় ৯৫০ খানা বই সংগ্রহ করা হয়েছে। শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রদর্শন করলে নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে।

সূত্র:
১. মো. বনি আদম, ‘বাংলাদেশের চারুশিল্পে মুক্তিসংগ্রাম ও বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতিফলন’ পি-এইচ.ডি. অভিসন্দর্ভ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৫।
২. দৈনিক পত্রিকা সমকাল, ২০২০।

শিশুর বিকাশ এবং আমাদের শিক্ষা

ইসরাত জাহান ইতি


শিশুরাই জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। শিশুদের ভবিষ্যত ভাল করতে হলে তাদের শিক্ষিত ও সুখি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারাই হবে দেশের সমাজপতি, রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্ব নিয়ন্ত্রতা ও আদর্শবান মহাপুরুষ। ভবিষ্যত জাতি গঠনে তারাই গ্রহণ করবে কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্চ।

এই সম্ভাবনাকে অবশ্যম্ভাবী করার জন্য একান্ত প্রয়োজন শিশুর সঠিক বিকাশ ও প্রয়োজন শিশুবান্ধব শিক্ষা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বৃদ্ধি হলো শারীরিক বিকাশ। আর মানসিক বিকাশ হলো আচার-ব্যবহার, চিন্তা-চেতনা, কথা বলা, অনুভূতি ও ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষমতা অর্জন।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ছাড়া শিশু তথা মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ কখনই সম্ভব নয়।

শিশুর মনের আনন্দই তার দেহ ও মনের শক্তির মূল উৎস। আনন্দ ও শিশু বান্ধব পরিবেশ ছাড়া তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ কোন মতেই সম্ভব নয়। যে কোন শিক্ষাব্যবস্থা চারটি প্রধান স্তম্ভ নির্দেশ করে। যেমন জানতে শেখা, করতে শেখা, বাঁচতে শেখা ও মিলেমিশে বাস করতে শেখা। শিশুর গ্রহণ উপযোগী আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা দানই হলো তার প্রকৃত শিক্ষা।

প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো বলেছেন, “Education is the child’s development from with in ” অর্থাৎ শিক্ষা হলো শিশুর স্বতঃস্ফুর্ত আত্মবিকাশ।

পরিবার হলো শিশুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একজন শিশুর শারীরিক , মানসিক , প্রক্ষোভিক, সামাজিক প্রভৃতি বিকাশগুলো ঘটতে শুরু করে পরিবারের মধ্যেই। শিশুরা তার মা-বাবা, পরিবার, পরিজন, সমাজ ইত্যাদি লক্ষ্য করে । তাদের কথা শুনে শুনে শিখতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখেন মা। কথা-বার্তা, কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ, সাজ-পোশাক, চিন্তা-চেতনা, ভাবনাগুলো পর্যন্ত শিশু মায়ের কাছ থেকে শেখে।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, “তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো ”।

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “One father is more than a hundred schoolmasters”।

বাবার সংস্পর্শে সন্তানের মস্তিষ্কে যৌক্তিক আচরণ, সামাজিক বিকাশ শেখার দক্ষতা তৈরি হয়। ফলে যে কোনো শিক্ষাদানে বাবা অনেক দ্রুত শিশুর আস্থা তৈরি করতে পারেন। বাবারা ছোটবেলা থেকেই বাইরের পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবে সম্পৃক্ত। তাই সন্তানের কোন কোন বিষয় ইতিবাচক ও নেতিবাচক সে সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন।

আবার পারিবারিক কলহের চাপে অনেক শিশুর স্বাভাবিক জীবনই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনা শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেসব শিশু মা-বাবার মনোমালিন্য দেখতে দেখতে বড় হয়, তারা হতাশ, অসামাজিক ও সহিংস হয়ে বেড়ে ওঠে। তারা নানা অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে। তাদের মনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে মনঃসংযোগের ঘাটতি ,মানসিক রোগ ও ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা ঘটতে পারে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১২ শীর্ষক এক জরিপে দেখা যায়, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের ১৮.৩৫ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। এমন ঘটনা আবার মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুর মধ্যে বেশি। মেয়ে শিশুর ১৭.৪৭ শতাংশের পাশাপাশি ১৯.২১ শতাংশ ছেলে শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

দেশের অধিকাংশ পরিবারের অভিভাবক সব সময় শিশুকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু কখনো বিবেচনা করে না একজন ভাল মানুষ হওয়া সমাজের জন্য তথা রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিশু শিক্ষা ও আনন্দ একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। আনন্দ ছাড়া কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা লাভে উৎসাহ পায় না ।

শিশুরা শিখবে আনন্দের মাধ্যমে, নিজেদের ইচ্ছামতো, ঘুরে-ফিরে, কল্পনার ফানুস উড়িয়ে,খেলাধূলার মাধ্যমে, তাদের নিজেদের মনের অজান্তেই। এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ থমসন বলেন, শিক্ষা হলো শিশুর ওপর পরিবেশের প্রভাব, যে প্রভাবের দ্বারা শিশুর বাহ্যিক আচরণ, চিন্তাধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গির স্থায়ী পরিবর্তন হয়।

একজন শিক্ষক সুশিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষক হচ্ছেন শিশু শিক্ষার একজন সুনিপুন মিস্ত্রি, যিনি গঠন করবেন শিশুর মানবাত্মা। শিশুরা মা-বাবা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পেলেও, প্রাতিষ্ঠানিক সকল শিক্ষা, আদব-কায়দা, আচার-আচরণ, রীতিনীতি সবকিছুই একজন ভালো শিক্ষক থেকে শেখে। একটি শিশুর জীবনের প্রথম চার /পাঁচ বছরের মধ্যেই মোটামুটি তার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠিত হয়ে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়।

শিশু যখন বেড়ে ওঠে, তখন তার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার জন্য তার সামনে ইতিবাচক আবেগ, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা আমাদের সবার কর্তব্য। উন্নত দেশগুলোতে এই কাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেটি তেমন করা হয় না। আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখানোর চেয়ে পাঠ্যপুস্তকের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় । ফলে শিশুর ব্যক্তিত্বও ঠিকমতো গড়ে ওঠে না।

এই শিশুরা যখন বড় হয়, তখন তাদের মাঝে আদর্শ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রাক প্রাথমিকে শিক্ষার স্তর একটি হলেও কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, সেগুলোতে নার্সারী, প্লে, কেজি ওয়ান, কেজি টু’সহ তিন থেকে চার বছর ধরে পড়ানো হয় শিশুদের। আবার এ সময় শিশুদের খেলায় খেলায় মাতৃভাষা, অক্ষর ও সংখ্যার ধারণা দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে স্কুলগুলোতে শিশুদের গ্রামার এমনকি বিজ্ঞানও পড়ানো হয়, যা আসলেই কাম্য নয় ।

শিশুরাই আগামীর স্বপ্ন। তাই তাদেরকে ছোট থেকে ভাল মানুষ হিসেবে তৈরি করা স্কুল, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সর্বোপরি আমাদের সকলের দায়িত্ব। সুস্থ ও সুন্দর সামাজিক পরিবেশ শিশুর মেধা এবং মননশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। শিশুকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে বড় হয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে।

শিশুর বিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই। আসুন আমরা আমাদের শিশুদেরকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর পূর্বে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।


লেখকঃ তরুণ নারী উদ্যোক্তা।

মালিকদের বাস ভাড়া বৃদ্ধির চাপে তাপে কেন গলে BRTA?

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


আজ বাসা থেকে বের হয়ে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট বাজার করার জন্য যাচ্ছিলাম। রিকশা চালক ছিলেন বাবুল মিয়া। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। লক ডাউনে অসুস্থতার কারণে তাঁর বাড়ি যাওয়া হয়নি এবং ধার দেনা করে ঢাকায় থেকেছেন।

গত ৭ দিন যাবৎ আবার রিকশা চালাচ্ছেন। কিছু দিন ঢাকায় কাজ করে বাড়িতে যেয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে আম বাগানে কাজ করবেন বলে পরিকল্পনা করেছিলেন। সে গতকাল শুনছে ১লা জুন থেকে অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্তে বাস-মিনিবাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভাড়া নির্ধারণ কমিটি।

আমাকে বললো, স্যার আমার পক্ষে ধার দেনা পরিশোধ করে প্রায় ডাবল টাকা বাস ভাড়া দিয়ে বাড়িতে যাওয়া কী সম্ভব? বাস সার্ভিস চালু হলে ঢাকা থেকে লাখ লাখ দিন মজুর ঢাকা ছাড়বে এবং গ্রাম থেকে ঢাকা আসবে।

সত্যিই আজ পরিবহন মালিকদের প্রভাবে বিআরটিএর মতো দুনীর্তিবাজ প্রতিষ্ঠান বাবুল মিয়ার মতো দিনমজুরের কথা ভুলে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

বিআরটিএ কী ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিষ্ঠান হলে বাস ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা যাত্রীদের উপর চাপিয়ে মালিকদের ভাড়ার নেওয়ার লাইসেন্স দেয়? এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ভাড়া কমবে—এইটার নিশ্চয়তা দেয়নি বিআরটিএ। বাস ভাড়া একবার বাড়ালে দেশের ইতিহাসের কমানোর কোন নজির আমি দেখি নাই। সুতরাং কোন রকম পর্যবেক্ষন ছাড়া কতিপয় প্রভাবশালী পরিবহন মালিকদের চাপে শুরুতেই বাস ভাড়া বাড়িয়ে বিআরটিএ প্রমান করলো। সাধারন যাত্রীদের কথা ভুলে তারাও ভাড়া বৃদ্ধির চাপে ও তাপে গলে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক আদেশে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়। এরপরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনা নিয়ে গতকাল শুক্রবার বাস ও লঞ্চ মালিকদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করে বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ। তবে বিআইডব্লিউটিএ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাবার যোগ্য যে, তারা যাত্রীদের কোন ভাড়া বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়নি।

খবরে কাগজে পড়লাম বিআইডব্লিউটিএ বলছে, লঞ্চমালিকেরা কম যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চালাচ্ছেন, তাঁরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনিয়োগ করছেন—এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি আসে। হুট করে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হলো আর তাঁরা গাদাগাদি করে যাত্রী তুললে তো কোনো উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না। এই সিদ্ধান্তটি বিআরটিএ নিতে পারতো। মালিকেরা তা মানছেন কি না, সেটা দেখে ভাড়া বাড়ানো যেত কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) এ বিষয়ে কবির মতো নীরব ছিলেন বলে সংবাদ মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি।

বিআরটিএ যে, হিসাব করে ভাড়ার খসড়া নির্ধারণ করেছে, তাতে বিদ্যমান বাস-মিনিবাসের ৫০ শতাংশ ফাঁকা রাখলেও লোকসান হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পরিবহন মালিকেরা ‘সিটিং সার্ভিস সহ নানা নামে আগে থেকেই শতভাগ বা এরও বেশি ভাড়া আদায় করে আসছেন।

রসিক যাত্রীরা ‘সিটিং সার্ভিসকে বলেন ‘চিটিং সার্ভিস। নতুন করে ৮০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া সেই আগের বাড়তি ভাড়ার সঙ্গেই যুক্ত করে আদায় করবেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা।

অন্যদিকে দূরপাল্লার বাসের মধ্যে সরকার শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণবিহীন (নন-এসি) বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। বিলাসবহুল ও এসি বাসের ভাড়া মালিকেরা নিজেরাই ঠিক করে থাকেন। অর্থাৎ বাজারে চাহিদা-জোগানের ওপর ভাড়া নির্ভরশীল। এসব বাসের ভাড়া আগে থেকেই এত বেশি যে কখনো কখনো ২০-৩০ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকলেও তাঁদের লোকসান গুনতে হয় না। সবার জন্য ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া অযৌক্তিক। এ ছাড়া দূরপাল্লার পথের নন-এসি বাসগুলোও সব সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করে থাকে। ফলে এখন ৮০ শতাংশ বাড়তি মানে হচ্ছে আগের বাড়তি ভাড়ার ওপর আরও ভাড়া বাড়ানো।

বিআরটিএ সূত্রে আমি যতটুকু জানি, বাস-মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাস ক্রয়, ব্যাংক ঋণ, জ্বালানি খরচসহ ২০ ধরনের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। কোনো একটা উপকরণের ব্যয় বাড়লেই ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্ন আসে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ডিজেলসহ কোনো কিছুর ব্যয় বাড়েনি বরংচ কমেছে। এ ছাড়া বাসের ভাড়া বাড়ানোর আগে ব্যয় বিশ্লেষণ করার রীতি আছে। সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করলে ভাড়া কম বাড়িয়ে যাত্রীদের ওপর চাপ কমানো যেত।

পরিবহন মালিকদের কাছে মনিটরিং থাকায় এখন যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, সেটার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হতে পারে। এমনকি বাসে বাড়তি যাত্রী পরিবহন করা হতে পারে। কারণ, অতীতেও তা-ই হয়েছে। জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার আগেই বাসের ভাড়া বেড়ে যায়। কিন্তু তেলের দাম কমলে বাসের ভাড়া কমে না। ফলে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে শুধু যাত্রী কম বহনের আশ্বাসের ভিত্তিতে সেটির কোন ভিত্তি নেই বললেই চলে।

করোনাকালে যুক্তরাজ্য ও ভারতসহ অনেক দেশে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। করোনাকালে লন্ডনে বাস সেবা চালু রয়েছে। অথচ সেখানেও বাস চালকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার খরচ বেড়েছে কিন্তু বাস ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবহন সেক্টরে বেসরকারি সংস্থার ওপর ভরসা করেই জনসাধারণকে চলাচল করতে হয়। বেসরকারি খাতের অধীনে চললেও গণপরিবহন হওয়ার কথা কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের আওতায়।

কিন্তু এখন তা ব্যক্তিপর্যায়ে চলে যাওয়ায় রয়েছে অসংখ্য মালিক-শ্রমিক। গঠন হচ্ছে নানা সংগঠন। এর ফলে রাজনৈতিক ছত্রছায়া, পেশি-শক্তি ও অবৈধ লেনদেনের পথ তৈরি হয়েছে। এই বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মালিক বেশির ভাগই প্রভাবশালী নেতা। কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আত্মীয়। তাঁরা খুব কম সংখ্যক বাস নামিয়ে কোম্পানির সর্বেসর্বা হয়ে যান। এরপর সাধারণ মালিকেরা তাঁদের অধীনে বাস চালাতে দেন। বিনিময়ে কোম্পানিকে দৈনিক ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এটাকে জিপি বা গেট পাস বলা হয়। এভাবে পরিবহন খাতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় হয়। চাঁদাবাজি বন্ধ না করা গেলে ভাড়া বাড়িয়ে লাভ হবে না। কারণ, লাভের টাকা থাকে চাঁদাবাজদের পকেটে। চাঁদাবাজি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ভাড়া না বাড়িয়ে লাভ করা সম্ভব ।

গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলার জন্য মূলত দায়ী সরকারি কর্তৃপক্ষ। পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে নতজানু নীতির কারণে পরিস্থিতি এখন সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যে কোনো অন্যায় দাবি আদায় করে আন্দোলনের মাধ্যমে। এ পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। গণপরিবহন এখন গণ-মালিক। এটি বড় সমস্যা। সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি যাত্রী চাহিদা পূরণে অপ্রতুলতা একটি অন্যতম কারণ। এক সময় রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা ডাবল ডেকার ছিল সাধারণ যাত্রীদের প্রথম পছন্দের যান।

অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন মালিকদের প্ররোচনায় বা প্রভাবে অনেক রুটে বিআরটিসির বাস বন্ধ করা হয়েছে। আন্ত:জেলা রুটে বিআরটিসির কিছু বাস চলাচল করলেও সেগুলোতে সরকারের লাভের চেয়ে ক্ষতির অংকই বেশি। সরকার করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়া না বাড়িয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দিতে পারে। এখন যে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে, তা আর কোনো দিন কমানো যাবে না। এছাড়া পরিবহন সেক্টর নিয়ন্ত্রণের সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা তথা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পেশাদারিত্ব, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। রেগুলেটরি কমিটিতে যারা আছেন, তাদের অনেকেরই এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বা ধারণা নেই। এসব কারণেই পরিবহন খাতকে গ্রাস করছে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম।

অনেক আগে থেকেই সড়ক পরিবহন খাতের প্রভাবশালী নেতারা যা দাবি করেন সরকারকে তাই মেনে নিতে দেখে আসছি। পরিবহন সেক্টরের কথা আসলেই মনে পড়ে যায় কবি শামসুর রাহমানের কবিতার লাইনের মতো ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। রাজনৈতিক বেশধারী পরিবহন মালিকরা নিজেদেরকে মনে করছেন তারা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। এবার যেন এটি না হয়ে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আর এবারও করোনার মহামারিতে যদি মালিকরা নিজেরাই বাস ভাড়া নির্ধারন করে। তাহলে যাতে ফসলের দাম নির্ধারন করার জন্য কৃষকদেরকেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

স্কুল জীবনে পড়েছিলাম পদার্থের সংজ্ঞা- যার আকার আছে, আয়তন আছে, স্থান দখল করে এবং বল প্রয়োগ করে বাধার সৃষ্টি করে।

আজকে তাই মনে হয়েছে পরিবহন মালিকদের রাজনৈতিক পরিচয় নামের আকার ও আয়তন আছে, সরকারি সংস্থাকে চাপ দিতে পারে ও বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং পরিবহন সেক্টরে স্থান দখল করে আছে তারাই আজ সমাজের পদার্থ। আমরা সাধারন জনগন পদার্থের সংজ্ঞা ও ধরন পড়ে আজ নিজেরাই বায়বীয় পদার্থ। জনগন বিচ্ছিন্ন থাকে সর্বদা যাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে কোন ধরনের অবস্থান নেই। এক্ষেত্রে কেউ আমাদের অপদার্থ বললেও মাইন্ড করবো না।

আরেকটি বিজ্ঞানের কথা মনে আছে, পদার্থ ও শক্তি একটি অন্যটিতে রূপান্তরযোগ্য, সুতরাং এগুলি একই সত্তার দুই ভিন্ন রূপ। বর্তমানে বাস মালিকগণ পদার্থ হিসেবে রাজনৈতিক পরিচয়ে সর্বোচ্চ শক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে। নিউটনের গতিসংক্রান্ত বিধি অনুযায়ী, জড়তা হল পদার্থের সেই ধর্ম যার কারণে বাইরে থেকে এর স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করলে পদার্থটি তৎক্ষণাৎ অবস্থা পরিবর্তন করে না। আর সেটি হলো আমরা সাধারন জনগন। যারা চিৎকার করতে পারি দূর থেকে কিন্তু পরিবহন সেক্টরের অরাজকতা পরিবর্তন করতে পারি না।

পদার্থের আর বিষয় হলোঃ বায়ু মন্ডলে তাপ ও চাপ বৃদ্ধি পেলে নির্দিষ্ট একটি পদার্থ গলে যায়। সেই পদার্থের সাথে অন্য উপাদান মেলালে এর গলনাংক কমানো-বাড়ানো যায়। সুতরাং আজকেও দেখছি মালিক পক্ষের অপরাজনীতির চাপ ও তাপে বিআরটিএ গলে দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে হারে বাস ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করে যাত্রীদের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে।

কিন্তু এভাবে বাস ভাড়া বৃদ্ধি করে আর কতদিন যাত্রীদের জিম্মি করবে মালিক ও কর্তৃপক্ষ?


লেখকঃ পিএইচডি গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের ভূমিকা

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


একটি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে উদ্যোক্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)-২০১৯ উপাত্ত অনুযায়ী, ১৬ কোটি ৫৭ লাখ, মোট জনগোষ্ঠীর ২১.৪% শহরে বাস করে, বাকি ৭৮.৬% গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন। জাতীয় বিকাশের পাশাপাশি সামাজিক বিকাশের জন্য গ্রামীণ উদ্যোক্তা বিকাশ প্রয়োজনীয়।

একজন উদ্যোক্তা মূলধন গঠনের প্রচার করে এবং সমাজে সম্পদ তৈরি করে এবং প্রক্রিয়াটিতে বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য হ্রাস করে। গ্রামীণ উদ্যোগকে গ্রাম পর্যায়ে উদীয়মান উদ্যোক্তা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যা বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা যেমন শিল্প, শিল্প, কৃষিকাজ এবং অর্থনৈতিক বিকাশের শক্তিশালী উপাদান হিসাবে কাজ করতে পারে। তারা দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে যা স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং স্থানীয় জীবনযাত্রাকে উন্নত করে।

এটি সাধারণত গ্রাম পর্যায়ে উদ্ভূত উদ্যোক্তা হিসাবে সংজ্ঞায়িত হয় যা বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা যেমন শিল্প, শিল্প, কৃষির মতো উদ্যোগ এবং অর্থনৈতিক বিকাশের শক্তিশালী উপাদান হিসাবে কাজ করতে পারে। গ্রামীণ অঞ্চলের বিকাশকে পূর্বের তুলনায় আরও বেশি উদ্যোগের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নত করার জন্য এবং একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি ও পরিবেশ বজায় রাখার জন্য উদ্যোক্তা একটি বাহন হিসাবে দাঁড়িয়েছে।

গ্রামীণ উদ্যোক্তা কৃষি, কৃষির সাথে সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপ, ক্ষুদ্র শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসায়, গ্রামীণ কারিগর এবং অন্যান্যগুলিতে বজায় রাখে। তবে, সচেতনতা, উত্সাহ এবং প্রশিক্ষণের অভাবে গ্রামীণ উদ্যোক্তা সুপ্ত পর্যায়ে রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দেশজ মোট উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান ২৫ ভাগ, সেখানে সব শিল্প খাতের রয়েছে ৩৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ৭৮ লাখ উদ্যোক্তাই জিডিপিতে এ অবদান রাখছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়লেই দেশের অর্থনীতির পরিধি বড় হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনা দরকার ।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান বাড়ছে নারী উদ্যোক্তাদের। শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামেও বাড়ছে নারী উদ্যোক্তা। গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ পরিবহন ও যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হওয়ায় স্বল্প আকারে হলেও বাড়ছে নারী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ। এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ পরিবারগুলোর আয় ও কর্মসংস্থান বাড়াতে অকৃষি খাতের অবদানও বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রামীন সেবা খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বিউটি পার্লার, বিকাশ, নাগাদ, এজেন্ট ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য ও ফার্মেসী সেবা, ফটো স্টুডিও, সার্ভিসিং ভিত্তিক কার্যক্রম পাম্প মেরামত ও সার্ভিসিং সহ জ্বালানী ইঞ্জিন পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত , মোবাইল, রেফ্রিজারেটর যানবাহন মেরামত, খুচরা বা পাইকারের দোকানে সরবরাহকৃত পরিষেবা, মুদ্রণ, হোটেল এবং রেস্তোঁরা, চা স্টল, সার, কীটনাশক এবং বীজ বিক্রির দোকান, সাপ্তাহিক টুপি, মাছের ব্যবসা , টেক্সটাইল ভিত্তিক কাজগুলির মধ্যে বুনন, কাটা, এবং টেইলারিং এবং মেরামত এর অন্তর্ভুক্ত।

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বয়স এখন ৪৯ বছর। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আর এই এগিয়ে যাবার পেছনে অন্যতম প্রধান শক্তি হচ্ছে-তরুণ সমাজ। জাতীয় যুব নীতি অনুসারে বাংলাদেশের ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্টিকে যুব হিসেবে সংঞ্জায়িত করা হয়েছে। এ বয়সসীমার জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, যা আনুমানিক ৫ কোটি। তরুণরাই দেশের সম্পদ। পৃথিবীর ইতিহাসে পরিবর্তনের সকল ধারায় তরুণদের ভুমিকা অনস্বীকার্য। এমনকি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেবার জন্য তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

তরুণরাই পারে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে। আর দেশের উন্নতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য তরুণ উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে। তরুণদের উজ্জীবিত করার মাধ্যমে ঈর্ষণীয় এই অগ্রগতির মূলমন্ত্র শিখিয়ে গেছেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বারবার বলে গিয়েছিলেন, আজ আমরা সেই মুক্তি অর্জনের পথে।

বঙ্গবন্ধু প্রায় বক্তব্যে বলতেন, ‘দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। একটি দেশের সমস্যা এবং সম্ভাবনা দুটিই তরুণ সমাজের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তরুণরা বেকার থাকলে তারা বিপদগ্রস্ত হয়, দেশের জন্য ক্ষতিকর বোঝায় পরিণত হয়। আর কোনো দেশের তরুণ সমাজ যদি কর্মঠ হয় এবং কাজের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পায়, তাহলে ওই দেশের দ্রুত উন্নতি কেউ আটকাতে পারে না। তরুণদের দীপ্ত মেধা এবং সতেজ জ্ঞানের গতি এই সবুজ-শ্যামল বাংলাকে প্রকৃত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে পারে।’

২০০৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়নের জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে প্রফেসর ড. আতিউর রহমান স্যারকে নিয়োগ প্রদান করেন। ড. আতিউর রহমান স্যার গভর্নর থাকাকালীন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক স্বয়ংক্রিয়তা ও ডিজিটাইজেশন এনেছিলেন এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য ১ লাখ কোটি টাকা লোন দিয়ে এসএমই খাতকে পুর্নবিন্যাস, কৃষককে ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ, স্কুল ব্যাংকিং, গ্রিন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, উন্নয়ন ও মানবিক ব্যাংকিং ধারনা প্রবর্তন, পদ্মাসেতুর অর্থায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছিলেন ও
সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসাসহ নানাবিধ কাজে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন । এর সুবিধা আজকে ভোগ করছেন গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি।

গত অর্থ বছরের বাজেটে প্রথমবারের মত নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য ১শ’ কোটি টাকা ‘স্টার্ট আপ ফান্ড’ বা ‘নতুন উদ্যোক্তা তহবিল’ গঠন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ যুবসমাজ:‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’কথা তুলে ধরেছেন। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে এবং স্বাবলম্বী তরুণ সমাজ গঠন করতে ২০২১ সালের মধ্যে ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’, একটি দক্ষ ও কর্মঠ যুবসমাজ তৈরি করতে ২০২৩ সালের মধ্যে ‘কর্মঠ প্রকল্প’ এবং প্রতি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে স্বল্প ও অদক্ষ তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেয় সরকার।

যে সোনার বাংলার স্বপ্ন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, যে অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন মানুষের, যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন সবার জন্য, তাঁরই সুযোগ্য কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সে পথেই তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এসডিজির প্রথম লক্ষ্যটি নিয়েই যদি বলি, তাহলে দারিদ্র্য দূরীকরণের মোক্ষম উপায় হচ্ছে মানুষের আয় বৃদ্ধি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৬ লাখ তরুণ বেকারত্বের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন, সেখানে প্রথম লক্ষ্য পূরণই কি বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ নয়? উত্তরটি হচ্ছে ‘না’। এসডিজির লক্ষ্য ৯-এ বলা আছে শিল্প, উদ্ভাবন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা। এ উন্নয়ন কাদের হাত ধরে হবে? এ দায়িত্বের ভার নেওয়ার জন্য সবচেয়ে যোগ্য তো তরুণেরাই।

একজন উদ্যোক্তা তাঁর উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন উপায়ের জানান দেন, যা সমাজকে একটি ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায়। তাহলে এই যে শিল্প বা কৃষি খাত কিংবা রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন—এই প্রতিটার জন্যই এমন মানসিকতার মানুষ লাগবে, যাঁরা উদ্যোগী। এসডিজির প্রথম লক্ষ্যটি শহর ও মানুষের বসবাসকে একীভূত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত এবং টেকসই করা সম্ভব কেবলমাত্র গ্রামীন উদ্যোক্তাদের অর্থনীতিতে অর্ন্তভুক্ত করে।

জাতিসংঘের দেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন তরুণ উদ্যোক্তারা। সামাজিক উদ্যোক্তা আন্দোলন থেকে শুরু করে লাভজনক বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে হলে তরুণ উদ্যোক্তাদের যথাযথ ভূমিকাই তাই প্রত্যাশিত।

এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে নারী উদ্যোক্তা : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ২০১৭’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ২০০৯ সালে শিক্ষিত ২০ শতাংশ নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দেশের ৮৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাই বিবাহিত। তাদের ৬৫ শতাংশেরই আবার পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। ৭৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার বয়স ৩১ থেকে ৫০ বছর। তরুণ নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা মাত্র ১৩ শতাংশ (২১ থেকে ৩০ বছর)। শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। ঋণ প্রাপ্তি, সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতায় অবিবাহিত নারীরা এখনো উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি হতে পারছেন না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের ইশতেহারে নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে গ্রামকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রাম হবে শহর। আমার গ্রাম-আমার শহর’ : প্রতি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধার সম্প্রসারণ- এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে তিনি গ্রাম উন্নয়নের পথ-নকশাও উপস্থাপন করেছেন। তারপর থেকে এ বিষয়টি আমাদের উন্নয়ন আলোচনায় বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।

অতঃপর সংবিধানের ১৬নং অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতায়নের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রের এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার জন্য গ্রহণ করা দরকার সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি। এর জন্য প্রয়োজন গ্রামীণ অর্থনীতির রূপান্তর।

এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বাধীনতার পর থেকেই নিরন্তর কাজ চলছে- বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১০ বছরের শাসনামলে এ কার্যক্রম অনেক বেশি বেগবান হয়েছে।


লেখকঃ উদ্যোক্তা গবেষক ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ; এবং সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট এন্ড ফাইন্যান্স বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

এমন ঈদ দেখেনি কেউ আগে

মো. মজনুর রশিদ


ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলিম বিশ্বে ঈদের নতুন চাঁদ দেখার সাথে সাথেই চারদিকে ছড়িয়ে পরে ঈদের অনাবিল আনন্দ। ঈদ মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।

নতুন পোশাক পরিধান করা, পাড়া প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করা, ভালো ও উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করা, পারস্পারিক ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা, ঈদগাহে বড় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করা, ঈদগাহ মাঠের পাশে শিশুদের আনন্দ উৎসব, বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, ধনী ও স্বল্প আয়ের মানুষের মনে খুশির হাসির নামই হলো বাংলার ঈদ আনন্দ।

তবে খুশির ঈদের আনন্দ বেশি অনুভুত হয় শিশু, কিশোর ও যুবকদের মাঝে। বয়স্করা সেসব দিন অতীতে ফেলে এসেছে। কর্ম ব্যস্ত ও বাসা-বাড়ির অন্য সদস্যদের আনন্দ উৎযাপনের নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় তাঁরা এবং পরিবারে অর্থের যোগান দেয়া ও না দেয়ার উপলক্ষ হয়ে থাকে তারা। ফলে পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তির ঈদ আনন্দ শিশু কিশোরদের ঈদ আনন্দ থেকে একটু ভিন্ন ধাঁচের হয়ে থাকে। তবে ঈদের আনন্দ সবার মাঝেই কম বেশি থেকে থাকে। বাঙ্গালির ঘরের ঈদ বলে কথা! ঈদ মোবারক।

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এই দুটি ঈদ মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিন। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ এর বিশেষ কড়াকড়ির মধ্যে উদযাপিত হতে যাচ্ছে এ বছরের (২০২০ সালের) ঈদ আনন্দ।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুশিয়ারি ও আইইডিসিআর এর স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে এ বছরে ঈদের জামাত সীমিত পর্যায়ে করার আহবান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেই সাথে ঈদগাহে বা খোলা মাঠে বড় জমায়েত না করে মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করার নির্দেশনা জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। নিজ নিজ পাড়া বা মহল্লার মসজিদেই এবার ঈদের নামাজ পড়তে হবে সকলকে।

সেই সাথে ঈদ নামাজ শেষে পারস্পারিক কোলাকুলি ও হ্যান্ডসেক করা থেকেও বিরত থাকার আহ্বান রয়েছে। ফলে থাকছে না মুসলিম উম্মার চিরাচরিত ঐতিহ্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতির ব্যবহার! সামাজিক না বরং শারীরিকভাবে দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যাবে।

সংগত কারণেই পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোভিড-১৯ এর কারণে ঈদের জামাতের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কোনো কোনো দেশে রয়েছে সীমিত পর্যায়ে ঈদের নামাজ পড়ার অনুমতি। আবার কোনো দেশে ঈদের দিনে কারফিউ জারি করা হয়েছে (সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ)। মোট কথা সারা বিশ্বে এ বছরের ঈদ আনন্দ উদযাপিত হচ্ছে ঘর বন্দি অবস্থায়। একই সময়ে যা বিশ্ব দেখেনি এমনটি আগে কখনো।

সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে সকলকেই মেনে চলতে হবে সরকারের দেয়া কিছু বিধি নিষেধ। রাষ্ট্র তার জনগণের নিরাপত্তার জন্য কখনো কখনো এমন কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। যা জনগণকে স্বাচ্ছন্দে এসব নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। এসব মেনে চলার মাধ্যমে নাগরিকের দায়িত্ব ও সুনাগরিকের পরিচয় বহন করে। এর মধ্যে রাষ্ট্র ও জনগনের সার্বিক মঙ্গল নিহিত থাকে।

কিন্তু সব সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো এক রকম না। এছাড়াও রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক গন্ডির মধ্যে বিনোদন ব্যবস্থার যথেষ্ট ঘাটতি। এসব নিয়ম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে হাদিসেও উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো মহামারীর সময় মানুষ যেনো তাঁদের নিজ নিজ ঘর বা বাসা-বাড়িতে অবস্থান করে নিজেকে নিরাপদ রাখে।

কোভিড-১৯ এর কারণে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ অনেক ক্ষেত্রে জনগণ কম মান্য করে চলেছে। এর ফলে দেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে পারে। যে কারণে করোনা ভাইরাস সনাক্তের প্রায় ৭৫- ৮০ তম দিনে এসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে (তথ্য সূত্র: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিন)।

পায়ে হেঁটে গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকা গমন, ঢাকার রাস্তায় মানুষ ও ব্যক্তিগত পরিবহনের চাপ, ঈদের আগে মার্কেটে সাধারণ মানুষের উপচে পরা ভিড়, স্বাস্থ্য বিধি না মানার প্রবণতা, আবার ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে ঢাকা ফেরত গ্রামমুখী মানুষের গাদাগাদি করে ফেরি পরাপারের দৃশ্য (তথ্য সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ মিডিয়া, মে ২০২০) বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে তুলবে বলে অনেকে মনে করে। অপর দিকে ইউরোপ আমেরিকার তুলনায় করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে শিশু, কিশোর ও যুবকের মৃত্যুর হার বেশি (তথ্য সূত্র: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এপ্রিল-মে ২০২০)।

“চিলড্রেন ভয়েসেস ইন দ্যা টাইম অব কোভিড-১৯” শিরোনামে শিশু ও তরুণদের ওপর করোনা পরিস্থিতির প্রভাব জানতে ওয়াল্ড ভিশন জরিপ বলছে, উন্নয়নশীল দেশসমূহে ৭১ শতাংশ তরুণ নিঃসঙ্গতা অনুভব করে। ৯১ শতাংশের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ, রাগ, শঙ্কাসহ নানা মানসিক চাপ (তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ২৯ এপ্রিল ২০২০)।

অপরদিকে ঈদের ক’দিন পূর্বে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণি ঝড় ‘আম্পান’ (তথ্য সূত্র: আবহাওয় অধিদপ্তর, সময় সংবাদ, ২০ মে ২০২০)। স্বরণ কালের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এর তান্ডবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির চিহ্ন রেখে গেছে। আবারও সুন্দরবন বুক চিতিয়ে ভয়াবহ ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা করল বাংলাদেশকে (তথ্য সূত্র: সময় সংবাদ, ২১ এপ্রিল ২০২০)।

তবুও এই ক্ষতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য জীবন ধারণ হয়ে পড়েছে আরো কঠিন। কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাসের এমন মহামারীর কালে ‘আম্পান’ বাংলাদেশের জন্য ‘মরার ওপর খরার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জন মানুষের অবস্থা হয়ে পরেছে দুর্বিষহ।

যদিও সরকার এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশংসনীয় সক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। সামাজিক বাস্তবতার এমন অবস্থায় মানব সমাজ তথা দেশবাসী পড়েছে নতুন অচেনা উভয় সংকটে। ঘরে থাকা বড় দায়, বাহির হলে মৃত্যুর ভয়! এরই মাঝে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ আনন্দ। ঈদ মোবারক।

নানা প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দুর্যোগে ব্যহত হচ্ছে সরকারের গৃহীত টেকসই উন্নয়ন নীতি। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে চলতে কিছু আইন ও সামাজিক বিধি বিধান মান্য করার প্রবণতা জনসাধারণের মাঝে সৃষ্টি করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব হওয়া উচিৎ এবং সামাজিক আচার আচরণ মান্য করা এই দু’টি বিষয়কে বাস্তবিক চর্চার মধ্যে আনতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু দরকারি বিষয়ের উপর আলোকপাত করা যেতে পারে:

১. পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা সংযুক্ত রেখে স্ব শিক্ষা ও গুণগত শিক্ষার
হার ও মানের বৃদ্ধি ঘটানো।

২. কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করা।
৩. জনসাধারণের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৪. সামাজিকীকরণের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
করা।
৫. সব ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবর্তেনের সাথে সাথে অপরাধ দমনে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

৬. রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিধি বিধান; আচার আচরণ; প্রথা পদ্ধতি; ইতিহাস ঐতিহ্য; ন্যায়
অন্যায়; আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চার সঠিক প্রয়োগ করা।
৭. সামাজিক জীব হিসেবে কোনটি করা উচিৎ আর কোনটি করা উচিৎ না সে শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
৮. সামগ্রিক উন্নয়নের নামে মানবিক বোধকে ধ্বংস না করে প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রেখে উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করা।
৯. গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নারী মুক্তি, মুক্ত চিন্তা, গবেষণা ও বৈশ্বিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রকে
প্রায়োগিক ক্ষেত্রে অবারিত করা।

এসব বিষয় ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে মানব সৃষ্ট দুর্যোগ যেমন কমবে ঠিক তেমনি হ্রাস পাবে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার। বিশ্ব মাতব্বরের দরবারে এমন একটি পৃথিবী গড়ে তোলার আহবান এসেছে প্রকৃতির নিকট থেকে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ বিশ্ব শান্তির জন্য এক জোট হয়ে কাজ করেছিলো।

কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব গড়তে সব ধরণের উগ্রতা, দাম্ভিকতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, জোর জবরদস্তি, জুলুম, হুমকি, হিংসা, পরশ্রীকাতর, নির্ভরশীলতা, সামাজিক অসমতা ও অসম উন্নয়ন, পারস্পারিক অশ্রদ্ধা বোধ, নিগ্রহ ও পরাধীনতা প্রভৃতি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ কল্যাণকর বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে। ভবিষতের এমন একটি বিশ্ব ও দেশে নিশ্চয় সব ধরণের উৎসব আয়োজন নিয়ে ঈদ ও অন্যান্য উৎসব আনন্দ উৎযাপন করতে পারবে বিশ্ব ও দেশবাসী।

অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সমাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মুক্ত ধারার এই বিশ্ব বর্তমানে অবরুদ্ধ কোভিড-১৯ এর প্রভাবে। এর প্রভাবে মুসলিম বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোজা ও ঈদুল ফিতরের আয়োজনে এসেছে ভিন্ন রূপ। সামাজিক সম্পর্কগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে ইথার তরঙ্গে, বার্তা আদান প্রদানের মধ্যে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে দেশ-বিদেশে, বন্ধু-বান্ধব ও আপন পরিজনদের সাথে। কিন্তু সব সময় সামাজিক নেটওয়ার্ক প্রিয় মানুষগুলোকে কাছে পাবার তৃপ্ততার অনুভূতি পূরণ করতে পারে না।

আমাদের দেশে ঈদে আপনজনদের কাছে পাবার আনন্দ অনেক কিছুর আনন্দ প্রাপ্তির সমান। মায়ের সাথে সন্তানের চোখের দেখা ও কাছে পাবার টান কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করার না। পারিবারিক ও সামাজিক অন্যান্য সম্পর্কের জালগুলোর মধ্যে সম্পর্ক তেমনি। এ বছরে অনেকেই পরিবার পরিজন অথবা আপন জনদের ছাড়াই ঈদ আনন্দ সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। যদিও দীর্ঘ ছুটিতে অনেকেই নিজ বাড়িতে আপনজনদের সাথে রয়েছে।

আবার অনেকেই অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। যারা প্রবল ইচ্ছে থাকলেও গ্রামের বাড়িতে ঈদ আনন্দে সামিল হতে পারছে না। এই ঈদ যাত্রায় ছোট ছেলে মেয়ে ও ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে দূরের পথে যাত্রা করাও বিপদজনক। অপরদিকে একটু ভেবে দেখুন! ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, ডিসি, এসপি, ইউএনও, প্রধানমন্ত্রীসহ বিশেষ বিশেষ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীগণ, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা, জরুরী পরিসেবায় খুলে দেয়া মন্ত্রাণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী, পুলিশ সদস্য, সেনাবাহিনী, জরুরী সেবাদান প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীরা, বিদেশের মাটিতে আটকিয়ে থাকা দেশের নাগরিক, পরিচ্ছন্ন কর্মী, কোভিড-১৯ এর ল্যাব পরীক্ষায় নিয়োজিত গবেষক, শিক্ষক ও কর্মীদের পরিবার পরিজন ছাড়া একাকী ঘরে বসে ঈদ উৎযাপন করবে। সেটা অনেক বেশি বেদানাদায়ক।

মনের মাঝে এমন ভাবনা কষ্টকর ও বিষাদময়। জনগণ ও দেশের প্রয়োজনে তাঁরা অনেক কিছুর সুখ আনন্দকে বিসর্জন দিয়েছে এই ঈদ আনন্দে। সাধারণ জনগণের উচিৎ এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা ও এসকল জন কল্যাণে নিবেদিত মানুষগুলোকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা প্রদান করা। ঈদ, পূজা, বড় দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, বিজু উৎসব এসব সুখ আনন্দের উৎসবসমূহ পূর্ণতা পায় আপনজনদের কাছে পাবার মাধ্যমে। বাঙ্গালির মাঝে আপনজনের মধ্যকার টান হাজার বছরের ঐতিহ্যের নিদর্শন।

আমাদের সমাজে আপনজনদের অনেক দিনের দূরে থাকার পরে প্রাণের কাছাকাছি আসার উপলক্ষ্যই হলো সামাজিক ও ধর্মীয় এই সব অনুষ্ঠানসমূহ। যেমনটি বিশ্ব ও দেশের একটি বড় অংশের নাগরিক তাঁদের পরিবার ও নিকটজনদের কাছে যেতে পারছে না। ঈদ উৎযাপনের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় হয়নি কখনো।

পশ্চিমা বা ইউরোপ-আমেরিকার সমাজ কাঠামোতে এগুলোর প্রচলন খুব কমই দেখা যায়। কারণ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিকতা, নগরায়ন, বাণিজ্যিকীকরণ, চরম শ্রম বিভাজন, ভোগবিলাসিতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য সেসব দেশের পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্কগুলোকে দুর্বল ভিত্তির ওপরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। সে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ভার্চুয়াল সম্পর্কের ভিতসমূহ সেসব দেশে অনেক শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করতে পেরেছে। যেমন ডে কেয়ার সেন্টার, শিশু কেয়ার, ওল্ড হোম, দাতব্য সংস্থা, মাদার ও ফাদার ডে প্রভৃতি।

পারিবারিক ও সামাজিক আবহের মধ্যে থেকে বেড়ে ওঠা মানুষের মধ্যকার সম্পর্কগুলো হৃদয়স্পর্শী হয়। এসব সম্পর্কগুলো নাড়া দেয় মানুষের গভীরের মনকে। মন গহীনের শব্দে, তা প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে মানব মনের আঙ্গিনায়। বাংলার ঈদ আনন্দ মানুষের মনকে সেই আনন্দের ঝর্ণা ধারায় ভাসিয়ে তোলে।

কোভিড-১৯ এর বিশ্বময় মহামারীর মধ্যে সে আনন্দ আজ অনেকটাই ফিকে। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর গানে বলছে ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ….. আজই পড়বি ঈদের নামাজ রে ভাই ঐ সেই ঈদগাহে।’ কিন্তু কবির সেই আহ্বান মুসলিম বিশ্বে তথা গোটা বিশ্বে এ বছরে দেখা যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক এই পৃথিবীকে মানুষ বিজ্ঞান ও তাঁর জ্ঞান দিয়ে অনৈতিকভাবে শাসন করেছে বছরের পর বছর। যত্রতত্র ব্যাপক হারে শিল্পায়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণ তার অন্যতম প্রধান কারণ। এর প্রতিক্রিয়া বিশ্ব তার ওপর বসবাসরত প্রাণীকুল ও মানব জাতির ওপর নির্দয়ভাবে নিচ্ছে।

প্রকৃতির ভারসাম্য আনতে পৃথিবী বর্তমানে লকডাউনে রয়েছে। আমূল সংস্কারের কাজ চালাচ্ছে পৃথিবী। প্রাণীকুল ও প্রকৃতি বর্তমানে নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছে। সাগর উপকূলে ডলফিনের অবাধ বিচরণ অথবা হাজার হাজার কচ্ছপের সাগরতীরে ডিম পাড়ার দৃশ্য প্রভৃতি এসবেরই উদাহরণ। নিশ্চয় আল্লাহের অশেষ নিয়ামতের এই পৃথিবী আমাদের জন্য বাসযোগ্য সুন্দর আবাসস্থল ফিরিয়ে দিবে। সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্ট, বিশ্বের সৃষ্টির রহস্য মানব জাতির নিকট নিদর্শন রূপে তুলে ধরেন। যাতে তাঁরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

বিশ্বব্যাপী ২০২০ সালের ঈদের এমন উৎযাপন আমাদের সে শিক্ষাই দেয়। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে ন্যয়-নীতি, আদর্শ, নৈতিক, যৌক্তিক, আশাবাদী, বাসযোগ্য ও মানবিক বোধের নতুন পৃথিবীর প্রত্যাশা বিশ্ব উম্মার।


লেখকঃ চেয়ারম্যান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সম্পাদক বাংলাদেশ স্কাউটস গোপালগঞ্জ জেলা রোভার।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার অহংকার!

শাফিউল কায়েস


আমরা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অহংকার করি। পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমসহ বাস্তবতায়ও একে অপরকে ছোট করে দেখি। পাবলিক-প্রাইভেটে সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়! জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাবলিক-প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ছোট করে দেখে।

প্রকৃত কথা হচ্ছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কিছুই দিতে পারে নি, একটা সার্টিফিকেট দিয়েছে…? অবশ্যই, অস্বীকার করার কিছুই নেই।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছে, কিভাবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে রাজনীতি করেন। শিক্ষকরা সকাল ৮ টার ক্লাস ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখে বিকেল ৪ কিংবা ৫ টার সময় নেন! উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলাম…কিন্তু দুঃখজনক আমাদের সিলেবাসের পড়ার বাহিরে একটি মানবিক গল্প বা ভালোবাসার গল্প শেখায় নি। আমি বলবো- একটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে একটি শিক্ষিত সার্টিফিকেট দিয়েছে কিন্তু সুশিক্ষিত হওয়ার সার্টিফিকেট দেয় নি।

একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে বলতে দেখেছি- “ক্লাসরুমে বসে ছাঁড়পোকার কামড় আর গণশৌচাগারে বসে হাগাকালীন (টয়লেট করার সময়) পশ্চাদদেশের উপর দিয়ে তেলাপোকা ভ্রমণের মনঃকষ্ট থেকে সমালোচনা করাই যায়!”

এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বলতে শুনেছি- “আরে, ওরা ত পড়ে প্রাইভেট-জাতীয়তে; আর আমরা পড়ি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে। ওদের থেকে আমরা বেটা। পাবলিকে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাইতে হয়। আর ওরা ত পড়ে টাকা দিয়ে। পাবলিকে চান্স না পাওয়ারা পড়ে প্রাইভেট-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।”

পাবলিক-প্রাইভেট-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মূল্য নেই? আছে। তবে তা আমাদের সমাজে যে ধরনের ধারণা-ভাবনা প্রচলিত, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

অপ্রিয় হলেও সত্য, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা সফল মানুষেরা নিজের চেষ্টাতেই সফল হয়েছেন। তাদের সফল হওয়ার কারণগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি যোগসূত্র নেই।

তবে- সার্টিফিকেট, ক্লাসরুম, টয়লেট নয় হল এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ শিক্ষার্থীর সামনে নতুন চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ার ঠিক করে ফেলে। নিজের আগামীর পথচলার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তবে, হল-ক্যাম্পাসের আড্ডা তাতে সাহায্য করে।

নিজেদের পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি আমাদের সফলতা দিতে পারে, অন্যথায় না!

যোগ্যতা আপনাকে নিজে তৈরি করতে হবে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় দিবে না। হোক সেটা পবলিক-প্রাইভেট কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেটা করতে জানলে গ্রামাঞ্চলের নাম অজানা ডিগ্রি কলেজ থেকেও করা সম্ভব। শত শত উদাহরণও আছে।

সবথেকে মজার বিষয় হচ্ছে আমরা এমন এক যুগে ধীরে ধীরে পদার্পণ করতেছি, যেখানে ‘আপনি কী জানেন ’ এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এখন ‘আপনি কী করতে পারেন’!!!

সবশেষে, আপনি যেখানেই পড়ুন না কেন; যেখান থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করুন না কেন; আপনাকে সর্বোপরি ভালো মনের মানুষ হতে হবে, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো কর্তব্য ও দায়িত্ব। বাবা-মায়ের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। নিজের জন্য কাজ করতে হবে।

ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

শিশুর বিকাশস্থল যখন পরিবার

উম্মে কুলসুম রিমা


“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার “


একটি শিশুর আগমনই একটি পরিবারে পূর্ণতা নিয়ে আসে৷ সন্তানের ওই হাসি মাখা মুখটি যেন হাজারো ক্লান্তির এর মাঝে এক প্রশান্তির ছায়া নিয়ে আসে। একটি শিশুর জন্মতেই যেমন একটি পরিবার পূর্ণতা লাভ করে, তেমনি শিশুটির পূর্ণতা বা বিকাশ এ পরিবারটির ভূমিকা কিন্তু অনস্বীকার্য।

একজন শিশুর শারীরিক , মানসিক , সামাজিক প্রভৃতি বিকাশগুলো ঘটতে শুরু করে পরিবারের মধ্যেই। শিশুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বৃদ্ধি হলো তার শারিরীক বিকাশ। অপরদিকে, মানসিক বিকাশ হলো তার চিন্তা-চেতনা, আচার-ব্যবহার, কথা বলা ও ভাবের আদান – প্রদান এর ক্ষমতা অর্জন। শারিরীক ও মানসিক বিকাশ ছাড়া একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়।

একটি পরিবার যেমন একটি শিশু কে শিখাতে পারে ভালোবাসা, সহানুভূতিতা, সহযোগিতা, ভদ্রতা ইত্যাদি গুণগুলো ঠিক একই ভাবে সেই পরিবারই তাকে করে তুলতে পারে মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত একজন মানুষ। কারণ, জানেনই তো শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। চোখের সামনে যা সংগঠিত হতে দেখে তা অধিকাংশ সময়ই সে রপ্ত করে নেয়। আশেপাশের অন্যদের নানাবিধ কাজকর্ম, চলাফেরা, কথা বলার ধরন ইত্যাদি দেখে সে সেগুলো অনুকরণ করা শুরু করে।

তাই, যদি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই পূর্ণ মানসিকতার সুষম বিকাশ ঘটানো যায় তাহলে সে সকল বিপত্তি অতিক্রম করে সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত সদস্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে, ভবিষ্যতের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক পরিবার কিভাবে একটি শিশুর মানসিক বিকাশ কে তরান্বিত করতে পারে

প্রথমত, ‘শিশুদের সাথে সময় কাটানো’। বর্তমানে অধিকাংশ মা-বাবা কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকেন, সন্তানদের সময় দিতে পারেন না, ফলে সন্তানরা এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করে। তারা ধীরে ধীরে হতাশাগ্রস্ত হতে থাকে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকার পর বাবা মা ক্লান্তিবোধ করেন, কারো কারো মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে যার প্রভাব অনেক সময় শিশুদের উপর বর্তায়, ফলে মানসিক বিকাশ হয় বাধাগ্রস্ত। তাই, প্রতিটি বাবা মায়ের উচিত সন্তানদের সাথে প্রতিনিয়ত একটি কোয়ালিটি টাইম কাটানো যাতে মানসিক বিকাশ হয় পরিপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, ‘পারিবারিক কলহ থেকে শিশুদের বিরত রাখা’ শিশুর মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভালোবাসা ও সান্নিধ্যের কোন বিকল্প নেই। মা-বাবার মাঝে ভালোবাসা, সহযোগিতা, পরস্পরের প্রতি সম্মান ইত্যাদি বিষয় যখন শিশুর দৃষ্টিগোচর হয় তা কিন্তু সে ভালোভাবেই রপ্ত করে নেয়। কিন্তু মা-বাবার ঝগড়ার প্রত্যক্ষদর্শী সন্তানদের মাঝে পরবর্তীকালে ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। তারা হয় বেশ খিটখিটে, রাগী, আক্রমণাত্বক স্বভাবের। সমাজের সাথে মানিয়ে নিতে তাদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। মা-বাবার মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ ও মধুর সম্পর্ক দেখে বেড়ে ওঠা শিশুদের অন্যান্য শিশুদের তুলনায় মানসিক বিকাশ দ্রুত হয়। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত ঝগড়া-বিবাদ বা কলহ সংগঠিত হবার সময় শিশুদের এসব থেকে আড়াল রাখা যাতে তাদের দৃষ্টিগোচর না হয় ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়।

তৃতীয়ত, ‘শিশুর সামনে মাকে নির্যাতিত না করা’ একটি শিশু জন্মের পর থেকে সবথেকে কাছে পায় ‘মা’ কে। ফলে মমতাময়ী ‘মা’ হয়ে ওঠে তার কাছে এক আদর্শ, ভালোবাসার কেন্দ্রস্থল। কিন্তু সেই ‘মা’ কে সে যখন তার সামনে নির্যাতিত হতে দেখে তখন সে ভোগে বিষন্নতায়, হয়ে ওঠে আক্রমণাত্বক। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পারিবারিক কলহের মধ্যে বেড়ে ওঠা অথবা মাকে নির্যাতিত হতে দেখা শিশুদের জীবনের প্রথম দিকের বছরগুলোতে তারা হয় বিশেষভাবে অরক্ষিত ও অসহায়। এসব শিশু পরবর্তীকালে হিংস্র, ঝুঁকিপূর্ণ বা অপরাধমূলক আচরণ করতে পারে। বিষন্নতা বা তীব্র দুশ্চিন্তায় ভোগার ঝুঁকিতেও পড়তে পারে এসব শিশু।’ আর সন্তানের সামনে মা কে নির্যাতিত হওয়া থেকে বিরত রাখাটা পরিবারের উপর ই বর্তায়।

চতুর্থত, ‘শিশুদের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া’। আমরা অধিকাংশ সময় শিশুদের মতামতের গুরুত্বই তো দেই না বরং তাদের সিদ্ধান্ত ও পরামর্শগুলো নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করে থাকি যা মোটেও ঠিক নয়। এতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাদের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়ার দরুণ তারাও অন্যের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে না।

পঞ্চমত, ‘শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা’। অনেক মা-বাবা আছেন যারা সন্তানদের স্বাধীনভাবে কোন কাজ করতে দিতে চান না কিন্তু এ ধরনের অভ্যাস শিশুর আত্মনির্ভরশীল হবার পথে বাধার সৃষ্টি করে। একটি শিশু নিজে থেকে স্বনির্ভর হয়ে কোন কাজ করলে তার মাঝে একধরনের আত্মবিশ্বাস এর সৃষ্টি হয় যা তাকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করে। তাই, সন্তান তার সামর্থ্য অনুযায়ী নিজে থেকে কোন কাজ করতে উদ্ধুদ্ধ হলে তাকে না আটকিয়ে বরং অনুপ্রানিত করা উচিত।

তাছাড়াও, ভদ্রতা, নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, কৃতজ্ঞতাবোধ, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শন, কনিষ্ঠদের স্নেহ-আদর করা, অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা, পরোপকারিতার মানসিকতা গড়ে তোলা, উদার মানবিকতাবোধ জাগ্রত করা ইত্যাদি যাবতীয় গুন গুলো একটি শিশু পরিবার থেকে আয়ত্ত করে তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত, প্রতিটি পরিবারকে একটি সুস্থ মন ও মননের বিকাশ কেন্দ্রে রুপান্তর করা কারণ।

মনে রাখতে হবে- ” আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যত “।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।