জন্মদিনে হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হাবিপ্রবি উপাচার্য

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধি


অধ্যাপক ড.মু.আবুল কাসেম। ১৯৫৩ সালের আজকের এই দিনে লালমনিরহাট জেলার বড়খাতার শেখ সুন্দর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৌলভী নুর আহমেদ আকন্দ (মৃত) মাতা জমিরুন নেছার (মৃত)ঘরকে আলোকিত করে জন্ম নেন তিনি।এখন তিনি নিজের সেই আলোকে ছড়িয়ে যাচ্ছেন।

যখন নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত ছিল দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাস ভিসি শূন্য ছিল প্রায় ৩ মাসের অধিক। ঠিক সেই সময় উন্নয়ন ও আলোর বার্তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়ে ক্যাম্পাসে আসেন অধ্যাপক ড.মু.আবুল কাসেম।নামটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ হাজার শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয়ময়। একইসাথে শিক্ষক-কর্মকর্তা,কর্মচারীসহ সকল সহকর্মীদের কাছে।

সমস্যায় জর্জরিত ক্যাম্পাসে এসেই তিনি দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি। সেই প্রত্যাশার কথাগুলো আজ বাস্তবায়িত। শতবাধা উপেক্ষা করে দায়িত্বের ৪ বছর শেষ হওয়ার আগেই সেশনজট অনেকটা কমিয়ে এনেছিলেন।বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে আবার সেই অংশে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশামত প্রতিবছর করেছেন আন্তঃবিভাগ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,বৃক্ষ মেলা,বই মেলা,স্থাপত্য প্রদর্শনীসহ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের গুনগত শিক্ষাগ্রহণে অধ্যয়নের পরিবেশ এবং লেখাপড়ার মান কে করেছেন আরও মানসম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজিয়েছেন আধুনিক স্থাপত্য শৈলী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী,কর্মকর্তাদের পরিবহনের জন্য তার মেয়াদে মাত্র সাড়ে তিন বছরে পরিবহন পুলে যুক্ত হয়েছে ১৩ টি যানবাহন । একাডেমিক ল্যাবগুলো পেয়েছে নতুন যন্ত্রপাতি,সৃষ্টি হয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম। আবাসন ও শ্রেনী সংকট কমাতে নির্মিত হচ্ছে ১০তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন ও ৬ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হল। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের গুনগত শিক্ষাগ্রহণে অডিটোরিয়ামে করেছেন সভা- সেমিনার।

শিক্ষক,কর্মকর্তাদের আরও বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলতে করেছেন নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। যা আগে হাবিপ্রবিতে অবহেলিত ছিল।

কৃষি গবেষণা কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে করেছেন “কৃষি,মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ গবেষণা কমপ্লেক্স” প্রতিষ্ঠা । এ গবেষণা কমপ্লেক্সে ডেইরি, পোল্ট্রি,মৎস্য, এবং শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা করা হয়। বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষক পরিবারের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে “ভ্রম্যমান ভেটেনারি ক্লিনিক” চালু করেন তিনি। কৃষক পরিবারের গৃহপালিত গবাদি পশু প্রাণীর চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অত্যাধুনিক ভ্রাম্যমান ভেটেনারি ক্লিনিকটি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বাংলাদেশে শুরু করে।

তার এই উদ্যোগের ফলে বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষক পরিবারগুলো অত্যন্ত উপকৃত হচ্ছে। বৃহত্তর দিনাজপুরের কৃষকদের কৃষি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “কৃষক সেবা কেন্দ্র” । উপাচার্যের বাস্তবায়িত এই উদ্যোগও বাংলাদেশে প্রথম‌। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি, পিএইচডি, ফেলোশিপ, বিদেশে স্কলারশিপ ইত্যাদি সেবা এবং পরামর্শের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে “ক্যারিয়ার এডভাইজারী সার্ভিস” তিনি নিজ হাতে শুরু করেন। এই সার্ভিস এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী বৃন্দ তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন।

তাইতো মাত্র সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে হাজারো শিক্ষার্থীর মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন অধ্যাপক ড.মু.আবুল কাসেম। আজ ভিসি ও শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক ড.মু.আবুল কাসেম এর জন্মদিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভার্চুয়াল ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন ভিসি। কেউ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আধুনিক হাবিপ্রবি স্বপ্নদ্রষ্টা, অনুপ্রেরনার বাতিঘরসহ নানান কথা। সবশেষে সবাই সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে ভিসিকে জানিয়েছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা শুভ জন্মদিন স্যার। শুভ হোক আপনার আগামীর দিনগুলো।

সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.মু.আবুল কাসেম জানান,ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসাই আমার কাজের শক্তি।সবার শ্রদ্ধা,ভালোবাসা নিয়ে আমি আমার জীবনের বাকী সময়টুকু কাটাতে চাই। যে কয়দিন ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্বে আছি সেই কয়টা দিনকে আমি কাজে লাগাতে চাই। শিক্ষক, শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা ও কর্মচারী সকলকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করতে চাই,হাবিপ্রবিকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে চাই।আমার এই উন্নয়নের কাজে সবাইকে আমি পাশে চাই। সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশা করি।

স্বপ্নভূমি হাবিপ্রবি

তানভির আহমেদ


অনেকের স্বপ্নভূমি হাবিপ্রবি। সবার কাছে হাবিপ্রবি অথবা HSTU নামে পরিচিত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের অগ্রযাত্রার ২০ বছরে রয়েছে ফেলে আসা হাজারো স্মৃতি। রাজধানী থেকে ৩৮৩ কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়, যা সকলের নিকট উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নামেও পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতের বামে চোখে পড়বে জিমনেসিয়াম। এর পাশেই সুউচ্চ দৃষ্টি নন্দিত ভবন যার নাম ড. এম. ওয়াজেদ মিঞা ভবন। আর ডানপাশে চোখ ধাধানো বিরল প্রজাতির উদ্ভিদে বেষ্টিত বোটানিক্যাল গার্ডেন। এর মাঝে দৃষ্টি নন্দিত ফোয়ারা চত্ত্বর বাড়িয়ে দিয়েছে গার্ডেনের শোভা। ওয়াজেদ ভবনের থেকে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়বে প্রশাসনিক ভবন। ভবনের সামনে ও একপাশে দেখা মিলবে বাহারি ফুলের সংমিশ্রণ ও দেশি বিদেশি নানা জাতের ছোট ছোট শোভাবর্ধক গাছ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৪টি একাডেমিক ভবন সহ ১টি নির্মাণাধীন অর্থাৎ মোট ৫টি একাডেমিক ভবন। এছাড়া অডিটোরিয়াম-১ ও আধুনিক সুবিধা সম্বলিত অডিটোরিয়াম-২, লাইব্রেরি ভবন,মেয়েদের তিনটি হল, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক হল সহ মোট আটটি হল এবং নির্মানাধীন ৭২০ সিটের অত্যাধুনিক ছাত্রী হল। রয়েছে ৫তলা টিএসসি ভবন সহ আরো অনেক স্থাপনা।

এখানে প্রতিনিয়ত গল্প সাজে। ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন বুনে তরুন প্রজন্ম। এক দিন বড় হবে, খুব বড়! যেখানে দাঁড়িয়ে গাছের মত ছায়া দেবে নিজ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের মানুষগুলির। বিশেষত্ব দিবে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের।

রাশিক হোসাইন শোভন এই তরুন প্রজন্মের একজন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখি হাবিপ্রবি কে নিয়ে, নিয়ে যেতে চাই নতুন এক উচ্চতায়। জীবন যুদ্ধে একজন সফল মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াতে চাই মানুষের। সময় ও নদীর স্রোত কাহারো জন্য অপেক্ষা করেনা। দেখতে দেখতেই একটি বছর চলে গেলো, ক্যালেন্ডারের পাতার সাথে সেমিস্টার ও পরিবর্তন হলো লেভেল ১ এর পাশে।

স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের এপ্রিল। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরার পর হাবিপ্রবিতে গিয়েছিলাম। আশা ছিলো ঘুরে দেখবো পুরোটা ক্যাম্পাস ঘুরে দেখবো। ৮৫ একরে কি আছে? সারাদেশের শিক্ষার্থীরা কেন আসে এখানে! তখনো একদমই মাথায় আসেনি যে, মাত্র কয়েক দিন পরে এই জায়গাই হবে আমার নিজের ঠিকানা!

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সকাল ৮ টায় ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উপস্থিত দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, জীবনের নতুন এক অধ্যায়। নতুন সব মুখ। হাবিপ্রবি নিয়ে কল্পনাটা ছিল একটু ভিন্ন। এখানে ক্লাস করার চেয়ে ঘোরাফেরা এবং আড্ডা দেওয়া বেশি। স্কুল কলেজের মত ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই।

কিন্তু কোথায় কিসের কল্পনা, এসে দেখি এ এক নতুন জগত! প্রথম দিনের প্রথম ক্লাসেই স্যারের নিয়ম কানুন নিয়ে বিশাল এক লেকচার। ঠিক সময়ে না আসলে ক্লাস এ ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই এই করলে এই এই শাস্তি। আবার উপস্থিতির জন্যও ৫ নাম্বার বরাদ্দ। এ কথা শুনে তো রীতিমত চোখ কপালে! সকলের মুখেই এক কথা, নিজ পরিবার ছেড়ে বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থী এখানে ভাই বোনের সম্পর্কের মতো একে অপরকে নিয়েছে নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবে। পিতামাতা তূল্য শিক্ষকও আছে আমাদের। নিজেকে কখনো একা মনে হয়না বিদ্যা অর্জনের এ পথচলায়।

বেগুনি আর হালকা নীল বাসের কথা মনে পড়তেই মনে হলো এখানে আছে কিছু সুখের স্মৃতি। ফাঁকা বাসে বসে বাসায় ফেরার পথে সম্মিলিত কন্ঠে গান গাওয়া তো ছিলো নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা। দিনাজপুর সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে যখন হাবিপ্রবির লাল সাদা বাস গুলো সর্বোচ্চ গতিসীমায় চলতো, তখন কিছু অসহায় চোখ তাকিয়ে থাকতো হাবিপ্রবির বাসের দিকে। হয়তো তারাও ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু হাবিপ্রবিতে, কিন্তু চান্স হয়নি। চান্স পায়নি বলে হয়তো অনেক কষ্টও পেত তারা।

এত শত গল্পে স্মৃতি যে আরো আছে ফার্ট গেটের পাশে শাকিল ভাইএর দোকানে বসে চায়ের কাপে ঝড় তোলা, ওয়াজেদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখা, টিএসসিতে কিংবা ঘুমের ঘোরে ক্লাস মিস দেওয়া, সেন্ট্রাল ফিল্ডে বসে গিটারে সুর তোলা, ফিশারিজ পুকুর পাড়ে, লিচু বাগানে জন্মদিন সেলিব্রেশন করা বাসের সিট রাখতে হুড়োহুড়ি করা এসব আমদের দৈনিক রুটিনের অংশ।

ঢেপা নদী থেকে সুখ সাগর, প্রমোদতরী থেকে দাদুবাড়ি সব যায়গায় ছিলো উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। এ বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেনো একেকজন একেকটি অংশ এ পরিবারের। এ বিভাগের শিক্ষক নিয়ে বলতে গেলে অতুলনীয় ও অত্যন্ত বন্ধুসুলভ এককথায় এমন ছাত্রবান্ধব শিক্ষকদেরর জুরি মেলা ভার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিন অবধি পরিবারের একটি সদস্যকেও হারাতে চাইনা।

প্রতিদিন কতশত গল্পের জন্ম হত। কত সব চিন্তা আসতো। আড্ডায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া এই বন্ধুরা শিক্ষাজীবন শেষে কে কোথায় যাবে তার কি কোনো হদিস থাকবে? গানে আড্ডায় ঘোরাঘুরি আর হালকা পড়াশুনোয় আর শত নিয়ম কানুনের বেড়াজালে ৪টি বছর পার হয়ে যাবে। শুরু হবে সমাপ্তির সূচনা।

চার বছরের এত স্মৃতি, এত সুখ দুঃখ, হাসি কান্না সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বিদায় বেলায়। দীর্ঘ ৪ বছর আগে যে যাত্রার শুরু হয়েছিল, নিমিষেই তা শেষ হয়ে যাবে, ভাবতেই চোখ ছলছলায়।

আজও বেগুনি নীল রঙের সেই বাসগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি চোখে পড়লেই। আহা… আবারো যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই দিনগুলোতে! হয়তো এ রকম আশায় ব্যক্ত করে করে হাবিপ্রবি ছেড়ে আসা সকল শিক্ষার্থী।

বাস্তবতার জাঁতাকলে পিষ্ট প্রতিটি মানুষের মনেই থাকে জীবনে সফল হওয়ার বাসনা। সে পালে হাওয়া দেয় হাবিপ্রবি নামক এই স্বপ্ন রাজ্য। অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। কেউ সে যুদ্ধে সফল হয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় কেউ বা হারায়। তবে হাবিপ্রবি উজ্জল তার স্বমহিমায়।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ,
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ গেল হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাহেরা ফাইয়াজ মৌ।

আজ শুক্রবার(১২জুন) সকাল ৯ টায় মৌ বাসা থেকে তার খালতো ভাইয়ের সাথে বাইকে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে।

জানা যায়, মৌ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি মেসে থাকতো।মেস থেকে প্রয়োজনীয় বই এবং জিনিসপত্র নিয়ে বাইকে করে বাসাই ফেরার পথে ঢাকা দিনাজপুর মহাসড়কের মঙ্গলপুর নামক স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে মৌ বাইক থেকে ছিটকে পরে যায় এবং অপর একটি ট্রাকের নিচে পিষ্ঠ হয়।

এরপর আহত অবস্থায় তাহেরা ফাইয়াজ মৌকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহমান মেডিকেল কলেজে আইসিইউ তে নেওয়া হলে,কিছুক্ষণ পর কর্ত্যব্যরত চিকিৎসক ফাইয়াজ মৌ কে মৃত ঘোষণা করেন। তহেরা ফাইয়াজ মৌ এর বাসা দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জে।

এদিকে মৌ এর অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন হাবিপ্রবি পরিবারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম। তিনি তার আত্মার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

হাবিপ্রবিতে জোড়া খুন: ছাত্রলীগ নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার

হাবিপ্রবি টুডেঃ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) জোড়া খুনের মামলাসহ আরও বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট মামলায় দিনাজপুর সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সুজন ও দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১১জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের বাহাদুর বাজার এলাকা থেকে পুলিশের প্রায় ৫০ জনের একটি দল অভিযান চালিয়ে জেলা ইমাম আবু জাফর রজবের মালিকাধীন আবাসিক হোটেল আফিয়া ইন্টারন্যাশনাল থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমাম আবু জাফর রজবকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে সাড়ে ৩টার দিকে বিপুলসংখ্যক পুলিশের একটি দল ঘন্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে শহরের সুইহারী এলাকার নিজ বাড়ি থেকে দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সুজনকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃত এ দুই নেতার মুক্তির দাবিতে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কোতয়ালী থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে তার অনুসারীরা।

এসময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর হামলা করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সুজন সরকার জানান, ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল রাতে হাবিপ্রবিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শিক্ষার্থী জাকারিয়া মিল্টন ও মাহামুদুল হাসান নিহতের ঘটনায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান হত্যা ঘটনাসহ অসংখ্য ডাকাতি, চুরি, লিচুর বাগান লুটের অভিযোগও রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল হাবিপ্রবির ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে ছাত্রলীগের অন্য অংশের সংঘর্ষে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন নিহত হন। খুনের ঘটনায় পরিবারের করা পৃথক দুটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়।

নিহত মিল্টনের চাচা মকসুদার রহমান বাদী হয়ে ৩৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার এক নম্বর আসামি করা হয় তখনকার উপাচার্য রুহুল আমিন।

এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছরের শুরুতে বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এছাড়াও বিচারের আশ্বাস দিয়ে নিহত দুই নেতার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন।

হাবিপ্রবি শিক্ষকদের অনলাইন টিচিং ও লার্নিং বিষয়ক কর্মশালা

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: করোনাকালীন এই সময়টাতে শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) উদ্যোগে অনলাইন টিচিং লার্নিং ফর দ্য টিচার অফ এইচএসটিইউ শিরোনামে একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১০ জুন) সকাল ১১ টায় এই অনলাইন ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইকিউএসি’র পরিচালক প্রফেসর ড.বিকাশ চন্দ্র সরকার এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন হাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম।

টেকনিক্যাল স্পীকার হিসাবে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জুম এপ্লিকেশন ও গুগল ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন সিএসই অনুষদের ডীন ও ইসিই বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.মো.মাহাবুব হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, ” কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। অন্যান্য খাতের মতো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অপুরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রায় তিন মাস থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আরো কতদিন বন্ধ রাখতে হবে সেটা আমরা কেউই জানিনা। তাই শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনলাইন মুখী করতে শিক্ষকদের জন্য এই অনলাইন টিচিং লার্নিং ট্রেনিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে । আশাকরি শিক্ষকগণ এই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তাদের স্ব-স্ব বিভাগীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।

সভাপতির বক্তব্যে আইকিউএসি এর পরিচালক প্রফেসর ড.বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ” করোনা মহামারীর কারনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষার মধ্যে না থাকায় অনেকেই হয়তো পড়াশোনা ভুলতে বসেছে। শিক্ষা কার্যক্রমেও একটা স্থবিরতা চলে এসেছে এ সব বিবেচনা করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কিভাবে অনলাইন পাঠদানে সম্পৃক্ত করা যায় তার জন্য আমরা এই অনলাইন ট্রেইনিং সেশনের আয়োজন করেছি। যদিও আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে তথাপি বিকল্প হিসাবে অনলাইন কার্যক্রম শুরু করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছেন সেসব বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। প্রয়োজনে আরও কথা বলা হবে। ভিসি স্যার অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপাশি মিটিংগুলো অনলাইনে করার কথা জানিয়েছেন। আমাদের সমস্যা যেমন আছে তেমনি সমাধানের পথও বের করতে হবে আমাদের। এক্ষেত্রে ডীন-গণ চাইলে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। যাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি তারা গ্রুপ ভিত্তিক বা সেকশন ভিত্তিক ক্লাস কার্যক্রম চালাতে পারেন।

অনলাইন এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার , প্রক্টর, এডভাইজারসহ বিভিন্ন অনুষদীয় ডিন ও বিভাগীয় ১০৬ জন শিক্ষক অংশ গ্রহণ করেন।

হাবিপ্রবি: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গবেষণা মাঠে ধানের চারা রোপণ

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) গবেষণা মাঠে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। আজ বুধবার (২০ মে) এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড.শ্রীপতি সিকদার।

হাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম এর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে প্রায় ১০ একর জমিতে আউশ ধান রোপণ করা হয়েছে ও বিনা ৭ ধানের চারা রোপণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ সময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপাচার্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করে বলেন, ‘করোনা পরবর্তী খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় কোন জমি যেন পতিত না রাখা হয় এবং প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন । এই আহবানে সাড়া দিয়ে খামার বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররোল শ্রমিকদের সাহায্যে গবেষণার মাঠের জমি ব্যবহারের যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত । ধান রোপণের মাধ্যমে হাবিপ্রবি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি’।

এসময় তিনি দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে হাবিপ্রবি সর্বদা সরকারের পাশে থাকবে’।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধান খামার তত্ত্বাবধায়ক ড. এস. এইচ. এম গোলাম সারওয়ার, খামার তত্ত্বাবধায়ক কৃষিবিদ আহসানুল কবির, উপ-সহকারী খামার তত্ত্বাবধায়ক আতিয়ার হোসেন। এই ১০ একর জমি থেকে প্রায় ৫০০-৬০০ মণ ধান পাওয়া যাবে বলে এ সময় জানানো হয়।

উল্লেখ্য, আমিষের চাহিদা পূরণে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম এর নির্দেশনায় ইতোমধ্যে পৌলট্রি খামারে সহস্রাধিক সোনালী জাতের মুরগির বাচ্চা লালন পালন করা হচ্ছে।

কোর্সেরার সাথে যুক্ত হলো হাবিপ্রবি

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ করোনা মহামারীর কারনে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ। অনলাইন লার্নিং এর সম্ভাব্যতা নিয়ে যখন বিভিন্ন মহল থেকে পর্যালোচনা চলছে তখন অনলাইন লার্নিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেন তাঁদের এই সময়টা কাজে লাগাতে পারে।

সেই সঙ্গে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে, এই বিষয়ে আজ বিকেল সাড়ে তিনটায় একটি ওয়েবিনার করেছেন হাজী মুহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সোস্যাল সাইন্স এন্ড হিউমিনিটিস অনুষদের শিক্ষকরা।

সম্প্রতি হাবিপ্রবি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অনলাইন শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম ‘Coursera’ এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। এখন থেকে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা করোনাকালীন সময়ে ‘Coursera’ এর প্রায় ৩৮৪৫টি কোর্সে অংশ নেয়া এবং সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারবে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে Oxford, Harvard এবং MIT মত পৃথিবী বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ডলার মূল্যের কোর্স করার সুযোগ পাবে।

কিন্তু এই জনপদের অনেক শিক্ষার্থী Massive Open Online Learning (MOOC) এবং অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতির সাথে পরিচিত না বলে তাঁদের সহায়তার জন্য আজকের ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। ‘Coursera Campus’ এর সাথে হাবিপ্রবিকে যুক্ত করা এবং আজকের ওয়েবিনারের আয়োজক এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ জুয়েল আহমেদ সরকার সেমিনারে অনলাইন লার্নিং, MOOC এবং Coursera প্ল্যাটফর্মের উপর একটি উপস্থাপনা পেশ করেন।

ওয়েবিনারে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর ড. ফাহিমা খানম, মুজাহিদুল ইসলাম শামীম, সজীব রায়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রশিদ, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রোজিনা ইয়াসমিন লাকী এবং গোলাম রব্বানী, সহকারী অধ্যাপক মো: জাকারিয়া, সহ হাবিপ্রবির প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ফাহিমা খানম বলেন, ” আমরা কিছুটা দেরিতে হলেও এই দারুন সুযোগ পেয়েছি। এই জন্য জুয়েল কে ধন্যবাদ জানাই, এমন উদ্যোগ নেয়ার জন্য। অন্তত করোনাকালীন সময়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স বিনামূল্যে করতে পারবে এবং সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারবে এইটা খুব ভালো একটা সুযোগ”।

হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা এমন সুযোগ পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী উম্মে ইলমা ফেরদৌস বলেন, “ঘরে বন্ধী থেকে পৃথিবীর বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন কোর্স করা সত্যিই সৌভাগ্যের । এতে করে নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারবো, যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এমন সুযোগ সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।”

ওয়েবিনারের সঞ্চালক মোঃ জুয়েল আহমেদ সরকার বলেন করোনাকালীন ‘Coursera Campus’ এর এই উদ্যোগটি খুব স্বল্প সময়ের জন্য তাই আমি আমার সকল শিক্ষার্থীকে আহবান জানাবো সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য।

চার শর্তে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া অর্ধেক মওকুফ

হাবিপ্রবি টুডেঃ দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের জন্য মেসভাড়া অর্ধেক মওকুফ করা হয়েছে।

আজ রবিবার (১০ মে) বাঁশেরহাট মেস মালিক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও মিটিংয়ে আরো যেসব লিখিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

১) এপ্রিল ২০২০ থেকে যতো মাস করোনাভাইরাস জনিত দুর্যোগ চলবে ততমাস শিক্ষার্থীরা ৫০ শতাংশ মেস ভাড়া পরিশোধ করবে এবং যেই মাসে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবে সেই মাসে ১০০ শতাংশ ভাড়া দিতে হবে।

২) ৫০ শতাংশ মাসিক মেস ভাড়ার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল সাপেক্ষে শিক্ষার্থীরা প্রদান করবে।

৩) মানবিক কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ নিজ মেসের বুয়া বিল প্রদান করবে।

৪) শিক্ষার্থীরা মেসভাড়া মেস মালিক বরাবর সংশ্লিষ্ট মেসের নিয়মানুযায়ী যথা সময়ে প্রদান করবে। কোন মাসে বকেয়া রাখা যাবে না।

এ দিন মেস মালিক ও প্রশাসনের মিটিংয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তে মেস মালিক সমিতির সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বাকি সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে প্রক্টর প্রফেসর ড. খালেদ হোসেন এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ স্বাক্ষর করেন।

মেস মালিকের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পরিসংখ্যান তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী লিফাত আরা বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের কোন দিকটা দেখলো বুঝলাম না। মেসে না থেকে তাও ৫০% দিতে হচ্ছে। আবার বুয়া বিল কেনো দিব? মানবিক দিক বলে বুয়া বিল চাপানোর কোনো মানে হয় না।

শিক্ষার্থীদের অবস্থা খারাপ আর সবাই আছে আমাদেরকে লুটপাট করতে। আমরা বুয়াকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু দিতে পারি তবে বুয়া বিল দিবো না। বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেছি না তাহলে বিদ্যুৎ বিল কোথা থেকে আসতেছে? আবার মাসের শুরুতে মাসের ভাড়া! যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক হতে বলা হচ্ছে সেখানে কিনা ব্যবসা চলছে।

আপনারা এই ৫০% ভাড়া মালিকরা নিচ্ছেন ঠিক আছে কিন্তু আমরা এতদিন মেসে না থেকে বিদ্যুৎ বিল কেনো দিবো। যেখানে মেস আপনাদের যেগুলো আমরা ব্যবহার করছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হাবিপ্রবি শাখা কিছুতেই এর দায় এরাতে পারে না।

বাঁশেরহাটের মেসগুলোতে এক বছরের চুক্তি, বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ বিল, সাধারণ ভাড়া থেকে ৩ গুণ ভাড়া বেশি নেয়া। মেস মালিকরা এগুলো নিয়ম নিজেরা তৈরি করে ব্যবসা চালাচ্ছে। ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হাবিপ্রবি প্রশাসন ও মেস মালিকদের পুনরায় বৈঠক

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় সময় পার করছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে মেস ভাড়ার চাপ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সিদ্ধান্তহীনতায় মেস মালিক সমিতি তাই দু-দফা বৈঠকের সুযোগ পেয়েও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে চিঠি দেওয়া হলেও প্রথম বারে বসতে অস্বীকৃতি জানায় তারা। এরপর প্রশাসনের দ্বিতীয় উদ্দোগে ৪ঠা মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২০ শতাংশ মেস ভাড়া মৌকুফের ঘোষণা দিয়েছিলো মেস মালিকরা। তবে কিছু মেস মালিক এতেও দ্বিমত পোষণ করে। এই খবরে শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। শিক্ষার্থীবান্ধব না হওয়ায় সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি হাবিপ্রবি প্রশাসন।

আগামী রবিবার (১০ মে) পুনরায় মেস মালিকদের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ বলেন, “বিগত মিটিংয়ে মেস মালিকদের প্রস্তাব আমাদের কাছে ছাত্র বান্ধব মনে না হওয়ায় তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। আগামী রোববার তাদের সাথে আমাদের আবার বসার কথা রয়েছে। আশা করছি ভালো কিছু ফল বেরিয়ে আসবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ পেলে কঠোর অবস্থানে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন”।

আলোচনায় কোন সিদ্ধান্ত এখনো না আসলেও কিছু কিছু মেস মালিকদের বিরুদ্ধে অনৈতিক চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মেসে বুয়া বা রান্নার বিল, বিদ্যুতের পুরো টাকাও দাবী করেছেন কেউ কেউ।

এসব অভিযোগ স্বীকার করে মেস মালিক সমিতির সভাপতি রায়হান শরিফ বলেন, “কিছু মেয়েদের মেস থেকে এমন অভিযোগ পেয়েছি। রবিবারের মিটিংয়ে সব সমাধা হবে বলে আশা করি। এর আগে টাকা চেয়ে চাপ না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি মেস মালিকদের”।

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় ‘ওয়েবিনার’ আয়োজিত

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ রিসার্চ গ্রুপের উদ্দোগে “Stories of Vulnerabilities and Resilience: Reflections by Development Studies Students” শীর্ষক এক ওয়েবিনার তথা ওয়েব সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার (৩ মে) বিকেল সাড়ে তিনটায় আয়োজিত ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সহকারী অধ্যাপক মো: জুয়েল আহমেদ সরকার, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার রুহান ওয়াসাতা, ড্রাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লেকচারার মো: নিয়ামত আলী ও হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের আরেক লেকচারার মুজাহিদুল ইসলাম। ঢাবি ও খুবি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা উক্ত ওয়েবিনারে যুক্ত হন।

সামাজিক দুরত্বের এই সময়ে দেশের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভাবনা, ব্যক্তিগত মূল্যায়ন, সমস্যা ও তার প্রতিকার শীর্ষক এই ওয়েবিনারের আয়োজন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রাশেদ আল মাহমুদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত দূরত্বের সময়টিতে নিজ গ্রাম বা অঞ্চলে কিভাবে সময় কাটাচ্ছে এবং ব্যক্তিগত উপলব্ধিগুলো সরাসরি শোনার জন্য গৎবাঁধা আলোচনার বাহিরে এসে এই ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আজকের ওয়েবিনারে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়, পরবর্তীতে বাঁকি অঞ্চলেও এটি বিস্তৃত করা হবে”

ওয়েবিনার বিষয়ে হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র মুমিত হাসান বলেন, “করোনা কালে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা এবং কল্যান নিয়ে শিক্ষকদের উদ্বেগ সত্যি প্রশংসনীয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক চিন্তিত ছিলাম আমার এলাকা ও আমার নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। আজকের ওয়েবিনারে আলোচকদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনে স্বস্তি পেয়েছি। সেইসাথে দুই বিভাগের অন্যান্য ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ভাবনা সেইসাথে স্যারদের মূল্যায়ন, করনীয়, দিকনির্দেশনা এবং সহায়ক আলোচনা ছিলো খুবই উপকারী”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের আলোচকেরা বলেন, ‘এই জরুরী পরিস্থিতিতে প্রত্যেকে তার নিজ জায়গা থেকে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করা খুব জরুরী। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা কেমন আছে? তাদের কোন সমস্যা আছে কিনা এবং এই পরিস্থিতে আমরা কিভাবে তাদের সহযোগিতা করতে পারি সেটা জানা এবং সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া আমাদের নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব।

এই লক্ষ্যে উত্তরের দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই মুহুর্তের পরিস্থিতি জানা এবং তাদের ফিজিক্যাল ও মেন্টাল সাপোর্ট দেবার জন্য এই ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে একাডেমিকভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়া আমাদের পেশাগত দায়িত্ব। তাই পেশাগত এবং মানবিক দায়িত্বের জায়গা থেকেই আমরা এই ওয়েবিনারের আয়োজন করেছি। এছাড়াও ওয়েবিনারের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের করণীয় বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করাও ছিল এর অন্যতম একটি উদ্দেশ্য’।