জনগণের অর্থের মূল্য কোথায়?

জনগণের অর্থের মূল্য কোথায়?

ইমতিয়াজ হাসান রিফাতঃ একটি দেশের উন্নয়নে অর্থের যোগানে সরকার সবচেয়ে বেশী নির্ভর করে দেশের জনগণের অর্থের ওপর। আর সেই অর্থ সরকার জনগণের কাছ থেকে কর বা ট্যাক্সের মাধ্যমে তোলে থাকে। কিন্তু, আমাদের দেশে বর্তমানে সরকার সেই জনগণের অর্থ অবাধে খরচ করছে।উন্নয়নের চেয়ে খরচের হার অধিক।

একটি প্রকল্পে যে পরিমাণ বাজেট থাকে তা দিয়ে আরও কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব।পরিকল্পনার অভাব আর গাফিলতির জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নেই খরচ করছে জনগণের কোটি কোটি টাকা। যাকে বলা চলে লস প্রকল্প। আর এই লস প্রকল্পের জন্য জনগণের অর্থের মূল্য শূন্য।পরিশেষে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও কোন নাম নেই জনগণের।

যদি আমরা এই কোটি কোটি টাকা খরচের উদাহরণস্বরূপ পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদের ওপর নির্মিত সেতু প্রকল্পের দিকে তাকায় তাহলে দেখতে পারি। প্রথমে সেখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। যার জন্য ব্যয় করা হয় ১২০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর ( এলজিইডি) হাতে ছিল।সেই প্রকল্পটি এলজিইডি’র ভুলের জন্য ভারী যানবাহন চলাচল অযোগ্য প্রমাণিত হয় ।

আবার সেখানেই আরেকটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়। যার জন্য বাজেট ৭৩৫ কোটি টাকা। (সূত্র: প্রথম আলো ২৬ ফেব্রুয়ারি)। এলজিইডি’র ভুলের জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি ৭৩৫ কোটি টাকা। যার সবটাই জনগণের।

এটাতো শুরু শতকোটি টাকার বাজেট। এবার হাজার কোটি টাকার বাজেটের দিকে নজর দেওয়া যাক। পদ্মা সেতু হল আমাদের দেশের অর্থায়নে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই সেতু নিয়ে সরকারের সাহসিকতা অস্বীকার করার মত না। কিন্তু সেখানেও ত্রুটি। পদ্মা সেতুর রেললাইনের প্রস্থ নিয়ে সমস্যা। আর সেই ত্রুটির ফলে লস হচ্ছে জনগণের হাজার কোটি টাকা। জনগণের টাকা বলার কারণ একটায় তা হল এই পদ্মা সেতু দেশের অর্থায়নে হচ্ছে। আর গণতান্ত্রিক দেশের অর্থ মানে জনগণের অর্থ।

এবার দেখা যাক কাজে মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজেট বৃদ্ধির চিত্র। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। যা বাস্তবায়নে চার বছর সময় লাগবে বলে সময়সীমা ঠিক করা হয়। বাজেট ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরবর্তীতে দুই দফায় সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বাস্তবায়ন করার সময় দেওয়া হয়। সময়ের সাথে সাথে বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায়।

এখন জনগণের কথা হল। আপনার অপরিকল্পিত প্রকল্পে এই যে কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন তা আসে কোথা থেকে ? কাজে বিলম্ব করে বাজেট বৃদ্ধি করছেন এই টাকা আসে কোথা থেকে ? দেশের উন্নয়নে যদি জনগণের টাকা ব্যয় করা হয়। তাহলে জনগণের টাকার মূল্য কোথায় ?

এখন কথা উঠতে পারে যে এই অর্থের অবাধ ব্যয় ও কাজে বিলম্ব করে বাজেট বৃদ্ধির পেছনে কি তাহলে সরকারের হাত রয়েছে ? প্রতিত্তোরে যদি সরকার বলে ‘নেই’। তাহলে বলা যায়, সরকারের হাত যদি না থাকে তাহলে তাদের তদারকির অভাব ও লোকবল এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে যে দুর্নীতি হচ্ছে তা প্রতিহত করতে পারছে না সরকার।
কারণ, সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে তদারকি ও দুর্নীতি প্রতিহত করার মত হাত আছে।

তাহলে সরকারের উচিত এই প্রকল্পে সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত টাকার মূল্য দেওয়া।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *