ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধুর পরিবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধুর পরিবার

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একশ’বছরে পা দিয়েছে। শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উদযাপন করবে ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

এ বছর মুজিববর্ষ উপলক্ষে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিচ অ্যান্ড লিবার্টি’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

যেসব বরেণ্য ব্যক্তির সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের স্থপতি রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ বিএ ডিগ্রি গ্রহণ করে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন।

তিনি সে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। সে সময় আইন বিভাগের হেড অব দি ডিপার্টমেন্ট ছিলেন অধ্যাপক এম ইউ সিদ্দিক। ভর্তির সময় তিনি তাকে নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার রোল নম্বর ছিল-১৬৬। আইনের ছাত্র শেখ মুজিব তখন এসএম হলের সংযুক্ত ছাত্র হলেও তিনি থাকতেন মোগলটুলিতে। একটি সাইকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন।

বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আত্মপ্রকাশ ঘটে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে। ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কতগুলো আন্দোলন হয়েছে প্রত্যেক আন্দোলনের পেছনে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে ছিলেন। তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিটি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।

১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দান এবং ভীষণভাবে তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ২৬ মার্চ (১৯৪৯) বিশ্ববিদ্যালয় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তার আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ফলে তার উচ্চ শিক্ষার পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট যেদিন তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমনের কথা ছিল সেদিন তিনি সপরিবারে নিহত এক সামরিক বিদ্রোহে।

কেবল বঙ্গবন্ধুই নন, তার পরিবারের অনেক সদস্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথা এই ক্যাম্পাসের সরাসরি শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সর্বজ্যেষ্ঠ সন্তান । তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৭-৬৮ সেশনে বিএ (সম্মান) শ্রেণিতে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।

প্রধানমন্ত্রীর স্বামী প্রয়াত বৈজ্ঞানিক ড. ওয়াজেদ মিয়া তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতী ছাত্র। অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানার স্বামী। অধ্যাপক ড. শফিক স্যার আমার সরাসরি শিক্ষকও। তিনি অত্যন্ত অমায়িক ব্যক্তিত্বের মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি সেবা দিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তাকে পরিচর্যা করেছেন।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের শিক্ষার্থী। তিনি আড্ডা দেওয়া, রাজনীতি, বিভাগের উন্নয়ন, বিভাগের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ আয়োজন, বিভাগের জন্য একটি সমৃদ্ধ মিউজিয়াম গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলা ও কালচারাল অনুষ্ঠান সংগঠিত করা সব জায়গাতেই শেখ কামালের পদচারণা, অংশগ্রহণ কিংবা নেতৃত্বদান করতে পছন্দ করতেন।

বঙ্গবন্ধুর বড় পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী, এক অনন্য উজ্জ্বল অ্যাথলেট। সুলতানা কামালের বাবা জনাব দবির উদ্দিন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী (২০১৪) উপলক্ষে প্রকাশিত ‘আলোকের এই ঝর্ণা ধারায়’ শীর্ষক একটি প্রকাশনায় এই বিদ্যালয়ের এক সময়ের শিক্ষক আফরোজা বেগম একটি লেখায় লিখেছেন, ”চতুর্থ শ্রেণিতে পাঠরত ছোট্ট একটি ছেলে। মিষ্টি চেহারা, নম্র-ভদ্র-অমায়িক। হাঁটতো নিচের দিকে তাকিয়ে। সামনে কোনো শিক্ষক পড়লে সামান্য উঁচু করে হাত তুলে সালাম দিত লজ্জামিশ্রিত হাসি হেসে।”’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের যে স্মৃতিগুলো জড়িয়ে আছে তা আজও অম্লান। এসব স্মৃতি আজ কেবল ইতিহাসেরই অংশ। আমরা জানি, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসু আপার রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অগাধ ভালবাসা।

আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জম্ম বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে সেই স্মৃতিগুলো ধারন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আর্ন্তজাতিক মানে পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করবেন, যোগ্য প্রশাসকদের নিয়োগ প্রদান করবেন ও শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যার-সমাধানের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে নিবেন।

লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক, ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণায় প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশীপ প্রাপ্ত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *