দেশে করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা

দ্যা ক্যাম্পাস টুডেঃ এক বছর দুই মাস অতিবাহিত হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের।তবুও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেনা।করোনার সংক্রমণ বন্ধ না হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় আনতে না পারার কারণে কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয় এটিও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সরকারের কর্তাব্যক্তিরা।

টিকার আওতায় আনতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে সরকারের কাছে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠালেও শিক্ষার্থীদের এই টিকাদান কার্যক্রম আর এগোয়নি। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস যেনতেনভাবে চললেও পরীক্ষা না হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ছে এই অনলাইন ক্লাসগুলোও।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বর্তমানে টিকার স্বল্পতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে যেভাবে ভেবেছিলাম তা নিয়ে সন্তোষজনক কোনো পর্যায়ে যেতে পারিনি আমরা।

এটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমরা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার জন্য। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের তালিকাও পাঠিয়েছি। কিন্তু সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার সবাইকে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে বিবেচনা করে টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের কাছে দাবি জানাই। তাছাড়া তো বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারব না।

গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৭ মে থেকে হলগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন । তবে এর আগে আবাসিক হলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনার টিকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

কিন্তু সেই ঘোষণার প্রায় তিন মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত টিকা পাননি শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে টিকার সংকটে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কয়েক কোটি শিক্ষার্থী বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছে।

করোনা টিকাদান কার্যক্রমকে বিবেচনায় নিয়ে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখ আরও পেছাতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে এর মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

একই সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব কাজ শেষ হলে করোনা পরিস্থিতির অবস্থা দেখে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসব কথা জানান। তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া গেলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০টি আবাসিক হলের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ১৪ মাস ধরে বন্ধ থাকায় বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অনলাইন ক্লাস চললেও পরীক্ষা না থাকায় অনেকটাই গতি হারিয়ে ফেলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা, ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণেও অনেকেই ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না।

আবারও পিছিয়ে যেতে পারে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা

দ্যা ক্যাম্পাস টুডেঃ চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কীভাবে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।গত বছরের মতো এবার ও পরীক্ষার্থীরা অটোপাসের দাবি তুলেছেন। তবে এবার অটোপাস দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জুন-জুলাইয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও করোনার প্রকোপে তা এক-দুমাস পিছিয়ে যেতে পারে। কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে সে বিষয়ে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর পার হয়েছে প্রায় ১৪ মাস। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অটোপাস দেওয়া হয়। তবে চলতি বছরের এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এসএসসি-এইচএসসির জন্য সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছি আমরা। জুন-জুলাইয়ে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। তবে সেটি হয়তো দু-এক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতবার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যেভাবে পাস করানো হয়েছে, তাকে অটোপাস বলা অন্যায়। কারণ তারা পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে এবারের এসএসসি কিংবা এইচএসসির বিষয়টি ভিন্ন। তারা ক্লাসে যেতে পারেনি। এজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হলেও এবার তাদের পরীক্ষায় বসতেই হবে।’

এর আগে ৬০ দিন ক্লাস শেষে এসএসসি এবং ৮০ দিন ক্লাস করিয়ে এইচএসসি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনার কারণে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নি। এ পরিস্থিতিতে এসএসএসি পরীক্ষার্থীদের একাংশ অটোপাসের দাবি তুলেছেন। তারা যুক্তি দেখিয়েছে করোনার কারণে ১৪ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় তারা পড়ালেখা করতে পারেনি। তাই সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করলেও শেষ করা যাবে না।

তবে সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, যারা অটোপাস পেয়েছে, তারা প্রস্তুতি নিতে পেরেছিল। সব ক্লাস করেছিল। টেস্ট পরীক্ষাও দিতে পেরেছিল তারা। কিন্তু এ বছর পরীক্ষার্থীরা কোনো ক্লাস করতে পারেনি। সে জন্য অটোপাস তাদেরই ক্ষতির কারণ হবে। তাই শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই চলতি বছর অটোপাস দেওয়া হবে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘পরীক্ষা নেওয়া না নেওয়া করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। তবে এ বছর অটোপাস দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা কোনো ক্লাস করতে পারেনি। এবার পরীক্ষা তাদের দিতেই হবে।