“গুলশান আরা সিটি” নাকি জগন্নাথের “তিব্বত হল”?

“গুলশান আরা সিটি” নাকি জগন্নাথের “তিব্বত হল”?

জবি প্রতিনিধি

অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পরে ২০০৫ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে রূপান্তরিত হয় বাংলাদেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার ১৫ বছর পর ২০ অক্টোবর ২০২০ উদ্বোধন হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও একমাত্র হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল।

আসলেই কি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ ও অনাবাসিক ছিলো? নাহ্ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর কোন হল না থাকলেও তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ এর প্রায় ১২ টির মতো হল ছিলো।
তার মধ্যে রাজধানীর পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে পাটুয়াটুলীর ওয়াইজঘাট এলাকার ৮ ও ৯ নম্বর জিএল পার্থ লেনে ৮ দশমিক ৮৮৯ কাঠা জায়গায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) ‘তিব্বত হল’।

ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অর্পিত সম্পত্তি শাখার (স্মারক জেপ্রঢা/অর্পিত/১১৮৩) তথ্য অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখলকৃত ১২টি হলের মধ্যে ‘তিব্বত হল’ একটি।হলটি বর্তমানে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দখলে।
২০০১ সালে হাজী সেলিম হলটির অবকাঠামো পরিবর্তন করে তার স্ত্রীর নামে ‘গুলশান আরা সিটি মার্কেট’ নামক বহুতল শপিংমল তৈরি করেন।

হলটি উদ্ধারে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় আন্দোলনে সরকারের উচ্চমহলের আশ্বাসের পরেও আজও বেখলে। ২০০৯ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ দাবি জানায়, ‘প্রায় ১৪ হাজার বর্গফুটের যে খালি জায়গাটি (তিব্বত হল) অবৈধ দখলদার কর্তৃক ব্যবহৃত হচ্ছে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদেরকে উচ্ছেদ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা প্রতিষ্ঠা পূর্বক হল নির্মানের উদ্যোগ গ্রহনের অনুরোধ।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে নির্মানের ডামাডোলে জগন্নাথের হলগুলো আজও বেদখলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হলগুলো উদ্ধার কার্যক্রমের কোন উদ্যোগ নেই।
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) বেদখলকৃত হলসমূহে ১৯৮৫ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বসবাস করে আসছিলেন। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলায় স্থানীয়দের সঙ্গে শহীদ আব্দুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর তিনটি বাদে বাকি হলগুলো বন্ধ করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে পাটুয়াটুলীর ওয়াইজঘাট ৮ ও ৯ নম্বর জিএল পার্থ লেইনের ‘তিব্বত হল’ একটি। শিক্ষার্থীরা নব্বইয়ের দশকে একবার হলটি ফেরত নিতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা ওই ভবনের দোতলায় আগুন দিলে তখনকার অধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনেন।

পার্থ লেইনের বিভিন্ন স্থানে ২০১১ সাল পর্যন্ত ‘তিব্বত হল’ লেখা সাইনবোর্ড দেখা গেলেও শিক্ষার্থীরা আর সেখানে ফিরতে পারেননি।

সর্বশেষ ২০১৪ সালে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা হলটি ‘ঘেরাওয়ে’ গেলে হাজী সেলিমের সমর্থকরা হামলা করে এবং পুলিশ লাঠিপেটা ও গুলি করে। ঐদিন ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন গুলিবিদ্ধসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্ধার আন্দোলনে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *