কুবির এক শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত, নমুনা সংগ্রহের ১১ দিন পর ফলাফল

কুবি টুডেঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য মোহাইমিনুল ইসলাম করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মোহাইমিন বলেন, ‘নমুনা নেয়ার ১১ দিন পর ফলাফল আসলো আমি পজিটিভ। আমার মাঝে এখনো কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।’

তবে, শিক্ষার্থী মোহাইমিন এখন সুস্থ আছেন। তার মাঝে করোনাভাইরাসে কোনো উপসর্গ এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা জানান, তাদের পাশের বাড়িতে কয়েকদিন আগে এক ব্যাক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে আসেন, পরদিন তিনি মারা যান। মৃত ব্যক্তি তাদের আত্মীয়, তাই ঐ ব্যাক্তির জানাযায় তারা উপস্থিত হয়েছিলেন।

তিনি আরও জানান, যারা যারা উপস্থিত ছিল, তাদের মাঝে ১৭ জনের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়। তাতে মোহাইমিনসহ আরও তিনজনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. বেলাল হুসেইন বলেন, ‘সংবাদটি শুনে আমরা খুবই মর্মাহৎ। বিভাগের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার সাথে আমি কথা বলে জানিয়েছি। বিভাগের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান সবাই যেন তাকে মানসিকভাবে এখন চাঙ্গা রাখে।’

ক্যাম্পাসে ফেরা হলো না সোহরাওয়ার্দীর

আবু জাফর


আসা আর যাওয়ার নামই দুনিয়া! কতজন আসে আর কত জন যায়! কিন্তু কিছু কিছু যাওয়া সবার মনে দাগ কেটে যায়!

বলছিলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহরাওয়ার্দী ভূঁইয়ার কথা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আজ সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

সোহরাওয়ার্দী ভূঁইয়া কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার রসূলপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের কৃতি সন্তান! এসেছিলেন বুক ভরা আশা নিয়ে কুমিল্লার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠে ! পাদচারণা করেছেন তিন তিনটি বছর! কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। গ্রাজুয়েটের কালো কোর্তা পড়ার আগেই পড়তে হলো কাফনের সাদা কাপড়!

বাড়িতে বিদ্যুতের কাজ করতে ছিলেন, তবে মেইন সুইচ বন্ধ করতে ভুলে যান তিনি। তখনি হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন । বাড়ির সবাই মাথায় পানি দিলে কিছুটা সুস্থবোধ করেন। কিছুক্ষণ পর আবার অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালেই তার শেষ নিষ্পাপ মুখের শেষ নিশ্বাস ছাড়েন।

মরহুম সোহরাওয়ার্দী ভাইয়ের সাথে একি হলে থাকার সুবাদে প্রায় দেখা হত। কখন ডাইনিং কখন সিঁড়ির গোড়ায় তার মায়া ভরা চেহারাটা দেখে মনটা ভরে যেত! তার সহপাঠীদের কিছু স্মৃতিচারণ তুলে ধরছি-

আবির হাসান প্রান্ত (বাংলা বিভাগ) ২০১৬-১৭ বর্ষ তিনি বলেন..প্রথম তার সাথে ভাইবা দেওয়ার সময় দেখা হয়। আমার পিছনে দাড়িয়ে ছিল। পরে আমার আব্বুকে দেখে সালাম দিলো,বলল স্যার আপনি এখানে! শিক্ষকের প্রতি এমন ভক্তি দেখে আমি অভিভূত হয়েছিলাম সেদিন!পরে মাঝেমধ্যে দেখা হইলে আব্বুর কথা জিজ্ঞাস করত!

তাছাড়া প্রায় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে আসতো ওর ফ্রেন্ড এর সাথে,দেখা হইতো আড্ডা দিতাম। আসলে ও অনেক ভালো একটা ছেলে ছিল, হাসিখুশি ছিল, জীবনে কিছু করার একটা অদম্য মনোবল ওর ছিল!

তার তিন বছরের ক্লাস মেট এবিএস ফরহাদ (নৃবিজ্ঞান বিভাগ) ২০১৬-১৭ বর্ষ তিনি বলেন: ক্লাসের অমায়িক এক বন্ধু ছিলো সোহাওয়ার্দী। শুধু বন্ধু হিসাবে নয় একজন ভাল মনের মানুষ হিসাবে তার প্রশংসা না করে পারছিনা। করোনা’র মাঝে অনেকের মত তার সাথে আমার কথা হয়। সর্বশেষ সে বলেছিল বন্ধু ভাল থাকিস আর সাবধানে থাকিস।

বন্ধু আমাকে সাবধানে থাকতে বলে তুই কেন অসাবধানতাবশত চলে গেলি? বন্ধু তুই কি আর নেতা বলে ডাক দিবি না? সাংবাদিক বলে ডাকবি না? আমার জানালার পাশে দাড়িয়ে শিট চাইবি না? বন্ধু আমার সব শিট তুই নিয়ে নেয়! তোর রুমে আমি প্রতিদিন যাব, তারপরও ফিরে আয় আমাদের কাছে।

সোহাওয়ার্দী প্রতিদিন বলত একই হলে থাকি আমরা তোরা আমার রুমে যাস না কেন? বন্ধু এখন থেকে প্রতিদিন যাব। কিন্তু বন্ধু তুই তো আর ফিরে আসবি না। প্রচন্ড রকমের ভাল মানুষ আজ হারিয়েছি। বন্ধু রক্তক্ষরণ কাকে বলে আজ প্রচন্ড রকমের ফিল হচ্ছে। ওপারে ভাল থাকিস বন্ধু। প্রতিনিয়ত মিস করবো তোকে!

করোনার কালীন পর খুব শীঘ্রই হয়তো খুলবে ক্যাম্পাস! সবাই বসবে ক্লাসে! কিন্তু নৃবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের ৪৬ সদস্যের পরিবারটা থাকবে মলিন! তার রোল টা আসলেই থমকে যাবে ক্লাস! স্তব্ধ হবে বাতাস! ক্যাম্পাসে না ফেরা হলেও ওপারে ভালো থাকবে সোহরাওয়ার্দী এই কামনা সবার!


লেখকঃ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্ণাঢ্য আয়োজন ছাড়া ১৫তম বছরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কুবি টুডেঃ আজ (২৮ মে) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ২০০৬ সালের এই দিনে কুমিল্লার কোটবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের মধ্য পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) । সেই সঙ্গে কুবি দেশের ২৬ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ হিসেবে আজ ১৪ বছর পেরিয়ে ১৫ বছরে পা দিলো বিশ্ববিদ্যালয়টি।

তবে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই দিবসটি উপলক্ষে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন আয়োজন করলেও এবছর দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কোনো আয়োজন থাকছেনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য বছরের প্রথমেই একটা পরিকল্পনা নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে আমাদের সবারই তো হাত-পা বাঁধা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আগামীতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিবসটি উদযাপন করবো।


আরও পড়ুন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাখি

করোনা টেস্ট করবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমসহ বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: ২০০৬ সালের ৫০ একর নিয়ে জায়গা নিয়ে দৃষ্টিনন্দন লালমাই পাহাড়ে পাদদেশে প্রাচীন সভ্যতার নির্দশন শালবন বিচারের কোল ঘেঁষে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ৭টি বিভাগ, ৩০০ জন শিক্ষার্থী, ১৫ জন শিক্ষক ও ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চালু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬ টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

কভিড ১৯: প্রভুর নিকট ফিরে আসার সতর্কবাণী

মাহমুদুল হাসান


মানব সৃষ্টির আদিকাল থেকেই নানা সময়ে এই পৃথিবীর নানা অঞ্চলে নানা সময়ে নানান রকমের মহামারী এসেছিল।আর এই ধারাবাহিকতা ততোদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে যতোদিন এই পৃথিবী নামক গ্রহটিতে থাকবে মানুষের বসবাস।

বর্তমান সময়ে পৃথিবী বাসী করোনা নামক একটি অদৃশ্য ভাইরাসের ভয়ে থমকে গেছে। গৃহবন্দী আজ কোটি কোটি মানুষ। অনাহারে মরছে ছিন্নমূল মানুষেরা। পৃথিবীর এত বড় বড় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো আজ অদৃশ্য একটি ভাইরাসের সামনে অসহায়।

একজন মানুষকে অসুস্থ করতে ৭০ বিলিয়ন ভাইরাসের প্রয়োজন। ৭০ বিলিয়ন ভাইরাসের ওজন ০.০০০০০০৫ গ্রাম।বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। তাহলে বিশ্বের সমস্ত আক্রান্তদের দেহে সমস্ত ভাইরাসের মোট ওজন ২ গ্রাম। অর্থাৎ দুই ফোঁটা পানির সমান। এর পরেও কিসের এতো অহংকার!

আমরা অনেকেই জানিনা, কেন এই মহামারী আসে। কখনো জানতেও চাইনা। ভাবি, মহামারী এসেছে আবার একসময় চলেও যাবে। মহামারী আসার প্রকৃত কারণ যদি মানবজাতি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারতো তাহলে এই পৃথিবীতে এতো অশান্তি, মারামারি, গণহত্যা, ধর্ষণ, যেনা-ব্যভিচার থাকতোনা।

বিপদ/ মহামারী কে ঘৃণা করার কোন সুযোগ নেই। এটা কারো জন্য পৌষ মাস আবার কারো জন্য সর্বনাশ। অনেক সময় মহামারী এবং বিপদের কারণেই মানুষ তার পাপের রাজ্য থেকে প্রভূর ছায়াতলে ফিরে আসে।আবার যখন মানুষ পাপের দিক থেকে সীমালঙ্ঘন করে ফেলে তখন তাকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে এই মহামারীর আবির্ভাব হয়।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মাঝে মাঝে তার বান্দাদের ভয়, মুসিবত ও বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। সুতরাং এই সময়ে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার দ্বারা। আর তুমি ধৈর্য্য শীলদের সুসংবাদ দাও” ~ (সূরা বাকারা-১৫৫)।

হাদীস শরীফে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “যখন কোন সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যভিচার ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পরে তখন সেখানে মহামারী দেখা দেয়। ~(ইবনে মাজাহ)।

মহান আল্লাহ মানুষের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে দিয়েছে আল কোরআন। কোরআনের বিধান মেনে চলা প্রত্যেক মানুষের জন্য আবশ্যক। এর ব্যত্যয় ঘটলে আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় নেমে আসে শাস্তি যার ফল অনেক নিরপরাধ মানুষকেও ভোগ করতে হয়।

তাই আসুন, মহামারীর এই সময় টাতে সারাবিশ্বের সামনে ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরি। অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে ভালোবাসা দিয়ে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলতে পারি। বিপদের এই সময়টিতে আমরা সবাই দুঃস্থ ও দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াই এবং পাপের পথ থেকে প্রভুর দিকে ফিরে আসি।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

অফুরন্ত অবসর: শিক্ষার্থীদের করণীয়

মাহমুদুল হাসান


পুরো পৃথিবী আজ একটি ভয়াবহ দুর্যোগের সামনে দাঁড়িয়ে। মানবজাতি আজ মৃত্যুভয়ে যার যার ঘরে স্বেচ্ছায় বন্দী জীবনযাপন করছে।পুরোপৃথিবীর অর্থনীতির চাঁকায় আজ যেন মরচে ধরে গেছে।সকল অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো আজ ভুতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

অফুরন্ত এক অবসর যেন শেষ হবার কোন লক্ষণ নেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলা যায়ঃ- “সামনে যতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি চলে যায়,ছুটি ধূ ধূ করিতেছে; পরীক্ষা নাই, উমেদরি নাই, চাকরি নাই।”

এই অবকাশের মরুভূমির মধ্যে সবার হৃদয় আজ আতঙ্কগ্রস্ত। এই মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হওয়ার বিকল্প কিছুই নেই। আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।যতটুকু সম্ভব ঘরে বসে কাজ করতে হবে।এই অফুরন্ত অবসরকে নষ্ট না করে বরং সময়টাকে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হিসেবে তৈরি করতে হবে।বিশেষ করে যারা পিএসসি, জেএসসি/জেডিসি, এসএসসি/দাখিল, এইচএসসি/আলিম এবং এডমিশন টেস্ট দিবে তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই লিখাটি। অনেকেই হয়ত অবাক হচ্ছো, আবার অনেকে হয়ত বিরক্ত। তবে হ্যাঁ, কিভাবে এই সময়কে সবচাইতে মূল্যবান করে তোলা যায় তা নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

১. অনেক শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা আছো যারা নর্মালি একাডেমিক পড়াশোনার কারণে ধর্মীয় কাজগুলো নিয়মিত করতে পারোনা অথবা অথবা ধর্মীয় শিক্ষায় ও হয়তো বিঘ্ন ঘটে। সো, আমি পরামর্শ দিবো লকডাউনের এই সময়টাতে আমরা বেশি বেশি নামাজ, তাসবীহ তাহলীল, কোরআন তিলাওয়াত(অর্থ সহ) করবো। যারা কোরআন পড়তে পারোনা তারা এই সুযোগে শিখে নিতে পারো। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী যারা আছো তারাও নিজ নিজ ধর্ম পালনে সময় দিতে পারো।

২. একটা রুটিন তৈরি করে নাওঃ প্রতিদিন তুমি কি কি পড়বে সেটা আগের দিন রাতেই লিস্ট করে ফেলো। (যে বিষয়গুলোতে দুর্বল সেগুলোকে প্রায়োরিটি দিবে) এবং প্রতিটি সাবজেক্টকে সময় অনুযায়ী ভাগ করবে।

৩.অসমাপ্ত পড়ার লিস্ট তৈরি করোঃ একই সাথে আজকে কোন পড়াগুলো তুমি পড়তে পারোনি সেগুলোও প্রতিদিন লিস্ট করে নাও।এতে নিজের মধ্যে খারাপ লাগা জন্ম নেবেনা এবং না পড়তে পারা পড়ার হারও দিন দিন কমে যাবে।

“Let our advance worrying become our advance thinking and planning. ” ~Winston Churchill.

৪. পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করে রেখোঃ যখন তুমি পড়ছো তখন যদি একটু পর পর ফেইসবুক,ইমেইল কিংবা টেক্সট আসার শব্দ তোমার কানে বাজে তাহলে পড়ায় বিঘ্ন ঘটাবে তাই পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করে রেখো।

৫. ফেইসবুকের যথাযথ ব্যবহার করোঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেইসবুক আমাদের অনেক কাজে লাগে।কিন্তু এটাও চরম সত্য যে ফেইসবুকের কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। তাই প্রয়োজন ছাড়া ফেইসবুক থেকে দূরে থাকো।

৬. ভালো ভালো মুভি দেখোঃ অনেকেই হিন্দি সিরিয়াল দেখে সময় নষ্ট করছো।এগুলোতে শিক্ষণীয় কিছুই নেই।আবার অনেকে ফ্রি-ফায়ার,পাবজিতে ডুবে গেছো। এগুলো বাদ দিয়ে ইংরেজি, তুর্কি, ইরাণী বিখ্যাত মুভিগুলো ইংরেজি সাবটাইটেল সহকারে দেখতে পারো।এতে করে ইংরেজিতে কথা বলা শিখতে পারবে পাশাপাশি ভেতর থেকে প্রেশার ও রিলিজ হবে এবং অনেক কিছুই শিখতে পারবে।

৭. প্রেসার নিয়ে কাজ করবেনাঃ যদি একটানা ১২ ঘন্টা পড়াশোনা করে সব শেষ করার পরিকল্পনা করো তাহলে বলবো এটা পরিহার করো। আমার মতে পড়াটাকে ছোট ছোট সময়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নাও।ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পড়ো।এতে বিশ্রাম ও হবে এবং পড়ার প্রতি মনযোগ ও বাড়বে।

৮. লকডাউন পরবর্তী সময়ে খুব দ্রুতই একটার পর একটা পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। তাই এই সময়টাকে ভুলেও নষ্ট করোনা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এডমিশন কেন্দ্রিক পড়াশোনা করো।

৯.আর্টসের শিক্ষার্থীরা বাংলা,ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞানের উপর প্রিপারেশন নাও। মেডিকেলে যারা পরীক্ষা দিবে ভাবছো তারা মেডিকেলের পাশাপাশি বাংলা টাও পড়ে নাও এই সুযোগে। তাহলে মেডিকেলে যদি নাও হয় তবু্ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-ইউনিট তোমাদের জন্য খোলা রয়েছে। অন্যান্য গ্রুপের যারা আছো তারাও নিজেদের লক্ষ্য স্থির করে সে অনুযায়ী এডমিশনের প্রিপারেশন নাও।

১০.তোমাদের মধ্যে অনেকেই আছো যারা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অথবা কারো অনেক সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। কেউ ভালো ছবি আঁকতে পারো, কেউ বা ক্রাফটিং করতে পছন্দ করো সর্বোপরি যে যে বিষয়ে পারদর্শী বা পারদর্শীতা অর্জন করতে চাও তাদের জন্য কিন্তু এই সময়টা বেস্ট সময় নিজেকে কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

তোমরা চাইলেই এই সময়টাকে অর্থবহ করে তুলতে পারো।ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরী করতে পারো। মনে রাখবেঃ- “সময়=জীবন।তাই সময় নষ্ট মানে জীবনের অংশ নষ্ট করা।সময়কে কাজে লাগাও।জীবনও অর্থপূর্ণ হবে।”–এ্যালান লাকেইন।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনা দুর্যোগে মেস-বাসা ভাড়া, বিপাকে কুবি শিক্ষার্থীরা

মুহাম্মদ ইকবাল মুনাওয়ার, কুবি প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই। এমতাবস্থায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিচলিত। সংকটের এই মুহুর্তে শিক্ষার্থীদের মেস ও বাসা ভাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য গলার কাঁটা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, আবাসিক হলে সিট না থাকারর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে, শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করিয়ে বাসা ভাড়া ও নিজের খরচ বহন করে থাকে। লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার ও টিউশন করিয়ে চলা শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া দেওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য। এই মুহূর্তে বাসা ভাড়া শিথিল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লিখালিখি করে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জ্যোতি সাহা বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।আমার বাবা প্রাইভেট ফার্ম এ সামান্য বেতনে চাকরি করে। কিন্তু লকডাউনের কারণে ২ মাস যাবত বেতন পাচ্ছেন না যে কারণে উনার পক্ষে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাসা ভাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাসা ভাড়ার বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমন্বিত জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের তিন-চতুর্থাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। যাদের অধিকাংশেরই টিউশন, কোচিং বা কোন খন্ডলীন চাকরিই মেস ভাড়া, খাবার বিল ও পড়ালেখার ব্যয় নির্বাহের একমাত্র উৎস। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল ভয়াবহ করোনার প্রভাবে সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ হয়েছে তাদের এই একমাত্র পথ। সেই সাথে বন্ধ হয়েছে লক ডাউনে তাদের পরিবারের আয়ও। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ৭ মাসের বাসা ভাড়া প্রদান করা দুরূহ হয়ে পড়বে। যা বাসা ভাড়া মওকুফ করা সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত বলে ইংগিত বহন করে। অতএব মানবিক বিবেচনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।”

আরেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে। আমরা শিক্ষার্থীগণ বিগত ২০ মার্চ থেকে নিজ নিজ এলাকায় বাসায় অবস্থান করছি।এ অবস্থায় ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের আরো প্রায় পাঁচ মাসের মতো নিজ নিজ এলাকায় থাকতে হতে পারে। কিন্তু বাসার মালিকগণ ভাড়া পরিশোধ করতে চাপ দিচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে ওঠে আসা, এবং মফস্বল এলাকা থেকে আসা। শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু শিক্ষার্থী শহরে এসে টিউশনি করে, দোকানে পার্ট টাইম জব করে, কিছু টা নিজের খরচ বহন করে,অনেকে নিজ পরিবারকে ও সাহায্য করা লাগে। দেশের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ইনকাম করার কোন উৎস নেই । শিক্ষার্থীদের দুই মুঠো খাবার খাওয়া যেখানে অনেক কষ্টসাধ্য সেখানে ভাড়া প্রদান অসম্ভব হয়ে উঠে। এমত অবস্থায় উক্ত সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান রাখছি কুমিল্লা জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মেস মালিকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে লকডাউন কালীন বাসা/ মেস ভাড়া মওকুফে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী কামাল বলেন, “মেসের ভাড়ার বিষয়ে খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা সিদ্ধান্ত নিবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাড়িওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ করেছেন যাতে এখন কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেওয়া না হয়। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পরে সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রক্টর বলেন এখন ভাড়ার টাকা না দিয়ে সবকিছু ঠিক হওয়ার পরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাকা দিতে। আর বাড়িওয়ালাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন থেকে নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে। এবং একটা সুরাহা হওয়ার আশ্বাস দেন।”

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একদিনের বেতন দিবেন কুবি কর্মচারীরা

ইকবাল মুনাওয়ার,কুবি প্রতিনিধিঃ করোনাভাইরাস বির্পযয়ের ফলে মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কর্মচারীরা তাদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সোমবার কর্মচারী সমিতির সভাপতি দিপক চন্দ্র মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসু মিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কর্মচারী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানিয়ে এসোসিয়েশনের ফেইসবুক অাইডিতে বলা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণতহবিলে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে কর্মচারী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও কর্মচারীদের সঙ্গে ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে তাঁদের মূল্যবান মত গ্রহণ করা । এই মহামারীতে মানবিক সহায়তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তা প্রদান করা যুক্তিযুক্ত বলে প্রায় সকলেই মনে করেন।

উল্লেখ্য, এই টাকা এপ্রিল মাসের প্রদেয় বেতন থেকে কর্তন করা হবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ড. মাহাদী

ইকবাল মুনাওয়ার, কুবি প্রতিনিধি


বৈশ্বিক মহামারি কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সব কিছুই বাধাগ্রস্ত এবং বিশ্ববাসী অবরুদ্ধ। যার প্রভাবে থেমে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন। এমন পরিস্থিতিতে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. হাসান মোহাম্মদ মাহাদী। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী টিউশন করিয়ে পরিবার সহ নিজের খরচ বহন করত কিন্তু বর্তমান লকডাউনের কারণে উপার্জন পথ থেমে গিয়েছে তাদের পরিচয় গোপন রেখে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন এবং এর আগে সাহায্যও করেছেন।

ড. হাসান মোহাম্মদ মাহাদী দ্য ক্যাম্পাস টুডে কে জানান, “বিপদে মানুষের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী হাত বাড়ালেই তবে আমরা আসল মানুষ হয়ে উঠি। সে হাত কখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের হাত। কখনো কলম সৈনিক হয় আমাদের হাত। আবার কখনো সামান্য অর্থ বিলিয়ে দেয় মানুষের হাত।

আমার কাছে একবেলার বাড়তি খাবার থাকা অবস্থায় অন্য কেউ না খেয়ে থাকলে আমার কষ্ট হয়। অপরাধবোধও কাজ করে। তাই সবসময় চেষ্টা করি বাড়তি৩ উপার্জন মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে। আমার কাছে জীবন সার্থক হওয়াটা সফলতার চেয়ে বেশি জরুরী। আর এই সার্থক জীবন বিপদে মানুষের জন্য হাত বাড়িয়ে করা যায়।”

নিরাপত্তাহীনতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা, প্রশাসন নিশ্চুপ!

ইকবাল মুনাওয়ার, কুবি প্রতিনিধি


কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন নিরপত্তা ও সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের দাবি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।

আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে র‌্যালী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় “প্রশাসন চুপ কেন ? ধিক্কার ধিক্কার”, “ছিনতাই মুক্ত ক্যাম্পাস চাই”, “ক্যাম্পাসের প্রাচীর নেই কেন? ধিক্কার ধিক্কার”, ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড নিয়ে দাড়াতে দেখা যায়। পরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর বিভিন্ন দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দেন।

স্মারকলিপিতে আনিত শিক্ষার্থীদের দাবীগুলো হল, হয়রানি ঘটনার প্রতিকার, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন মাঠে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ, বিভিন্ন স্থানে সিকিউরিটি ক্যামেরা স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা দায়ের এবং পুলিশি অভিজান পরিচালনা করা।

এসময় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আজ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাই আন্দোলনে দাঁড়িয়েছি। প্রাশাসনের উচিত আমাদের বোন হয়রানির দ্রুত বিচার করা। নিরাপত্তার জন্য সীমান প্রাচীর তৈরী করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্বববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবী গুলো আমরা জেনেছি। তাদের দাবী যৌক্তিক। তবে সীমানা প্রাচীর এবং ক্যামেরা স্থাপনের মত বড় বাজেটের কাজ গুলো একদিনে সম্ভব নয়। বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষে করা হবে। আমরা নিরাপত্তা জোরদারে নতুন করে প্রহরী নিয়োগ দিব। আর ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রনে শক্ত অবস্থান বজায় রাখব।”

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মোঃ আবু তাহের জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যান্তরে এমন ঘটনা মেনে নেয়ার মত নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছি। যেহেতু সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ব্যায়বহুল। তাই জরুরি ভিত্তিতে আমরা এখন কাঁটা তারের ব্যারিকেডের ব্যাবস্থা করব। আর সিকিউরিটি ক্যামেরা স্থাপনে কাজ চলছে। আমরা এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করব। মামলার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা হয়েছে। তারা মামলা যাবতীয় কাজ পরিচালনায় আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।”

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১২’ই মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মাঠে অর্থনীতি বিভাগের এক ছাত্রীকে বহিরাগত বখাটে কর্তৃক হেনস্তা হলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে ক্ষোভ বিরাজ করে।

কুবিতে এবার প্রশাসনিক ভবনে তালা দিলো সাংবাদিকতা বিভাগ

ইকবাল মুনাওয়ার, কুবি প্রতিনিধি


প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ক্লাসরুমের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্লাসরুম বাড়ানোসহ ৫ দফা আন্দোলনে করে ব্যাবসায় অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার (০২ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ক্লাসরুমের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে অবস্থান নেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করার কারণে প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনে প্রবেশ করতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

এ সময় ক্লাসরুম সংকটের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে প্রতীকী ক্লাস নেন বিভাগটির আসমা ইসলাম নামে একজন শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও সেই সময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা।

প্রতীকী ক্লাস সম্পর্কে আসমা বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের ক্লাসরুম সংকট, এর প্রতিবাদে এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই প্রতীকী ক্লাস নিয়েছি। এছাড়া তিনি জানান, ক্লাসরুম না দেয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

এ সময় অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১টি ক্লাসরুম নিয়ে চলছে সাংবাদিকতা বিভাগ। বর্তমানে ৫ টি ব্যাচ থাকলেও ক্লাসরুম বাড়ানো হয়নি। গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে কয়েকটি রুম বরাদ্দ দিলে ওই অনুষদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সেটি ফিরিয়ে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত। তাছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে শিক্ষা-কার্যক্রম চলতে পারে না।

বিভাগটির আন্দোলনরত ছাত্রআরাফাত হোসেন জানান, ‘দীর্ঘ চার বছর আমরা একটি কক্ষে ক্লাস ও পরীক্ষা দিচ্ছি। ল্যাব না থাকায় আমরা ব্যবহারিক কাজগুলো হাতে কলমে শেখার সুযোগ পাচ্ছিনা।,’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।