একজন শিক্ষক ও উদ্যোক্তা সালমার সফলতার গল্প

মিস সালমা আক্তার। পেশায় একজন কলেজ শিক্ষক। জন্মস্থান চাঁদপুর হলেও জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা সবই চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরে বর্তমানে চট্টগ্রামের এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।

উচ্চতর ডিগ্রির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.ফিল করছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সালমা আক্তার খুব অল্প সময়ে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি “নাগরদোলা” নামে হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী। এই প্রতিষ্ঠানের মূল সিগনেচার পণ্য হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি।

এছাড়াও হ্যান্ড পেইন্টের কামিজ, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, হিজাব, ইয়োক, গৃহসজ্জার জন্য হ্যান্ড পেইন্ট কুশন কভার, বেডশিট ও ওয়াল পেইন্টিং, সরা পেইন্টিং এবং গহনার মধ্যে সিগনেচার গহনা হ্যান্ডমেইড ক্লে’র তৈরি গহনা, বিভিন্ন মিডিয়ার উপর হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ করা গহনা ও মেটালের গহনা নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর দিনগুলো এবং সফলতার গল্প শুনতে চাই তাঁরই মুখে।

১. আপনার উদ্যোগের যাত্রা শুরু কবে?
সালমা আক্তারঃ আমার উদ্যোগের নাম নাগরদোলা। এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ সালে। উদ্যোগটি শুরু করার জন্য একটি বিশেষ দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। এই বিশেষ দিনটি হলো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের জন্মদিন।

২.উদ্যোগের এই নামকরণের কারণ?
সালমা আক্তারঃ নাগরদোলা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির একটি অংশ। যা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। যেহেতু আমার কাজ দেশীয় পণ্য এবং সংস্কৃতির উপকরণ নিয়ে। তাই নাগরদোলা নামকরণ করা হয়েছে।

৩. কিভাবে এই কাজ করার চিন্তা আসলো?
সালমা আক্তারঃ ছবি আঁকার প্রতি আমার ভালোলাগা ছোটবেলা থেকেই। ২০০৩ সাল থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শেখা শুরু করি। সেই থেকে এখন অব্দি নানা প্রতিকূলতার মাঝেও প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছি। পরিবার চেয়েছিল আমি বিসিএস ক্যাডার হব আর আমার ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার। এস.এস.সি এবং এইচ.এস. সি তে জিপিএ-৫, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ রেজাল্ট করে তাই পরবর্তীতে এম.ফিলে ভর্তি হই। কিন্তু এই ইচ্ছার পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আমার সবসময়ই ছিল।

সেই লক্ষ্যে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করি আমার আর্ট স্কুল (রং তুলি আর্ট স্কুল চট্টগ্রাম) দিয়ে। যেটি বর্তমানে একটি স্বনামধন্য স্কুলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বলা যায় সেই থেকে শুরু। কিন্তু এর সাথে আরেকটি উদ্যোগ শুরু করার ইচ্ছে কাজ করতে থাকে সবসময়। আমার শিল্প জ্ঞান এবং দেশীয় পণ্যের সংমিশ্রণে নতুন আরেকটি উদ্যোগের চিন্তা শুরু করলাম। নিজের কাজের দক্ষতা বাড়াতে তাই ভর্তি হই জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামে। তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে সেখান থেকে এরপর নানান বেসরকারি কোর্সে অংশগ্রহণ করি স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য।

৪.আপনি মূলত কি ধরনের পন্য নিয়ে কাজ করছেন?
সালমা আক্তার’ আমরা মূলত হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করছি। আমাদের মূল সিগনেচার পণ্য হ্যান্ড পেইন্ট এর শাড়ি। এছাড়াও হ্যান্ড পেইন্টের কামিজ, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, হিজাব, ইয়োকসহ আরো কিছু মাধ্যমে কাজ করা হয়। নাগরদোলায় গৃহসজ্জার মধ্যে হ্যান্ড পেইন্ট কুশন কভার, হ্যান্ড পেইন্ট বেডশিট ও ওয়াল পেইন্টিং, সরা পেইন্টিং রয়েছে। আর গহনার মধ্যে আমাদের সিগনেচার গহনা হ্যান্ডমেইড ক্লে’র তৈরি গহনা, বিভিন্ন মিডিয়ার উপর হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ করা গহনা, আছে মেটালের গহনাও।

৫. শুরু থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
সালমা আক্তারঃ হাতের কাজের কদর সবসময়ই থাকে এটা আসলে বলতেই হয়। কিন্তু আমার এই উদ্যোগ শুরু করার আগে আমি আসলে অনেকটা সময় নিয়ে মার্কেট রিসার্চ করি। যার ফলে উদ্যোগের শুরু থেকেই খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। কেননা ভিন্নধর্মী কাজের সংমিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা ছিল আমার।

৬. আপনার উদ্যোগের প্রধান ক্লায়েন্ট কারা?
সালমা আক্তারঃ আমার উদ্যোগের প্রধান ক্লায়েন্ট মূলত নারীরা। বিশেষ করে ২৫-৪৫ বছর বয়সী নারীরাই আমাদের মূল ক্রেতা ।যদিও আমরা চেষ্টা করছি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই হ্যান্ড পেইন্ট এর বিভিন্ন মাধ্যমের উপর কাজের সংমিশ্রণ ঘটাতে।

৭. বর্তমানে কেমন ক্লায়েন্ট পাচ্ছেন ও ব্যবসার অবস্থা কী?
সালমা আক্তারঃ বর্তমানে আমাদের ক্লায়েন্ট এর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। শুরুতে যেখানে শুধু পরিচিত বন্ধুবান্ধব ,আত্মীয়স্বজন কিংবা সহকর্মীগণ ক্রেতা হিসেবে থাকলেও বর্তমানে এর বাহিরে ক্রেতার সংখ্যাই আমাদের বেশি। আর ভালো লাগার বিষয় এটি যে ,আমাদের রিপিট ক্লায়েন্টের সংখ্যা অনেক বেশি।

৮. ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য আপনার কৌশল কী?
সালমা আক্তারঃ ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রাখতে আমরা মূলত পণ্যের এবং কাজের মান ধরে রেখেছি ।যেকোনো পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাকে আমরা পরিষ্কার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করি। এছাড়া ছবির সাথে যাতে কাজের মিল থাকে সেদিকে আমাদের যথেষ্ট নজর রয়েছে । ক্রেতাগণ ঘরে বসেই যাতে হোম ডেলিভারি মাধ্যমে পণ্য পেয়ে যান তাই হোম ডেলিভারি দেয়া হয় ।এছাড়া অন্য ডেলিভারির পর সেটি ঠিকমত বুঝে পেয়েছেন কিনা এ বিষয়টিও আমরা জানার চেষ্টা করি।

৯. আর্থিকভাবে কেমন লাভবান হয়েছেন?
সালমা আক্তারঃ বর্তমানে অফ-সিজনে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আর অন সিজনে ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো সেল হয়। আমাদের হাতের কাজের দরুন আমরা চাইলেও অতিরিক্ত অর্ডার নিতে পারিনা।তবে বড় পরিসরে আমাদের উদ্যোগ পরিচালনার কাজ চলছে। কেননা এই কাজের চাহিদা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১০.শিক্ষকতার পাশাপাশি এসব করে আপনার কি উপকার হচ্ছে?
সালমা আক্তারঃ শিক্ষকতার পাশাপাশি কাজটি করে অবশ্যই আমি আর্থিকভাবে অনেক বড় একটি সাপোর্ট পাচ্ছি। দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। তাই দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে দেশীয় পণ্যের শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিতে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারছি বলে আমি মনে করি। এছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি এবং বর্তমানে কিছু সংখ্যক শিল্পী আমাদের সাথে কাজ করছেন।ভবিষ্যতে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব বলে আশা রাখি ।

১১. এই কাজে পরিবারের মনোভাব কেমন?
সালমা আক্তারঃ আমার এই উদ্যোগের পরিবারের মনোভাব খুবই ইতিবাচক । সবার সাহায্য, সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণাই এগিয়ে যেতে পারছি।

১২. অনলাইনে প্রতারণা এড়াতে আপনার বিশ্বাসযোগ্য অর্জনে কী ভাবছেন?
সালমা আক্তারঃ অনলাইনে যেহেতু ক্রেতা পন্য হাতে ধরে দেখার সুযোগ পান না, আবার ছবি দেখেও ম্যাটরিয়াল সম্পর্কে বুঝতে পারেন না। তাই অনেকেই এ সুযোগে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এক্ষেত্রে আমরা ক্রেতাকে পণ্য, পণ্যের কোয়ালিটি ও ম্যাটেরিয়ালসসহ সকল তথ্য বিস্তারিতভাবে দিয়ে থাকি। ছবি অতিরিক্ত ত্রডিট না করাই ভালো আর। অবশ্যই প্রতারণা এড়াতে পেইজের এক্টিভিটিস পর্যবেক্ষণ করে অর্ডার দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। মূল্যছাড় কিংবা কম মূল্যে পণ্য দিচ্ছে দেখে পণ্য ক্রয় উচিত নয়।

১৩. নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সালমা আক্তারঃ নতুন উদ্যোক্তা যারা হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী বা নতুন শুরু করেছেন তাদের জন্য বলব হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজের কদর বেশি থাকার মূল কারণ এই কাজ অন্য সব কাজ থেকে ভিন্ন। এখানে ক্রেতা তার পছন্দ অনুযায়ী পোশাক বা গহনা বা গৃহসজ্জার কাজ করিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকায় ক্রেতাগণ এই পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী। আর তাই এই কাজ শুরু করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে ছবি আঁকার উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।অনেকেই দেখা যায় ভালো লাগা থেকে এই কাজ শুরু করেন।সেক্ষেত্রে কপি করে আঁকার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে আঁকা সম্পর্কে, রং সম্পর্কে কিংবা কম্পোজিশন সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় কপিও করতে পারে না। নতুন নতুন ডিজাইন আনতে সক্ষম হন না।

এছাড়া ক্রেতার রুচি অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ওনারা প্রথমে কমদামে পণ্য দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে একটা পর্যায়ে গিয়ে কাজ করা ছেড়ে দেন। এতে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন। আবার দেখা যায় আপনি যখন কোনো জ্ঞান ছাড়া, এই কাজে নিয়ে কোনো প্রকার এক্সপেরিমেন্ট না করে, সময় না দিয়ে হুট করে উদ্যোগ নেন এবং সেক্ষেত্রে যখন কাজের মান ভাল হয় না পরবর্তীতে দেখা যায় প্রথমে আপনার যারা ক্রেতা হবেন তারা মানহীন কাজ হাতে পেয়ে হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করবেন।

যা এই কাজটির বাজার নষ্ট করবে। তাই আমি বলবো প্রথমে কাজটি ভালোভাবে শিখুন, সময় দিন, কাজটিকে ভালোবাসুন এরপর শুরু করুন। শুধুমাত্র লাভের উদ্দেশ্যেই নয়। এটিকে একটি শিল্পের রূপান্তর করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করুন।

১৪ অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সালমা আক্তারঃ অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ইতিবাচক। এখানে ক্রেতা বিক্রেতা উভয় লাভবান হয়। একজন বিক্রেতা/উদ্যোক্তার, যার হয়তো একটি শপ ভাড়া নিয়ে কাজ করার সামর্থ্য নেই বা তিনি হয়তো এই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সেক্ষেত্রে অনলাইন বিজনেস শুরু করা তার জন্য অনেক সহজ ।এতে তিনি বিজনেসে/উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সফল না হতে পারলেও খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না।

দোকান ভাড়া ,কর্মচারীর বেতন সহ আনুষঙ্গিক খরচ বহনের বিষয় থাকে না এক্ষেত্রে। আর ক্রেতাগণ ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় বাজেটের মধ্যে পণ্য ক্রয় করতে পারছেন। যেখানে আগে দেখা যেত একটি প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে মার্কেটে মার্কেটে ঘুড়ে বেড়াতে হত।দাম সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে হতো। যা এখন অনেক কমে এসেছে। অনলাইন বিজনেস এর ফলে নারী-পুরুষ উভয়েই স্বাবলম্বী হচ্ছে।

এতে চাকরির বাজারে চাকরি প্রত্যাশীদের চাপ কমছে। কিছুদিন পূর্বেও আমাদের শপিংমল গুলো বিদেশী পণ্যে সয়লাব ছিল। সেখানে এখন দেশীয় পণ্যের বাজার ব্যাপক বিস্তৃত হচ্ছে অনলাইন বিজনেস এর মাধ্যমে। যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

১৫. ভবিষ্যতে এই উদ্যোগকে আরো কতদূর নিয়ে যেতে চান ও আপনার স্বপ্ন বা পরিকল্পনা কী?
সালমা আক্তারঃ আমি মূলত শখের বশে এই উদ্যোগটি শুরু করিনি। দীর্ঘ পরিকল্পনার পর এই উদ্যোগটি শুরু হয়েছে। আমার মূল স্বপ্ন হ্যান্ড পেইন্টের কাজকে একটি শিল্পে রূপান্তরে কাজ করা। হ্যান্ড পেইন্ট এবং হ্যান্ড মেইড ভিন্নধর্মী ও রুচিশীল কাজের বিস্তার ঘটানো। যা আমাদের দেশীয় পণ্যের বাজারকেও সম্প্রসারিত করবে।

কেননা আমরা এই কাজে যে ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করি তা মূলত দেশীও কারিগর ,তাঁতি দ্বারা তৈরি। হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজের বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে। আর তাই দেশের বাইরে হ্যান্ড পেইন্ট এর পোশাক মানেই যাতে বাংলাদেশের নিজস্ব একটি শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা।

রাশেদ পারভেজ
ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক
এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।

মূত্রত্যাগের স্থানে এখন শুভ্রতা ছড়াচ্ছে রাজ্জাকের ফুলের বাগান

মোঃ আরাফাত হোসেন, জিটিসি


উপরে শিক্ষার্থীদের আড্ডা, নিচে মূত্রত্যাগ! এমনটাই ছিল রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রধান গেট সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের রোজকারের দৃশ্যপট।

তিতুমীর কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে থাকা ফুটওভার ব্রিজের নিচে মল-মূত্রের উৎকট গন্ধ। সারাদিন পথচারীরা লাইন বেঁধে মূত্রত্যাগ করে। এ যেন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়াটাই যেখানে মুখ্য হয়ে দাড়িয়েছে।

ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থী কিংবা পথচারীদের ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হয়। মূত্রের দুর্গন্ধে নাক সিটকে প্রতিদিন ক্লাসে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এসব দৃশ্য দৃষ্টিকটু। তবে উদ্যমী রাজ্জাকের কল্যাণে পাল্টেছে দৃশ্যপট। মূত্রে দুর্গন্ধযুক্ত জায়গায় এখন শুভ্রতা ছড়াচ্ছে ফুলের বাগান।

আরও পড়ুনঃ মূত্রত্যাগের স্থান এখন ফুলের বাগান, প্রশংসিত আ. রাজ্জাক

ফুটওভার ব্রিজের নিচে মূত্রত্যাগ বন্ধ করার জন্য তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানা পরিকল্পনা হাতে নিলেও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

তবে ব্যক্তি উদ্যোগে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক শিক্ষার্থী মূত্রত্যাগের স্থানে ফুলের বাগান করেছেন। সন্ধ্যার পরও যাতে কেউ প্রস্রাব করতে না পারে, সেজন্য সেখানে তিনি বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দিয়ে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

আবদুর রাজ্জাক তিতুমীর কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। যৌথ উদ্যোগের অভাব থেকে সাফল্য আসে না। তবে তিতুমীর কলেজের এই শিক্ষার্থী দেখিয়েছেন যে চেষ্টা করলে তিনি একা কাজ করতে পারবেন।

আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘এই শহরটি আমার, এই দেশটি আমার, এটিকে পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমার। পরিষ্কার করা আমার কাছ থেকে শুরু করা যাক। আপনার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে পরিবেশ কোনওভাবেই নষ্ট হচ্ছে না। এখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলে দেবেন না। নির্দিষ্ট জায়গায় ভাল রাখুন। যাতে কারও ক্ষতি না হয়। পথচারীদের রাস্তার পাশে প্রস্রাব করা উচিত নয়। কারণ আপনি রাস্তার পাশে ঠিক মতো হাঁটতে পারবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে এটি করতে পেরে আমি খুব খুশি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে যত্রতত্র প্রস্রাব করা ঠিক নয়। আমি জায়গাটির সৌন্দর্য মানুষকে দেখানোর চেষ্টা করেছি।

ঘটনাস্থলে জানা গেছে যে তিতুমীর কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজটি এখন দেড় শতাধিক ফুল, পাতা এবং অন্যান্য গাছ সমৃদ্ধ। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই আলো এসে গেল। একদিকে সৌন্দর্য বেড়েছে, অন্যদিকে প্রস্রাব বন্ধ হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে গাছের প্রয়োজনীয়তার স্ট্যাটাস সহ গাছ, টব ও ব্যানারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তিনি যতটুকু পারতেন তাই দিয়েছিলেন।

আবদুর রাজ্জাকের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রত্যেকের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে তিতুমীর কলেজের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে।

করোনায় অবিবাহিতা পুরুষদের ঝুঁকি বেশি, বলছে গবেষণা

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক

মহামারি করোনাভাইরাসে অবিবাহিত পুরুষদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। এমনটাই দাবি করেছেন সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভেন ড্রেফি।

সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে ভেন ড্রেফি একাধিক মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই বিষয়গুলোর ওপর করোনায় মৃত্যুর আশঙ্কা নির্ভর করে বলে দাবি করছেন তিনি।

ভেন ড্রেফি বলেছেন, অবিবাহিত পুরুষ, যাদের উপার্জনের পরিমাণ কম ও যাদের শিক্ষার মান কম, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশে যাদের জন্ম, তাঁদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

সুইডিস ন্যাশনাল বোর্ড অব হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার তালিকাভুক্ত আক্রান্তদের নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের বয়স বিশ বছরের বেশি।

গবেষকের দাবি, যেসব পুরুষের শিক্ষার মান কম, উপার্জনও কম তাদের করোনায় তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও এই প্যাটার্ন দেখা যায়।

এর কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, যাদের শিক্ষার মান কম তাদের মধ্যে যেকোনো রোগের বিষয় সচেতনতা কম হয়। আবার কম উপার্জন করলে চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে খরচও কম করা যায়।

অবিবাহিতদের লাইফস্টাইল অন্যরকম হয় বলে মত গবেষকদের। অবিবাহিত পুরুষের শরীরে অজান্তে বিভিন্ন রোগে দানা বাধে। আর তাতে করোনায় মৃত্যুহার কিছুটা বেড়ে যায়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকটাই কম। নারীদের তুলনায় পুরুষদের করোনায় মৃত্যুর মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।

আবরার হত্যার এক বছর পূর্ণ : এখনো অধরা ৩ আসামি

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে এক বছর আগে (২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর) বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী পিটিয়ে হত্যা করে।

হত্যার পরের দিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর ছাত্রলীগের ২৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ। ইতোমধ্যে তিনজনকে পলাতক দেখিয়ে আলোচিত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পলাতক তিন আসামি হলেন- মাহমুদুল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।

পলাতক তিন আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দ্রুত মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করার দাবি জানিয়েছেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি বলেন, আসামিরা আমার ছেলে আবরার ফাহাদ রাব্বীকে ছয় ঘণ্টা ধরে অমানবিকভাবে শারীরিক নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমার ছেলে হত্যার এক বছর হয়েছে। এখনো পলাতক তিন আসামি। আমি তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেন তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনেন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই। মামলাটির বিচার কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয় এটা আমার দাবি।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এহসানুল হক সমাজী জাগো নিউজকে বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি মামলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে।

আসামিপক্ষের এক আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। আসামিরা দোষী না নির্দোষ তা রায়ে প্রমাণিত হবে।

আবরার হত্যা মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। এই মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ৫ অক্টোবর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্য চলবে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত।মাঝে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি বাদ যাবে। প্রথম দিন আবরারের বাবা আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আসামিপক্ষের জেরা শেষ না হওয়ায় আজ (৬ অক্টোবর) অবশিষ্ট জেরার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এরপর অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।

ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৬০ জনকে।

অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত এজাহারবহির্ভূত ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

আবরার হত্যায় অভিযুক্ত যারা

এজাহারনামীয় ১৯ আসামি: বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মুজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ), এ এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ)।

এজাহারের বাইরের ৬ আসামি : বুয়েট ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপদফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।

পলাতক রয়েছেন তিন আসামি : এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)।

যে আটজন স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন:
মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং খন্দকার তাবাখ্খারুল ইসলাম তানভীর।

সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যেতে হবে বহুদূর

নুরুল করিম মাসুম


আজ ক্যাম্পাস ভিত্তিক পাঠকপ্রিয় নিউজ পোর্টাল দ্য ক্যাম্পাস টুডের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০১৯ সালের ০৫ অক্টোবর, সম্মানিত সম্পাদক নাসির উদ্দিন এবং প্রকাশক শাফিউল কায়েসের মাধ্যমে এই দিনে পথ চলা শুরু করে এই পাঠকপ্রিয় নিউজ পোর্টাল।

দ্য ক্যাম্পাস টুডে সময়ের সাথে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উন্মেচনে করে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর পথে। সম্প্রতিকালে সারাবিশ্বের সংকটময় সময়েও চব্বিশ ঘন্টায় সত্য সংবাদ প্রকাশে নীরবে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, দ্য ক্যাম্পাস টুডে পরিবার।

পাশাপাশি সুদক্ষ সম্পাদনা পর্ষদের তত্বাবধানে, এবং সারাদেশের ক্যাম্পাসের একঝাঁক স্বাধীনচেতা স্বপ্নবাজ তরুণ সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহ, সৃজনশীল লেখালেখিতে সদা জনপ্রিয়তার সাথে পথ চলছে।

দ্য ক্যাম্পাস টুডে’র মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী সাংবাদিকতায় এসে নিজকে গড়ে তুলছেন আগামীর সত্যান্বেষী সাংবাদিক হিসেবে। আগামীর দিনে অসাধু হলুদ সাংবাদিকদের পতনের মধ্য দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি দেশ-জাতির কল্যাণে কাজ করবে সময়ের দর্পণ হয়ে। শুধু আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যেতে দূর বহুদূর।

দ্য ক্যাম্পাস টুডে পরিবার আপনাদের জন্য আাগামীর প্রেরণা হয়ে পাশে থাকবে। সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।

লেখা: সাহিত্যিক, শিক্ষার্থী এবং সাহিত্য সহ-সম্পাদক ( দ্যা ক্যাম্পাস টুডে)।

শরতের ক্যাম্পাসে একদিন

 

সুপর্ণা রহমান


এই শীত, এই বর্ষা, আবার কখনো রোদের খরতাপ। বছর জুড়ে এ নেশাই মেতে থাকে বাঙলার প্রকৃতি। তার রুপের মাধুর্যের বর্ণিল সাজে লুকোচুরি খেলে আমাদের মন।

ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে শরৎ বাঙলার ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু। এ ঋতুতে সকালে ফোটে শিউলি ফুল, বিকেলে ঢেউ খেলে সাদা কাশবন। নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ এবং ঘটে আচমকা বর্ষণ।

শরতের এই রোদ্রছায়ায় এক পশলা বৃষ্টিতে মনের প্রতিচ্ছবিগুলো রূপকথার মতো ভেসে বেড়ায়। এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন, যিনি একটু সময় দাড়িয়ে ফেলে আসা স্মৃতিতে চোখ বুলাবেন না।

রাতের আকাশে জ্বলজ্বলে মায়াবী চাঁদ দেখতে দেখতে কখনো নামে বৃষ্টি। টিনের চালের টুপটাপ শব্দ! আবার ক্ষনিকের চলে যাওয়া। সবটা অজস্র মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করে ফেলে পরিবেশ। হালকা বাতাসে কাশফুল দোল খাচ্ছে, আবার বৃষ্টি এসে তা কাক ভেজা করে দিচ্ছে। তাই বলা হয়- শরত মানেই রোদ বৃষ্টির খুনসুটি।

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাজ্ঞণে আগমন ঘটেছে এ ঋতুর। গোটা ৩২ একর জুড়ে নানা রঙের ফুল ও গুচ্ছ গুচ্ছ কাশবন শোভা পেয়েছে।

একাডেমিক ভবনের সামনে পিছনে, টেনিস মাঠের দুপাশে, হিটলার চত্বরে, সবুজ ছাউনির ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কাশফুলের দেখা মেলে। ক্লাসের ফাঁকে এ জায়গাগুলো গল্পে আড্ডায় জমে থাকে। সেখানে এখন কাশবনের রাজত্ব। কাশফুলের মাঝে যেন উকি দেয় বিশাল ক্যাম্পাস।

প্রায় অর্ধ বছর (২০০ দিন) পরে ক্যাম্পাসে পা দিতেই শিউরে উঠলো মন। শরতের বাতাস আর সাদা সবুজের মেলা চারদিকে। দূর থেকে দেখলাম একদল বাচ্চারা কাশফুল নিয়ে ছোটাছুটি করছে। কিছু সময় অপলক তাকিয়ে থাকলাম। আবার হাটতে শুরু করলাম।

খেলার মাঠ ছোট বড় আগাছায় টইটুম্বুর। বসবার জায়গাগুলোর দুপাশে কাশফুলে ভরে গেছে। ক্যাফেটেরিয়া সামনে বৃষ্টির পানিতে জমে আছে। সবুজ ছাউনির ক্যান্টিনের সামনের কাশফুলগুলো যেন সেই মিঠা পানিতে উঁকি দিচ্ছে। একটা কাশফুল ছিড়ে আমার মাথায় গুঁজে নিলাম।

কাশবনের মধ্যে রাস্তাও তৈরি হয়ে গেছে দেখলাম। কাশবনের রাস্তা ধরে ট্রান্সপোর্ট চত্বরে এগুতেই দেখা হলো এ বিদ্যাপীঠের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক রুপালি রাণীর সঙ্গে। একদম করে হেঁটে তিনি বলেন, শরতের কাশফুল খুবই প্রিয় আমার। শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাসে কাশফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বেড়োতে কাশফুল দেখতে দারুণ লাগে।

করোনা মহামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ভিড় নেই এখন। রৌদ্রদীপ্ত কাশবনে গিয়ে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে কেউ ক্লাসে যায় না! মেয়েরা মাথায় কাশফুল গুজে ঘুরেও বেড়ায় না!

একসময় ক্লাস শেষে ঢু মেরে আসা ছিল সকলের নিত্য দিনের সঙ্গী। বন্ধু বান্ধব, কপোত কপোতি কিংবা আনমনা হয়ে অনেকে একাও ঘুরে বেড়াতো ক্যাম্পাসে। প্রকৃতি তার আপন মনে-ই চলছে, তবে নেই প্রাণের স্পন্দন।

ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ আরিফ বলেন, এবারের শরৎ একটু আলাদা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই। শিক্ষার্থী ফেরার অপেক্ষায় মনকাড়া কাশবনগুলো। কাশফুলের সাথে ছবি তোলা, কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা এগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। প্রাণহীন ক্যাম্পাসে প্রাণের সঞ্চার করেছে কাশবন। কাশফুল ধরে রেখেছে সৌন্দর্য।

 

‘বাবু খাইছো’ কেন এতো জনপ্রিয়?

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুল আলোচিত শব্দ ‘বাবু খাইছো’। প্রিয়জনকে এখন অনেকেই ‘বাবু’ বলে সম্বোধন করে। তরুণদের মধ্যে বিশেষ করে গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডকে ‘বাবু’ বলে সম্বোধন করা হয় বেশি। এর উৎপত্তি কোথা থেকে তা জানা না গেলেও ইংরেজিতে পার্টনারকে বেবি বলে ডাকার প্রচলন রয়েছে অনেক আগের থেকেই। সেটিরই বাংলা প্রচলন ‘বাবু’।

সম্প্রতি “বাবু খাইছো” শিরোনামে একটি গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে সেপ্টেম্বর মাসে রিলিজ পায় গানটি, আর অল্প সময়েই এটি ভাইরাল হয়। গানটি নিয়ে বিবিসি বাংলা মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

চলতি বছরে গেল সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখে ইউটিউবে প্রথমবার আপলোড করা হয় ‘বাবু খাইছো’ শিরোনামের গানটি। প্রিমিয়ার করার পরপরই গানটি লুফে নেন বাংলাদেশের তরুণ তরুণীরা। মাত্র ১১ দিনে ইউটিউবে প্রায় ২৮ লাখ বার দেখা হয়েছে ভিডিওটি।

এই গানের শিরোনামে ব্যবহার করা হয়েছে সেই শব্দ যুগল, যা বাংলাদেশের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণরা হরহামেশা ব্যবহার করছেন। কিন্তু এই শব্দ যুগল তরুণদের মধ্যে এতো সাড়া জাগালো কেন? কিংবা এমন একটি গানই বা কেন তাদের পছন্দ তালিকায় জায়গা করে নিলো?

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মুমতাজ মুমু বিবিসি বাংলাকে বলেন, অনেকেই এ ধরনের মিউজিক বেশ উপভোগ করে থাকেন। কিন্তু আসলে গান বলতে আমরা যেমন খুবই গভীর বা মহান ধরনের আর্ট বা শিল্প বুঝি, সেই গভীরতাটা কিন্তু এ ধরনের মিউজিকে নেই। এই ‘অনেকেই’ আবার সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। একটা বড় অংশ একটু জোরালো মিউজিক ও ডিজে টাইপের গান পছন্দ করে, তবে এটাও আবার সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

মুমতাজ মুমু আরো বলেন, ক্ল্যাসিকাল মিউজিকগুলো যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখবো ওই সব গানের কথা সুন্দর, মিউজিকও খুব শ্রুতিমধুর। কিন্তু তরুণদের অনেকেই এই আর্টকে কদর করেন না। ডিজে ধরনের বা রংচঙ ধরনের মিউজিক এদের বেশি টানে। শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী, মুড লাইট করা ধরনের সব মিউজিক।

দেশে তরুণদের মধ্যে গত ৪-৫ বছরে এমন কিছু মিউজিক ভিডিও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে, যেগুলোতে প্রাত্যহিক জীবনে তরুণরা ব্যবহার করে এমন শব্দ বা কথা ব্যবহার করা হয়েছে। ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস’, ‘এই যে বেয়াইন সাব’, ‘মাইয়া ও মাইয়া তুই অপরাধী রে’, ‘মাফ কইরা দেন ভাই’ – এই গানগুলো বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। রাস্তাঘাটে, শপিং মলেও এসব গান শোনা যায়।

বাংলাদেশের মূলধারার সঙ্গীতের সাথে এই গানগুলোর খুব সম্পৃক্ততা না থাকলেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এগুলো আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। এর একটা বড় কারণ ‘ব্যঙ্গ করা’ বলে উল্লেখ করেন চাকরিজীবী নারী কামারুন কণিকা।

বিবিসি বাংলাকে বলেন, হেট স্পিচ খুব দ্রুত মানুষের অ্যাটেনশন পায়। আমরা চিন্তা-ভাবনা কম করি। এই যে এই গানটা বা অপরাধী টাইপ গান এগুলো মানুষ ঠিক মতো পুরা গান শোনেও না, কিন্তু একটা-দু’টা লাইন নিয়ে মজা করে। ‘বাবু খাইছো’ এ ধরনের শব্দ অনেকেই তাদের কথার মধ্যে ব্যবহার করেন, কিন্তু এসব গানের মাধ্যমে অন্যকে ব্যঙ্গ করে মজা পায় কিছু মানুষ।

সুকান্ত হালদার বাংলাদেশের বিনোদন জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনি মনে করেন, এই গানের মূল টার্গেট টিনএজার’রা। গানটির কথা ও মিউজিক শুনলেই বোঝা যায়, তাদের কথা ভেবেই গানটির কথা লেখা হয়েছে, মিউজিক কম্পোজিশন করা হয়েছে। তারা বেশ সু-পরিকল্পিতভাবেই কাজটি করেছেন। সে কারণেই এখন গানটি নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে।

গানটির সুরকার ডিজে মীর মারুফ বলেন, মূলত ট্রেন্ডিং কিছু ব্যাপার নিয়ে গানটি করার চেষ্টা করেছি। করোনা ভাইরাস নিয়ে যেমন গান করেছি, ঠিক তেমনই এই গানে ব্যবহার করেছি একটি বহুল ব্যবহৃত কথা, যা বাংলাদেশে প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে বলে থাকেন। এখনকার সম্পর্কগুলোতে কী হচ্ছে, কী ধরনের কথা হয়, সেটাই বলতে চেয়েছি আমরা।

১৬ অক্টোবর থেকে খুলছে সিনেমা হল , শুভ মুক্তি পাচ্ছে ‘সাহসী হিরো আলম’

বিনোদন ডেস্ক


করোনাকালে সিনেমামোদীদের জন্য এলো সুখবর। অবশেষে চালু হচ্ছে দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো। করোনার ঝুঁকি এড়াতে প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ আছে দেশের সকল প্রেক্ষাগৃহ। অবশেষে সিনেমা হলের উপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। আগামী ১৬ অক্টোবর দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ।

সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে হল মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন তথ্য জানান তিনি । এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য সচিব কামরুন নাহার, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিঁয়া আলাউদ্দিন সহ অনেকেই।

এইদিকে , হিরো আলমের প্রযোজনায় প্রথম সিনেমা ‘সাহসী হিরো আলম’ সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে গত মার্চ মাসে কিন্তু হঠাৎ পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস এর মহামারী শুরু হয়েছে সেই তান্ডব বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। আশা রাখি আগামী ১৬ অক্টোবর মুক্তি পাবে চলচ্চিত্রটি। বর্তমান করোনাভাইরাস অনেকটাই স্থিতিশীল।

সিনেমা হল খোলার বিষয়ে হাসান মাহমুদ জানান, দেশে করোনা পরিস্থিতি যে পর্যায়ে রয়েছে তা যদি কমতে থাকে তাহলে আগামী ১৬ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেওয়া হতে পারে বলে বিষয়টি ক্লিয়ার করেছেন। তবে সেটি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে। শুরুর দিকে স্বাস্থবিধি ও নির্দেশনা মেনে অর্ধেক দর্শক নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ চালু করতে হবে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে পুরো দেশে করোনা পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক রয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। সেই বিবেচনায় সিনেমা হলগুলোও খুলে দেওয়া হতে পারে।

করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রয়েছে। এর মাঝে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার নানা আলোচনা ও বৈঠক করে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, চলচ্চিত্রের সঙ্কট ঘোচাতে যেন স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে আবারও হলগুলো খুলে দেওয়া হয়।

সাহসী হিরো আলম ছবিটি পরিচালনা করেছেন এ আর মুকুল নেত্রবাদী। পরিচালক দাবি করেছেন, ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের চেহারা ভালো হলেও তিনি হিরো আলমের চেয়ে জনপ্রিয় নন। ‘সাহসী হিরো আলম’ ছবির নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হিরো আলম। তাঁর বিপরীতে তিন নায়িকা অভিনয় করেছেন। তাঁরা হলেন– সাকিরা মৌ, রাবিনা বৃষ্টি ও নবাগত নুসরাত জাহান। এরই মধ্যে ছবির পোস্টার মুক্তি পেয়েছে। পোস্টারে দেখা যাচ্ছে, উদোম গায়ে হিরো আলম আর তাঁর শরীর পেঁচিয়ে ধরেছে অজগর। পোস্টারের একদম ওপরের দিকে তিন নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভঙ্গিমায় হিরো। পোস্টারে হেলিকপ্টারেও হিরোকে ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। হিরো আলম ও পরিচালকের মতে ছবিটি বাজিমাত করবে আশা করি দর্শকরা উপভোগ করবে।

হিরো আলম বলেন, আমার বিশ্বাস অন্য যে সিনেমাই মুক্তি পাক, আমার সিনেমা দেখতে একবার হলেও মানুষ হলে যাবে। কারণ আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা রয়েছে।” ‘সাহসী হিরো আলম’ কতটা দর্শকপ্রিয় হয়, তা দেখতে দর্শককে ঈদ পর্যন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

দেশে মাদ্রাসার শিশুদের অধিকার কি আলাদা?

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


দেশে মফস্বলে বসবাসরত মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের অনেক শিশুরই পড়াশোনার শুরুটা হয় ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে ৷ সাধারণত মসজিদে বা মাদ্রাসায় দিনের একটা সময়ে আরবি শিখতে যায় তারা, যা পরিচিত মক্তব নামে৷

পরবর্তীতে এই শিশুদের এক অংশ চলে যায় স্কুলে, আরেক অংশের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার শুরু হয় মাদ্রাসাতে৷ নিজেদের নয়, অভিভাবকের আকঙ্খাতে বদলে যায় তাদের চাওয়া পাওয়া, সুযোগ সুবিধাগুলো৷ ঠিক যেমন বদলে গিয়েছিল সিয়ামের জীবনও৷

বন্দি জীবনে আটকে যায় তার উড়ন্ত শৈশব৷ যেই সময়টা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার, আনন্দে কাটানোর– সেই সময়টায় কঠিন এক জীবন আবদ্ধ করে ফেলে তাকে৷ অন্য কোনো বিনোদন তো দূরে থাক, তার দৈনন্দিন রুটিন থেকে ‘খেলাধুলা’ শব্দটিই নাই হয়ে যায়৷ ‘খেলতে ইচ্ছা করতো, তবে কেউ বলার সাহস পেতো না,’ বলছিলেন কওমি, আলিয়া মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি মাদ্রাসায় পড়া এই দাখিল শিক্ষার্থী৷ হাফেজি পড়া অবস্থায় মাদ্রাসার ভিতরে তাদের খেলার মতো কোনো মাঠ ছিল না৷ চার দেয়ালের বাইরে বের হওয়াও ছিল নিষিদ্ধ৷ ছুটিতেই কেবল বাহিরের পৃথিবীটা দেখার সুযোগ মিলতো৷

সিয়ামের বাড়ি ফেরার পরের সময়ের বর্ণনা দিলেন তার বড় বোন রুবাইয়া৷ ‘যখন ওকে বাসায় আনা হতো, তখন সে ঠিকমতো কথা বলতো না৷ বাইরের কারো সঙ্গে মিশতে পারতো না৷ এখন ধীরে ধীরে কিছুটা ঠিক হয়েছে৷’

রুবাইয়াও দুইটি কওমি মাদ্রাসায় পড়েছেন৷ সেই আট বছর বয়সে একটি ‘মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসায়’ ভর্তি হয়েছেন৷ রুবাইয়ার কথা অনুযায়ী, মাদ্রাসার আয়তন ছোট ছিল, সারাদিন তাদের রুমের মধ্যেই থাকতে হতো৷ বিকেলের দিকে নীচে নামার সুযোগ ছিল, তবে সেটা ছিল বিল্ডিংয়ের গণ্ডির মধ্যেই৷ গেইটের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না৷ ‘‘বন্দিজীবন কাটিয়েছি ছোটবেলা থেকেই৷ মাঝে মাঝেই ইচ্ছা করতো খেলাধুলার, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর কিন্তু তার কোনো সুযোগ ছিল না৷’’ মেয়ে হওয়ায় এমনকি দৌড়াদৌড়ি, উচ্চ শব্দে হাসাহাসিতেও বারণ ছিল, বলছিলেন তিনি৷ পরবর্তীতে আরেকটি মাদ্রাসায় কিছুটা বৃহৎ গণ্ডি পেয়েছেন৷ তবে সেখানেও বিনোদন বলতে বড়জোর ভবনের ছাদে হাঁটাহাঁটির সুযোগ৷ বলেন, ‘‘ফজর থেকে রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত রুটিন মেনে চলতে হতো৷ মিনিট বা সেকেন্ড এদিক-সেদিক হতে পারবে না৷ কিন্তু সব সময় মানসিকাতো এক রকম থাকে না৷’’

তবে সিয়াম রুবাইয়া দুইজনই বললেন, কওমির তুলনায় আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে এতটা কড়াকড়ি নেই৷ সুযোগ স্বল্প হলেও খেলাধুলায় বাধা নেই৷

বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার৷ আর ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ বা বেফাক-এর হিসেবে, কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৩,৭১০টি৷ অবশ্য বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷ দুই ধারা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ৷

বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা মূলত দুই ধরনের৷‘‘যা প্রাথমিক পর্যায়ের পরে শিক্ষা দান করে; এগুলো হচ্ছে: আলিয়া মাদ্রাসা, যেগুলো কলকাতা মাদ্রাসাকে (পরবর্তী সময়ে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা) অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত সরকার-সমর্থিত প্রতিষ্ঠান এবং কওমি মাদ্রাসা, যেগুলো সাধারণত দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুকরণে তৈরি বেসরকারি ব্যবস্থাপনার মাদ্রাসা ৷

তবে আলিয়া এবং কওমি দুই ধরনের মাদ্রাসাতেই প্রাথমিক পর্যায়, অর্থাৎ ইবতেদায়ি শিক্ষা দেওয়া হয়৷ দুই ব্যবস্থার বাইরেও কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে৷’’ এই দুই ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ‘বাংলাদেশে মাদ্রাসাশিক্ষা: প্রতিযোগিতা, সমঝোতা ও আদর্শিক দ্বন্দ্ব’, শিরোনামে একটি প্রবন্ধে এভাবে বর্ণনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননীয় অধ্যাপক আলী রিয়াজ৷ (লেখাটি মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে ছেপেছে প্রতিচিন্তা)

সরকারের মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে প্রায় সাড়ে নয় হাজার আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে৷ বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর হিসাবে প্রাথমিক র্পযায়ে স্বাধীন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সংখ্যাই ২০১৯ সালে ছিল ৬,৩৭৮ টি৷ যেখানে নয় লাখ ৬১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে৷ এর ৫৩ ভাগই ছাত্রী৷

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, এই ধরনের মাদ্রাসা অনুমোদনে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য র্পযাপ্ত খেলার মাঠ থাকতে হবে৷ যদিও সেই নিয়ম কতটা মানা হয় বা কতটি মাদ্রাসা মানছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে৷ আবার দাখিল, আলিম, ফাযিল, কামিল মিলিয়ে এই বোর্ডের অধীনে মোট মাদ্রাসা সংখ্যা ৯২৭৮ টি৷ যার মধ্যে মাত্র তিনটি সরকারি, বাকিগুলো বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত৷ তবে কাগজে-কলমে সবাই সরকারি কারিকুলাম মেনেই চলে৷

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এই মাদ্রাসাগুলোতে একজন করে শারীরিক শিক্ষক থাকার কথা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন হওয়ার কথা৷ ‘‘শিক্ষার্থীরা যখন ভর্তি হয় বা ফরম পূরণ করে তখন ক্রীড়া ফির নামে একটা নির্দিষ্ট অর্থ নেওয়া হয়৷ এই অর্থ দিয়ে আমাদের অধিদফতরের নেতৃত্বে দুটো ক্রীড়া অনুষ্ঠান হয়৷ একটা শীতকালীন ও আরেকটা গ্রীষ্মকালীন৷ এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠান থেকে উপজেলা, জেলা ও বিভাগ হয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতা হয়,’’ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা র্বোডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ৷ বাস্তবতা হল অনেক মাদ্রাসাতেই শারীরিক শিক্ষক নেই, অভাব আছে খেলাধুলার পর্যাপ্ত অবকাঠামোর৷

তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিটি কওমি মাদ্রাসাতে, যাদের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ সেগুলো চলছে তাদের তৈরি স্বাধীন নিয়মে৷ এমন মাদ্রাসার সঠিক পরিসংখ্যানও নেই কারো কাছে৷ তাদের একাধিক বোর্ডের একটি ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’, যাদের অধীনেই ১৩,৭১০ টি মাদ্রাসা রয়েছে৷ যেখানে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, বিনোদন বা সৃজনশীলতা বিকাশের কোন সুযোগ নেই৷

শৈশব আর শিক্ষাব্যবস্থা কী করে শিশুবয়স থেকেই বৈষম্যের সূচনা ঘটাচ্ছে এটি তারই একটি নমুনা৷ এইসব মাদ্রাসায় শত বা হাজার নয় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে৷ সিয়াম আর রুবাইয়াদের মতো তারা বড় হচ্ছে খেলাধুলাবিহীন নিরানন্দ এক পৃথিবীতে৷ ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র সবাই যেন ধরেই নিয়েছে মাদ্রাসায় পড়া শিশুরা এই পৃথিবীর আনন্দ উপভোগ করতে পারবে না৷ কালেভদ্রে পাঞ্জাবি, টুপি পরা মাদ্রাসার ছাত্র কিংবা বোরকা পরা মেয়েদের খেলার দৃশ্য দেখলেও তাই আমরা বিষ্মিত হই৷

অথচ প্রতিটি শিশুর জন্য সমঅধিকার নিশ্চিত করা কিন্তু রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব৷ জাতিসংঘের শিশু অধিকার চুক্তি ১৯৮৯-র ৩১ ধারাতেও স্পষ্ট বলা হয়েছে, বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে শিশুর বিশ্রাম, অবসর, খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম, সুকুমার শিল্পে অংশগ্রহণের অবাধ অধিকার অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ স্বীকার করবে৷ রাষ্ট্র শিল্প ও সাংস্কৃতিক জীবনে শিশুর পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক, সুকুমার শিল্প ও বিনোদনের জন্য উপযুক্ত ও সমানভাবে অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করবে ৷

এ সনদে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ কি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সেগুলো নিশ্চিতের কোনো তাগিদ বোধ করে? জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, ভাষা, সক্ষমতা অথবা অন্য কোনো সামাজিক মর্যাদা যাই হোক না কেন, প্রতিটি শিশুরই এই অধিকারগুলো যে আছে বাংলাদেশের মানুষও কি আদৌ তার প্রয়োজন অনুধাবন করতে পারে?

ক্যাম্পাস খোলা নিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ওয়াসিফ রিয়াদ, রাবি প্রতিনিধি


করোনা মহামারীর ফলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির স্বাভাবিক না হওয়ায় একাধিক বার পেছানো হয়েছে ছুটির মেয়াদ। এদিকে দীর্ঘ প্রায় ছ’মাস বাড়িতে অলস ও বিষন্নতাপূর্ণ সময় পার করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে অনেক শিক্ষার্থী। এমতাবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) অনেকেই স্বাস্থবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাস খোলার দাবি জানিয়েছে, আবার কেউ কেউ ঝুঁকির আশঙ্কায় বিপক্ষেও মত দিয়েছেন।

এদিকে সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে পোল গঠন করা হয়েছিল। সেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই খুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়াও ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে আন্দোলনেরও ডাক দিতে দেখা গেছে ‘সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা চাই’ নামক একটি গ্রুপে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব নিলয় বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। সেটা ব্যক্তিবিশেষে বেশিরভাগই যৌক্তিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অস্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা। করোনাকালে যাদের অনেকেরই আর্থিক সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি কিংবা ছোটখাটো কোন কাজের মাধ্যমে সংসারের চাপ কমাতে সাহায্য করত। তাই আমার মতে,সার্বিক দিক বিবেচনায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত হবে।

রাবি ইনফরমেশন এন্ড কমিনিউকেশন ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া নাজনীন বলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের পদচারণা একটি ক্যাম্পাসে। হল ও মেস গুলোতে প্রতিনিয়ত জটলাবেঁধে অবস্থান করতে হয়। ক্লাসগুলোতে নেই নিরাপদ দূরত্বের ব্যবস্থা। খাবার হোটেল, ফুটপাতের মতো ঝুঁকিপুর্ণ দোকানপাটে চলবে আড্ডা। তার উপর নেই কোন কোয়ারান্টাইন ব্যবস্থা।সব মিলে সামাজিক দূরত্ব মেনে সুস্থ জীবন যাপন অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। এত ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাস খোলা মনে হয় না যুগ উপযোগী কোন সিদ্ধান্ত হবে!

রাবি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম বলেন, করোনাকালে ঘর বন্দী থেকে থেকে যেন আজ নন্দলাল হয়ে যাচ্ছি । হাট-বাজার, দোকানপাট,গার্মেন্টস ফ্যাক্ট্রি ও ব্যবসা বাণিজ্য সব চলমান কিন্তু চালু নেই শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা যেন আজ শুধু স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়েই বিরাজ করছে! সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করি।

রাবি দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাদী হোসাইন বলেন, করোনা আক্রান্তের হার দেশে এখন অস্বাভাবিক। তার মধ্যে মানুষ তোয়াক্কা করছে না স্বাস্থ্যবিধির। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট, একপ্রকার গাদাগাদি অবস্থান করতে হয় প্রতিনিয়ত। মেস গুলোর অবস্থাও ঠিক একই রকম। তাই এই মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে আর একটু বিবেচনা করা দরকার।

রাবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নবনীতা রায় বলেন, করোনা এখন শুধু ঢাকা শহরেই আবদ্ধ নয়। গ্রাম পর্যায়েও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু জনগণ সাধারণত একটা মাস্ক পড়তেও অভ্যস্থ হতে পারছেনা! অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি তো দূরে থাক।

তবে হ্যাঁ, শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ মানসিক ভাবে অনেকটা খারাপ সময় অতিবাহিত করছে। তারপরও সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক সার্বিক স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করা সহ আরো অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারে। তাছাড়া নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, করোনার এই দুর্যোগে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাস খোলা কতটা নিরাপদ এবং সকলের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করাই বা কতটা সম্ভবপর হবে সেই বিষয়গুলো আমাদের সর্বদা ভাবায়। কারণ ‘সময়ের চেয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি’। তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা ও ভাইভা গুলো নেয়া যেতে পারে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুটা দায় মুক্তি হবে বলে আশা করি।

তিনি আরও বলেন, এই মুহুর্তে সমস্ত ক্যাম্পাস খোলা মনে হয় না খুব ভাল কিছু বয়ে আনবে! কারণ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আর একটু সময় পর্যবেক্ষণ করাই মনে হয় যুক্তিযুক্ত হবে।তবে শিক্ষামন্ত্রনালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন যদি মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে। তাহলে তো আমাদের সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার বিষয়টি যথাযথ পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মনে বিষণ্ণতা দেখা দিয়েছে। আমিও ব্যক্তিগত ভাবে চাই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হোক, কিন্তু খুলে দেয়ার পর পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়ে যায় কি না এটা চিন্তার বিষয়।

তিনি আরও বলেন, আগামী অক্টোবরের তিন তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা। আপাতত সে পর্যন্ত অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ইউজিসি থেকে শিক্ষাঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুতই শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস উপভোগ করবে।
ওয়াসিফ রিয়াদ