শুভ জন্মদিন হাবিবুল বাশার
![শুভ জন্মদিন হাবিবুল বাশার](https://thecampustoday.com/wp-content/uploads/2020/08/JPEG_20200817_154124_3255632589935990430.jpg)
বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশ জাতীয় দলের এক সময়কার উজ্জ্বল নক্ষত্র হাবিবুল বাশার , পুরো নাম কাজী হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশের ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। তবে বর্তমান সময়েও তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথেই আছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। মাশরাফি যদি হন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেরা অধিনায়ক, তাহলে সেই সেরা অধিনায়ক হওয়ার দিশারী এই হাবিবুল বাশার। একজন মাশরাফির আগে যিনি ছিলেন লাল – সবুজদের কান্ডারী, তিনি এই হাবিবুল বাশার সুমন ।
আজ তার জন্মদিন, ১৯৭২ সালের ঠিক এই দিনে কুষ্টিয়ার নাগকান্দায় তার জন্ম এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা।
১৯৯৫ সালে শারজাহতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে হাবিবুল বাশারের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। তবে ওয়ানডেতে তার কোনো শতক নেই, সর্বোচ্চ রান ৭৮ প্রতিপক্ষ ছিলো জিম্বাবুয়ে।
অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে, তবে টেস্টে তার সর্বোচ্চ রান ১১৩ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্রিকেটীয় জীবনে ডান হাতি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়ে ছিলেন একজন অফ ব্রেক বোলার। বাংলাদেশ জাতীয় দল ছাড়াও তিনি জাতীয় ক্রিকেট লীগে খুলনা জেলা এবং ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিমানের হয়ে খেলেছেন।
হাবিবুল বাশার সুমন সেই ক্রিকেটার যার অধীনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথম কোনো টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করে। আবার অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তানের মত বাঘা বাঘা দল গুলোর বিপক্ষে প্রথম জয়ের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের কাপ্তান ছিলেন এই ডান- হাতি ব্যাটসম্যান।
একজন ক্রিকেট প্রেমীকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় সাকিব, তামিম, মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ পূর্ববর্তী অর্থাৎ পঞ্চ পান্ডব পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান কে? যিনি একাধারে টেস্ট আর ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই বেশ কয়েক বছর খুব ভাল খেলেছেন?
পাড়ার যেই ছেলেটি ক্রিকেট বুঝে সেই ছেলে থেকে শুরু করে সবাই অবলীলায় বলবে – হাবিবুল বাশার সুমন।
এখন যেমন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম আর সাকিব আল হাসান পাল্লা দিয়ে টেস্ট আর ওয়ানডেতে রান করছেন, লাল বল ছেড়ে মাহমুদউল্লাহও এখন সাদা বল বা শর্ট ভার্সনে সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছেন।
তেমনি একটা সময় ছিলো শুধুই কাপ্তান হাবিবুল বাশারের, তখন হাবিবুল বাশার একাই ছিলেন বাংলাদেশ দলের কান্ডারি। হোক তা টেস্ট কিংবা ওয়ানডে- দুই ফরম্যাটেই হাবিবুল বাশারের ব্যাটই ছিল দলের চালিকাশক্তি। এক প্রান্তে তিনিই রান করতেন, দলকে এগিয়ে রাখতেন, নিয়ে যেতেন জয়ের দ্বারপ্রান্তে । রোকন, বিদ্যুৎ, অপি, আশরাফুল, নাফিস, আফতাব আর অলক কাপালিরা মাঝে-মধ্যে জ্বলে উঠে আবার নিভেও যেতেন , তখন দলের হাল ধরতেন এই সুমন । বাশারের ব্যাটই প্রদীপ হয়ে জ্বলতো, তার রানই ছিল আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু।
ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সবকিছুই তার পক্ষে, ক্রিকবাজ বা ক্রিনইনফোর পরিসংখ্যান দয়ে যদিও বাশারদের মূল্যায়ন করা ঠিক না তবুও মাঝে মাঝে টানতে হয়।
এখনো টেস্ট এবং ওয়ানডেতে বাংলাদেশের টপ স্কোরারদের তালিকায় আছে তার নাম । ৩ টেস্ট সেঞ্চুরি আর ২৪ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩০২৬ রান করা হাবিবুল বাশার এখনো টেস্টে রান তোলায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চার নম্বরে। ১১১ ওয়ানডেতে ১৪ বার পঞ্চাশ বা তার ওপরে পা রেখে ২১৬৮ রান নিয়ে অবস্থান করছেন আট নম্বরে।
একটা অপ্রিয় সত্যি কথা দিয়ে শেষ করছি, দেশের ক্রিকেটের সব সময়ের এই অন্যতম সেরা ও সফল উইলোবাজ ক্রিকেটার জীবনে কখনো আইসিসি ট্রফি খেলেননি। ক্যারিয়ার শুরুর পর যে দুটি (১৯৯৪ ও ১৯৯৭) আইসিসি ট্রফি অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার একটিতেও মূল দলে জায়গা পাননি তিনি। শুধু এটাই শেষ নয়, যার অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার মত দুই বিশ্ব শক্তিকে হারিয়ে প্রথম সেরা আট দলে জায়গা করে নিয়েছিল, সেই ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের বাংলাদেশ অধিনায়ক দেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ (১৯৯৯ সালে) দলেই ছিলেন না। তাও তিনি কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের ক্রিকেটের কাছে, বাংলার ক্রিকেটও তার কাছে ঋণী।
তবুও বাংলাদেশ দলকে তিনি যা দিয়েছেন, তার জন্য তিনি বাংলার মানুষের হৃদয়ে থাকবেন আজীবন। আজ তার জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।