রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কমছে ধারাবাহিক মূল্যায়ন নম্বর, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কমছে ধারাবাহিক মূল্যায়ন নম্বর, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

রবিউল হাসান সাকীব, বেরোবিঃ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ধারাবাহিক মূল্যায়ন বা কন্টিনিউয়াস এ্যাসেসমেন্টে (মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট-প্রেজেন্টেশন, ইনকোর্স ও উপস্থিতি) ৫০ নম্বর থেকে কমিয়ে ৩০ নম্বর করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই ৩০ নম্বরের মধ্যে (মিডটার্ম পরীক্ষায় ২৫ নম্বর এবং ক্লাসে উপস্থিতির ভিত্তিতে ৫ নম্বর) রাখার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠে।এতে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে বাস্তবিক প্রয়োগ করতে না পারলে সেটি অপূর্ণাঙ্গ ও অনর্থক হয়ে যাবে।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ এর মত শুধু একমুখী শিক্ষা পদ্ধতির সাথে পার্থক্য থাকবে না বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিস বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ একজন শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা, পুঁথিগত বিদ্যা গলাধঃকরণ নয়। নবীন শিক্ষার্থীদের কথা বলার যে ভীতি, জড়তা তা প্রেজেন্টেশন, ভাইভার মাধ্যমে অনেকাংশে কাটানো সম্ভব।প্রেজেন্টেশন,ভাইভা বাদ দিয়ে কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্ট চিন্তাও করা যায় না।

তিনি আরো বলেন, মিডটার্ম এবং উপস্থিতি নির্ভর কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্ট না করে বরং ভাইভা,প্রেজেন্টেশনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে একটি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তে আসার জন্য কমিটির প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য সাপ্লিমেন্টারী এক্সাম চালু করতে হবে।সাপ্লীমেন্টারী এক্সাম চালু না থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী প্রশাসনিক জটিলটায় ঝড়ে যাচ্ছে।যা একজন শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সাবেক সভাপতি যুগেশ ত্রিপুরা বলেন,কন্টিনিউয়াস মার্কস কমানো কমানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিষয় হলো খাতা ঠিকভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে কিনা তা জানা। এইজন্য দরকার দেশের অন্য কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিয়ে ২য় বার মূল্যায়নের নিয়মটি কঠোরভাবে কার্যকর করা।একমাত্র এটি বাস্তবায়ন করলে শিক্ষার্থীরা কতিপয় শিক্ষকদের দ্বারা খাতা নাম্বারিং এ হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে পারে।একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টি আমলে নেয়ার জন্য বেরোবি প্রশাসনকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন,ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি পুরোপুরি শিক্ষার্থীবান্ধব।কোনো শিক্ষক যদি ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতির ভুল প্রয়োগ করেন, স্বেচ্ছাচারিতা দেখান, এই পদ্ধতিকে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র মনে করেন, তাহলে সেটি তার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং অপরাধ হিসেবেও আমলযোগ্য।কিন্তু ধারাবাহিক মূল্যায়ন বন্ধ করে দেয়া কিংবা কমিয়ে দেয়া অযৌক্তিক। সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে শক্তপক্ত কোনো আইন নেই। মূলত তাকে বিবেকের দায়বদ্ধ করা হয়েছে। এই সুযোগে কেউ বিবেকবান হয়েছেন, কেউ হয়েছেন অবিবেচক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. নূর আলম সিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যানের জন্য প্রশাসন যেন সিদ্ধান্ত নেয় এ বিষয়ে আমি উক্ত কমিটিকে অনুরোধ জানিয়েছি।উক্ত কমিটি বিজ্ঞ ডিনদের নিয়ে গঠিত কাজেই শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমি আশাবাদী।

উল্লেখ্য, গত (১০ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের ২৮তম সভার সুপারিশ ও ১২ (ফেব্রুয়ারি) সিন্ডিকেটের ৭৬তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন (২০২০-২১) শিক্ষাবর্ষ থেকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বা কন্টিনিউয়াস এ্যাসেসমেন্টের ৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৩০ নম্বর করার জন্য ৬ সদস্যা বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *