মেধাবী বনাম শিক্ষিত: রাষ্ট্রের ভাবনা কোথায়?

মেধাবী বনাম শিক্ষিত: রাষ্ট্রের ভাবনা কোথায়?

আশরাফুল আলম আকাশ


ছোটবেলার “Your Aim in Life” ইংরেজি প্যারাগ্রাফ/রচনা পড়ানো হতো। ছোট বেলায় ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার হবো। তাই প্যারাগ্রাফ/রচনায় সেটাই লিখতাম। অনেকে ডাক্তারও লিখতো।

তার কারন, আমরা ছোট বেলায় এসব পেশাজীবীকে অনেক মেধাবী এবং সম্মানের পেশা মনে করতাম। কিন্তুু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে বিসিএস কে মেধার সর্বোচ্চ পর্যায় বলে মনে হলো। যাই হোক আসল কথা হলো যারাই জীবনে কঠোর পরিশ্রম করে সফলতা অর্জন করবে তারাই মেধাবী এবং তারা কর্মজীবন এ তাদের সেরাটাই অর্জন করবে।

স্বাভাবিকভাবেই যারা নিজ মেধাকে সম্মান করে তারা অবশ্যই আইন-কানুন, নীতি নৈতিকতাকে ধারণ করা, লালন করার কথা; কারণ কি পরিবার, কি ধর্ম আর কি রাষ্ট্র সবাই নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে থাকে একটি শিশুর ছোট থেকে বড় হওয়া অবদি।

কথা হলো শিশুটি যখন ছোট থেকে বড় হয় তখন শিশুটি কতটা নীতি নৈতিকতা শিখলো বা নিতে পারলো এটা প্রত্যক্ষ ভাবে তার উপর বেশি নির্ভর করে। আর পরোক্ষভাবে সেটা পরিবার ও রাষ্ট্রের উপরে বর্তায়।

এখন আসল কথায় আসা যাক, সম্প্রতি করোনা পরিস্তিতিতে স্বাস্থ্যবিভাগের সাথে নিয়জিত কিছু চিকিৎসক বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অালোচনার বিষয়বস্তুুতে পরিণত হয়েছে। কি বিষয়ে সেটা সবাই অবগত। ধরুন এই প্রতিষ্ঠান বা অধিদপ্তরের পরিচালনাকারীরা সবাই বিসিএস উত্তীর্ণ দেশের মেধাবী সন্তান।

কিন্তুু কিছু মুষ্টিমেয় কর্মকর্তার অবিচক্ষণতা এবং অসৎ কর্মপদ্ধতির কারণে শুধু উক্ত পেশার নিয়োজিত ব্যক্তিরাই অপমানিত হয়নি সেই সাথে রাষ্ট্রকেও বহির্বিশ্বের কাছে ছোট করা হয়েছে। ধরুন অসৎ কার্যকলাপের কারণে উক্ত অধিদপ্তরের পরিচালক কে শাস্তি স্বরুপ ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হল। ঠিক কিছুদিনের মধ্যেই তাকে অন্য সেক্টরের আরো বড় দায়িত্বে নিয়োজিত করা হল। তাহলে লাভ টা কি হলো বলুন। এর পিছনে অবশ্যই তাহলে আরো বড় সিন্ডিকেট দায়ী।

আবার সৎ কর্মকর্তা হলেও উক্ত সিন্ডিকেট তার ভাল কাজকে আটকে দিতে সক্ষম। তার প্রমাণ রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে ওএসডি করা যদিও এটা অনলাইন জগতের ভাবনা থেকে পাওয়া। বাস্তবিক অর্থে কেন তাকে ওএসডি করা হলো সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় মন্তব্য করে নি তাই এখানে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের বিচক্ষণতাকে দায়ী করা যাবে না।

এবার দেখা যাক পুলিশ বিভাগ কার্যকলাপ। করোনা পরিস্থতিতে পুলিশ সদস্যরা দেশের প্রথম সারিতে কাজ করছে মানুষের জন্য। অনেক জায়গায় দেখা গেল পুলিশ নিজ অর্থায়নে দরিদ্র এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে ত্রাণ সহযোগিতা করছে। এমন গুণেই তো থাকা দরকার। তবে উল্টো পিঠও অাছে।

একজন ওসি একটি থানার প্রধান তাই তার কার্যকলাপ হতে হবে স্বচ্ছ কিন্তুু কক্সবাজারের বিভিন্ন থানার ওসি দের নিয়ে যে রকম খবর প্রচার হচ্ছে তা শুধু পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর জন্য অসস্তির নয় বরং জাতির জন্যও বেদনাদায়ক।

অর্থাৎ শিক্ষার প্রকৃত মূল্যায়ণ তারা তাদের জীবনে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একবার ভাবুন তারা সবাই কিন্তুু মেধাবী। জাতি তাদের থেকে ভাল কিছু আশা করে কারণ ১ম শ্রেণীর একজন মেধাবীকে সরকার নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েই দায়িত্বে নিয়োজিত করে।

কিন্তুু তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে শুধু সরকার নয় জাতি হিসেবেও সবাই বিব্রত। এমনটাতো হওয়ার কথা ছিল না। একজন মেধাবী কি শুধু তাহলে অর্থের জন্যই মেধাবী হয়, নৈতিকতার জন্য নয়? তাহলে অামরা প্রকৃতপক্ষে যে শিক্ষা গ্রহণ করি তাহলে তার মুল্যই বা কতটুকু? তবে এটা ঠিক প্রতি সেক্টরে সৎ এবং মেধাবী কর্মকর্তা ও কর্মচারী অাছে বলেই এখনো আমরা চলতে পাচ্ছি।

তবে কতিপয় কর্মকর্তার সিন্ডিকেট এতটাই বিষাক্ত যে ভাল কর্মকাণ্ডগুলোও নিচে পড়ে যাচ্ছে। সাধারণ জনগণ অনেক সময় সরকার কে দোষ দিয়ে থাকি এসব অপকর্মের জন্য। এটা ঠিক যে সরকারের কিছু দ্বায়ভার অাছে তবে একবারের জন্য্যও ভেবেছেন কি আমাদের সমাজ বা পরিবারের দ্বায়ভারের কথা?

কারণ আমরা যখন আমাদের সন্তানকে ছোট থেকে বড় করে রাষ্টের কাজে ছেড়ে দেই তখন তাকে আপনি বা আমি কি শিক্ষা দিলাম যে সে তার বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে অপকর্মে যুক্ত হয়। এ দ্বায়ভার কি পরিবার বা সমাজের নয়?

সুতরাং দেশপ্রেম, ধর্মীয়রীতি, পারিবারিক শিক্ষা, রাষ্ট্রীয়শিক্ষা যদি আমরা অর্জনে ব্যর্থ হই তাহেল শুধু মেধাবী হওয়া যাবে কিন্তুু শিক্ষিত নয়।

মনে রাখা জরুরি, শয়তানও কিন্তুু মেধাবী ছিল।

লেখক: মোঃ আশরাফুল আলম আকাশ, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *