বিজয়ের মাসে তারুণ্যের ভাবনা

বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মোট সংখ্যার এক বৃহৎ অংশ জুরে ছিলো তরুণরা। সে সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল। বিজয়ের ৪৯তম বছরে এসে বিজয়ের মাসে বর্তমান তরুণরা কি ভাবছে,তাদের অঙ্গীকার কি, রাষ্ট্রের প্রতি তাদের প্রত্যাশা কি, এসব নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন – নুরুদ্দিন আহমেদ।

দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়ে নিয়েছে প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিজয়ী জাতী হিসেবে বাংলাদেশে যে প্রখরতার প্রদীপ প্রজ্বলন করার কথা ছিল,তা কি সত্যিকার রূপ দিতে পেরেছে?

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়ময়ের আখড়ায় পরিণত হওয়ায় বিজয়ী জাতি হয়েও সেই বিজয়ের স্বাদ ৪৯ বছরেও আস্বাদিত হচ্ছে না। তাই বিজয়ের এই মাসে তরুণ প্রজন্মের এক প্রতিনিধি হয়ে প্রত্যাশা করব, এসব অনিয়মের শৃঙ্খল খুব দ্রুতই বিনষ্ট করে সত্যিকারের বিজয়ী জাতির উত্তরসূরি হয়ে বিশ্বকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে প্রিয় ভূমি বাংলাদেশ।

তানভীর আহমেদ রাসেল
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে

শত-সহস্র ত্যাগের বিনিময়ে যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি,সে বিজয়ের মূল্যায়ন করতে জানা জরুরী। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোনো অপশক্তি যেন আমাদের ভুল পথে পরিচালিত না করে। তার জন্য তরুণ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে এবং শক্ত হাতে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের দমন করতে হবে। কারণ তরুণরা যেভাবে স্বদেশের হাল ধরবে, তার উপর দেশের ভবিষ্যৎ অনেকাংশেই নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র, প্রবীণ, নাগরিক সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সকলেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা আবশ্যক। সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।

সাফায়েত সিফাত
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

যুদ্ববিদ্ধস্ত বাংলাদেশ নানান চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অবস্থান করে নিয়েছে। এছাড়াও সেরা উদীয়মান অর্থনীতির দেশের তালিকায় সেরা দশে স্থান করে নিয়েছে। নারীরাও শিক্ষা,চাকরি,বাণিজ্য,রাজনীতিতে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নতির পথে হাঁটছে।

এতদসত্তেও নারীরা সম্পূর্ণ নিরাপদ নই। কিছুদিন পরপর পত্রিকার পাতা খুলতেই ধর্ষণের মতো ঘৃণ্যকর ঘটনার খবর চোখে পড়ে। সরকারে প্রতি আহ্বান; ধর্ষণ রোধকল্পে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হোক। ধর্ষণমুক্ত সমাজ চাই,এ হোক তারুণ্যের অঙ্গীকার।

মারুফ আহমেদ,
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্ন

১৯৭১ সালে বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, আমরা যেন সেই স্বাধীনতার সম্মান সমুন্নত রাখতে পারি সেটাই হওয়া উচিত প্রতিটা তরুণ যুবকের ভাবনা। দেশকে ভালোবেসে দেশের মাটিকে ভালোবেসে শহীদদের রক্তের মান রাখতে আমাদের সকলের উচিত দেশকে উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধশালী গড়ার লক্ষ্য নিজেকে প্রস্তুত করা। বাংলাদেশ যেনো বিশ্বের বুকে শির উঁচু করে থাকে।

সেই লক্ষ্য বাংলার সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সমাজের সকল অন্যায়-অনিয়ম,সুদ,ঘুষ, দুর্নীতি,মাদক,সন্ত্রাস,জঙ্গির রুখে দিতে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত কাম্য। একজন সন্তান তার মাকে যেমন ভালোবাসে, তেমন করে দেশ দেশের মাটিকে ভালোবাসতে হবে।

হাসানুর রহমান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন করতে হবে

একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এত বেশি মানুষের আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। প্রবাদ আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। বিজয়ের অর্ধশতকের প্রান্তে এসেও রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত দেখা যায় দুর্নীতি,অপরাধ,ধর্ষণ,খুন। এছাড়াও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে অর্থ পাচারকারী,অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী, প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ আমলাদের সংখ্যা।

এজাতীয় সকল অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা, চিকিৎসা,কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিটি নাগরিকের জন্য। তরুণদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে প্রতি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদগণের স্মৃতিতে পাঠাগার ও সড়কের নামকরণ করতে হবে। তবেই বিজয়ের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য অর্জিত হবে।

আব্দুল্লাহ আলম নুর
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ট্যাবু ভাঙার কাজে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে

ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অগণিত প্রাণের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের রাষ্ট্র, স্বাধীন বাংলাদেশ। এ দেশে স্বাধীনতা অর্জন হলেও সর্বস্তরের মানুষের আজও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়নি। বর্তমান তরুণ সমাজই পারে সর্বস্তরের মানুষদের মুক্তি দিতে।

আজকের তরুণরা যদি পিছিয়ে পড়া সমাজের জন্য লড়াই করে,প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে,দেশ থেকে বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের মতো ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে একটি মেয়েকে নবজীবন দান করতে পারে,অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দিতে পারে তাহলেই স্বাধীনতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। অধিকন্তু তরুণরা যদি নিজেদের রাজনৈতিক চেতনার সুষ্ঠু বিকাশ ঘটাতে পারে,তাহলে অভ্যন্তরীণ দুষ্টচক্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা ও সর্বোপরি উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারবে।

অনবিলা অনা
শিক্ষার্থী, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ।

ফিরে যেতে চাই মনকুটিরে জ্ঞানের দীপশিখা জ্বালানো চিরচেনা ক্যাম্পাসে

উজ্জ্বল মন্ডল কৃষ্ণময়ঃ বলছিলাম জাতির পিতার জন্মভূমি: গর্বিত গোপালগঞ্জে মধুমতি নদীর তীরে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের না বলা কথা।প্রাণ-প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানিতে বিকশিত হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

যে বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উদ্ভিদ সংগ্ৰহশালা হয়ে উঠেছে। সারাবছর নানা ধরনের ফুল ও পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত অনন্য ক্যাম্পাস। তবে শীতের সময় সবুজের ক্যাম্পাস ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে আসে। সকালে কুয়াশায় মোড়ানো শিশির ভেজা ক্যাম্পাস হঠাৎ প্রাণ ফিরে পায় ক্যাম্পাসিয়ানদের পদচারণায়।

সকাল-সন্ধ্যা শিক্ষার্থীরা আবেগ ভালবাসায় মেতে ওঠে ফুচকা, চটপটি, হোটেল ও চায়ের টোঙে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহশিক্ষা কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক গান-বাজনা, বন্ধুদের সাথে জয় বাংলা চত্বর, আইন চত্বর, শেখ হাসিনা চত্বর , অর্ঘ্য চত্বর, বাঁধন চত্বর ও লেক পাড়ে আড্ডা, আন্ত:বিভাগীয় ও আন্ত:হল ব্যাটমিন্টন, ভলিবল টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতায় উৎসব মুখর হয়ে ওঠে আমাদের প্রাণের বশেমুরবিপ্রবি।

আজকের করোনা পরিস্থিতিতে প্রাণোচ্ছল প্রিয় ক্যাম্পাস প্রাণ হারিয়েছে। শূন্য প্রান্তর মাথা উঁচু করে প্রতীক্ষা করছে কখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ শিক্ষার্থীরা তার সাথে লুকোচুরি খেলবে। সত্যি বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাণের বশেমুরবিপ্রবিকে মিস করছি।

কবিগুরুর ভাষায় বলতে চাই

আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু,
বিরহদহন লাগে তবুও শান্তি,
তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।

লেখক- আইন বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

ঘুরেফিরে সংবাদকর্মীরাই হামলার লক্ষ্য হন কেন!

আবু জাফরঃ একটা সময় ছিল যখন মানুষ ছিল জন বিচ্ছিন্ন, কুয়োর ব্যাঙ্গের মত নিজ গ্রাম বড়জোর স্বদেশই ছিল তার চেনা জগতের মধ্যে। তবে যারা এ বিচ্ছিন্নের জাল ছিন্ন করে পুরো বিশ্বের সব কিছু সবার কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছে তাদের সামনের সারিতেই সংবাদকর্মীদের অবস্থান। আছে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া। এগুলোর মাধ্যমেই ইতিহাসের পরতে পরতে বিভিন্ন সংবাদ সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল।

বিংশ শতাব্দীর অনেকেই ব্যস্ত কিভাবে মঙ্গল গ্রহে জায়গা রাখা যায়। কেউবা চাঁদের দেশে ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর কিন্তু পাশের ফ্লাটে যে একটা বৃদ্ধ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে বা পাড়ার অসহায় মেয়েটাকে হিংস্র হায়েনার দল গনধর্ষনক করছে তার খবর রাখে কে? একমাত্র সংবাদকর্মীগণ শত বাঁধা পেড়িয়ে ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরেন জাতির সামনে। যে গ্রহে সংবাদকর্মীদের এত অবদান এত প্রয়োজনীয় সেই সংবাদকর্মীরাই হয় নানামুখী নিপীড়নের শিকার।

তবে বিংশ শতাব্দীর এই প্রান্তে এসে সংবাদকর্মী যেন পুরো বিশ্বেই চোখের বালি হয়ে উঠেছে। এমনকি উন্নত দেশগুলোতে যে সংবাদকর্মীরা খুব স্বাধীন তাও বলা যাবে না। কেননা গত কয়েক মাস আগে কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলনের সময় কয়েক ডজন সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

প্রেস ফ্রিডম ট্রাকার নামে বেসরকারি একটি সংস্থা জানিয়েছে সাংবাদিকদের ওপর এমন ৯০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সিএনএন-এর সাংবাদিক ও ক্রুদের গ্রেফতারও করা হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয় সম্প্রতি চীন এবং উত্তর কোরিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশের সংবাদকর্মীদের উপর বিরূপ আচরণে বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

গেল কয়েক বছর আগে ছাত্র আন্দোলনে সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রায় ৪০ জনেরও অধিক সংবাদকর্মী আহত হয়েছেন। বেসরকারি সংস্থা ‘আর্টিকেল ১৯’ এই তথ্য উঠে এসেছিল। সেই বছরেই সিরাজগঞ্জে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল ছবি তোলার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স থেকে প্রকাশিত প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম৷ প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান ১৩৮তম ও নেবালের অবস্থান ১০৬তম৷ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান যথাক্রমে ১৩৯ ও ১৩১তম৷ অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নীচে রয়েছে বাংলাদেশ৷

তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সাংবাদিকদের নিরাপত্তার কথা নতুন করে সামনে আসছে। মূলত তারা তাদের পেশাগত দায়িত্ব থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে। অনেকেই মনে করছে প্রভাবশালীদের অপকর্ম যেন কখনো প্রকাশিত না হয় সে পথটি নিশ্চিত করতেই সাংবাদিকদের উপর নানা ভাবে অত্যাচার করা হয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ততদিন পর্যন্ত সম্ভব হবে না যতদিন সাংবাদিকরা হেনস্তার স্বীকার হয়৷ তবে আইনগত নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশে সাংবাদিকতা চর্চায়ও পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক-অভিনেতা, শিল্পী-ডাক্তার সবাই চান তাদের ঘিরে আলাপ-আলোচনা হোক। পত্রপত্রিকায় পাতায় ও টেলিভিশনের পর্দায় তাদের বিষয় নিয়ে কথা চলুক। অন্যদিকে সংবাদ মাধ্যম চায় এমন খবর যা শ্রোতা, পাঠক বা দর্শকের মন খুশি করে। তবে এ দুটি থেকে বের হয়েই কাজ করা উচিত বলে মনে হয়। আর তাতেই রক্ষা পাবে সমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি।

গত ১০ ডিসেম্বর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর বাজারে দুর্বৃত্তদের হামলায় তিন সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় উপনির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে দুলালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে তারা হামলার শিকার হন।এমন হতে থাকলে বিশ্ব হত আর পাবে না যুক্তরাষ্ট্রের মার্গারেট ব্রুক হোয়াইট ইংল্যান্ডের রবার্ট ফিস্ক আর ইরানের শিফা গার্দির মত সাংবাদিক দের। আর সাইমন ড্রিং ও কিশোর পারেখর মত সাংবাদিকরা জীবনবাজি রেখে আর কোন দেশে যুদ্ধ সংবাদ নিতে উদ্ভধ হবে না। তাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার কোন বিকল্প নেই।

লেখক- অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম ।

ঐতিহাসিক ২রা ডিসেম্বর, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও আওয়ামী লীগ সরকার

মোঃ খায়রুল ইসলাম

যেকোনো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হয় যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্বাধীনভাবে কাজ করে। স্বাধীনতার পর দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা জটিল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল।

পরবর্তীতে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা ঘটে। প্রায় দুই যুগ ধরে আত্মঘাতী তৎপরতায় লিপ্ত শান্তিবাহিনীর সাথে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ‘শান্তিচুক্তি’ নামক এক চুক্তি সম্পাদিত হয়।

তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু করে। তারা এ সমস্যা সমাধানের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শেষ পর্যন্ত এর সাফল্য হিসেবে ঐতিহাসিক এক আনন্দঘন মুহূর্তে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এ শান্তি চুক্তিতে সরকার পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসাত আবদুল্লাহ ও পার্বত্য জনসংহতি সমিতির পক্ষে সংগঠনের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়।

১৯০০ সালের পহেলা মে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় এবং প্রশাসনিক পুনর্গঠনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘শাসন বহির্ভূত এলাকা’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপর ১৯২০ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতি’ গঠিত হয় যারা ১৯৪৭ সালের ২০ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের পাকিস্তানি শাসন কায়েমের বিপক্ষে ছিল। অতঃপর ১৯৫৭ সালে র‌্যাডক্লিফ মিশন পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে।

১৯৬০ সালে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি হলে বিপুল সংখ্যক উপজাতীয় পরিবার তাদের ফসলি জমি ও বাস্তুভিটা হারায়। এ সময় বিপুল সংখ্যক পাহাড়ী জনগোষ্ঠী দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার উপজাতীয়দের মধ্য থেকে রাজাকার, ওসি, এ.এফ, হওয়ার জন্য লোক রিক্রুট করে এবং চাকমা রাজা ত্রিদির রায় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করে।

যার ফলে পাহাড়ীরা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকারের রোষানলে পড়ে। এরপর ১৯৭২ সালে উপজাতীয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসনের জন্য বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাছে দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হন। এই ব্যর্থতার ফলে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে সন্তু লারমার নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ নামে পাহাড়ি জনগণের একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে।

কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাদের বাঙালি হয়ে যাবার পরামর্শ দেন। এর ফলে পাহাড়ীরা নিয়মতান্ত্রিক স্বাভাবিক রাজনীতির প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি তাদের আর্মড ক্যাডার ফোর্স ‘শান্তিবাহিনী’ গঠন করে। পরবর্তীতে এ বাহিনী প্রথমে স্বাধিকার, পরে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাতে শুরু করলে পাহাড়ী-বাঙালি মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজারের অধিক মানুষ নিহত হয়।

শান্তি বাহিনীর গেরিলা কার্যক্রম ও সরকারি পদক্ষেপ: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান-এর হত্যাকান্ডের ফলে জনসংহতি সমিতির সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং সন্তু লারমা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান। ১৯৭৫-১৯৭৭ সালের মধ্যে শান্তিবাহিনী সামরিক দিক দিয়ে অধিকতর সংগঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে সংগঠিত শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

তৎকালীন সরকার সামরিক পথেই পাহাড়ীদের এ অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে দমন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে দরিদ্র ভূমিহীন প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন করেন। এ ঘটনা পাহাড়ীদের আতঙ্কিত করে তোলে।

৬০, ৭০ ও ৮০-এর দশকে মানবেন্দ্র লারমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মু জাতীয়তাবাদের বিকাশে যারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তারা হলেন বিহারী খাসা, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা প্রমুখ।

অতীত শান্তি আলোচনাগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। পার্বত্য সশস্ত্র সংঘাত অবসানের জন্য প্রথম জনসংহতি সমিতির সাথে আলোচনা করা হয় ১৯৮৫ সালে, জেনারেল এইচএম এরশাদের শাসনামলে। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই শান্তি আলোচনা চলে। এই সময় ১৯৮৯ সালের ২ জুলাই তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনের অধীনে স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করা হয়। এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয় উপজাতীয়দের মধ্য থেকে।

নিয়ম করা হয় প্রতি জেলায় ৩০ জন সদস্য রাখা হবে। যার এক-তৃতীয়াংশ বাঙালি এবং দুই তৃতীয়াংশ বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠী। কিন্তু সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনী এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। ফলে এই পরিষদের হাতে যে ২২ ধরণের ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ার কথা ছিল তা ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত শান্তি বাহিনীর সঙ্গে ১৩ দফা বৈঠক হয়।

তারপর ১৯৯৬ সালের ২২ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বসার পর শান্তিবাহিনীর সাথে আবার নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপন এবং রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হন তৎকালীন চীফ হুইফ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রধান বিষয়বস্তু হলো দ্বিস্তর বিশিষ্ট পরিষদ। যার প্রথমটি আঞ্চলিক পরিষদ, পৃথক তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। স্থানীয় সরকার পরিষদের পরিবর্তে জেলা পরিষদ গঠিত হবে। আঞ্চলিক পরিষদের সমন্বয় করবে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে এ তিনটি জেলা পরিষদ। যা দুই যুগের বেশি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।

মোট ২৬টি বৈঠক শেষে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অর্থাৎ দীর্ঘদিনের অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ নীতিমালার প্রধান প্রধান দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাক্ষরের পর থেকেই চুক্তি বলবৎ হবে।

বিডিআর ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলী কদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সরকারি, আধা সরকারি, পরিষদীয় ও সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সকল স্তরে নিয়োগে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হবে। একজন উপজাতীয় এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হবেন। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনসমূহ পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোকন করা হবে।

পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। যার পদমর্যাদা হবে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমান এবং তিনি অবশ্যই উপজাতীয় হবেন।পরিষদে মহিলাদের জন্য ৩টি আসন সংরক্ষিত রাখা হবে।দুই-তৃতীয়াংশ উপজাতীয় হবে।

পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর হবে। পরিষদের সাথে আলোচনা ছাড়া কোনো জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চল অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাবে। কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির মূল মালিকদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে। মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু হবে।

তিন জেলা সমন্বয়ে ২২ সদস্যবিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে ৫ বছর। সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে চাইলে সরকার পরিষদের সাথে আলাপ করবে। উপরের নীতিমালার ভিত্তিতেই সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ (ফলাফল): এই শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যমান যে হানাহানি তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে সন্তু লারমা দলের ৭৩৯ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। অন্যান্য বিরোধীরাও পরবর্তীতে অস্ত্র জমা দেয়। প্রায় ৬৪০০০ জন শরণার্থী দেশে ফিরে আসে। এই শান্তিচুক্তির ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আর্থ-সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

এ ব্যাপারে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকা মন্তব্য করে, ‘এই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের একটি বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়েছে।’ ইউনেস্কো বাংলাদেশের এই পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতিস্বরূপ “শান্তি পুরস্কারে” ভূষিত করেছে। পক্ষান্তরে এ চুক্তি ‘স্মরণকালের শান্তি চুক্তি’ হিসাবে স্বীকৃতি পায় যা আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বিরাট উপহার ছিল।

লেখক- শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।

বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক

মোঃ আশরাফুল আমিন: ইতিহাসের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাংলার মানুষের অস্তিত্বে মিশে থাকা মহাপুরুষের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়ন থেকে মুক্ত করতে বাঙালির অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে নিজের জীবনের সবটুকু দিয়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, বাঙালি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের জীবন টুকুও দিয়ে গেছেন৷

পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি মানুষ নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে কিন্তু বঙ্গবন্ধু সবসময়ই বাঙালি জাতির অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করেছেন৷ বাঙালি জাতির অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে তখনই পাকিস্তানি শোষক শ্রেণির কবল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বজ্র কণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু’র ডাকে সারা দিয়ে এদেশের আপামর জনসাধারণ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত ফেটে পরেছিল।

সেই মহান মানুষ’টির নেতৃত্বে আমরা পেয়েছিলাম লাল সবুজের পতাকা।আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন ভাবে বাঁচার জন্য একটি সোনার বাংলা। আজ হয়ত বঙ্গবন্ধু’র দেহ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু’র আত্মা আমাদের অস্তিত্বের মিশে আছে।সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী’র বিরূপ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যকে আমরা প্রাণ ভরে ঘৃণা করি।

যারা বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলার মত দুঃসাহস দেখায় তাদের এদেশে থাকার কোন অধিকার থাকে না। বঙ্গবন্ধু’র অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশে উগ্র মৌলবাদীদের কোন যায়গা নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। টুঙ্গিপাড়া’র সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের বঙ্গবন্ধুর জন্ম । বঙ্গবন্ধু এদেশে ধর্মীয় জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক উদ্যোগে প্রথম ইসলামিক ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু’ই এদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করে ধর্মীয় শিক্ষার যাত্রা শুরু করেছিল। বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে যায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন সময় সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু’ই প্রথম ইসলামের পবিত্র ইবাদত হজ্জ পালেন জন্য প্রয়োজনীয় সু-ব্যবস্থা করেছিলেন এমনকি সরকারি কোষাগার থেকে হজ্জের জন্য আর্থিক অনুদান দিয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন৷ বঙ্গবন্ধুর কাছে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় চির ঋণি। একটা শান্তিময় রাষ্ট্রের জন্য এমন কিছু নেই যা বঙ্গবন্ধু করে যান নি।

এমন শান্তিময় রাষ্ট্রের সম্প্রীতি যারা নষ্ট করতে চায় সেই মৌলবাদীদের বিষ দাঁত ভেঙে দিতে হবে। ধর্মান্ধ লোকগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য গুলো আড়াল করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এদেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় ওরা এই বাংলা’র জমিনে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ কায়েম করতে চায়। মূর্তি তৈরি করা হয় উপাসনালয়ে পূজা করার জন্য।

মূর্তি কে ভাগ্যবিধাতা, রিজিকদাতা,শক্তিদাতা ইত্যাদি আসনে বসানো হয় যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শিরক। কিন্তু কখনো কি ভাস্কর্য বানানো হয়ছে পূজা করার জন্য,নাকি কখনো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে পূজা করা হয়ছে? কখনো না। ভাস্কর্য একটি প্রাচীনতম শিল্পকলা, এটি একটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য,শিল্পকলা রুচিবোধের অস্তিত্বের নিদর্শন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ভাস্কর্য হাজার বছর পূর্বেও ছিল বর্তমানেও আছে।কিন্তু হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে এটা ভেবে দেখার বিষয়! বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য অপসারণ করার মত দুঃসাহসিক মন্তব্য কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? এরা সব সময়ই ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করতে চায়। নিজের রাজনৈতিক পায়দা নিতে ধর্মকে ব্যবহার করে। ধর্মকে পুঁজি করে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নষ্ট করে বাংলাদেশের মাঠিতে মৌলবাদ কায়েম করতে চায়।

এদের প্রতিহত করার এখনি সময়। আর যদি কেউ বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য নিয়ে বিরূপ প্রশ্ন তোলে তাহলে ঐ উগ্র মৌলবাদীদের হাড় গুড়িয়ে দেওয়া হবে৷ আজ কবিতার ভাষায় বলতে চাই –

” যতদিন রবে পদ্মা যমুনা
গৌরি মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান
দিকে দিকে আজ রক্তগঙ্গা
অশ্রুগঙ্গা বহমান
তবু নাহি ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান। “

বঙ্গবন্ধু থাকবে আমাদের হৃদয় মন্দিরে। বঙ্গবন্ধু থাকবে আমাদের অস্তিত্বে। বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য থাকবে সারা বাংলা’র পথে প্রান্তের।।

জয়া বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু

মোঃ আশরাফুল আমিন।
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

নবনিযুক্ত উপাচার্য নিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম কৃষি শিক্ষার আতুড়ঘর, একই সাথে হাজারো কৃষিবিদ তৈরীর সূতিকাগার। ১৯৩৮ সাল থেকে কৃষিবিদ তৈরীর গুরুদায়িত্ব পালন করে শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ মূলনীতিকে সামনে রেখে বাংলার আপামর কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষির জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে পৌছিয়ে দেশের উত্তরোত্তর উন্নতিতে অনেকটাই অবদান রাখছে।

১৯৩৮ সাল থেকে ২০০০ সাল অবধি অবিভক্ত বাংলা, পাকিস্তান শাসনামল,বাংলাদেশ সৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে কৃষি শিক্ষার এই প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠটিরও নামের রদবদল ঘটে।সর্বশেষ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপায়িত হয়। গত ১৭ ই নভেম্বর ২০২০ বিশ্ববিদ্যালয়টির ৭ম উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ড.মোঃশহীদুর রশীদ ভূইয়া।

নবনিযুক্ত উপাচার্য নিয়ে শেকৃবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা জানাচ্ছেন “দি ক্যাম্পাস টুডে” এর শেকৃবি প্রতিনিধি মাজেদুল ইসলাম ।

ইমরান খান
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
কৃষি অনুষদ -৭৬ ব্যাচ

“কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও সমাজের অগ্রগতিতে অবদান রাখা উজ্জ্বল সারথিদের প্রস্তুত করে চলেছে। প্রতিবছর এখান থেকে বের হচ্ছে মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট, যাঁরা দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাখছে অসামান্য অবদান। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী কর্তৃক নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও কৃষিতে নতুন মাত্রা প্রদানে অনেক ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে গবেষণা ক্ষেত্রে তুলনায় যে পিছিয়ে পড়েছে, এটা অস্বীকার করার অবকাশ নেই।

রাজনৈতিক তেলবাজিতে সুবিধা গ্রহণ, ভালো মানের গবেষকদের কম মূল্যায়ন করার কারনে গবেষনায় আগ্রহ হারাচ্ছে উঠতি গবেষকগন। তবে নতুন ভিসি নিযুক্ত হওয়ায় অনেকেই দেখছেন আশার আলো। কথা ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মনে হচ্ছে অন্যান্যদের তুলনায় ভালো কিছু অবদান রেখে যাবেন। সবাই তো আশার বাণীই শোনায় কিন্তু চেয়ারে বসলে অনেকেরই এসব আর মনে থাকেনা।

আবার এসব স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে শত ঝড়-ঝাপটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। স্যারের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে সবার আগে সেশন জট কমানো, ব্যবহারিক শিক্ষা হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে ইন্টার্নির ব্যবস্থা করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, এলাকাপ্রীতি ও দূর্নীতি মুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। প্রিয় এই ক্যাম্পাসে হাজারো স্বপ্নবানের ভিড় জমুক। স্বপ্ন জয় থেকে বিশ্বজয়ের গল্প বেরিয়ে আসুক।”



বিজয়া রানী বিশ্বাস
শিক্ষার্থী, মাস্টার্স, কৃষিতত্ব বিভাগ।
৭৪তম ব্যাচ,কৃষি অনুষদ

“অধ্যাপক ড.মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া স্যারের মত একজন জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত কৃষিবিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে পেয়ে আনন্দিত।আশা করি তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান আরো সমৃদ্ধশালী হবে।যার পরিপ্রেক্ষিতে উপমহাদেশের সর্বপ্রাচীন বিদ্যাপীঠ শেকৃবি আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে কৃষি শিক্ষার সবচেয়ে আধুনিক ও অনুসরণীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে।

এছাড়াও তিনি এতদিন যেভাবে সফলতার সাথে কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ক বই ও প্রবন্ধ লিখে সবাইকে কৃষি বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন তা অনুপ্রেরণীয়।দায়িত্ব পালন করছেন শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর,বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সভাপতিসহ নানা সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে।তাই আমরা আশাবাদী,তার হাত ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আরো সাফল্যের দেখা পাবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।তবে সেইসাথে সেশন জট দূরীকরণ,শ্রেণীকক্ষ ও পরীক্ষা হলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা আশু প্রয়োজন।এছাড়াও উদ্ভূত মহামারী পরিস্থিতিতে সকল শিক্ষার্থীর জন্য অনলাইন ক্লাসের সুযোগ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের গবেষণার অচলাবস্থা নিরসন,হলের আবাসনব্যবস্থা আধুনিকীকরণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।”



মওদুদ আহমেদ
৭৪ ব্যাচ
কৃষি- অর্থনীতি বিভাগ

“প্রায় তিন মাসের ব্যবধানে নতুন উপাচার্য পেলো শেকৃবি।স্যার একজন গুণী মানুষ,সেই হিসেবে আশা করবো স্যার ওনার দূরদৃষ্টি,প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় খাতে উন্নয়ন করবেন।।আমি ব্যক্তিগতভাবে চাইবো,বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলাম টা যেন স্যারের সময়ে আর একবার রিভিউড হয়।কৃষি অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে কেন আমাকে মাছ/শাক-সবজি/পোকামাকড় এর বৈজ্ঞানিক নাম মুখস্থ করতে হবে???সব অনুষদ থেকে এরকম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া অপ্রয়োজনীয় কোর্স গুলো থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।সেই সাথে ব্যবহারিক ক্লাস ও ক্লাসরুমের মানোন্নয়নের দিকেও দৃষ্টি অনুরোধ থাকবে।একজন দক্ষ প্রশাসক হওয়ার জন্য স্যারের জন্য শুভকামনা থাকলো।”



কাশফিয়া তারান্নুম
৭৫ ব্যাচ
এগ্রিবিজনেজ এন্ড ম্যানেজমেন্ট অনুষদ

“সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শেকৃবি-র ভিসি প্রফেসর ডঃ মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া স্যারকে অভিবাদন জানাচ্ছি। তিনি একজন আদর্শ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘসময় ধরে পরিচিত।এই লেখাটির মাধ্যমে তাঁর কাছে “সেশনজট” নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরতে চাই। বরাবরের মতই সেশনজট শেকৃবির জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধির মত, যা প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরবর্তী কর্মজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সিটি কুইজ না হওয়া, পরীক্ষাহলের ঘাটতি থাকায় ফাইনাল পরীক্ষায় সময়মত বসতে না পারা, ফলাফল সময়মত প্রকাশে ব্যর্থ হওয়া-সেশনজটের অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করি। তাই একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন, ফলাফল সময়মত প্রকাশ, পরীক্ষাহলের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে সেশনজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেতে পারে। শেষবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার আশা থাকবে সম্মানিত ভিসি স্যারের হাত ধরে শেকৃবির ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীরা একটি “স্থায়ী সেশনজটমুক্ত” শেকৃবি উপহার পাবে এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠকে আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবেন।”



সিফাত রহমান
কৃষি অনুষদ -৭৭ ব্যাচ

“প্রথমত নবনিযুক্ত উপাচার্য মহোদয়কে অভিনন্দন জানাই আগামীর শেকৃবিকে ঢেলে সাজাবে এমনটাই আশা করছি।আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সেশন জট মুক্ত সেমিস্টার ,অধিক ল্যাব ফ্যাসিলিটি,ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত গবেষণা ক্ষেত্র তৈরি, ক্লাস রুম বৃদ্ধি, বস্তি উচ্ছেদ, হল সিট বরাদ্দে শিক্ষার্থী তথা দলীয় চাটুকারদের হস্তক্ষেপ রহিত করা,সৌন্দর্য বর্ধন সহ বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ আশু গ্রহণ করবেন বলে উপাচার্য মহোদয়ের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। শেকৃবি যেন শুধুমাত্র দলীয় সরকারের লেজুরভিত্তিক রাজনীতির আতুরঘর না হয়ে সার্বজনীন সংগঠন করতে দেওয়ার উদার মানসিকতা এবং শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয় এবং একজন প্রকৃত মানুষ হওয়ার কারখানা হতে পারে।”



ফারজানা ফাতেমা
কৃষি অনুষদ -৭৮ ব্যাচ

“অধ্যাপক ড.মোঃ শহীদুর রশীদ স্যার এর মতো একজন মহানুভব শিক্ষক কে উপাচার্য হিসাবে পেয়ে আনন্দিত l আশা করব উনি সকল বাধা অতিক্রম করে আমাদের শেকৃবি কে আরো উন্নতমানের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলবেন -সেই সাথে সেশন জট কমানো ,হল এর যাবতীয় সমস্যা গুলো দূরীকরণ ,পরীক্ষা পিছানো বন্ধ করা , স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতি মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।কৃষি গ্রাজুয়েটদের দীর্ঘদিনের চাওয়া কৃষিতে ইন্টার্ণশিপের ব্যবস্হা করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবেন।

এছাড়াও,দেশ সহ বিদেশী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগসূত্র ত্বরাণিত করে উচ্চ শিক্ষার জন্য শেকৃবি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের হার বৃদ্ধি করার চেস্টা করবেন।শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটো -learn to feed the nation এর বাস্তবিক প্রতিফলনে গবেষণা খাতের প্রচার ও প্রসারণে শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য হিসেবে শিক্ষার্থীদের বিজয় সারথী হিসবে অগ্রজের গুরুদায়িত্ব পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্তি করছি।স্যারের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।”

শিক্ষায় শিক্ষার অবক্ষয়

মো শাকিল আহমেদ

সকালে কোন একটা অনলাইন পোর্টালের নিউজ পড়লাম, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর পলিটেকনিক নিয়ে ভাবনা। নিউজ টা পড়ে যতটুকু বুঝেছি সরকার শিক্ষা ব্যাবস্থার আমুল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। জানিনা কতটুকু ফলপ্রসু হবে।
তবে শিক্ষা ব্যাবস্থার যে পরিবর্তন করা উচিৎ সেটা যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বুঝেছে তাতেই কিছুটা স্বস্থি পাচ্ছি। জানিনা তাদের চিন্তাভাবনা বা আমাদের নাগরিক চিন্তাভাবনা কতটুকু মিল থাকবে। তবে সাধারণ নাগরিক হিসেবে যতটুকু আমরা চাই হয়তো শিক্ষা ব্যাবস্থার পরিবর্তন টা আমাদের চাওয়া মতই হবে।

শিক্ষা ব্যাবস্থা সম্পর্কে বলার আগে, নিজের সম্পর্কে ২-৪ টা কথা বলি। আমি হয়তো অযথা বিষয় নিয়ে কথা বলি। মানে আমার কাছে বিষয় গুলো কাজের কিন্তু অন্যের কাছে এগুলো শুধুই অযথা।

কারন নাগরিক জীবনে দেশ বা জাতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা থেকে সাধারণ নাগরিক কে ইচ্ছাকৃত ভাবেই দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। তাইতো সবকিছু দেখা সত্বেও নিজেকে চুপ করিয়ে রাখতে হয়। আর সেজন্য আমার আলোচ্য বিষয় গুলো অনেকের কাছে অযথা মনে হবে,যদিও বিষয় টা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

“শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড” এটা ছোটবেলা পড়েছি। কিন্তু এই শিক্ষা দিয়েই যে একটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে তাকে পঙ্গু করে নিজের অধিনস্ত করে রাখা যায় সেটা আমরা আমাদের আধুনিক সমাজে পরিলক্ষিত করছি।
আধুনিক সমাজের শিক্ষা কে ব্যাবসায় রুপান্তর করে একদিকে মুনাফা ভোগের প্রতিযোগিতা অপরদিকে ভয়ানক ছাত্র রাজনীতির অপছায়া দিয়ে জাতিকে মেরুদণ্ড হীন করে রাখার প্রচেষ্টা টা আমরা ছাত্রসমাজ খুব ভালোভাবেই গ্রহন করেছি।

ছোটবেলা থেকে আমরা পরিবার থেকে শুনেছি “বাবা, ভালো করে পড়ালেখার কর,তাহলে ভালো চাকরি পাবি,আর জীবন স্বার্থক “।
জানিনা ভালোভাবে পড়ালেখা করে কার জীবন কতটা স্বার্থক,যদিও স্বার্থক হয়েছে কিন্তু প্রকৃত মানুষ হতে পারিনি অনেকে,তাইতো দেশের বিশেষায়িত পদগুলোতে আজ শুধু ঘুষ বানিজ্য আর আত্নসাৎ করার তীব্র প্রতিযোগিতা।

ভেবে দেখুন দেশের যত বড় বড় দুর্নীতি করে সেগুলো কে নীতি বানিয়েছেন, তারা সবাই কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত। কারন দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার মূলনীতি হলো ভালো চাকরি বা ভালো জীবন। কিন্তু ভালো মানুষ যে হতে হবে আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় সে শিক্ষা আছে কিনা আমি জানিনা।

শুধু ক্লাস টেন পর্যন্ত বা কয়েকটা শ্রেনীতে ভ্যালুলেস ২-৩ অধ্যায় আছে নৈতিকতার। সেটাও একজন শিক্ষিত উচ্চ শ্রেনীর কর্মকর্তার কতটুকু মনে আছে, বা তার সে শ্রেনীতে তিনি কতটুকু নিজের উপর প্রয়োগ করেছে, সে ব্যাপারে আছে বিস্তর সমস্যা। তাইতো নৈতিকতার প্রশ্নে আমরা আপোষহীন হলেও বাস্তবিক সমাজে এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তবে আছে দু চারটা সমাজের কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত অববাহিকায়।

দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার অন্যতম বড় লক্ষ্য হলো সরকারী চাকুরি। অথচ এখানে যে কতভুলভাল আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে,বা প্রতিনিয়ত হচ্ছে, সে সম্পর্কে হয়তো আমরা কখনোই চিন্তা করিনি,কারন আমাকে সেভাবে শিক্ষা দেয়া হয়নি। কিছু ভুল বা অপ্রয়োজনীয় বিশদ ভাবে আলোচনা করার ইচ্ছে টা দমিয়ে রাখতে পারলাম না, কি বলেন করেই ফেলি নাকি??

১. ২০০৯ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির মৃত্তিকা অনুষদ থেকে অনার্স ও মাষ্টার্স করা গোল্ড মেডেলিষ্ট একজন বিজ্ঞানি জার্মানির University Of Hehenhiem থেকে পিএইচডি করা একজনকে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখেছি৷ গাজিপুরে অবস্থিত কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর একটা নিয়োগ পরীক্ষা তে নাকি তিনি পাশ করতে পারেনি। না করার কারন হিসেবে তিনি জানান,সাধারনজ্ঞান বিষয়ে ফেল করেছেন।

কারন তিনি মৃত্তিকা অনুষদে পড়ে কতসালে কার বিয়ে হয়েছে,বা সন্তান হয়েছে,বা কতসালে কে প্রথম ক্রিকেটে হেট্রিক করেছে সেটা সে জানেনা। সে জন্য তার চাকরি হয়নি। পরে তিনি সেই ইউনিভার্সিটিতে তার ডিপার্টমেন্টের একজন প্রফেসর হিসেবে জয়েন করে, আজ তিনি সে ইউনিভার্সিটির অন্যতম একজন রিসার্চার হিসেবে কর্মরত আছেন।

পিএইচডি করে তিনি দেশে ফেরত এসেছিলেন জনগনের টাকায় ভার্সিটিতে পড়ে দেশকে কিছু দেয়ার জন্য। কিন্তু আমার শিক্ষা ব্যাবস্থা বা পরীক্ষা পদ্ধতি তাকে সুযোগ দেয় নি,এমন হাজার হাজার উদাহরণ আমাদের সমাজে অহরহ।

২. আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৫ পাশ করা গুগলের প্রথম বাংলাদেশী প্রিন্সিপাল সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার হওয়া “জাহিদ সবুর” কিন্তু বেসিস বা বাংলাদেশী কোন সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি পাননি পাশকরার দীর্ঘ ২ বছর৷ অনেক কোম্পানিতে ঘুরে শেষে কোন এক বন্ধুর পরামর্শে গুগলে আবেদন করেন এবং ২০০৭ সালে তিনি গুগলে জয়েন করেন, এবং বর্তমানে তিনি ব্যাঙ্গালোর ইন্ডিয়া তে গুগলের অফিসে কর্মরত আছেন।

তার একটা আর্টিকেল পড়ে জেনেছিলাম, তিনি বাংলা বা সাধারনজ্ঞান খুব একটা পারতো না,কারন তিনি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে এসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে ইন্জিনিয়ারের পোষ্টে অলরাউন্ডার চাওয়া হয়। বলেন তো একজন সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারের বাংলা,মেথ বা সাধারণজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কি?

৩. বর্তমান সমাজের সবচেয়ে মানে তরুন সমাজের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় সরকারী জব,চাহিদার শীর্ষে থাকা ” বিসিএস ক্যাডার”। এখানেও অনকে বড় একটা গলদ রয়েছে। বিসিএসের পরীক্ষা দেয়ার নূন্যতম যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান। কিন্তু প্রিলি থেকে লিখিত দুটো পরীক্ষাতেই পরীক্ষার বিষয়বস্তু বা প্রশ্নের ধরন হলো, ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনীর পাঠ্যপুস্থকের পঠিত বিষয় বস্তু। যদি আমার পরীক্ষার প্রশ্ন দশম শ্রেনী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা হয়,তাহলে স্নাতক পর্যন্ত জনগনের টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বা ইন্জিনিয়ারিং এ পাশ করিয়ে প্রশাসন ক্যাডার বানানোর উপকার টা কি? প্রতিবছর বুয়েটের অনেক ইন্জিনিয়ার প্রশাষন ক্যাডারে বিসিএসে জয়েন করেন। এখান চিন্তা করুন,একজন মেডিকেলের ছাত্র বা ইন্জিনিয়ারিং এর ছাত্র বা ছাত্রীকে প্রশাষন ক্যাডার বানিয়ে জাতির কতটাকা নষ্ট করা হলো?

লেখক
মো শাকিল আহমেদ
শিক্ষার্থী
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

আজারবাইজানের জয়, মুসলিম বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত!

মুহিব মাহমুদ


নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছিল আপাতদৃষ্টিতে তা রাশিয়ার মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তির মাধ্যমে অবসান ঘটলো। যদিও এই চুক্তির প্রতিবাদে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে হাজারে মানুষ প্রতিবাদ করছে,প্রতিবাদকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে পর্যন্ত হামলা চালিয়েছে।

১৯৯২ সালে জাতিগত আর্মেনিয়ানদের কাছে হারানো ভূমি দীর্ঘ ২৮ বছর পর আজেরি জনগন আবারো ফেরত পেতে যাচ্ছে।দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার এ সংঘাত বহু পুরনো ঘটনা। দুটি দেশই একসময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য ছিল। নাগোর্নো-কারাবাখ একটি বিতর্কিত অঞ্চল,তবে এটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হাজারো মানুষ হতাহত হয়েছে,আজারবাইজানের গানজা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে তবুও আজারবাইজান একটুর জন্যও পিছু হটেনি। নাগোরনো কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্ট হয়তো আজেরি বাহিনী উদ্ধার করতে পারেনি,তবে গুরুত্বপূর্ণ শহর শুশা এবং কাচিন করিডর সহ আজেরিদের দখল হয়ে যাওয়া জমির ৭০ ভাগ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রশ্ন হল মুসলিম প্রধান আজারবাইজান খ্রিস্টান প্রধান আর্মেনিয়ার সাথে যুদ্ধে পেরে উঠলো কিভাবে? উত্তর একটাই তুরস্ক! এই যুদ্ধে পাক্কা খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন এরদোগান। আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধে প্রথম থেকেই আজারবাইজানকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছে তুরস্ক।

আজারবাইজান ও তুরস্কের জনগন দুই দেশ এক জাতি হিসেবে পরিচিত। বিশ্লেষকরা এখন এটা বলার চেষ্টা করছেন,আজারবাইজান এই যুদ্ধে জিততে পেরেছে একমাত্র তুরস্কের উন্নত প্রযুক্তির ড্রোনের কারণে। আজেরি জনগণও তুরস্কের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করেনি,তারা রাজধানী বাকুতে জয়ের উল্লাস করছেন তুরস্ক আর আজারবাইজানের পতাকা নিয়ে।

এই যুদ্ধে সবচেয়ে বড় অর্জন আজারবাইজানের দখল হয়ে যাওয়া শহর শুশা। যে শহরে দীর্ঘ ২৮ বছর পর এখন থেকে পবিত্র আযানের ধ্বনি শোনা যাবে।

এটা কি মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি বড় বিজয় নয়! যেখানে মুসলিম বিশ্ব ক্রমাগতভাবে হারিয়েছিল তাদের পবিত্র শহর জেরুজালেম,সিরিয়ার গোলান মালভূমি কিংবা মিশরের সিনাই উপত্যকা। আজারবাইজান-আর্মিনিয়া যুদ্ধের পর এখন এটা বলার সময় এসেছে,মুসলিমরা একত্রিত হতে পারলে তাদের হারিয়ে যাওয়া গৌরবময় ইতিহাস ফিরে পাওয়া সম্ভব।

শিক্ষার্থী
রসায়ন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সাবমেরিন রাজনীতি : ভূ-রাজনীতির কবলে বঙ্গোপসাগর

 

মোঃ আশরাফুল আলম আকাশ

অনেক আগে মার্কিন এক অর্থনীতিবিদ তার লেখা এক কলামে বলেছিলেন, ” সমুদ্র যার বিশ্ব তার”।
বিংশ শতাব্দীর দিকে এসে আমরা তা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি। কারণ বিশ্ব বানিজ্যের ৯০ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানী হয় এই সমুদ্র পথেই। সমুদ্রের এ বানিজ্য নীতি শুধু মাত্র এখন আর বানিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এর বিস্তৃত হয়েছে সামরিক ক্ষেত্রে তথা বৈশ্বিক ও আন্ঞ্চলিক ভু-রাজনীতিতে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সমুদ্র রাজনীতির ধাক্কা বঙ্গোপসাগরে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অনেক আগে থেকেই বিশ্ব মোড়লদের নজর ছিল এই উপসাগরে। বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রত্যক্ষভাবে এই রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে।সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার এর সাবমেরিন রাজনীতি যেন ব্যাপারটিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

সময়টা খুব বেশি দিনের নয়। ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে এবং ২০১৪ সালে ভারত থেকে বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল যা দেশটির সমুদ্র সম্পদ অন্বেষণ এবং এর সঠিক ব্যবহারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যার ফলে দেশটির সমুদ্র সীমান্ত রক্ষার জন্য নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসাবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হয়েছে চীনের ব্যবহৃত দুটি সাবমেরিন ” নবযাত্রা” ও ” জয়যাত্রা”।

তবে আসল কথা হলো বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্রয় বঙ্গোপসাগরের রাজনৈতিক পেক্ষাপট যেন আরও জটিল করে তুলেছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর কাছে। কারণ বাংলাদেশ এমন একটা সময় সাবমেরিন ক্রয় করলো যখন কিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমার এর সাথে সামরিক উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌছিয়েছে।
কিছুদিন পরে খবর এলো মিয়ানমার স্বল্প মাত্রার হালকা টর্পেডো নিতে যাচ্ছে ভারত থেকে এবং ভারত ২০১৭ সালে মিয়ানমার নৌবাহিনীকে টর্পেডো সরবরাহ করেছিল। এবছর মিয়ানমার ভারত থেকে aবারও একটি সাবমেরিন ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা ভারত রাশিয়া থেকে ক্রয় করেছিল ১৯৮৮ সালে।

এখন আসল বিষয় পর্যালোচনা করা যাক, বাংলাদেশ -মিয়ানমার এর সাবমেরিন রাজনীতি কি আসলেই শুধুমাত্র দেশ দুটির মধ্যে সীমাবদ্ধ? প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-মায়ানমার এর সামরিক উত্তেজনা চলমান এটা ঠিক তবে পর্দার উল্টো পিট হলো বাংলাদেশ -মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে চীন-ভারতের সামরিক অধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলসীমানায়। শুধুমাত্র ভারত-চীন নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের এই উপসাগরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলমান।

চীন ইতিমধ্যে জিবুতিতে একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে। শ্রীলঙ্কার একটি বন্দরও তারা ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে। এমনকি মালদ্বীপ এর একটি দ্বীপ তারা ৫০ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সেখানেও তারা সামরিক কার্যক্রম চালাতে পারে। বঙ্গোপসাগর ঘিরে চীনের এ আগ্রাসী মনোভাব ভারতকে নতুন করে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ভাবতে বাধ্য করছে। তাই যখন বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্রয় করলো ঠিক তখন সাবমেরিন বিষয়ে মায়ানমার এর ও আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। তাই মায়ানমার যাতে আবার চীনের কাছে সাবমেরিন না নেন এজন্য তড়িঘড়ি করে ভারত মিয়ানমারকে সাবমেরিন দিতে চুক্তি করলো।

বাংলাদেশে সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরির কাজও পেয়েছে চীন। তাই ভবিষ্যতে চীন যে ভারতের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে পারে সে সম্ভাবনা ভারত একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না। ভারত – চীন উভয় দেশই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ সামরিক ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তার কারণ ভৌগোলিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান এ রয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তাই দেশ দুটি যার পক্ষে থাকবে তার জন্য বঙ্গোপসাগরে প্রভাব বিস্তার সহজ হবে। তাই চীন-ভারত ভু-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নতি যে বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারী দেশকে আকৃষ্ট করেছে তা সাম্প্রতিক খবরগুলো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ইতিমধ্যে বলেই দিয়েছে যে তারা বাংলাদেশের সাথে আলাদাভাবে সম্পর্ক গড়তে চায়। বাংলাদেশের সাথে ভারত বা চীন এর কেমন সম্পর্ক তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই বরং তারা বাংলাদেশের সাথে উজ্জীবিত সম্পর্ক স্থাপন এ আগ্রহী। এর আগেও তারা বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি করার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ অবশ্য প্রস্তাবটি নাখোশ করেছে। এ থেকেই বোঝা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রেও বঙ্গোপসাগরের উপর নজর রাখতে চায়।

চীন-ভারত বা অন্যান্য বিশ্ব মোড়ল রাষ্ট্রগুলো যে অনেক আগে থেকেই বঙ্গোপসাগরের রাজনীতিতে জরিয়ে পড়েছে তা সকলেরই জানা। বর্তমান সময়ে তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ-মিয়ানমার এর সমুদ্র রাজনীতি এখন চোখে পড়ার মতো। রোহিঙ্গা ইস্যুর পর থেকে এ পর্যন্ত ২ বার মিয়ানমার তাদের মানচিত্রে সেন্ট মার্টিন কে যুক্ত করেছিল। বাংলাদেশ তাদের এ কর্মকাণ্ড কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় বঙ্গোপসাগর ঘিরে ভু-রাজনৈতিক অবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে।

প্রত্যকটি দেশ নিজ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলছে। বাংলাদেশও সেই পথেই হাঁটছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল জলরাশি। বঙ্গোপসাগরের এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ একদিন উন্নতির চরম শিখরে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাসী। তাই “সবার সাথে বন্ধুত্ব,কারো সাথে শত্রুতা নয়” এ-ই নীতিকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা বঙ্গোপসাগর ঘিরে আমাদের অর্থনীতির নতুন সম্ভবনা দাড় করতে পারবো।

লেখক
মোঃ আশরাফুল আলম আকাশ
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ক্ষুদ্র ঋণ: গ্রামীণ মানুষের আতঙ্ক ও সমাধান

মোহাম্মদ সোহাগ উদ্দিন


ক্ষুদ্র ঋণ হচ্ছে এমন একটি ঋণ ব্যবস্থা যেখানে গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণ দেওয়া হয়। এর পরিমাণ ৫০০০- ৫০০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ঋণে প্রদানে কোনো জামানত নেওয়া হয় না। সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক হারে সুদ সহ পরিশোধ করতে হয়। মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে এটা দেওয়া হয়। বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে।

গ্রামীণ অর্থনীতির কথা উঠলেই প্রথমে চলে আসে এনজিও নাম। সবাই মনে করে যে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী বা টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলছে এনজিও। আমাদের দেশে প্রথম এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা গুলো কাজ শুরু করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালে পূর্ণগঠনের উদ্দেশ্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে অনেকটা সফলও ছিল।

বাংলাদেশের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনস্থ একটি বিভাগ। দেশের প্রত্যেকটি এনজিওকেই এর অধীনে নিবন্ধিত হতে হয়। বাংলাদেশে মোট ২৪৯৮ টি নিবন্ধিত এনজিও রয়েছে এরমধ্যে ২৪০ টি বিদেশি। যার অধিকাংশ যুক্তরাষ্ট্রের ও যুক্তরাজ্যের ।

এইসব এনজিওগুলোর ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেয়ে অবনতি ও হয়রানি বেশি হয়েছে । এইসব ক্ষুদ্র ঋণের জন্য এনজিও গুলো চড়া হারে সুদ এবং খুব স্বল্প সময় বেধে দেয়। গ্রামীণ মানুষদের যেসব বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে ঋণ দেওয়া হয় ;যেমন, হাঁস-মুরগি, গরু, ছাগল, ক্ষুদ্র ব্যবসা, সেলাই মেশিন ইত্যাদি ছোট ছোট বিষয়ের উপর ভিত্তি করে।

যে ব্যবসা বা কাজগুলো করে ঋণ পরিশোধ করার জন্য অত্যন্ত মিনিমাম ৩-৬ মাসের সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণের এনজিও গুলো সেই সময় দিয়ে থাকে না। তাঁরা ঋণ দেওয়ার কিছুদিন পরেই পরিশোধ নেওয়া শুরু করে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণ নিয়ে থাকে। লাভের মুখ দেখা সম্ভব বা সঞ্চয় করা সম্ভব হয় না।

তাহলে ক্ষুদ্র ঋণের এনজিও গুলো যেভাবে গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। আর এইসব ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে গ্রামীণ মানুষগুলো তাঁদের ভিটেমাটি ও বিক্রি করতে হচ্ছে আর যারা তা ও পারছে না তাঁরা তাদের ভিটেমাটি রেখেই পালিয়ে যাচ্ছে। আবার এমনও দেখা গেছে যে এক এনজিওর ঋণ পরিশোধ করছে অন্য এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে বা একই এনজিও থেকে আরও ঋণ সংগ্রহ করে। আর স্বল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত এনজিও কর্মীদের দূরব্যবহার তো আছেই।এতে করে গ্রামীণ দরিদ্র ও নিপীড়ত মানুষদের দুর্দশা ও হয়রানির শেষ হয় নাই ।

গ্রামীণ অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে হলে এই এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণের নামে যে হয়রানি মূলক সংস্থা গুলো রয়েছে সেগুলোকে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে নতুবা গ্রামীণ অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তি আর গড়ে উঠবে না। ঋণের স্বল্প সময় নয় বরং দীর্ঘ সময় দেওয়া প্রয়োজন। অদক্ষ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষতাহীন রেখে ঋণ দেওয়া যাবে না। কেননা এতে তার কোনো লাভ নেই। সরকারের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন। তাহলে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, (তৃতীয় বর্ষ)
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।