দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভর্তি পরীক্ষা: জবি ভিসি

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ দেশের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে সেটার সিদ্ধান্ত হবে সামনে উপাচার্যদের সাধারণ সভায় বলে জানিয়েছেন গুচ্ছ ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। সাধারণ সভা চলতি মাসের শেষদিকে আহবান করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আজ রবিবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আমার সংবাদকে গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষার বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘ দেশে করোনা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা পরিক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিব। এছাড়া আগের বছরের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠানো যায়নি। আগে তাদের পরীক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠাতে হবে। আর প্রথমবর্ষের পরীক্ষা নিয়েই তো আর আমরা ক্লাস নিতে পারবো না। এজন্য এ বিষয়ে তাড়াহুড়ো নেই।

দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি জানান, আমরা আগেই জানিয়েছি এ বছর যারা পাশ করেছে ও গতবছর যারা পাশ করেছে শুধু তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় আগে যেভাবে ভর্তি করত এবারও সেভাবে ভর্তি করবে। যারা সেকেন্ড টাইমার শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে চায় তারা করবে। যারা করতে চাই না তারা করবে না। তবে যে শিক্ষার্থী বর্তমানে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তারা যদি দ্বিতীয় বারের মতো পরিক্ষা দিতে চাই তাহলে তাদের পরিক্ষার সেন্টার হবে অধ্যয়নরত ওই বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অন্য যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কম্পিউটারে এটার প্রোগ্রামিং করে দেওয়া হবে জানান তিনি।

“আমরা আগেই এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি, কীভাবে পরীক্ষা হবে তাও বলে দিয়েছি। সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন হবে না।” তার বক্তব্যে তিনি যোগ করেন।

তিনি আরও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মেডিকেল, প্রকৌশলসহ আরো অনেক ধরনের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একটির মধ্যে যাতে আরেকটি পরীক্ষা না পড়ে যায়, সেজন্য আমাদের উপাচার্যদের সভায় সিদ্ধান্ত হবে। সাধারণত মেডিকেল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা আগে অনুষ্ঠিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরে জড়িতদের বিচার দাবি

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরে জড়িতদের বিচার দাবি

রাবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা।

রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ।

মানববন্ধনে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ মনে করেন স্বাধীনতা বিরোধী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাস্কর্য এবং দেশে বিদ্যমান অন্যান্য ভাস্কর্যের বিরোধিতা না করে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধাচারণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদী চক্রের এহেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকরী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণসহ তাদেরকে অবিলম্বে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।

মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেন।

একই ঘটনায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন দুপুর ১২টার দিকে দলীয় টেন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। কর্মসূচিতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ভাস্কর্যের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি

চবি প্রতিনিধিঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ৫ডিসেম্বর রাতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মোঃ এমদাদুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলমের সাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়,” বিগত কয়েকদিন যাবত একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর বক্তৃতা ও বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলা বাংলাদেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার হীন উদ্দেশ্যে লিপ্ত রয়েছে।

আর এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ”পূর্ব পাকিস্তানকে” “বাংলাদেশ” নামকরণের দিবসে ৫ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার রাত আনুমানিক ২টায় কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের উপর কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়ে ভাস্কর্যটির অংশবিশেষ ভেঙে ফেলেছে। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এ উদ্ধত ও অপতৎপরতা জাতির জনকের নেতৃত্বে মুক্ত এ স্বাধীন বাংলাদেশে সহ্য করা হবে না।

ভাস্কর্য মানুষের নান্দনিকাবোধ প্রকাশের এক চিরন্তন মাধ্যম যা মানব সভ্যতার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার প্রতীক স্বরূপ । তাই ভাস্কর্যকে মূর্তির সাথে এক করে বক্তব্য প্রদান বাংলাদেশের উদার, অসাম্প্রদায়িক ও গণতন্ত্রমনা আপামর ধর্মপ্রাণ জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়ার উদ্দেশ্যে এক শ্রেণীর ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হীন মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ।

জাতির জনকের ভাস্কর্যের ক্ষতিসাধনকারী ও ভাস্কর্য বিরোধীতাকারীদের সাথে এ দেশের আপামর ধর্মপ্রাণ মানুষের কোন সম্পৃক্ততা থাকবে না। জাতির জনকের ভাস্কর্যের ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের প্রতিহত করতে চ.বি. শিক্ষক সমিতি বদ্ধপরিকর এবং এসকল দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধানের জন্য সমিতি সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাঙচুর ঘটনায় নোবিপ্রবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ

নোবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর ও অবমাননা করায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিশ্বাসী শিক্ষক ও কমচারীবৃন্দ।

রবিবার ৬ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফসানা মৌসুমির পরিচালনায় উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় নোবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল-মামুন, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মফিজুল ইসলাম, ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শুভ ভৌমিকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উক্ত সমাবেশে নোবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন বলেন, “আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাটি আমাদের মর্মাহত করেছে। অনতিবিলম্বে ভাস্কর্য ভাঙচুর ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

এসময় অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্নে আমাদের আপোষ নেই। যারা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে তাদের কোনোভাবেই ছাড় নয়।”

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মফিজুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী সরকার যখন দেশকে সর্বোচ্চ উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই একটি গ্রুপ দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অবমাননা করে চলেছে। এছাড়া তিনি অতিদ্রুত জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গনের প্রতিবাদে শেকৃবিতে বিক্ষোভ মিছিল

শেকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে সারাদেশ যখন উত্তপ্ত।একদিকে বর্তমান সরকারের দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ ভাস্কর্য নির্মাণের পক্ষে অন্যদিকে ইসলামিক রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলগুলো ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে।

এমন নাজুক সময়ে, গত ৫ ই ডিসেম্বর শনিবার কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের একটা নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের হাত ও মুখের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
কে বা কাহারা এমন ন্যাকারজনক কাজ করেছে সে বিষয়ে এখনো হদিস পায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে অপরাধীদের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে।

শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভাঙনে বিক্ষুব্ধ রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। আজ ৬ ই ডিসেম্বর (রোববার) ১১.৩০ ঘটিকায় শেকৃবি ছাত্রলীগ ভাস্কর্য ভাঙনের প্রতিবাদ স্বরূপ বিক্ষোভ মিছিল করে।জয় বাংলা স্লোগান ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার স্লোগানে মিছিলটি মুখরিত ছিলো।

এছাড়াও এমন ন্যাকারজনক কাজে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্হা করতে সরকারের নিকট জোর দাবী জানায় -শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

বশেমুরবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরে শিক্ষকদের প্রতিবাদ

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর, ভাস্কর্য নির্মাণে অপব্যাখ্যা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষকরা।

রবিবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা এবং শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে সম্প্রতি কিছু ধর্মান্ধ উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমাননা করে বক্তব্য দিয়েছে যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। সেই সঙ্গে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরের মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। অতীতেও বিভিন্ন মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মভিত্তিক অপরাজনীতির মাধ্যমে এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সফল হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।

মানববন্ধনে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ধর্মান্ধ অপশক্তির সকল অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় এবং নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাংচুরে জড়িতসহ ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

এছাড়াও মানববন্ধনের পাশাপাশি বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. হাসিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. রকিবুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়।

ভিসি আউট আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার হয়নি এক বছরেও

বশেমুরবিপ্রবি টুডে


২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের কর্তৃক ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। সেই সময় শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের আন্দোলন বন্ধ করতেই তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের নির্দেশে ওই হামলা করা হয়েছিলো।

এ ঘটনায় ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কোনো মামলা দায়ের না করায় প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বাদী হয়ে এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তবে এক বছর পার হয়ে গেলেও হামলার জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কার এবং এক শিক্ষার্থীর দুই বছরের বহিষ্কারাদেশ ব্যতীত এ ঘটনার আর কোনও বিচার পাননি শিক্ষার্থীরা।

মামলার একজন বাদী প্রিয়তা দে বলেন, “মূলত আন্দোলন বন্ধ করতেই আমাদের ওপর হামলা করানো হয়েছিলো। হামলার পর বিচার নিশ্চিত করতে মামলা করাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব হলেও তারা ওই সময়ে মামলা না করায় আমরা ৭-৮ জন শিক্ষার্থী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী উল্লেখ করে মামলা করেছিলাম। পরবর্তীতে আমরা হামলাকারীদের ছবিসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টস প্রদান করেছিলাম। কিন্তু এক বছর পার হলেও হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়নি এবং কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।”

এদিকে, দীর্ঘ এক বছরেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হামলায় আহত শিক্ষার্থীরা। কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মাশুকুর রহমান বলেন, “আমি সামনে থেকে খুব খারাপভাবে হামলার শিকার হওয়া একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি, এতগুলো উর্বর বিবেকের উপর এমন হামলা, একজন মানুষের পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব নয়। সাবেক উপাচার্যের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে আমি সহ আমার ভাই-বোনের উপর নির্বিচারে যে হামলা করা হয়েছিলো তার বিচার আমরা আজ অবধি পাইনি। নবনিযুক্ত নতুন ভিসি মহোদয় এবং প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে,যে বা যারা এই জঘন্যতম হামলার সাথে জড়িত ছিলো সকলকে বিচারের আওতায় এনে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করার। যাতে পরবর্তীতে কেউ এমন ঘৃণ্য কাজ করার সাহস না পায়। আমি আমার কিংবা আমাদের উপর নির্মম আঘাতে শরীর বয়ে ঝড়ে পড়া প্রতিটি ফোটা রক্তের সুষ্ঠ বিচার চাই।”

হামলার শিকার আরেক শিক্ষার্থী মানোস তালুকদার বলেন, “শিক্ষার্থীদের ওপর এর আগেও হামলা হয়েছে কিন্তু কখনও বিচার হয় নি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন কিন্তু সামগ্রিক অবস্থা দেখে এখন আর বিচারের বিষয়ে আশাবাদী হতে পারছি না। আমার মনে হয় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে জড়িতদের বিচারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ প্রত্যেককেই দায়িত্বশীল হতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।”

মামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল সেলের কর্মকর্তা সাজিদুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় এবং করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবগত নই”

এই মামলাটির বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু জানাতে রাজি হননি এবং এ বিষয়ে আদালত থেকে তথ্য সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন।

শিক্ষার্থীদের ওপর বারবার এধরনের হামলা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, “হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ছিল আমরা সেটা করেছি। যেসকল শিক্ষার্থীরা হামলার সাথে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এছাড়া বর্তমানেও কোন সমস্যা তৈরি হলে সেগুলো সমাধান করছি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার একটি সাধারণ শিশু থেকে কী করে একটি জাতির মুক্তির প্রধান দিশারী হয়ে উঠলেন, চলুন জানা যাক তার জীবনের সেই ধাপগুলো।

শেখ মুজিবুর রহমানঃ

(১৭ মার্চ১৯২০ – ১৫আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” বলা হয়ে থাকে। তিনি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব এবং শেখ সাহেব হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন এবং তার উপাধি “বঙ্গবন্ধু”। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

জন্ম ও শিক্ষাঃ

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন এবং মা’র নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

বাংলা ভাষা আন্দোলনঃ

বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা ঘটে। ১৯৪৮ সনের ফেব্রুয়ারি ২৩ তারিখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণ-পরিষদের অধিবেশনে বলেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই মন্তব্যে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদী শেখ মুজিব অবিলম্বে মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। এই বছরের ২ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয় যাতে শেখ মুজিব একটি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। এখান থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পরিষদের আহ্বানে ১১ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিবসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মীকে সচিবালয় ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ছাত্রসমাজের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্য ছাত্র নেতাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। এদের মুক্তি উপলক্ষে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় র‌্যালি হয় যাতে মুজিব সভাপতিত্ব করেন। পুলিশ এই র‌্যালি অবরোধ করেছিল। পুলিশী কার্যক্রমের প্রতিবাদে শেখ মুজিব অবিলম্বে ১৭ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ১৯ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। এতে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ তারিখে তাকে আবার আটক করা হয় এবং বহিষ্কৃত হন। উল্লেখ্য যে ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট তার হৃত ছাত্রত্ব (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ফিরিয়ে দেয়া হয়।

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন যার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি এই জরিমানাকে অবৈধ ঘোষণা করে তা প্রদান থেকে বিরত থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ এপ্রিল মুসলিম লীগ বিরোধী প্রার্থী শামসুল হক টাঙ্গাইলে একটি উপ-নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। শেখ মুজিব তার সেই আন্দোলনের সফলতার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনের ধর্মঘট করেন যার জন্য তাকে আবার আটক করা হয়। এ সময়ই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাঃ

২৩ জুন সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করার পর শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন দলে যোগ দেন। তাকে দলের পূর্ব পাকিস্তান অংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। জুনের শেষ দিকে জেল থেকে ছাড়া পান। ছাড়া পাওয়ার পরই খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে আটক করে রাখা হলেও অচিরেই ছাড়া পেয়ে যান। এর পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে মিলে লিয়াকত আলি খানের কাছে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের চেষ্টা করায় ভাসানী এবং তাকে আটক করা হয়। এটি ছিল অক্টোবরের শেষদিকের কথা।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের পূর্ব পাকিস্তান আগমনকে উপলক্ষ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ ঢাকায় দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেয়ার কারণে এবারও শেখ মুজিব আটক হন। সেবার তার দুই বছর জেল হয়েছিল। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে। এ ঘোষণার পর জেলে থাকা সত্ত্বেও জেল থেকে নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আয়োজনে তিনি ভূমিকা রাখেন। এরপরই ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষার দাবী আদায়ের দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সময়ে শেখ মুজিব জেলে থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তার এই অনশন ১৩ দিন কার্যকর ছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি

৬ দফা

সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই বৈঠকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শেখ মুজিব তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মহাসচিব ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১১ মার্চ ১৯৬৪ একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় যার মাধ্যমে মুজিব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেনাশাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, রাজনীতির নামে মৌলিক গণতন্ত্র প্রচলন (বেসিক ডেমোক্রেসি) এবং পাকিস্তানের কাঠামোতে এক-ইউনিট পদ্ধতির বিরোধী নেতাদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন শেখ মুজিব। এই পদ্ধতি অনুযায়ী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং প্রদেশগুলোকে একত্রে জুড়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কাজ করতে গিয়ে মুজিব আইয়ুব-বিরোধী সর্বদলীয় প্রার্থী ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করেন। যথারীতি নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পূর্বে তাকে আটক করা হয়। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং আপত্তিকর প্রস্তাব পেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করত এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অবশ্য উচ্চ আদালতের এক রায়ে তার আগেই তিনি মুক্তি পেয়ে যান। এ সময় সামরিক বাহিনীর গণহত্যা আর বাঙালিদের চাহিদা পূরণে সামরিক শাসকদের ঔদাসীন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবী পেশ করেন যা ছিল কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা। শেখ মুজিব এই দাবিকে আমাদের বাঁচার দাবী শিরোনামে প্রচার করেছিলেন। এই দাবির মূল বিষয় ছিল একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত পাকিস্তানী ফেডারেশনে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। এই দাবি সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রত্যাখান করেন এবং শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ কারণে তিনি উক্ত সম্মেলন বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ১৯৬৬ সালে মার্চ মাসের এক তারিখে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর তিনি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রচার কার্য পরিচালনা করেন। প্রায় পুরো দেশই ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের সময় তিনি সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকায় বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে বন্দী হন। বছরের প্রথম চতুর্থাংশেই তাকে আটবার আটক করা হয়েছিল। এই বছরের মে ৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জে পাট কারখানার শ্রমিকদের এক র‍্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তার মুক্তির দাবিতে ৭ জুন দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ এই ধর্মঘট চলাকালে গুলিবর্ষণ করে যার কারণে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে আনুমানিক তিনজনের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতাঃ

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে ইয়াহিয়া খান সংসদ ডাকতে দেরি করছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা এর ফলে বুঝতে পারে যে, মুজিবের দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেন।

ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং মুজিবসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ও জনসাধারণের অসন্তোষ দমনে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে। সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ধানমণ্ডির ৩২ নং বাড়ি থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ:

“এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।”

মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ফয়সালাবাদের একটি জেলে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। পাকিস্তানি জেনারেল রহিমুদ্দিন খান মুজিবের মামলার পরিচালনা করেন। মামলার আসল কার্যপ্রণালী এবং রায় কখনোই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় নি। এ মামলাটি “লায়ালপুর ট্রায়াল” হিসাবে অভিহিত।

১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও অস্থায়ী সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিচালিত অভিযান অল্প সময়ের মধ্যেই হিংস্রতা ও তীব্র রক্তপাতে রূপ নেয়। রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করে। বাঙালি ও অবাঙালি হিন্দুদেরকে লক্ষ্য করে বিশেষ অভিযানের কারণে সারা বছরজুড়ে প্রচুর হিন্দু জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় গ্রহণ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ও পুলিশ রেজিমেণ্টে কর্মরত পূর্ব বাংলার সদস্যবৃন্দ দ্রুত বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং লীগ সদস্যবৃন্দ কলকাতায় তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব প্রবাসে বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তি বাহিনীর নেতৃত্ব বড় রকমের বিদ্রোহ সংঘটিত হতে থাকে। আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানি সরকার মুজিবকে ছেড়ে দিতে এবং তার সাথে সমঝোতা করতে অস্বীকৃতি জানায়।

যুদ্ধবর্তী সময়ে মুজিবের পরিবারকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। তার সন্তান শেখ কামাল মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি এবং একজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার ছিলেন। মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনীর ভিতরে সংঘটিত যুদ্ধটিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় সরকারের অংশগ্রহণের পর, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং লীগ নেতৃবৃন্দ ঢাকায় ফিরে সরকার গঠন করেন। ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো মুজিবকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি দেন। এরপর তিনি লন্ডন হয়ে নতুন দিল্লিতে ফিরে আসেন এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী’র সাথে সাক্ষাতের পর জনসমক্ষে “ভারতের জনগণ, আমার জনগণের শ্রেষ্ঠ বন্ধু” বলে তাকে সাধুবাদ জানান। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে এসে তিনি সেদিন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সামনে বক্তৃতা দেন।

জাতীয় শোক দিবস:
হত্যাকাণ্ড (শোকাবহ আগষ্ট)-

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যূষে একদল সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধানমণ্ডিস্থ বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার এবং তার ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে। কেবল তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে বেঁচে যান। তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সামরিক কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে ছিলেন শেখ মুজিবের প্রাক্তন সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন।

২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ তারিখে মুজিব হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে খন্দকার মোশতাক সরকার ইমডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন এবং জেনারেল জিয়াউর রহমান ও পাকিস্তানপন্থী প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে তার বৈধতা দেয়া হয়। যা ১২ অগাস্ট ১৯৯৬ তারিখে সংসদে রহিত করা হয়। সংবাদ মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-কে দায়ী করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ইউজিন দিয়ে লরেন্স লিফসুল্জ সিআইএ-কে সামরিক অভ্যুত্থান ও গণহত্যার জন্য দোষারোপ করেন। তার মরদেহ তার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সামরিক তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়। অন্যান্যদের ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মুজিবের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে বহু বছরের জন্য চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের সূচনা ঘটে। সেনাঅভ্যুত্থানের নেতারা অল্পদিনের মধ্যে উচ্ছেদ হয়ে যান এবং অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান আর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দেশে চলমান অচলাবস্থা তৈরি হয় এবং সেনাবাহিনীতে ব্যাপক অরাজকতা দেখা দেয়। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর তৃতীয় সেনা অভ্যুত্থানের ফলশ্রতিতে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা আসীন হয়। সেনাঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানসহ ১৪ জন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিরা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে খুনি সৈয়দ ফারুক

আমার মুজিবঃ

‘মুজিব’ এটা কি কোনো নাম?
নাকি তিন অক্ষরের শব্দ! মনে হয়,
‘মু জি ব’ তিন অক্ষরের এমন একটি শব্দ – যে শব্দটি শুনলেই আবেগে চোখে পানি এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মাথা অবনত হয়ে আসে। আমার কাছে মুজিব হলো ত্যাগই মহাপুরুষ। জন্মের পরই হয়তো নদীমাতা তার স্রোতধারায় বলে দিয়েছিল,

“হে মুজিব তুমি আমাদের স্বাধীনতা বইতে দাও, আমাদেরকে সকল পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত কর।

আরও পড়ুনতারুণ্যের ভাবনা: বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ
তাইতো মধুমতির তীরে আবির্ভূত হওয়া মুজিব আঙ্কা পেয়েছিল poet of politics হিসেবে।
যে সকলের জন্য নিজের ব্যাক্তিগত চাহিদাকে হত্যা করে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারাটাই মহত্ত্ব মনে করতেন। তিনি তার ৫৪ বছরের জীবনে ৪৬৮২ দিন কারাবন্দী কাটিয়েছেন। যা ছিলো তার জীবনের এক – চতুর্থাংশ। মুজিব হলেন এক অসম্পূর্ণ মহাকাব্য। যার রচয়িতা যিনি নিজেই। ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ সেই মহাকাব্যের জন্ম। এই মহাকাব্যকে যদি বৃক্ষের সাথে তুলনা করা হয়, তবে ছয় দফা আন্দোলন তার মূল, ৭-ই মার্চের ভাষন তার কান্ড, ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষনায় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ তার পাতা এবং ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় হলো তার ফুল। সে ফুলের নাম বাংলাদেশ। আর মুজিব ফুলের সুবাস। যার উপস্থিতি দেখা যায় না কিন্তু অনুপস্থিতি ফুলকে করে সুভাষিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট অসম্পূর্ণ অবস্থায় এই মহাকাব্য রচনা থামিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে এই মহাকাব্য অসম্পূর্ণ কিন্তু মনের মণিকোঠায় সদা মুজিব মহাকাব্য বিদ্যমান। আমার মুজিব তার বজ্রকন্ঠে পুরো বিশ্বে তার স্থান করে নিয়েছেন। শুধু একটা কথাই বলবো,

“মুজিব কোনো দলের না
ক্ষমতা বা বলের না।
মুজিব সমগ্র জাতির।
মুজিব আমার।

মুজিব আমার ভালোবাসার নাম। আমার প্রিয় কবির নাম, আরে তিনি তো কবিই! ৭ কোটি বাঙালিকে নিয়ে তিনিই তো বাংলাদেশ নামক জাগ্রত কবিতাটি লিখেছেন।আমার স্বপ্ন, আমার মুজিবের মতো একদিন আমিও বলবো, হ্যাঁ আমিও দৃঢ়কন্ঠে বলে উঠবো –

“চলো সব হানাহানি দূর্নীতি বন্ধ করি
শেখ মুজিবের সোনার বাংলা গড়ি।

আরও পড়ুন বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম চির অম্লান

লেখকঃ তাসফীর ইসলাম (ইমরান)

অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী

বা সা ই (রামমালা,কুমিল্লা)

বিঃ দ্রঃ- আমি ছোট মানুষ। বিশ্বনেতাকে নিয়ে লিখলে আমার কিছু ভুল হতেই পারে। তবুও তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’,গুগল,উইকিপিডিয়া, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনে স্মরণীয় ঘটনা’, আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘শেখ মুজিব ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি’ এবং অন্যন্য বই ও নথির সূত্র ধরে সেই ইতিহাস হাজির করার চেষ্টা করেছি। ভুল হলে মার্জিত করবেন।

তারুণ্যের ভাবনা: বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


আমার জন্ম বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রায় এক দশক পরে। বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখিনি। খুব বেশি জানার সুযোগও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার ছিল না। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুকে ঠিক যেভাবে পাওয়ার কথা ছিল, সেভাবে কখনো পাইনি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পড়া আমার প্রথম বই ‘মুজিবরের বাড়ি’।

সময়টা সম্ভবত ১৯৯৪ সালে আমি যখন ৬ষ্ট শ্রেনীতে পড়ি। সেই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখেছিলেন, ‘শত চেষ্টা করেও বাঙালির মন থেকে দুজন বাঙালির নাম মুছে ফেলা যাবে না। এমনই শক্তি ও দুটি নামের। এদের একজন হলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বাংলা ভাষাকে পরিচিত করেছিলেন বিশ্ব দরবারে। যাঁর গান আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। আরেকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। যাঁর নেতৃত্বে বাঙালি প্রথম আলাদা একটি ভূখণ্ড নির্মাণ করতে পেরেছিল।’

এ বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-ডিআইটিএফ ২০২০ ঘুরে হঠাৎ দেখি একটি প্যাভিলিয়নে উপচেপড়া তরুণদের ভিড়। আমি ও আমার পরিবার একটু পথ এগিয়ে যেতে দেখি তরুণদের ভিড় সামলাতে ব্যস্ত স্বেচ্ছাসেবীগন। হয়তো ভাবতে পারেন এটি প্যাভিলনের কেনা-কাটার ভিড়। আসলে তরুণদের উপচে পড়া ভিড় ছিল বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নে।

পর্যবেক্ষণ করছিলাম মেলায় আসা অধিকাংশ তরুণ দর্শনার্থী প্যাভিলিয়নটি ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তাদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সঙ্গে ছবি তুলছেন। অনেকে আবার প্যাভিলিয়নের মধ্যে বই পড়ে সময় পার করছেন। মেলায় এসে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পেরে আনন্দিত আমার এক শিক্ষার্থী স্বপ্না আক্তার বলেন- এখানে বঙ্গবন্ধুর কিছু দুর্লভ ছবি দেখে ভালো লেগেছে।

বিশেষ করে এ প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে ভিডিও চিত্র দেখানো হয়েছে, তা আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। কথাটি শুনে মন ভরে গেল এই ভেবে যে, সত্যিই তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে ধারন করতে চায়। বঙ্গবন্ধু কোন নির্দিষ্ট দলের নয়, বঙ্গবন্ধু সকলের। তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের প্রবেশ দ্বারেই ছিল বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ছিল আর্টিফিশিয়াল (কাঠের তৈরি) বই। যেখানে বঙ্গবন্ধুর নানা কথা তুলে ধরা হয়েছে। এর পাশে রয়েছে, সারিবদ্ধ একাধিক সেলফ, যেখানে সাজানো আছে জাতির পিতার ওপর লেখা নানা বই। মেলায় আগতরা যাতে বই পড়ে বঙ্গবন্ধুকে আরও ভালো করে জানার জন্য রাখা হয়েছে টেবিলও।

পুরো প্যাভিলিয়নজুড়ে ছিল- বঙ্গবন্ধুর নানা উক্তি এবং তাকে নিয়ে নানা লেখা। প্যাভিলিয়নের পশ্চিম দেয়ালে ঠাঁই পেয়েছিল শেখ পরিবার। যেখানে আছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পারিবারিক ছবি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ নানা ধরনের দুর্লভ ছবি।
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালি শব্দগুলো একই সূত্রে গাঁথা। বর্তমান তরুণ সমাজে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে বঙ্গবন্ধুকে চেনে না। আর চিনবেই বা না কেন? তার মহান আত্মত্যাগের ফলেই জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের।

বঙ্গবন্ধুর যে দুটি বই এখন অনেক পাঠকের হাতে দেখতে পাই—অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা, সে দুটিতে তারুণ্যের ওপর বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস এবং তাঁর নিজের তরুণ জীবনের সংগ্রামের ইতিহাস অত্যন্ত অন্তরঙ্গভাবে তিনি লিখে গেছেন। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, অভয় মানো—তিনি তরুণদের বলছেন; যেখানে অন্যায়, অবিচার সেখানে প্রতিবাদ করো; মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষমতার এবং স্বার্থের ঘর বড় করে, তাদের প্রতিরোধ করো।

বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রায় বেশিরভাগ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়ে আমরা জানতে পেরেছি, তার চিন্তা-চেতনা ছিল তারুণ্যকেন্দ্রিক। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও আবেগই পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদী রূপ ধারণ করে তার মন ও মননে সূচনা ঘটিয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের।

বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, অধিকার পেতে হলে নীরব থাকলে চলবে না; সবাইকে জাগাতে হবে, তাদের মনে গেঁথে দিতে হবে স্বাধীনতার মন্ত্র।
বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে যে নামটি চিরস্মরণীয় ও উজ্জল নক্ষত্রের মতো চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি হলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।

বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে লিখেছেন-‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’
তরুণদের সঙ্গে একটা অন্তরের সম্পর্ক ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি তাঁদের সংগ্রামের বাণী দিতেন, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সক্রিয়তায় উৎসাহিত করতেন, শিক্ষা এবং শিক্ষার আদর্শগুলো নিজেদের জীবনে ধারণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।

তরুণদের তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, অসত্য, অর্ধসত্যকে প্রত্যাখ্যান করতে, বঞ্চনা-অনাচার এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উদ্দীপনা জোগাতেন। তিনি চাইতেন বাঙালি তরুণ যুগের আদর্শগুলো ধরে রেখে বিশ্বমানব হোক। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুটি ছাত্র আন্দোলন সারা দেশের তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন শুরু হয়, তরুণেরা বঙ্গবন্ধু থেকে প্রেরণা নিয়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন হলো, তাতেও শিক্ষার্থীরা পোস্টার লিখে জানাল, তারা প্রতিবাদী হওয়ার সাহস বঙ্গবন্ধু থেকে নিয়েছে। বর্তমান তরুণদের মনে রাখা দরকার, বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা থেকে শুরু করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্ব দিন পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

মুজিবের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। এ বছর স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং পরবর্তীতে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন মো, শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী। তিনি স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবির উপর ভিত্তি করে একটি দল নিয়ে তাদের কাছে যান যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি নিজেই।

১৯৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকার রেসকোর্স মাঠে বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিলেন, দেশের মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার বার্তা দিলেন, তা সারা দেশে সব মানুষের কাছে পৌঁছে গেল। তিনি উক্ত ভাষণ বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু করে বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ করেন। উক্ত ভাষণ ১৮ মিনিট স্থায়ী হয়।

ভাষণে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। ২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষে ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে “ডকুমেন্টারী হেরিটেজ” (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এজন্যই বঙ্গবন্ধুকে বর্ণনা করতে গেলে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর উক্তি সবার আগে মনে পড়বে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তার সিদ্ধান্ত, অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে ক্যাস্ট্রো বলেন,‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো।

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। পেছন ফিরে আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখি আর তাঁর কথা শুনি। তাঁর কথাগুলো এখন তরুণেরা শুনছে, পড়ছে। তারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। তারা যে বাংলাদেশ চায়, বঙ্গবন্ধুও সেই দেশটি চেয়েছিলেন এবং তার একটি বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন, ‘সোনার বাংলা।’

বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন বাংলার মানুষ একতাবদ্ধভাবে থাকবে। সুন্দরভাবে হাসি-খুশিতে জীবনযাপন করবে। বর্তমান প্রজন্ম চেষ্টা করবে জাতির জনকের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে। বঙ্গবন্ধু নিজেও বিশ্বাস করতেন তরুণরাই দেশের মূল চালক। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে এক হতে হবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা সার্থক হবে।

তথ্যসূত্রঃ দেশি ও বিদেশি বই-প্রবন্ধ, নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ও পর্যবেক্ষণ।

লেখক: শিক্ষাবিদ, বিশ্লেষক, ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ, গবেষণায় প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশীপ প্রাপ্ত এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ‘আগামীর বাংলাদেশ’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | Job Circular at Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Agricultural University (BSMRAU)

ক্যারিয়ার ডেস্ক


বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বেকার যুবকদের সংখ্যা। ‘দ্য ক্যাম্পাস টুডে’ চেষ্টা করে যাচ্ছে যুবসমাজকে একটি সুন্দর কর্মক্ষেত্রের তথ্য দেবার জন্য। কারণ সঠিক কর্মক্ষেত্রের তথ্য পাওয়া ও বাছাই করা আপনার অধিকার। নিয়মিত চোখ রাখুন চোখ রাখুন ‘দ্য ক্যাম্পাস টুডে’র ক্যারিয়ার ডেস্কে।দ্য ক্যাম্পাস টুডের সঙ্গেই থাকুন……

চাকরির বর্ণনা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতভুক্ত নিন্মোক্ত শিক্ষক পদসমূহ পূরণের লক্ষ্যে প্রকৃত বাংলাদেশের নাগরিকদের নিকট হইতে দরখাস্ত আহ্বান করা যাচ্ছে।

কাজের ধরন: ফুল টাইম ।

আবেদন করার প্রক্রিয়া জানতে ভিজিট করুনঃhttp://bsmrau.edu.bd

আবেদনের সময়সীমা: ২৭/০৮/২০২০ তারিখ বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

বিস্তারিত নিচের বিজ্ঞপ্তিতে দেখুন ।

bsmrau

bsmrau

বশেমুরবিপ্রবি: স্বাধীনতা দিবস হলের নতুন প্রভোস্ট আব্দুর রহমান

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) স্বাধীনতা দিবস হলের নতুন প্রভোস্ট হিসেবে যোগদান করেছেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুর রহমান।

সোমবার দুপুর ৩ টায় তিনি প্রভোস্ট হিসেবে স্বাধীনতা দিবস হলে যোগদান করেন তিনি।

রেজিস্ট্রার দফতর থেকে বলা হয়, হলটির সাবেক প্রভোস্ট মো. সিরাজুল ইসলাম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। পরে ২৬ জানুয়ারিতে প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মো. আব্দুর রহমানকে।

এদিকে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা নতুন প্রভোস্টকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা আশা করি হলের সার্বিক উন্নয়নে নতুন প্রভোস্ট অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।

মেডিকেল সেন্টার আছে, নেই ডাক্তার

বশেমুরবিপ্রবি টুডেঃবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২,০০০ শিক্ষার্থী, ৩০০ শিক্ষক এবং ৬০০ এর অধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য ২ বেডের মেডিকেল সেন্টারে একজন ব্রাদার এবং একজন নার্সের সাথে চিকিৎসক ছিল দুজন।

সম্প্রতি মেডিকেল সেন্টারের দুজন ডাক্তার ইস্তফাপত্র জমা দেয়ায় মেডিকেল সেন্টারটি এখন ডাক্তার শূন্য।ডাক্তারের অভাবে প্রায় একমাস যাবত চিকিৎসা সেবা বন্ধ মেডিকেল সেন্টারটিতে। শুধুমাত্র চিকিৎসক সংকটই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেডিকেল সেন্টারটি স্থানসংকট, যন্ত্রপাতি সংকট, লোকবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত দীর্ঘদিন যাবত। মেডিকেল সেন্টারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক কোনো ভবন না থাকায় প্রশাসনিক ভবনেরই নিচতলায় দুটি ছোটে কক্ষে মেডিকেল সেন্টারটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমন জানান, “সম্প্রতি আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মেডিকেল সেন্টারে যাই কিন্তু ডাক্তার না থাকায় পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে যেতে বাধ্য হই।”

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, মেডিকেল সেন্টারটিতে ডাক্তার থাককালীন সময়েও তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতেন না। তারা জানান, যে কোনো অসুস্থতার কথা বললেই প্যারাসিটামল দেয়া হতে এবং গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন।

সাবেক একজন মেডিকেল অফিসারের তথ্যানুসরে মেডিকেল সেন্টারটি থেকে প্রতিদিন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ প্রায় ২০০ জন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করলেও বর্তমানে চিকিৎসক না থাকায় এই চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল সেন্টারের একজন কর্মচারী বলেন, “মূলত জনবল সংকট এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই মেডিকেল সেন্টারটির এই অবস্থা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান জানান, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দুজন ডাক্তারই গত নভেম্বরে অব্যাহতিপত্র জমা দেয়ায় মেডিকেল সেন্টারটি চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে আমার পক্ষে নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। তবে আমি চেষ্টা করছি একজন ডাক্তারের সাথে স্বল্প সময়ের জন্য চুক্তি করতে যাতে তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন’।

বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগ দাবিতে ৫ম দিনেও অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত

বশেমুরবিপ্রবি টুডেঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) বিভাগের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের এর পদত্যাগ দাবিতে ৫ম দিনের মত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন ওই বিভাগের একাংশ শিক্ষার্থী।

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শুরু ও ১ টা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে নিজ বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় তাদেরকে দাবি আদায়ের স্বপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এসময় শিক্ষার্থীরা আবদুল্লাহ আল জোবায়ের এর বিরুদ্ধে অকারণে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান, শিক্ষার্থীদের বাক-স্বাধীনতা হরণ, মানসিকভাবে হয়রানি, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে পরীক্ষার ফলাফলের উপর প্রভাব, ল্যাব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, নৈতিক স্থলনসহ বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করেন।

অবস্থানরত ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সারোয়ার জাহান বলেন, ‘আমরা ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে আছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি না মানা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’

বিজিই চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল জোবায়য়ের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার।”

এদিকে এদিন চেয়ারম্যানের পক্ষে মানববন্ধন করেছে ওই বিভাগের একাংশ শিক্ষার্থী।

চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত

বশেমুরবিপ্রবি টুডে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) বিভাগের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের এর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নিজ বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এসময় শিক্ষার্থীরা আবদুল্লাহ আল জোবায়ের এর বিরুদ্ধে অকারণে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান, শিক্ষার্থীদের বাক-স্বাধীনতা হরণ, মানসিকভাবে হয়রানি, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে পরীক্ষার ফলাফলের উপর প্রভাব, ল্যাব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, নৈতিক স্থলনসহ মোট আটটি অভিযোগ তুলে ধরেন।

বিজিই ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মানস তালুকদার জানান, “তিনি তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিভাগের চেয়ারম্যান থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের সকল অভিযোগের সাথে দ্বিমত পোষণ করে জানিয়েছেন, “বিভিন্ন সময়ে যৌক্তিক কারণে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের শোকজ নোটিশ প্রদান করেছে তবে এখন পর্যন্ত শোকজ নোটিশের প্রেক্ষিতে কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি।” ল্যাবের বিষয়ে তিনি জানান, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা সর্বদা চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার।”

ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ফলাফলের ওপর প্রভাবের বিষয়ে এই শিক্ষক বলেন, “একটি উত্তরপত্র দুজন শিক্ষক মূল্যায়ন করেন এবং দুজনের প্রদানকৃত নাম্বারে অতিরিক্ত পার্থক্য থাকলে সেটি তৃতীয় শিক্ষকের নিকট প্রেরণ করা হয় তাই কোনো শিক্ষকের পক্ষেই ফলাফল প্রভাবিত করা সম্ভব নয়।”

এদিকে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান জানিয়েছেন, “আমরা বিজিই শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছি এবং তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”।