তালায় শিশুসহ মা সুরাইয়া ভাসুর, দেবরের নির্যাতনে বাড়ি ছাড়া

তালায় শিশুসহ মা সুরাইয়া ভাসুর, দেবরের নির্যাতনে বাড়ি ছাড়া

মোঃ ইকবাল হোসেন


সাতক্ষীরা তালা উপজেলায় গৃহবধূ সুরাইয়া আক্তার রেখা (২৩) সহ ২ বছরের শিশু সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে অস্ত্র, নাশকতা মামলার আসামি, মফিজুল মোড়ল (৪০) সহ শাশুড়ী, দেবর ও ননদ। এতে বাড়ি ছাড়া অসুস্থ সুরাইয়া সন্তানকে দিশেহারা হয়ে পড়ছে।

রবিবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৯টায় নিজ বাড়িতে অসুস্থ প্রতিবন্ধী স্বামীকে সেবা করছিলেন সুরাইয়া আক্তার রেখা। হঠাৎ আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ভাসুর মফিজুল মোড়ল (৪০), নাজমুল মোড়ল (২৮) সহ তাদের স্ত্রী, ননদ তাছলিমা বেগম (২৫) উভয়ের পিতা- মৃত আবুল হাসান মোড়ল এবং শ্বাশুড়ি লাঠিসোটা, দেশীয় অস্ত্র দা, কুড়াল নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় সুরাইয়ার ওপর।

এতে দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়ে সুরাইয়া। মারপিঠের এক পর্যায়ে পাড়া-প্রতিবেশির সহায়তায় শিশু সন্তানকে নিয়ে দৌড়ে বাড়ি ছাড়েন তিনি। বাড়িতে ফিরলে জীবননাশের হুমকি দেয় ওই হামলাকারী সন্ত্রাসীরা। নির্যাতিত অসুস্থ সুরাইয়া সন্তানকে নিয়ে দারিদ্র্য দিনমজুর পিতার বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে তালা উপজেলার মাগুরার দুলন্ডা গ্রামে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ তালার দুলন্ডা গ্রামের মৃত আবুল হাসান মোড়ালের মানসিক ভারসাম্যহীন শাহিনুল মোড়ালের (৩১) সাথে পাশ্ববর্তী আঠুলিয়ার দোহরা গ্রামের হাশেম আলী মোড়লের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার রেখার পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। কিন্তু বিয়ের ৩ মাস পরে জমিজমা থেকে বঞ্চিত করতে সুরাইয়া এবং শাহিনুলকে অকথ্য নির্যাতন চালাতে থাকে মফিজুল বাহিনী। এতে অনত্র বাড়িতে বসবাস করলেও সেখানে এসে মারপিট সহ জীবন নাশের হুমকি দেয় তারা। পরিস্থিতি ভয়াবহরূপ নিলে আজ সকালে বাড়ি ছাড়েন সুরাইয়া।

সুরাইয়া আক্তার রেখা কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন, “আমাকে যথেচ্ছা মারপিট করে আমার ভাসুর, দেবর, তাদের স্ত্রী সহ ননদ ও শ্বাশুড়ি। এর আগে কয়েকবার আমাকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। আজও লাঠিসোঁটা, দা, কুড়াল নিয়ে আমার ওপরে ঝাপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করি এবং হুমকি দিয়েছে আমি বাড়ি ফিরলে আমাকে মেরে ফেলবে।”

সুরাইয়া আরো জানান, “জমিজমা থেকে বঞ্চিত হয়ে, না খেয়ে, না পরে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে দারিদ্র্যতার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। কিন্তু শিশু সন্তানকেও আগুনে পুড়িয়ে সারা শরীরে দাগ করে দিয়েছে সুরাইয়া ননদ, শ্বাশুড়ী। প্রতিবাদ করতে গেলে আমার ওপরে ঝাপিয়ে পড়ে তারা। মানসিক অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যখন-তখন তারা আমাকে মেরে ফেলতে পারে।”

এবিষয়ে অভিযুক্ত মফিজুল মোড়লের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মারাত্মক রাগান্বিত হয়ে সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। পরে বক্তব্য না দিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে বলে ফোন কেটে দেন। এতে মফিজুল মোড়লের কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। পরে জানা গেছে, অস্ত্র ও রাষ্টদ্রোহী নাশকতা মামলায় ২বার জেলও খেটেছেন মফিজুল এবং এলাকায় তার চলাফেরা অনেকটা মাফিয়া প্রকৃতির।

উল্লেখ্য, এর আগে কয়েকবার মারপিট সহ হত্যার চেষ্টা করলে সুরাইয়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ প্রশাসনের আশ্রয় নিলে মফিজুল মোড়ল তার ক্ষমতার জোরে সবকিছুকে ধামাচাপা দেন। অসহায় অসুস্থ সুরাইয়া সাংসারিক ও ব্যক্তি জীবনে নিরাপত্তার জন্য সরকার ও প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *