ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।

ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।

অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা ৫ম সপ্তাহের ৯ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর খুঁজেন। তাদের উদ্দেশ্য করে আমাদের এই পোস্টটি করা হয়েছে। সুতরাং, আপনি আপনার অ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্নের উত্তর এখান থেকে নিতে পারেন বা আপনার মত করে পাঠ্যবই থেকেও লিখতে পারেন।

ভূমিকম্প কাকে বলে?

ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ-অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি হওয়া কোন কম্পন যখন আকস্মিকভাবে ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশকে ক্ষণিকের জন্য প্রচন্ড বা মৃদু আন্দোলিত করে তখন তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত 5-700 কিমি গভীরতায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ বার ভূমিকম্প হয়।

ভূমিকম্প কেন হয়? বা ভূমিকম্পের কারণ-

ভূমিকম্প হয় মূলত মাটির নিচের শিলা আচমকা ভেঙে যাওয়ার ফলে। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে— ভূপৃষ্ঠজনিত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হয়।

ভূপৃষ্ঠজনিত

পৃথিবীর ভূ -পৃষ্ঠ অনেকগুলো প্লেট-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো একটি আরেকটির থেকে আলাদা থাকে ফল্ট বা ফাটল দ্বারা। এই প্লেটগুলোর নিচেই থাকে ভূ-অভ্যন্তরের সকল গলিত পদার্থ। কোনও প্রাকৃতিক কারণে এই গলিত পদার্থগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটলে প্লেটগুলোরও কিছুটা স্থানচ্যুতি ঘটে। এ কারণে একটি প্লেটের কোনও অংশ অপর প্লেটের তলায় ঢুকে যায়, যার ফলে ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। এই কম্পনই ভূমিকম্পে রুপ নেয়।

আগ্নেয়গিরিজনিত

কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হবার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

শিলাচ্যুতিজনিত

উচু স্থান কিংবা পাহাড় থেকে বৃহৎ পরিসরে শিলাচ্যুতিজনিত কারণে ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্পের ফলাফল

ভূমিকম্পের ফলে অসংখ্য ফাটলের সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো সমুদ্রতলের অনেক স্থান উপরে ভেসে উঠে। এছাড়া স্থল্ভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়। নদীর গতিপথ পরিবর্তিত বা বন্ধ হয়ে যায়। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে পর্বতগাত্র হতে বৃহৎ বরফখণ্ড হঠাৎ নিচে পতিত হয় এবং পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।

ভূমিকম্পের ধাক্কায় সমুদ্রের পানি তীর থেকে নিচে নেমে যায় এবং পরক্ষণেই ভীষণ গর্জন সহকারে ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে ঢেউয়ের আকারে উপকূলে এসে আছড়ে পড়ে। এই ধরণের জলোচ্ছ্বাসকে সুনামি বলে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভুকম্পনের ফলে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশে ব্যাপক জান মালের ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পের ফলে কখনো উচ্চভূমি সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয়।

আগ্নেয়গিরি / সঞ্চয়জাত কাকে বলে?

ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা এবং তৎসহ শিলাচূর্ণ,ভষ্ম তথা পাইরোক্লাস্ট প্রভৃতি ভূ-পৃষ্টের উপর নির্গত হয়ে নির্গমণ ছিদ্র পথের চারপাশে সঞ্চিত হয়ে যে জ্বালামুখ বিশিষ্ট শঙ্কু আকৃতির পর্বত সৃষ্টি হয়, তাকে আগ্নেয়গিরি বা সঞ্চয়জাত পর্বত বলে ৷

আগ্নেয়গিরি অগ্নৎপাতের কারণ:

১) ভূ-ত্বকের সুড়ঙ্গ দিয়ে ভূঅভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা, ভস্ম,ধাতু। প্রবলবেগে বের হয়ে অনুৎপাত ঘটায়।
২) রাসায়নিক বিয়ায় তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাবে তাপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে অগ্নৎপাতের সৃষ্টি হয়।
৩) আগ্নেয়গিরির লাভা উপরে উঠলে চারপাশে ভূত্বকের দূর্বল অংশে ভেদ করার কারনে অগ্নৎপাতের সৃষ্টি হয়।

৪) ভূপৃষ্ঠের চাপ কমে গেলে শিলাগুলো স্থিতিস্থাপক অবস্থা থেকে তরলে পরিণত হয়।
৫) অনেক সময় ভূ-আন্দোলনের ফলেও অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে ভূ-আন্দোলনের পার্শ্বচাপে ভূত্বকের দুর্বল অংশ ভেদ করে এ উত্তপ্ত তরল লাভা ওপরে উত্থিত হয়।

ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।

অগ্ন্যূৎপাতের ফলাফল: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের অনেক পরিবর্তন হয়। সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে কোনো কোনো স্থানে এর দ্বারা সামান্য সুফলও পাওয়া যায়।

১) কোন কোন সময় আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত পদার্থ চারদিকে সঞ্চিত হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করে। ভারতের দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণমৃত্তিকাময় মালভূমি এরূপ নির্গত লাভা দিয়ে গঠিত।
২) আগ্নেয়গিরির লাভা সঞ্চিত হতে হতে বিস্তৃত এলাকা নিম্ন সমভূমিতে পরিণত হয়। যেমন উত্তর আমেরিকার স্নেক নদীর লাভা সমভূমি।

৩) সমুদ্রের তলদেশেও অনেক আগ্নেয়গিরি আছে। এ থেকে নির্গত লাভা সঞ্চিত হয়ে দ্বীপের সৃষ্টি হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এভাবে সৃষ্ট একটি আগ্নেয় দ্বীপ।
৪) মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে পানি জমে আগ্নেয় হ্রদের সৃষ্টি করে। আলাস্কার মাউন্ট আডাকামা, নিকারাগুয়ার কোসেগায়না এ ধরনের হ্রদ।

আগ্নেয়গিরির কুফল: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম, নগর, কৃষিক্ষেত্র সব ধ্বংস করে।

আগ্নেয়গিরির সুফল: আগ্নেয়গিরির কারণে কেবল মানুষের অপকার নয় উপকারও হয়ে থাকে। এতে ভূমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তোমরা চাইলে এই উত্তরগুলো নিতে পারো বা তোমাদের মত করে লিখতে পারো। ধন্যবাদ।

বিঃদ্রঃ এই কন্টেন্ট শিক্ষামূলক। বিনাঅনুমতিতে যে কেউ ব্যহার করতে পারবেন। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

সংবাদটি শেয়ার করুন
fb-share-icon
Tweet

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *