ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা

ফিরোজ কবির: অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকল ভাষা শহীদদের স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। জবান থাকে মানুষের; আমরা জানতাম ভাষা থাকে ফুল, পাখি ও নদীর, আকাশ কিংবা সমুদ্রেরও ভাষা থাকে, বোবা পাহাড়েরও থাকে নির্বাক ভাষা।

ঋতুচক্র, বৃক্ষ, প্রজাপতি কিম্বা প্রেমিক ভ্রমর নিজেদের ভাষায় গায় অমর সঙ্গীত। সব নৃগোষ্ঠীর থাকে মমতায় মাখা মাতৃভাষা; কিন্তু রাষ্ট্রেরও কি ভাষা থাকে? হ্যাঁ, প্রথম আমরা সেই ভাষার শিখলাম তা হলো বাংলা ভাষা।

রক্তাক্ত সিঁড়ি হলো ‘বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারি। আমরা নিজেদেরকে চিনলাম, আমরা নিজেদেরকে বুঝলাম, আমরা নিজেদেরকে জানলাম, চিনে নিলাম আমাদের নিজস্ব পথ। রক্তের বর্ণমালায় সুশোভিত সে পথ ধরেই আমরা নিজেদের শেকড়ে পৌঁছালাম, আমাদের নিজের রাষ্ট্র হলো- বাংলাদেশ।

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করা প্রত্যেক মানুষের জন্মগত অধিকার। শিক্ষার মাধ্যম যে মাতৃভাষাই হওয়া উচিত এ ব্যাপারে আজ আর দ্বিমত নেই। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার ছাড়াও অনেক নাম না জানা ছাত্ররা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।

আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাভাষার মাধ্যমেই আমরা প্রথমে ‘মা’ নামক ছোট্ট শব্দটি শিখেছি। এ ভাষাতেই আমরা কথা বলি ও লিখন লিখি। এ ভাষাতেই অতি আপনজনের কাছে পত্র লিখে মনের ভাব প্রকাশ করি। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে আমরা যে কল্পনার ছবি আঁকি তা এই বাংলা ভাষাতেই। তাই এই ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের মজাই আলাদা। সুতরাং অপর সব ভাষা অপেক্ষা মাতৃভাষা সকলের নিকট সুমধুর।

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকল ভাষা সৈনিক এবং ভাষা শহীদের প্রতি জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখকঃ ব্যাংকার।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

ড. আনন্দ কুমার সাহা

১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকতসহ অনেকেই। তাই এই দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত আছে। ২০১০ সাল থেকে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের সূচনা :
১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশের হাত ধরে সূচনা হয় ভাষা আন্দোলনের। তমদ্দুন মজলিস ১৫ সেপ্টেম্বর একটি পুস্তিকা বের করে যার শিরোনাম ছিল ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা- না উর্দু?’ ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। গণপরিষদে পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হিসেবে বাংলাকে গণপরিষদে ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন। পাকিস্তান গণপরিষদ তার প্রস্তাব গ্রহণ না করায় পূর্ব বাংলায় শুরু হয় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। ২১ মার্চ ১৯৪৮ সালে রেসকোর্স ময়দানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক নাগরিক সংবর্ধনায় ঘোষণা করেন যে, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” উপস্থিত ছাত্র জনতা প্রতিবাদ করে। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্পষ্ট করে বলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। সমাবেশ স্থলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং নো নো বলে অনেকে প্রতিবাদ করে।

ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হয় ১৯৫২ সালে। খাজা নাজিমুদ্দিন ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, মিছিল ও সামাবেশের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালিন সরকার মিছিল, সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ১৪৪ ধারা জারি করে।

এ সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় আবদ্ধ। জেলখানার মধ্যে অনশন শুরু করেন এবং গোপনীয়ভাবে সার্বক্ষণিক সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হয়।

ছাত্ররা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। ছাত্ররা মিছিল নিয়ে গণপরিষদের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস পরবর্তিতে গুলি করে। পুলিশের গুলিতে রফিকউদ্দিন ও আবুল বরকত নিহত। বহু আহত ছাত্রদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বহু ঘটনার পর ১৯৫৬ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই বছরে ৩ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানকারী পাকিস্তানের সংবিধান কার্যকর হয়।

জাতিসংঘে কার্যক্রম পরিচালিত হয় পাঁচটি ভাষায়। সব দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত প্রতিনিধিরা পাঁচটি ভাষার মধ্যে যেকোন একটি ভাষায় কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণদান করার ফলে বিশ্বব্যাপী জানতে পারে বাংলা ভাষার মহত্ব।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
কানাডায় বসবাসরত রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রথম উদ্যোক্তা হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ সালে।

১৯৯৮ সালে ২০শে জানুয়ারি জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়- অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করতে হবে। জনাব রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান।

এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান-কে আবারও চিঠি দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি আনা মারিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী ৫টি দেশ- কানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশের মাধ্যমে প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়।

কানাডা থেকে রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য গর্বের বিষয় মনে করে মন্ত্রণালয় অতি দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর অফিসে অনুমতি চেয়ে নোট পাঠায়। বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় স্বল্পতার বিষয়টি উপলব্ধি করেন। তিনি সব ধরনের জটিলতা উপেক্ষা করে নথি অনুমোদনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছাড়াই ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে সরাসরি প্রস্তাবটি পাঠিয়ে দেন। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের পক্ষে এর সচিব অধ্যাপক কফিলউদ্দিন আহমদের স্বাক্ষরিত সেই প্রস্তাবটি প্যারিসে পৌঁছায়।

১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ১৮৮ দেশের সমর্থনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ এ মর্মে একটি প্রস্তাব পাস হয়।

লেখক
প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা
উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ড. শামসুজ্জোহা

ড. আনন্দ কুমার সাহা


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার এবং শিক্ষকের সংখ্যা ১২০০ (বারশত’র) অধিক। অনেক শিক্ষক অবসরে গিয়েছেন। আমরা যারা কর্মরত আছি- তারা কতজন শিক্ষকের কথা মনে রাখি। কিন্তু ড. শামসুজ্জোহাকে আমরা সবাই স্মরণে রাখি। কেউ কেউ জীবদ্দশায় এমন কিছু কীর্তি রেখে যান, যা তাঁদের অমর করে রাখে।

ড. জোহা ১৯৩৪ সালে পশ্চিম বাংলার বাকুড়া জেলায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন একজন চাকুরিজীবী এবং মা ছিলেন একজন গৃহিণী। স্কুল জীবনে ড. জোহা ছিলেন একজন আদর্শ পড়ুয়া ছাত্র। জোহার অমায়িক ও মধুর ব্যবহারে তাঁর সহপাঠীরা তাঁর অকৃত্রিম বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলো। ১৯৪৮ সালে এবং ১৯৫০ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে যথাক্রমে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বিভাগে উর্ত্তীণ হন। ১৯৫৩ সালে রসায়ন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে একই বিষয়ে এম.এস.সি থিসিস গ্রুপে প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন।

১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জোহার জীবনের স্বর্গীয় সময়। এ সময়ে তিনি পি-এইচ.ডি গবেষণার জন্য লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি সামাজিকতা এবং খেলাধূলা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটান। ১৯৬৪ সালে পি-এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ড. জোহা ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা-মা সহ ছয় ভাই-বোন। বাবার সামান্য আয়। জোহার স্বভাবসিদ্ধ হাসিমাখা আচরণে তাঁর পরিবারের কষ্টের কথা কেউ বুঝতে পারত না।

১৯৫৫ সালে পাকিস্তান অর্ডন্যান্স কারখানায় সহযোগী পরিচালক পদে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে চাকুরি ইস্তফা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ড. জোহা এস.এম. হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সাল থেকে মৃত্যুর মূহুর্ত পর্যন্ত ড. জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জেলের মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করে। বারুদের মতো সাধারণ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এমনকি মন্ত্রীদের বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে।

সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং পুলিশি হামলায় বহু ছাত্র আহত হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করে। মেইন গেটে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. জোহা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি সেনা সদস্যদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন- যাতে ছাত্রদের প্রতি কোন গুলি ছোঁড়া না হয়।

উল্লেখ করা প্রয়োজন ১৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়। অনেক ছাত্র রক্তাক্ত অবস্থায় হলে ফিরে আসে। ড. জোহার সাদা শার্টে রক্ত লেগে যায়। জোহা সেই রক্তমাখা শার্ট দেখিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- এরপর আর যদি গুলি করা হয়, কোন ছাত্রের গায়ে লাগার আগে সে গুলি আমার বুকে লাগবে। ড. জোহা সে কথা রেখেছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় মেইন গেটের উল্টোদিকে নাটোর রোডে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা বুলেট ও বেয়নেটের খুঁচায় জোহাকে হত্যা করে।

উনসত্তরের গণআন্দোলনে তাঁর মৃত্যুর শোক বাঙালিদের শক্তিতে পরিণত হয়েছিলো। বাঙালির স্বাধীকারের আন্দোলন স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হয়। এদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ ড. শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগ এক অনন্য ঘটনা। আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক
প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা
উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে গ্রামীণ উদ্যোক্তা উন্নয়নে ই-কমার্সের চ্যালেঞ্জ

হোসনে আরা খান নওরীন: নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পেয়াঁজ, আলু ও চিনি এবং কোরবানীর গরুও যে অনলাইনে কেনা যায়, তা এই করোনাকাল শিখিয়ে দিল দেশের মানুষকে। বিশেষত শহরের মানুষকে। করোনাকালীন সময়ে শহর অঞ্চলে এখন অনেকেই অনলাইনে কাঁচাবাজার সারছেন। পাশাপাশি ওষুধ ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, পোশাক, গৃহস্থালির বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনছেন।

করোনাকালে তাঁরা অনলাইনে পণ্য কিনেছেন। ফলে অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে তাঁদের একটা অংশ অনলাইনের ক্রেতা হিসেবে থাকবেন। যারা ক্রেতাদের ভালো সেবা দিচ্ছে, তারাই ভালো করবে। কিন্তু গ্রাম অঞ্চলে ই-কমার্সের কোন অস্তিত্ব নাই বললে চলে।

অথচ আমাদের দেশে প্রায় ৮০% লোক গ্রামে বাস করে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ই-ক্যাবের তথ্যমতে-দেশের ই-কমার্সের ক্রেতারা মূলত শহরকেন্দ্রিক; তন্মধ্যে ৮০% ক্রেতার ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের। এদের মধ্যে ৩৫% ঢাকার, ৩৯% চট্টগ্রামের এবং ১৫% গাজীপুরের অধিবাসী। অন্য দু’টি শহর হলো ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ এবং আরেকটি মেট্রোপলিটান শহর সিলেট। ৭৫% ই-কমার্স ব্যবহারকারীর বয়স ১৮-৩৪-এর মধ্যে। তবে গ্রামে গ্রামে পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা চালু হয়নি।

অনলাইনে বিক্রির প্রবৃদ্ধি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ দেশে করোনাকালে ই-কমার্সে লেনদেন বেড়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মধ্যে গত ৮ মাসে ই-কমার্স সেক্টরে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় এক লাখ পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে প্রতিদিন এবং ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে জাতিসংঘের ট্রেড বডি হিসেবে পরিচিত ইউএনসিটিএডি বিজনেস-টু-কনজুমার (বিটুসি) ইলেকট্রনিক কমার্স নামের একটি সূচক প্রকাশ করেছে, যেখানে ১৩০টি দেশের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার, নিরাপদ সার্ভার, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ার হার ও পোস্টাল ডেলিভারি সিস্টেম এই চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।

১৩০টি দেশের মধ্যে অবশ্য বাংলাদেশের ঠাঁই হয়নি। ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলো এই সূচকের শীর্ষে রয়েছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। উন্নয়নশীল ও বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ঠাঁই করে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোরিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুর। অবশ্য অনলাইনে কেনাকাটার দিক থেকে ব্রাজিল, চীন ও রাশিয়া ফেডারেশন ভালো করছে। আফ্রিকা অঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহার কম হওয়ায় ই-কমার্সের প্রসার হচ্ছে না।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে দেশে শুরু হয় ই-কমার্স ব্যবসা। প্রথম দিকে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন, মানুষকে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবেলা করে বিগত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অনলাইনে কেনাকাটা। বিভিন্ন গবেষনাপত্র বিশ্লেষন করে আমার কাছে গ্রাম অঞ্জলে ই-কমার্সের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ ৩টি মনে হয়েছেঃ

১। গ্রাম অঞ্চলে ইন্টারনেট অপ্রতুলতা এবং ইন্টারনেট থাকলেও নেটওয়ার্ক দুর্বল।

২। পেমেন্ট পদ্ধতি নিয়েও গ্রাম পর্যায়ে অনেকক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। এলাকাভিত্তিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও বর্তমানে দেশে প্রচলিত ক্যাশ অন ডেলিভারী, কন্ডিশন ডেলিভারী, মোবাইল ব্যাংকিং, চেক, টিটি, ডিডি, পেমেন্ট গেটওয়ে এগুলোর প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে বেশভালো ভাবে ব্যবসা করা সম্ভব।

৩। সঠিক সময়ে ডেলিভারী দেওয়া অনেকক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সম্ভব নয়। তবে এটি সত্যি যে, অযথা টেনশন না করে প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে থেকে কিভাবে ভালো সার্ভিস পন্য ও মান নিশ্চিত করে বেশী বিক্রি করা যায় সে কথাই সকলের ভাবা উচিত।

উল্লেখ্য যে, প্রথাগত ব্যবসায়িরাও এসব ঝামেলায় রয়েছেন যশোরের একজন নকশীকাথা প্রস্তুতকারক কিন্তু খুব সহজে চট্টগ্রামে তার পাইকারকে স্যাম্পল পাঠাতে পারছেন না। কিন্তু যশোরের নকশীকাথা কিন্তু ঠিকই ঢাকায় চাহিবামাত্র পাওেয়া যায় এমনকি ফুটপাতে পর্যন্ত। তাহলে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে রাস্তা বের করে নিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের বেচাকেনা বা ব্যবসা কোনেটাই থেমে নেই।

স্থানীয় পর্যায়ে ই-কমার্সে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাইটে ক্রেতা ধরে রাখা। ক্রেতাদের আস্থা ফেরানো গেলে তাদের ধরে রাখা যাবে। সুতরাং দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা আর ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের তৈরি অনেক পণ্যের আমরা নামই জানি না। দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে চাইলে সবার আগে নজর দিতে হবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দিকে। বর্তমানে করোনাকালীন গ্রামীন উদ্যোক্তা হতে পারে প্রায় ২ কোটি কর্মহীনদের সমস্যার সমাধান।

লেখকঃ ফাউন্ডার ও সিইও, নওরীন’স মীরর।

ভার্চুয়াল ক্লাস: সর্ব রোগের এক ঔষধ!

সাজু সরদার


উপরিউক্ত শিরোনামের কারণে আপনার ভ্রু-কুচকে যেতে পারে! তবে কুঁচকানো ভ্রু সম্প্রসারিত হবে যখন আপনি ভার্চুয়াল ক্লাসের গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে পারবেন, যেটা উক্ত শিরোনামের সাথেই তুলনা যোগ্য। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম যখন স্তব্ধ, তখন জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিমস, ওয়েবেক্স ইত্যাদি মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের মনে জ্বলে উঠেছিলো আশার প্রদীপ হয়ে। কিন্তু এই জ্বলা আবার জ্বালা হয়ে দেখা দিয়েছিলো যখন বোঝা গেল উক্ত মাধ্যমে শুধু ক্লাস নেওয়া যায়।

ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসের কোন কোর্স ম্যাটেরিয়ালস বা শিক্ষা উপকরণ প্রদানের জন্য অথবা মূল্যায়ন সূচক পরীক্ষা বা অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার জন্য গুগল ফরম, গুগল ক্লাসরুম ইত্যাদি আলাদা আলাদা প্লাটফর্মের দ্বারস্থ হতে হয় যেটা শিক্ষার্থীদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। তারপরও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যাচাই করা যায় না, শিক্ষার্থীদের শিখন মুল্যায়নের জন্য সহজভাবে কুইজ টেস্ট বা পরীক্ষা নেওয়া যায় না।

এমতাবস্থায়, শিক্ষাখাতের এসকল সমস্যার সমাধান করার প্রত্যয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত ডিজিটাল বাংলার সেবা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সংস্থা “এটুআই” উদ্ভাবন করেন ভার্চুয়াল ক্লাস প্লাটফর্ম “ভার্চুয়াল ক্লাস (https://virtualclass.gov.bd/)”। গত ২৪ জুন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীসহ বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উপস্থিতিতে এই নতুন ও কার্যকরী প্লাটফর্মটি উদ্বোধন করা হয়।

এই প্লাটফর্মে যুক্ত থেকে খুব সহজভাবে অনলাইন পাঠদানসহ সকল সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা সম্পন্ন করা সম্ভব। এপ্রিলের শুরু থেকে জুম বা অন্যান্য সফটওয়ারের মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করলেও উদ্বোধনের পর থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ভার্চুয়াল ক্লাস প্লাটফর্মে যুক্ত থেকেই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে যেমন লাইভ ক্লাস নেওয়া সম্ভব তেমনি শিক্ষা উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিমিডিয়া এবং অডিও-ভিজুয়্যাল কনটেন্ট, বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট (যেমন-পিডিএফ, পাওয়ারপয়েন্ট, ছবি/ডায়াগ্রাম ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ধরনের লিঙ্ক সংযুক্তি আকারে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দৈনিক হাজিরা, কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে সুরক্ষিতভাবে এবং সহজে গ্রহণ করা যায়। বোনাস হিসেবে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মধ্যে আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তরের সুযোগতো আছেই। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা থাকলেও ভার্চুয়াল ক্লাস প্লাটফর্মের উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রম সকল সমস্যাকে দূর করে দিন দিন এই প্লাটফর্মকে করছে সহজে ব্যবহারযোগ্য।

করোনাকালে করোনার সুবাদে ভার্চুয়াল ক্লাস প্লাটফর্মেই অনলাইন ক্লাস সংক্রান্ত সকল সমস্যা সমাধান (ঔষধ) পাওয়া যাচ্ছে। যেটা একের (১) ভিতর দুই (২) নয় একের ভিতর একশ’র (১০০) সমতুল্য! তবে এই ঔষধের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য মোবাইল অপারেটরদেরকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন মানসম্মত ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দেশের যে সকল শিক্ষার্থীরা আর্থসামাজিক দুর্বল অবস্থার কারণে অনলাইন ক্লাস বা ভার্চুয়াল ক্লাসে যুক্ত হতে পারছে না তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এখনিই সময় এগিয়ে আসার, মানবিকতা আর মনুষ্যত্বের পরিচয় দেওয়ার।

বর্তমান সময়ে যখন বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস শেষ করে পরীক্ষার জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে আছে, তখন এই ভার্চুয়াল ক্লাস তাদের কাছে হতে পারে মরুর দেশে পানির ফোয়ারার মতো! কারণ এই প্লাটফর্মের মাধ্যমেই সহজ ভাবে সম্পন্ন করা যেতে পারে শিক্ষার্থীদের আভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন এবং নেওয়া যেতে পারে যেকোন ধরনের পরীক্ষা। তবে সেই পরীক্ষা গ্রহণ, প্রশ্ন প্রনয়ন এবং উত্তর প্রদান পদ্ধতি হতে হবে সৃজনশীল ও গঠনমূলক।

ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মতো সৃজনশীল উদ্ভাবনে এবং ব্যবহারে শিক্ষা ব্যবস্থা হোক সেশনজট মুক্ত, শিক্ষাজীবন হোক মধুর হতাশাবিহীন।

লেখকঃ শিক্ষক, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে এতো গড়িমসি কেন?

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা আটকে আছে শিক্ষার্থীদের । বিগত ৮ মাস ধরে ঝুলে রয়েছে এসব চূড়ান্ত পরীক্ষা। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে উচ্চ শিক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগদান করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। তাদের পক্ষে একটা বছর বসে নষ্ট হওয়া মানে বিরাট ক্ষতি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারবে, পরীক্ষা দিতে পারবে, পরবর্তী সেমিস্টারে উন্নীত হতে পারবে, ভর্তি কার্যক্রম চালাতে পারবে। তাতে কোনো অসুবিধা নেই। সারা বিশ্বের সব দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখন অনলাইনেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেই পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর জন্য তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য। অন্যদিকে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, দেশের ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় নয় লাখ ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তা ভাগ্যের হাতে ঠেলে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে কখন করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসবে তার জন্য।

আর একটি আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বাকি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখতে পেলাম না তারা লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট করেছে বা অন্য কোথায় হতে সফটওয়ার ক্রয় করেছে। প্রকৃতপক্ষে অনেকই ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে গাল-গল্প জোরালোভাবে সেমিনারে বললেও কাগজে কলমে এনালগ পদ্ধতিতে চলছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক বা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজট কমানোর বা দূরীকরণের পূর্ব-অভিজ্ঞতা আছে। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি ভেবে থাকে যে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমলে বা চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে সেশনজটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করবে-এটি অনেকেক্ষেত্রে বাস্তবতার বাইরের বিষয়।

সাম্প্রতিককালে দেখা গেল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটাই যদি হয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্তমান অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল নিতে সমস্যা কোথায়? সামাজিক যোগাযোগের কল্যাণে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা লিখেছে দেখলাম, “ভর্তি পরীক্ষায় কোটি কোটি টাকা পাবে তাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আগ্রহী। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আগ্রহ নেই।”

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউয়ুম কাফি নামের একজন শিক্ষার্থী আমাকে বললও, ”গত ২ সেমিস্টারের সকল পরীক্ষা বাকি আছে। এভাবে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া চলতে থাকলে আগামী বছর পরীক্ষা দিতে দিতে সকল সময় চলে যাবে। ছাত্রটি আমাকে প্রশ্ন করলো স্যার একজন ছাত্র যদি তৃতীয় বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে ৪র্থ বর্ষে সকল ক্লাস শেষ করে দেখা গেল, তৃতীয় বর্ষে কোন কারনে ফেইল করলে তার দায়িত্ব কে নিবে? সে আরও বললো শিক্ষার্থীরা একসাথে অনেকগুলো পরীক্ষা দিতে গিয়ে খারাপ করতে পারে সেটিও কেউ ভেবে দেখছে না।”

দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিচ্ছে আর কোন কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হাত গুটিয়ে করোনার অজুহাত দিচ্ছে। আমার একজন শিক্ষক আমাকে বলেছিলো পৃথিবীর সকল মানুষের হাত ২টি আর বাঙালির হাত ১টি বেশি সেটি হলো অজুহাত। এই কথাটি বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই যথোপযোগী কথা সেটি টের পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকটি পাবলিক সংবাদপত্রে দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মানববন্ধনও করলো এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল লোকের পরীক্ষার বিষয়ে বললে করছি, করবো, দেখছি, দেখেবো বলে কাজে বিলম্বে ঘটায়। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? সত্যিই বলতে কী শামসুর রাহমানের কবিতার মতো-উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ।

আমার একজন সহকর্মী রাগ করে বললেন,“পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যদি সদিচ্ছা থাকতো তাহলে তারাতো ভর্তি পরীক্ষার মতো শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আগেই নিতে পারতো। ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সময় মনে হচ্ছে শিক্ষা সেক্টরে কোন করোনা নেই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার সময় মনে হচ্ছে করোনা অনেক প্রভাব বিস্তার করেছে।”

আশা করছি, শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা মাথায় রেখে হলে কমসংখ্যক শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি বর্ষের শিক্ষার্থীদের সময় ভাগ করে ভর্তির পরীক্ষার মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ জরুরি বিষয় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট এন্ড ফাইন্যান্স বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ

মো. মজনুর রশিদ


আজ (২৪ অক্টোবর) জাতিসংঘ দিবস। ১৯৪৫ সালের এই দিনে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংস স্তূপের বিপরীতে শান্তি ও নিরাপত্তার মূল বার্তা নিয়ে গঠিত হয় জাতিসংঘ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২০ সালে গঠিত লীগ অব নেশনস মূলত ১৯৩৯ সালে বিশ্ব শান্তি রক্ষার্থে ব্যর্থ হয়। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নামে পৃথিবী পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।

যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৫ সালে। এই যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ হতবাক হয়ে পড়েন এবং বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার নতুন ভাবনায় তৎকালীন বিশ্ব নেতাদেরকে ভাবিয়ে তোলে।

সে ভাবনা সৃষ্টি করে ধ্বংসের পাথরের উপর দাঁড়িয়ে পৃথিবীর বুকে শান্তি, নিরাপত্তা, সৌহার্দ, স্বাধীনতা ও প্রগতির অঙ্গীকার নিয়ে আজকের জাতিসংঘ। জাতিসংঘ গঠনের সময় জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র ছিলো ৫১টি। বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৩টি। স্বাধীন জাতিসমূহের সর্ববৃহৎ সংগঠন হলও জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট জাতিসংঘের নামকরণের প্রস্তাব করেন। ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ সনদ কার্যকর হয়। সেই থেকে প্রতি বছর বিশ্বের জাতি রাষ্ট্রসমূহ ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস পালন করে থাকে।

জাতিসংঘ প্রধান ৬টি অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং এর ১৬টি বিশেষায়িত সংস্থা রয়েছে। জাতিসংঘের অফিসিয়াল বা দাপ্তরিক ভাষা ৬টি। বর্তমানে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৯ সালে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গসংগঠনগুলো হলো-
১. সাধারণ পরিষদ
২. নিরাপত্তা পরিষদ
৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
৪. অছি পরিষদ
৫. আন্তর্জাতিক আদালত
৬. সচিবালয়।

জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত সকল দেশ সাধারণ পরিষদের সদস্য। সাধারণ পরিষদে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটি করে ভোটের ক্ষমতা রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র ১৫টি। যার মধ্যে স্থায়ী সদস্য ৫টি রাষ্ট্র (যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন)। এদের সাংবিধানিক অধিকার ভেটো প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। ঠবঃড় অর্থ- ‘আমি মানি না’ এবং অস্থায়ী ১০টি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘে কোনো প্রস্তাব পাশ বা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থায়ী ৫ টি দেশ এবং অস্থায়ী ৪ দেশসহ মোট ৯টি দেশের সমর্থনের প্রয়োজন পড়ে। তবে স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের কেউ ভেটো দিলে সেই প্রস্তাব পাস বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। অছি পরিষদের- মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে নাউরু, নিউগিনি, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, ক্যামেরুন, পালাউ, অছি পরিষদভুক্ত একমাত্র অঞ্চল আইসল্যান্ড।

১৯৯৪ সালের পর থেকে সংস্থাটি স্থগিত রয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালত ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ অপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধের শাস্তি এই আদালতের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এই আদালতের বিচারের মাধ্যমে অনেক যুদ্ধ অপরাধীর বিচার শেষে ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে। জাতিসংঘ সচিবালয় হলো জাতিসংঘের সকল কর্মকাণ্ডের মূল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এর সদর দপ্তর অবস্থিত। ইউরোপীয় সচিবালয় অবস্থিত জেনেভায়। জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ট্রিগভেলী, নরওয়ে এবং বর্তমান মহাসচিব হলেন আন্তোনিও গুতেরেস, পর্তুগাল। জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র দুইটি – ফিলিস্তিন এবং ভ্যাটিকান সিটি।

জাতিসংঘের অন্য অঙ্গসংগঠনগুলো সদস্য রাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য দেশে নিজেদের সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নানারকম সমস্যার সমাধান, সুবিধা বৃদ্ধি, উন্নত জীবনমান গঠন এবং নিরাপত্তা দানে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে থাকে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ মানব কল্যাণমূলক কর্মসূচি- ডব্লিউএফপি (প্রধান কার্যালয়- রোম, ইতালি) এ বছর (২০২০ সাল) শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে। যুদ্ধবিগ্রহ, সংঘাত, খরা, ও অনাহারে থাকা মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মানের নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করে এই সংস্থাটি। এছাড়াও ইউএনএইচসিআর- ১৯৫৪ ও ১৯৮১ সালে, ইউনেস্কো- ১৯৬৫ সালে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী- ১৯৮৮ সালে, মহাসচিব কফি আনান (ঘানা) ও জাতিসংঘ ২০০১ সালে ও আপিসিসি- ২০০৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে।

জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের একটা গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। ১৯৭৪ সালে ১৩৬তম রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ প্রথম সদস্য পদ লাভ করে ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথ-এর। জাতিসংঘের মাধ্যমে মায়ানমারের সাথে বঙ্গোপসাগর বিজয় ছিল বাংলাদেশের বড় অর্জন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ব থেকেই জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের সম্পর্ক তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের শক্তিশালী ভিত্তিমূল। মেহেরপুর জেলায় গঠিত স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকারের (শপথ গ্রহণ, ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল) প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘে শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতসহ আরও কিছু বন্ধু রাষ্ট্র।

২০ অক্টোবর ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পত্র লিখে বলেন, ‘আপনারা যদি বিশ্বাস করেন যে, আমার দফতর আপনাদের উপকারে আসবে তাহলে আমি আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।থ এই যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় অনিবার্য ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভক্তি ঠেকানো অসম্ভব, এই দুর্ভাবনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের মস্ত শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে ওঠে।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করে এবং ৪ ডিসেম্বর ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করে। উভয় দেশ জাতিসংঘের মহাসচিবের নিকট আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ এনে পত্র পাঠান। মহাসচিব ৪ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিবেদন পেশ করেন। নিরাপত্তা পরিষদের ৯ সদস্য রাষ্ট্রের অনুরোধে ৪ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে জরুরী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

সোভিয়েত রাশিয়া ও পোল্যান্ড দাবি জানায় যে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে তাদের দেশের বক্তব্য প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে। আমেরিকা ও চীন এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। ফলে প্রস্তাব ভোটে দেওয়া হয় এবং যেকোনো উপায়ে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১১ ভোট এবং ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ভোটদানে বিরত থাকে। রাশিয়া ও পোল্যান্ড বিপক্ষে ভোট দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো প্রয়োগ করায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রক্ষা পায়। মুক্তিকামী জাতির নিকট এমন পরম বন্ধু আর কে হতে পারে। জাতিসংঘের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের ˜ব্যর্থহীন সমর্থন মুক্তিযুদ্ধের বৈশ্বিক বিজয় অর্জন করা সম্ভবপর হয়। জাতিসংঘের তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থায়ী প্রতিনিধি ইয়াকফ মালিক ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন হিসেবে অবহিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের মধ্য দিয়ে ইয়াকফ মালিক ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। বর্তমান রাশিয়া বাংলাদেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। বন্ধুত্বের এমন বন্ধন চিরকালের। জাতিসংঘ সে বন্ধনের আতুর ঘর।

বিশ্ব শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে জাতিসংঘের ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি বহু নেতিবাচক ভূমিকাও রয়েছে। অধিকিন্তু জাতিসংঘ বর্তমানে অনেকটা পুতুল সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কয়েকটি দেশের ইচ্ছা আর অনিচ্ছার সংগঠনে পরিণত হয়েছে বিশ্ব সংগঠনটি। এছাড়াও বহু দেশের স্বাধীনতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যার ইতিবাচক কোনো সমাধান আনতে জাতিসংঘ পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এছাড়াও, বহু বছর ধরে ফিলিস্তিনদের ওপর ইযরাইল রাষ্ট্রের নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, বাড়ি দখল, জমি দখল, গুম, অত্যাচার প্রভৃতি বন্ধে জাতিসংঘ পুরোপুরিই ব্যর্থ ও ক্ষমতা রাষ্ট্রের নিকট কুক্ষিগত।

মধ্য প্রাচ্যের অস্থিরতা এবং সংঘাত প্রশোমনে জাতি রাষ্ট্রসমূহের ভূমিকা বিতর্কিত ও হিংসাক্তক। ইউক্রেন, সিরিয়া, মিশর, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাশ্মীর, লাদাখ, ফকল্যান্ড দ্বীপ, লেবানন, উপজাতি ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সুরক্ষা, আর্মেনিয়া- আজারবাইজান সমস্যা, আফ্রিকার ক্ষুধা নিবারণ, জঙ্গি তৎপরতা, উগ্রবাদের উত্থান, মেক্সিকো, কিউবা, তিব্বত, পরিবেশ বিপর্যয়, কোরিয়া ও ইরান সমস্যা, পারমানবিক হুমকি, রাশিয়া- আমেরিকার মৌন সংঘাত প্রভৃতি বিষয় সমূহে জাতিসংঘের ভূমিকা অকার্যকর হিসেবে প্রমাণ মিলেছে বাস্তবে। এসব বিষয়ের যৌক্তিক সমাধান ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ক্ষেত্রসমূহে জাতিসংঘের ভূমিকা বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করে।

মো. মজনুর রশিদ
চেয়ারম্যান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সম্পাদক, বাংলাদেশ স্কাউটস গোপালগঞ্জ জেলা রোভার।

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন

 

 

নুসরাত মাহাজাবিন

চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া ছোট্ট একটি ভাইরাস নিমিষেই পুরো পৃথিবীকে স্থবির করে ফেলেছে। দীর্ঘ সাত মাস যাবত পুরো পৃথিবী করোনা প্রকোপে আতঙ্কিত। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনাভাইরাস এর বিস্তার রোধে ২৬ শে মার্চ থেকে বাংলাদেশ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।

প্রায় দুই মাসের বেশি সময় এই সাধারণ ছুটিতে অফিস, আদালত, গার্মেন্টস, কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ ছিল। কিন্তু এই ভাইরাসটির স্থায়ী সমাধান এখনো না পাওয়ায় সীমিত পরিসরে অফিসসমূহ খোলা হয়েছে। তবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এখন সবকিছু এখন স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে।

কোভিড-১৯ থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং মাক্স পরা। কিন্তু গণপরিবহনের দিকে তাকালে এর উল্টো পরিস্থিতি আমরা লক্ষ করে থাকি। বাস, ট্রেন, লঞ্চে মানুষের উপচে পড়া ভীড়। নির্দিষ্ট সিট সংখ্যা চেয়ে বেশি মানুষ যাতায়াত করে গণপরিবহনে। তাদের কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও তা তাদের কানে বা গলায় ঝুলতে দেখা যায়। যাত্রীদের তোলার সময় কোন রকম হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে না এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছেনা। যার ফলে করোনাভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।

সাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ হচ্ছেনা যথাযথ। সংক্রমণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী কেউ এ আইন অমান্য করে মাস্ক পরিধান না করলে বা স্বাস্থ্য বিধি না মেনে বাহিরে চলাচল করলে ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রায় এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে। তাই নিজেকে নিরাপদ রাখতে এবং নিজের পরিবারকে নিরাপদ রাখতে সচেতনতায় হতে পারে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়। তাই গণপরিবহনে কিংবা ভ্রমণে সাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

 

লেখক-
শিক্ষার্থী, ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

গবেষণা ও মান সম্মত উচ্চ শিক্ষায় দেশের রোল মডেল: বিইউপি

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


বাংলাদেশের শিক্ষা, গবেষণা ও সামরিক বিদ্যাকে আরও এগিয়ে নিতে ২৯তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ২০০৮ সালের ৫ জুন যাত্রা শুরু করে। ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রয়েছে। নিজস্ব জ্ঞানের মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন’ ব্রত নিয়ে বিইউপিতে শিক্ষা-গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

করোনাকালীন সময়ে বিইউপি শিক্ষার্থীদের পর পর ২টি সেমিস্টারের ফাইনালসহ সকল পরীক্ষা সমাপ্তের পথে যা দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাইলফলক। সাম্প্রতিককালে, বিইউপি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার তাদের ওয়েবসাইটে সংযুক্ত করেছে যার ফলে তারা ভবিষ্যতে যে কোন সংকটের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কাজে লাগাতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে সেন্টার ফর হায়ার স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের (সিএইচএসএস) মাধ্যমে এখানে এমফিল, পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। দেশি গবেষকদের পাশাপাশি বিদেশি গবেষকরাও এখানে গবেষণা করছেন।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনদর্শন, মতাদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু চেয়ার নামে গবেষণাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে ও গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২০১৮ সালে গবেষণা খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় তালিকায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ৯ম স্থানে ছিল যার ব্যয়ের পরিমাণ ছিল এক কোটি ছয় লাখ টাকা।

এ বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আদিবা আনিস বলেন, “উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতই গবেষণা শিক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে বিইউপি। এখানে সকল প্রয়োজনীয় উপকরণের যথোপযুক্ত সমন্বয়ে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে যে পাঠদান প্রক্রিয়া অনুসৃত হয় তা প্রশংসনীয় এবং শিক্ষক হিসেবে যারা নিয়োগ পান, তাঁরা একাধারে অনন্য ও নিজ গুণে প্রতিষ্ঠিত। এই প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত”।

লেখকের আরও কলাম পড়ুন

তারুণ্যের ভাবনা: বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ

বিচারহীনতার সংস্কৃতি: ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও আমরা

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- এখানে সাধারণ ও বেসামরিক পরিবারগুলোর মেধাবী শিক্ষার্থীরাও মানসম্পন্ন, উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বিইউপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিজস্ব গুণগত মান ধরে রেখে খুব দ্রুত শিক্ষাকার্যক্রমের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে। এর অধীনে এখন সশস্ত্র বাহিনীর ৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচটি অনুষদের মাধ্যমে ১৬টি বিষয়ে অনার্স ও ৯টি বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রমকে আরও উন্নত করার জন্য বিইউপি রূপকল্প- ২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিন পর্যায়ে এটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়টি ২০১৬-২০২০ সাল, দ্বিতীয় পর্যায় ২০২১-২০২৫ সাল ও সর্বশেষ পর্যায় ২০২৬-২০৩০ সালে শেষ হবে। এই কার্যক্রম সম্পন্ন হলে বিইউপির ২৩টি বিভাগের অধীনে মোট ১২ হাজার ৯০০ জন দেশ-বিদেশের ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা, গবেষণার সুযোগ পাবে। রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির জনবল বাড়ানোর বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

BUP JOURNAL’ নামে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের নিজস্ব গবেষণা জার্নাল আছে। এ নামেই জার্নালটি আইএসএসএন (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড সিরিয়াল নম্বরে)তালিকাভুক্ত রয়েছে। সারা বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা ধরনের খেলার আয়োজন থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ব্যাচ, বিভাগ, সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল, ভলিবল খেলার আয়োজন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেসের (সিএমএল) সেন্টারের অধীনে ফরাসি, আরবি, রাশিয়ান, জার্মান, জাপানিজ, ইংরেজি, বার্মিজ, টার্কিশ ও চীনা ভাষা শিক্ষা কোর্স আছে। বিইউপির সব প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম ভালো ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করতে অনেক সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে অনলাইন অ্যাডমিশন সিস্টেমে অনলাইন ফরম পূরণ, রেজিস্ট্রেশন, প্রবেশপত্র প্রদান, ভর্তি ব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলাফল প্রস্তুত করাসহ নানা কাজ করা হয়।

বিইউপির সব যানবাহন ভেহিকল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে সরকারি বা ব্যক্তিগত কাজের গাড়ি ব্যবহারের আগে ব্যবহারকারীরা ভেহিকল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের গাড়ির চাহিদা প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হিসাব সংরক্ষণ ও পেমেন্ট অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড পেরোল সিস্টেমে সম্পন্ন করা হয়। বিইউপি বিষয়টিকে আমাদের উচ্চশিক্ষার অন্যতম দুর্বল দিক হিসেবে বিবেচনা করে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রেজেন্টেশন ও কারিকুলাম স্কিলের ওপর তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে এবং অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাগত চর্চা বাড়াতে, সবার মেধার বিকাশ ঘটাতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস বিইউপি)-তে অনেক বৃত্তি ও ভাতা আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রধান কর্তৃক প্রবর্তিত বৃত্তি ছাড়াও বিউপির নিজস্ব বৃত্তি ও ভাতা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য ২১টি ক্লাব রয়েছে। প্রতি বছর এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। একাডেমিক উন্নয়ন বিষয়ে বিইউপির বিবিএ ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী মো. নাফিজুর রহমান বলেন, “আমাদের আন্ডার-গ্রাজুয়েটের কোর্সগুলো থিউরির পাশাপাশি প্রাকটিক্যাল থাকলে আরও প্রয়োগিক ও বাস্তবিক হবে।”

শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণিকক্ষের বাইরের শিক্ষাদান কৌশলগুলোর মানোন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষককে নিজ নিজ ফ্যাকাল্টি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। তাঁদের শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সে খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হিসেবে প্রকাশের পর প্রার্থীদের শিক্ষা ও সহশিক্ষা যোগ্যতা বিবেচনা করে শর্টলিস্ট করা হয়। তাদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার পর প্রেজেন্টেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্কিল যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিটি পদের বিপরীতে অন্তত তিনজন প্রার্থীকে উপাচার্যের নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

আমার জানা মতে, বাংলাদেশের অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এত নিবিড়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ করা হয় না। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নবনিযুক্ত শিক্ষককে সরাসরি ক্লাস নেওয়ার জন্য না পাঠিয়ে অফিস অব দি ইভ্যালুয়েশন, ফ্যাকাল্টি অব কারিকুলাম ডেভেলপমেন্টের তত্ত্বাবধানে ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্টের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এর পর ক্লাস নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সুতরাং দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গবেষণা, মান সম্মত শিক্ষা, শিক্ষক নিয়োগসহ সকল ক্ষেত্রে বিইউপি হতে পারে রোল মডেল।

লেখক: পিএইচডি গবেষক ।

শিক্ষকদের কান্না, নীরব মানবতা

এম ইকবাল বাহার চৌধুরী


কিন্ডারগার্টেন স্কুল তথা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক, অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক/ শিক্ষিকাবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। আপনারা জানেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশের একটি সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় সংগঠন।

এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে কিন্ডারগার্টেন তথা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে যার ধারাবাহিকতায় করোনা মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথে বর্তমান পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমিই এম ইকবাল বাহার চৌধুরী সর্বপ্রথম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আর্থিক সহায়তা চেয়ে একটি আবেদন করেছিলাম।

এরপর আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, অর্থ, সময়, শ্রম, মেধা ব্যয় করে এমন কোন কর্মসূচি বা পদক্ষেপ নেই যা আমরা করি নি। এত কিছুর পরও এই পর্যন্ত সরকারের টনক নড়ে নি বা আমাদের জন্য কোন প্রকার সহায়তা করেন নি।

দেখুন আজ সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে, শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশু পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে, কওমি মাদ্রসা খুলে দেয়া হয়েছে, ইংরেজি মাধ্যমের “ও” লেভেল, “এ” লেভেল পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছে কিন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের শিক্ষক সমাজকে বেকার করার যড়যন্ত্রে আমাদের প্রতিষ্ঠান গুলো ধবংস করে দেয়ার জন্য সর্বোপরি এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য, আমাদের শিক্ষার্থীদের ধ্বংস করার জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

যার ফলে আমরা আজ মানবেতর জীবন যাপন করছি, অথচ ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বসাই বসাই খাওয়ানো হচ্ছে। তাই এই মুহুর্তে আর কোন সাংবাদিক সম্মেলন, মানববন্ধন, অনশন বা কোন কর্মসূচি নয়, এইসব করা মানে জাতিকে বুঝ দেয়া, আই ওয়াশ, শিক্ষকদের শান্তনা দিয়ে নিজেদেরকে জাহির করা ও পদের পরিচয় ঘটানো এবং শিক্ষক সমাজ ও জাতিকে ধোঁকা দেয়া। এইসব অনেক করলাম, কোন লাভ হয় নি।

এইগুলো করে শিক্ষক সমাজের তথা আমাদের প্রতিষ্ঠান গুলোর ভবিষ্যতেও কোন লাভ হবে না। তাই বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদ সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনের আশ্রয় নেওয়ার। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত কয়েকজন আইনজীবীর সাথেও আমি কথা বলেছি।

যদি ১ নভেম্বর আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া না হয় তাহলে আমাকে যতই ভয় ভীতি দেখানো হোক না কেন, যতই বাধা আসুক না কেন, বাংলাদেশের কিন্ডারগার্টেন তথা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার জন্য, আমাদেরকে আর্থিক সহায়তা এবং সহজ শর্তে ব্যাংক লোন প্রদানের জন্য বাংলাদেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন ও ১০ লক্ষ শিক্ষকদের পক্ষে কিন্ডারগার্টেন তথা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সংগঠনগুলোর সম্মানিত নেতৃবৃন্দদেরকে সাথে নিয়ে আমি বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট করবো ইনশাআল্লাহ।

এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত প্রত্যাশা করছি। সংশ্লিষ্ট সকলেই প্রযোজনীয় মতামত ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করুন।

লেখাঃ এম ইকবাল বাহার চৌধুরী
চেয়ারম্যান,
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদ।