ধর্মীয় অনুশাসন, শিক্ষাঙ্গন ও বাস্তব জীবন

ধর্মীয় অনুশাসন, শিক্ষাঙ্গন ও বাস্তব জীবন

ফাতেমা সুলতানাঃ ছোটবেলায় আমরা যখন আমাদের বাচ্চাকে ধর্ম শিক্ষা দিতে যায় (সেটা নৈতিকতার শিক্ষা হোক, নামাজের শিক্ষা হোক, বা কোরআনের শিক্ষা হোক) ঠিক তখনই আমাদের মাথায় আসে- আরে! ও’র তো সামনে পরীক্ষা! এই তো সামনে ‘সমাপনী’ না হয় ‘জেএসসি’ নতুবা ‘এস এস সি’!

এভাবে চিন্তা করে আমরা অনেক দেরী করে ফেলি। আমাদের যেন আর সময় হয়ে ওঠে না; পাছে আমাদের বাচ্চারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় পিছিয়ে পড়ে! আর যদি হোম টিউটর এবং গানের টিচার এর পাশাপাশি ধর্মের টিচার ও রাখা হয়, সেটাও কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যই রাখা হয়-এই ভেবে যে আমার বাচ্চাটা যাতে হোম টিউটর এর গণনায় পিছিয়ে না পড়ে। ওখানেই আমাদের বাচ্চারা শিখে যায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

আমার প্রশ্ন হলো, ছেলে মেয়েরা ঘর থেকে এমন উপলব্ধি নিয়ে বিদ্যাপীঠ গিয়ে প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কি-ই বা শিখবে? এই শিক্ষার প্রতিফলন ঘটে তাদের বিদ্যা পিঠেও। জেএসসি অথবা এসএসসি পরীক্ষায় সবগুলা বিষয়ে এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থীও ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয় টির জন্য গোল্ডেন এ প্লাস পায় না এমন নমুনা আমি অনেক দেখেছি।

তারা মনে করে ‘ইসলাম শিক্ষা’ ই তো,পরীক্ষার আগের দিন পড়ে নিব। আর পড়া টাও হয় শুধুমাত্র জিপিএ অর্জনের জন্য। জীবন চলার জন্য ইসলাম কি ধরনের দিক নির্দেশনা দিয়েছে সেটা আর জানা হয় না, অবহেলায় একটি কোণে চাপা পড়ে থাকে।

আর যদি ইউনিভার্সিটি লাইফের কথা বলি ‘আবরার’ ও ‘অনিক সাহা’ এদেরকে আপনারা সবাই জানেন। যে ছাত্ররা আজ বাদে কাল দেশের হাল ধরবে, তারা কেন খুনি হবে! তারা কেন খুন হবে! আর কেনই বা জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গঠনে অন্তরায় হবে?

আমি বলি, একজন শিশু তার পরিবার থেকে যদি ধর্মীয় অনুশাসন, বাধা-নিষেধ, করণীয়, বর্জনীয় সবকিছুর শিক্ষা ভালোমতো নিয়ে তারপর বিদ্যাপীঠে পদার্পণ করে, তবে তার এই বীজ জ্ঞান তার সমগ্র বিদ্যার্জনের পথে সহায়ক হবে। প্রতিযোগিতার আগে, ভালো এবং মন্দের কড়া তার হৃদয়ে নাড়া দিবে।

আজকে আমি শুধু শিক্ষার্থীদের কথা বললাম। সমাজে আরও এক শ্রেণির পিশাচ মানব বিকট আকার ধারণ করেছে যারা কিনা বিশেষভাবে বিদ্বান কিন্তু নিকৃষ্টতম দুর্জন; যার শিকার আমাদের ‘নুসরাত’। তাদের জন্য রয়েছে ভিন্ন মতামত। এই ভিন্নতায় এখন আর আসতে চায় না, তাদের জন্য শুধু শাস্তিই কাম্য।

শুধু এটুকু বলেই শেষ করব যে, আপনার, আমার ধর্ম যেটাই হোক, তা কিন্তু শুধু শান্তি-ই চাই। নিজের ভিতরে এই ধর্মের শিক্ষা ধারণ করুন তাহলে আপনাকে আর খুনি হতে হবে না এবং আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস ও প্রার্থনা করি- খুন ও হতে হবে না।

লেখকঃ প্রভাষক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *