শশা খেয়ে তিন দিন, অনাহারে জিয়ারুলের পরিবার

শশা খেয়ে তিন দিন, অনাহারে জিয়ারুলের পরিবার

ক্যাম্পাস ট্যুডে ডেস্কঃ

করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে চলছে অঘোষিত লক ডাউন। এই পরিপ্রেক্ষিতে কাজ বন্ধ থাকায় গত তিন অনাহারে এক প্রকার না খেয়ে দিন পার করছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার তাঁতিপাড়া বস্তির দিনমজুর জিয়ারুলের পরিবার। সংসারে স্ত্রী-সন্তানসহ চারজনের এই পরিবার গত তিন দিন থেকে শুধু শশা খেয়ে বেঁচে আছেন।

করাতকল শ্রমিক জিয়ারুল বলেন, “করাতকল বন্ধ হওয়ার পর জমানো টাকা দিয়ে কয়েকদিন চললেও এখন আর চলছে না । ছাত্রাবাসে ঝি এর কাজ করা স্ত্রী আয়না বেগমের কাজও এখন বন্ধ আছে। কোনো সহযোগিতাও মেলেনি।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায় , তাঁতিপাড়া বস্তিতে গত ১৫ বছর ধরে বাস করছেন জিয়ারুল দম্পতি। জিয়ারুল স্থানীয় একটি করাতকলে শ্রমিকের কাজ করে। আর স্ত্রী আয়না বেগম স্থানীয় বিভিন্ন ছাত্রাবাসে রান্নার কাজ করে। তাদের দুই সন্তানের অভাবের কারণে বড় ছেলেকেও ঢাকায় কাজে লাগিয়েছেন। যেখানে কাজের বিনিময়ে ছেলেটির দুই বেলা খাবার ব্যবস্থা হয়েছে। আর ছোট মেয়ে তাদের কাছে থাকে।

করোনার প্রভাবে করাত কল বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে জিয়ারুল ও তার পরিবার । অন্যদিকে ছাত্রাবাস বন্ধ হওয়ায় আয়না বেগমের রান্নার কাজও এখন বন্ধ রয়েছে। কাজ বন্ধ হওয়ায় ছেলেটিও বাড়িতে বেকার। সবমিলে কাজকর্ম হারিয়ে চারজনের পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। জমানো টাকা ও ধারকর্জ করে কয়েকদিন চললেও চাল-ডাল কেনার টাকা না থাকায় গত তিন দিন থেকে তাদের বাড়িতে চুলা জ্বলেনি। জীবন বাঁচানোর তাগিদে শশা খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

করোনা দুর্যোগে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পায়নি জিয়ারুলের পরিবার । ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সকালে ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে ত্রাণের জন্য বের হয়েছেন আয়না বেগম।
ক্ষুধার্ত আয়না বেগম বলেন, করোনার জন্য ঘরবন্দি হয়ে আছি আমরা। কোনো কাজ নাই। ঘরে যেটুকু চাল ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। হাতেও কোনো টাকা নাই। তাই পরিবার নিয়ে না খেয়েই আছি। ছোট মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। ক্ষুধার জন্য কাঁদে। এখন আমি চাল কই পাব? খাবার কই পাব? গত তিন দিন থেকেই চুলায় আগুন জ্বলেনি। বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের শশা দিয়েছি। এই শশা খেয়ে তিন দিন হলো আছি।

আয়না বেগম আক্ষেপ করে বলেন, সবাই শুধু হাত ধুতে বলে। আমরা হাত ধুয়ে কি করব? পেটে ভাত না থাকলে হাত ধুয়ে কি হবে? করোনায় আমাদের ভয় নাই। আমাদের মরণ হবে ক্ষুধায়। ছেলে মেয়েদের নিয়ে না খেয়ে থাকলেও কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। এখানকার জনপ্রতিনিধিরা আমাদের খোঁজ নেয়নি। আমরা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতাও পাইনি। আপনারা কিছু সাহায্য করেন।

তাঁতিপাড়া বস্তি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি কনিকা খাতুন বলেন, তাঁত পল্লিতে জিয়ারুল হোসেন ও আয়না বেগম দম্পতির মতো অনেক খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ রয়েছে। করোনাভাইরাসের জন্য খেটে খাওয়া এ মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। গত কয়েক দিন ধরে তাদের ঘরে খাবার নাই। রান্না হয় না। এই অসহায়দের পাশে কেউ দাঁড়ায় না।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মহীন, হত-দরিদ্র, দিনমজুর, ভান চালক, খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবার মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি আরো বলেন খোঁজ নেওয়া হয়েছে দ্রুত খাদ্য সহায়তা পৌঁছে যাবে ওই দম্পতির পরিবারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *