সংখ্যালঘু গৃহবধূকে জিম্মি করে ধর্ষণ, মামলা তুলে নিতে স্থানীয় আ. লীগ নেতার চাপ

সংখ্যালঘু গৃহবধূকে জিম্মি করে ধর্ষণ, মামলা তুলে নিতে স্থানীয় আ. লীগ নেতার চাপ

সারাদেশ টুডে


কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় এক সংখ্যালঘু গৃহবধূর ঘরে ঢুকে নিয়মিত ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে তারপর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ধারাবাহিক শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে শরিফুল ইসলাম নামের এক গ্রাম্য ডাক্তারের বিরুদ্ধে।

ঘটনায় ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ মামলা করলে ধর্ষকের পরিবার ও এক আওয়ামী লীগ নেতা মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করছে বলে জানা গেছে। এমতাবস্থায় স্বামী-সন্তানসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর পরিবার।

অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম্য ডাক্তার হিসেবে পরিচিত।
ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তার স্বামী ইটভাটার কাজে চুয়াডাঙ্গায় ছিলেন। ঘটনার দিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে দুই শিশু সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। দুই শিশু সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। গভীর রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যান। ঘরে ফিরে দরজা দিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিছানার কাছে প্রতিবেশি যুবক শরিফুলকে দেখে আঁতকে ওঠেন। নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ধর্ষকের কাছে পরাস্ত হন। তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর ধর্ষক তাকে ধর্ষণের ভিডিও দেখায় এবং হুঁশিয়ার করে যায় এ ঘটনা কাউকে জানালে আর রক্ষা নেই। ইন্টারনেটে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেবে। এ ছাড়া তার স্বামী ও দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করবে। এর পরে ধর্ষক তাকে একটা আলাদা মোবাইল সিম কিনে দেয়। স্বামী ভাটার কাজে বাড়ির বাইরে থাকায় ফোনে কল দিয়ে প্রতি রাতে তার ঘরে আসতে থাকে। তাকে ধারাবাহিকভাবে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে। পরে এ ঘটনা তিনি তার স্বামীর কাছে খুলে বলেন এবং শনিবার খোকসা থানায় শরিফুলকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। এতে অভিযুক্ত শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।

গৃহবধূর স্বামী বলেন , ধর্ষকের পরিবার ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা দাদন ব্যবসায়ী নারায়ণ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সরাসরি ও মুঠোফোনে চাপ দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে দুই শিশুসহ তাকেও হত্যা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অপরদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল মামলার মূল আলামত ধর্ষণের ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা না করে উল্টো ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর মোবাইল ফোনের সিম কার্ড নিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় তিনি পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নারায়ণের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে তিনি বলেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে অভিযোগকারী নারীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি তখনও ওই নারীকে আপোষ করতে বলেননি। এখনও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন না।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জানান, নারায়ণ তার কমিটির সদস্য। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ের সাবেক কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। অভিযোগটি যেহেতু ধর্ষণ পর্যায়ের তাই তিনি সালিশ না করে থানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি- এ ঘটনায় শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে বলেই ফোন কেটে দেন।


সূএঃ সমকাল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *