নানা সংকট নিয়ে একযুগ পূর্ণ করলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

নানা সংকট নিয়ে একযুগ পূর্ণ করলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

রবিউল হাসান সাকীব


আজ(১২ অক্টোবর) এক যুগ পূর্ণ করে তেরোতে পদার্পণ করলো রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।
২০০৮ সালের আজকের এই দিনে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম নিয়ে অস্থায়ীভাবে রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের রুমে ১২জন শিক্ষক, দুইজন কর্মচারী ও ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের।পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠার কয়েক মাস পরই ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ বেগম রোকেয়াকে স্মরণীয় করে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর’।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে ৭৫ একর জায়গাজুড়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন পার্কের মোড় এলাকায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন স্বরুপ ৪টি একাডেমিক ভবন, ৩টি আবাসিক হল, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ৪টি ডরমেটরি, উপাচার্যের বাসভবন, প্রশাসনিক ভবন, স্বাধীনতা স্মারক(অসম্পূর্ণ),শহীদ মিনার(অস্থায়ী),আনসারদের আবাসিক বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া ১০ তলাবিশিষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মানাধীন রয়েছে।বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ,বিএনসিসিও।
নতুন ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে এই তরু-পল্লবহীন মরু ক্যাম্পাসকে সবুজায়ণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ।ড. তুহিন ওয়াদুরের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের একান্ত প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আজ সবুজ অরণ্যে রুপ নিয়েছে।সেজেছে বিভিন্ন প্রজাতির ৩৪ হাজার বৃক্ষ দিয়ে।

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে অবহেলিত এই মহীয়সী নারী।প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরোলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই মহীয়সী নারীর নেই প্রতিকৃতি কিংবা ম্যুরাল।সব বিভাগের বাধ্যতামূলক ‘রোকেয়া স্ট্যাডিস’ কোর্স চালু করার ঘোষণা দিলেও নেই এর কোন বাস্তবায়ন।এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. সরিফা সালোয়া ডিনা জানান, রোকেয়া স্ট্যাডিস কোর্স চালু করার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন।খুব অল্প সময়ে এই কোর্স চালু হবে।
এক যুগে উন্নয়নের এতোটা পথ পাড়ি দিলেও উন্নতি হয়নি একাডেমিক কার্যক্রমের।সেশনজট নামক অভিশাপের কবলে শিক্ষার্থীদের হতাশার নেই কোন কমতি।বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আটকে আছে এক-দুই বছরের সেশনজটের কবলে।করোনাকালীন সময়ে এই সেশনজট আরো তীব্র হচ্ছে।শিক্ষার্থীরা এই সেজনশটকে মহামারীর মতোই ভয়াভহ ব্যাপার হিসেবে দেখছেন।তবে সেশনজটের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য বলছেন,এই সেশনজট উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া।

এদিকে,শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, ক্লাসরুম-ল্যাব সংকট, শিক্ষক সংকট,লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইয়ের অভাব,শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকটসহ শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদার অনেকাংশই অপূর্ণ।ক্যাম্পাসকে আরো নান্দনিক করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটকের নকশা চূড়ান্তকরণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা সেজনশটের কবল থেকে বেড়িয়ে জ্ঞানচর্চার তীর্থভূমি হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *