নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন বাংলাদেশি চিকিৎসক

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসক ডা. রুহুল আবিদ এবং তার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (এইচএইএফএ) নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। রুহুল আবিদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি আলপার্ট মেডিকেল স্কুলে অধ্যাপনা করছেন। ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক জিন-ফিলিপ বিলিউ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ বছরের নোবেল পুরস্কারের জন্য যে ২১১ জনকে মনোনীত করা হয়েছে তার মধ্যে আবিদ অন্যতম। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) থেকে এমবিবিএস শেষ করেন। পরে জাপানের নাগোয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। এছাড়া ২০১১ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে ফেলোশিপ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ব্রাউন গ্লোবাল হেলথ ইনিশিয়েটিভের একজন নির্বাহী ফ্যাকাল্টি সদস্যও।

ডা. আবিদের প্রতিষ্ঠিত এইচএইএফএ বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। বিগত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০ হাজার গার্মেন্ট কর্মী ছাড়াও ৯ হাজার আরএমজি কর্মী ও সুবিধাবঞ্চিত নারী এবং দেড় লাখ রোহিঙ্গা ও আটকে পড়া জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা দিয়েছে।

এখন তারা করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে করোনাভাইরাস না ছড়ায় সে বিষয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় ধসের পর দেশব্যাপী এ খাতের কর্মীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করে এইচএইএফএ। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও শ্রীপুরেও গার্মেন্ট কর্মীদের চিকিৎসা দিচ্ছে আবিদের সংগঠনটি।

এইচএইএফএ মূলত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা, যক্ষ্মা ও প্রসবজনিক ঝুঁকি নিরসনে কাজ করে আসছে। ২০১৬ সালে এইচএইএফএ’র ডিজিটাল উদ্ভাবন ছিল ‘নিরোগ’ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই ব্যবস্থা দিয়ে সেবা দিচ্ছে তারা। এর মাধ্যমে সংগৃহীত রোগীর তথ্য স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনিময় করায় তাদের সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

আর সর্বশেষ ছয় মাসে মহামারি মোকাবিলায় কাজ করছে এইচএইএফএ। এছাড়া ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে ডা. আবিদের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই ও ১০ হাজার কেএন-৯৫ মাস্কের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন।

উল্লেখ্য, ডা. আবিদ এবং তার প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে কানাডায় ‘স্টার ইন গ্লোবাল হেলথ’ খেতাবে ভূষিত হন। তিনি এইচএইএফএ-তে কাজ করার জন্য কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা বা সম্মানী গ্রহণ করেন না বলে জানা গেছে।

ইলিশ পাঠানোর দিনেই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


ভারতে ইলিশ রফতানির দিন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটি ।

আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। তবে এদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হয়েছে ১২ মেট্রিক টন ইলিশ।

পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করায় বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক। একই অবস্থা অন্যান্য স্থলবন্দরেও। ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার কিছু নীতিগত পরিবর্তন হওয়ার কারণে পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করা হয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজের গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে সকালে ৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রবেশের পরই দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রফতানিকারকদের সংগঠন। বিকেলে দুই ট্রাক পদ্মার ইলিশ ভারতে রফতানি হলেও পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি করেনি ভারত।

পেট্রাপোল রফতানিকারক সমিতির ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ বলেন, পেঁয়াজ রফতানিকারক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৭৫০ মার্কিন ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে না। সে কারণে অনেকগুলো পেঁয়াজভর্তি ট্রাক বর্ডারে দাঁড়িয়ে আছে।

এ বিষয়ে বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় রফতানিকারকরা স্থানীয় বাজার দর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি করবে না। এজন্য পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।

বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করতে আমাদের আপত্তি নেই ভারতের বনগাঁ এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী অনিল মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করতে আমাদের আপত্তি নেই। বাজার দরে এলসি পেলে পুনরায় রফতানি শুরু হবে। সেক্ষেত্রে পুরোনো যেসব এলসি দেয়া আছে সেগুলো ২৫০ মার্কিন ডলার সংশোধন করে সংশোধিত মূল্যে এবং নতুন এলসি ৭৫০ মার্কিন ডলার করা হলে পেঁয়াজ রফতানি শুরু হবে।

এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ভারত কোনো ঘোষণা ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। পারস্পরিক বাণিজ্যে সমঝোতার বিকল্প নেই। তারা রফতানি বন্ধ না করে পেঁয়াজের আমাদানিকারকদের সময় বেঁধে দিতে পারতেন। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি।

পেঁয়াজের আমদানি বন্ধের খবরে নড়েচড়ে বসেছে বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থানের পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যার পরপরই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি শুরু হয়েছে।

সুত্র: জাগো নিউজ।

হুয়াওয়ে সদর দফতর থেকে আইসিটি প্রশিক্ষণের সুযোগ পেল ১০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আইসিটি সমাধান প্রদানকারী হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পাঁচটি নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০ টি অসামান্য আইসিটি প্রতিভা ঘোষণা করেছে। চ্যাম্পিয়নরা আগামী ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ ‘ভবিষ্যতের বীজ ২০২০’ এর জন্য কার্যত সংগঠিত গালা ইভেন্টে ঘোষণা করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুটি হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সহ-রাষ্ট্রপতি চেন মিংজি (জে) এর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান অতিথি মহিবুল হাসান চৌধুরি, এমপি, মাননীয় উপমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রক, এবং বিশেষ অতিথি ড। বিট্রিস কালদুন, প্রধান কার্যালয় এবং বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি। হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝাং ঝেংজুন এবং চ্যাম্পিয়নদের সাথে হুয়াওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

মোট ৫০০ জন শিক্ষার্থী বাছাই পর্বে অংশ নিয়েছিল এবং সেখান থেকে ১০ টি চ্যাম্পিয়ন তাদের সিজিপিএ (কমিউলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ), স্পট পরীক্ষা এবং নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী সংস্থাগুলির উপস্থাপনার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে।

হুয়াওয়ে গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চলেছে। ঐতিহ্যগতভাবে, নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দু’সপ্তাহের জন্য অধ্যয়ন ভ্রমণের জন্য চীনে যেত; তবে কভিড -১৯ এর কারণে প্রশিক্ষণটি একটি অনলাইন প্রোগ্রামে স্থানান্তরিত হয়েছে।

পাঁচ দিনের এই অনলাইন প্রোগ্রামে বাধ্যতামূলক পাঠ্যক্রম, হুয়াওয়ে বিশেষজ্ঞ এবং অতিথি বক্তাদের সাথে সরাসরি সম্প্রচারিত অধিবেশন, নির্বাচনী কোর্স এবং চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে স্ব-শিক্ষার সমন্বয়ে গঠিত হবে। মূল পাঠ্যক্রমটিতে জি৫, ক্লাউড কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং আরও অনেক কিছু থাকবে cover অন্যদিকে, বৈকল্পিক কোর্সগুলি ডিজিটাল অর্থনীতি, শিল্পের প্রবণতা থেকে নেতৃত্বের দক্ষতায় পরিবর্তিত হতে পারে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, “আজকের মতো বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতিসমূহ দ্রুত পরিবর্তনশীল দক্ষতার প্রাকৃতিক দৃশ্যকে অবলম্বন করা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে এবং বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দ্রুত গতি অনুসরণ করার জন্য, উন্নয়নশীল অর্থনীতির যুবকদের জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে যারা ভবিষ্যতে পরবর্তী সময়ে পরবর্তী পরিবর্তনকারী এবং নেতাদের হয়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, আইসিটি তরুণদের ক্ষমতায়িত করবে এবং তাদের সমাজে একটি ভাল অবদান রাখতে নেতৃত্ব দেবে। স্থানীয় আইসিটি নেতা হুয়াওয়ে বাংলাদেশের আইসিটি প্রতিভা সজ্জিত করার দায়িত্ব নিচ্ছেন যখন এটি অনেক প্রশংসনীয়।

বিট্রিস কালদুন মন্তব্য করেছিলেন, “COVID-19 মহামারী দ্বারা সৃষ্ট অগণিত চ্যালেঞ্জগুলির প্রতিক্রিয়া জানাতে আগের তুলনায় আইসিটি প্রতিভা এবং উদ্ভাবনী আইসিটি সমাধান প্রয়োজন। ফিউচার প্রোগ্রামের বীজগুলির মাধ্যমে হুয়াওয়ে মেধাবী বাংলাদেশী যুবকদের আইসিটির ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং আধুনিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করছে যা তাদের পেশাগত কর্মজীবনে সাফল্য অর্জন করতে এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে “

চেন মিংজি বলেছেন, “আমাদের এক বিশাল আশ্চর্য সম্পদ রয়েছে এবং এটিই বাংলাদেশের যুবসমাজ ও মেধার বৃহত অংশ। হুয়াওয়ে বিশ্বাস করেন যে যুবকরা ডিজিটাল অগ্রগতির পাশাপাশি বিকাশের মূল ইঞ্জিন। আমরা তাদের মূল্য এবং তাদের দক্ষতার প্রশংসা করি। এবং আমরা তাদের গাইড করার জন্য আমাদের দায়িত্ব অনুভব করি যাতে তারা সঠিক পথটি বেছে নিতে পারে; তাদের মূল্য উপলব্ধি এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান।

সেই অনুপ্রেরণায় হুয়াওয়ে দেশে তার সামাজিক বেনিফিট কর্মসূচির জন্য এই বিষয়টি নিয়ে হাজির হয়েছে; ‘ভবিষ্যতের বীজ’, একটি আইসিটি প্রতিভা শিকার শিক্ষা প্রোগ্রাম যা আইসিটি প্রতিভা সংকট হ্রাস করার জন্য নিবেদিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা তাদের মনে সেই স্বপ্নদর্শন বীজ রোপণ করতে চাই যাতে আগামী বছরগুলিতে তারা এই সমাজকে পুরোপুরি সংযুক্ত ও বুদ্ধিমান করে তুলতে নতুন ধারণা নিয়ে আসতে পারে। “

ফিউচার ২০২০ চ্যাম্পিয়নদের বীজ হলেন- বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিএসই বিভাগ) থেকে আফসারা বেনজির এবং খন্দকার মুশফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইইই বিভাগ) থেকে আবদুল্লাহ আল মিরাজ, রাবেয়া তুস সাদিয়া এবং অমিত কর্মকার রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিএসই বিভাগ), আদিবা তাবাসসুম চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ইইই বিভাগ) থেকে আরিফুর রহমান এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইইই বিভাগ) থেকে ফারিয়া রহমান এবং ফয়েজ-উল ইসলাম।

দেশের সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাদ দিতে আইনি নোটিশ

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা লেখা চালু করার দাবিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

ওই নোটিশে এই চারজন ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব, জাতীয় পার্টির মহাসচিব, গণফোরামের ড. কামাল হোসেন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননকে বিবাদী করা হয়েছে।

রবিবার নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। তিনি নিজেই সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অশোক কুমার সাহার পক্ষে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশটি পাওয়ার দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা লেখা শুরু করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক জনগণের পক্ষে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।

ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের পর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন এবং বেআইনি কার্যকলাপের প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খৃস্টানসহ অন্যান্য নাগরিকরা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ভারত-রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের ১৯৭২ সালের পবিত্র সংবিধানে স্বাধীনতার চেতনাসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি ছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

‘স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতিসমূহ পরিবর্তন করা হয়। যা স্বাধীন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু জনগণ মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি। সংবিধানে ২ক অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রধর্ম সংযোজনের ফলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এখন সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।’

‘বর্তমানে ভারত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের জন্য হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সাংবিধানিকভাবে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। সুতরাং বিশ্ববাসীকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে পরিগণিত করা আবশ্যক। সেজন্য পবিত্র সংবিধানে অর্থাৎ মূলনীতি ৮ম আর্টিকেলে ধর্ম নিরপেক্ষতা থাকবে। কিন্তু কোনোক্রমেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে না।’

উক্ত নোটিশে আরও বলা হয়, জাতীয় সংসদে বিষয়টি বিল আকারে উত্থাপনসহ বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্য দ্বারা পাস করাও আবশ্যক। অন্যথায় বাংলাদেশ চিরতরে সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর নিকট স্বীকৃতি পাবে। তাছাড়া জাতির পিতা ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।’

সূত্র: যুগান্তর।

তারুণ্যের ভাবনা: বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


আমার জন্ম বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রায় এক দশক পরে। বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখিনি। খুব বেশি জানার সুযোগও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার ছিল না। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুকে ঠিক যেভাবে পাওয়ার কথা ছিল, সেভাবে কখনো পাইনি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পড়া আমার প্রথম বই ‘মুজিবরের বাড়ি’।

সময়টা সম্ভবত ১৯৯৪ সালে আমি যখন ৬ষ্ট শ্রেনীতে পড়ি। সেই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখেছিলেন, ‘শত চেষ্টা করেও বাঙালির মন থেকে দুজন বাঙালির নাম মুছে ফেলা যাবে না। এমনই শক্তি ও দুটি নামের। এদের একজন হলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি বাংলা ভাষাকে পরিচিত করেছিলেন বিশ্ব দরবারে। যাঁর গান আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। আরেকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। যাঁর নেতৃত্বে বাঙালি প্রথম আলাদা একটি ভূখণ্ড নির্মাণ করতে পেরেছিল।’

এ বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-ডিআইটিএফ ২০২০ ঘুরে হঠাৎ দেখি একটি প্যাভিলিয়নে উপচেপড়া তরুণদের ভিড়। আমি ও আমার পরিবার একটু পথ এগিয়ে যেতে দেখি তরুণদের ভিড় সামলাতে ব্যস্ত স্বেচ্ছাসেবীগন। হয়তো ভাবতে পারেন এটি প্যাভিলনের কেনা-কাটার ভিড়। আসলে তরুণদের উপচে পড়া ভিড় ছিল বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নে।

পর্যবেক্ষণ করছিলাম মেলায় আসা অধিকাংশ তরুণ দর্শনার্থী প্যাভিলিয়নটি ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তাদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সঙ্গে ছবি তুলছেন। অনেকে আবার প্যাভিলিয়নের মধ্যে বই পড়ে সময় পার করছেন। মেলায় এসে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পেরে আনন্দিত আমার এক শিক্ষার্থী স্বপ্না আক্তার বলেন- এখানে বঙ্গবন্ধুর কিছু দুর্লভ ছবি দেখে ভালো লেগেছে।

বিশেষ করে এ প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে ভিডিও চিত্র দেখানো হয়েছে, তা আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। কথাটি শুনে মন ভরে গেল এই ভেবে যে, সত্যিই তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে ধারন করতে চায়। বঙ্গবন্ধু কোন নির্দিষ্ট দলের নয়, বঙ্গবন্ধু সকলের। তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের প্রবেশ দ্বারেই ছিল বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ছিল আর্টিফিশিয়াল (কাঠের তৈরি) বই। যেখানে বঙ্গবন্ধুর নানা কথা তুলে ধরা হয়েছে। এর পাশে রয়েছে, সারিবদ্ধ একাধিক সেলফ, যেখানে সাজানো আছে জাতির পিতার ওপর লেখা নানা বই। মেলায় আগতরা যাতে বই পড়ে বঙ্গবন্ধুকে আরও ভালো করে জানার জন্য রাখা হয়েছে টেবিলও।

পুরো প্যাভিলিয়নজুড়ে ছিল- বঙ্গবন্ধুর নানা উক্তি এবং তাকে নিয়ে নানা লেখা। প্যাভিলিয়নের পশ্চিম দেয়ালে ঠাঁই পেয়েছিল শেখ পরিবার। যেখানে আছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পারিবারিক ছবি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ নানা ধরনের দুর্লভ ছবি।
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালি শব্দগুলো একই সূত্রে গাঁথা। বর্তমান তরুণ সমাজে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে বঙ্গবন্ধুকে চেনে না। আর চিনবেই বা না কেন? তার মহান আত্মত্যাগের ফলেই জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের।

বঙ্গবন্ধুর যে দুটি বই এখন অনেক পাঠকের হাতে দেখতে পাই—অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা, সে দুটিতে তারুণ্যের ওপর বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস এবং তাঁর নিজের তরুণ জীবনের সংগ্রামের ইতিহাস অত্যন্ত অন্তরঙ্গভাবে তিনি লিখে গেছেন। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, অভয় মানো—তিনি তরুণদের বলছেন; যেখানে অন্যায়, অবিচার সেখানে প্রতিবাদ করো; মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষমতার এবং স্বার্থের ঘর বড় করে, তাদের প্রতিরোধ করো।

বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রায় বেশিরভাগ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়ে আমরা জানতে পেরেছি, তার চিন্তা-চেতনা ছিল তারুণ্যকেন্দ্রিক। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও আবেগই পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদী রূপ ধারণ করে তার মন ও মননে সূচনা ঘটিয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের।

বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, অধিকার পেতে হলে নীরব থাকলে চলবে না; সবাইকে জাগাতে হবে, তাদের মনে গেঁথে দিতে হবে স্বাধীনতার মন্ত্র।
বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে যে নামটি চিরস্মরণীয় ও উজ্জল নক্ষত্রের মতো চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি হলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।

বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে লিখেছেন-‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’
তরুণদের সঙ্গে একটা অন্তরের সম্পর্ক ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি তাঁদের সংগ্রামের বাণী দিতেন, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সক্রিয়তায় উৎসাহিত করতেন, শিক্ষা এবং শিক্ষার আদর্শগুলো নিজেদের জীবনে ধারণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।

তরুণদের তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, অসত্য, অর্ধসত্যকে প্রত্যাখ্যান করতে, বঞ্চনা-অনাচার এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উদ্দীপনা জোগাতেন। তিনি চাইতেন বাঙালি তরুণ যুগের আদর্শগুলো ধরে রেখে বিশ্বমানব হোক। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুটি ছাত্র আন্দোলন সারা দেশের তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন শুরু হয়, তরুণেরা বঙ্গবন্ধু থেকে প্রেরণা নিয়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন হলো, তাতেও শিক্ষার্থীরা পোস্টার লিখে জানাল, তারা প্রতিবাদী হওয়ার সাহস বঙ্গবন্ধু থেকে নিয়েছে। বর্তমান তরুণদের মনে রাখা দরকার, বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা থেকে শুরু করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্ব দিন পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

মুজিবের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। এ বছর স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং পরবর্তীতে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন মো, শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী। তিনি স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবির উপর ভিত্তি করে একটি দল নিয়ে তাদের কাছে যান যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি নিজেই।

১৯৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকার রেসকোর্স মাঠে বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিলেন, দেশের মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার বার্তা দিলেন, তা সারা দেশে সব মানুষের কাছে পৌঁছে গেল। তিনি উক্ত ভাষণ বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু করে বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ করেন। উক্ত ভাষণ ১৮ মিনিট স্থায়ী হয়।

ভাষণে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। ২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষে ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে “ডকুমেন্টারী হেরিটেজ” (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এজন্যই বঙ্গবন্ধুকে বর্ণনা করতে গেলে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর উক্তি সবার আগে মনে পড়বে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তার সিদ্ধান্ত, অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে ক্যাস্ট্রো বলেন,‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো।

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। পেছন ফিরে আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখি আর তাঁর কথা শুনি। তাঁর কথাগুলো এখন তরুণেরা শুনছে, পড়ছে। তারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। তারা যে বাংলাদেশ চায়, বঙ্গবন্ধুও সেই দেশটি চেয়েছিলেন এবং তার একটি বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন, ‘সোনার বাংলা।’

বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন বাংলার মানুষ একতাবদ্ধভাবে থাকবে। সুন্দরভাবে হাসি-খুশিতে জীবনযাপন করবে। বর্তমান প্রজন্ম চেষ্টা করবে জাতির জনকের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে। বঙ্গবন্ধু নিজেও বিশ্বাস করতেন তরুণরাই দেশের মূল চালক। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে এক হতে হবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা সার্থক হবে।

তথ্যসূত্রঃ দেশি ও বিদেশি বই-প্রবন্ধ, নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ও পর্যবেক্ষণ।

লেখক: শিক্ষাবিদ, বিশ্লেষক, ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ, গবেষণায় প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশীপ প্রাপ্ত এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ‘আগামীর বাংলাদেশ’।

সড়ক দুর্ঘটনা: কারণ ও প্রতিকার

মোঃ রাশেদুল ইসলাম রাশেদ


বর্তমান সমাজে ঘর থেকে বের হলেই প্রত্যেক মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে।

যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি পদক্ষেপই এই মহামারীকে রুখে দিতে পারে।

বাংলাদেশের তিন ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যমান। (ক) সড়ক পথ, (খ) নৌপথ এবং (গ) আকাশপথ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা আছে। এছাড়া রয়েছে রেলপথ। রেলপথে ব্রডগেজ, মিটারগেজ এবং ডাবলগেজ এ তিন ধরণের পথই আছে।

এছাড়া নৌপথ ও আকাশপথ দেশের অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবিশ্বে যোগাযোাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় সড়কপথের যোগাযোগ সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তাই এই পথের গুরুত্ব অনেক বেশি।

প্রতিদিন সংবাদপত্রে যে খবরটি অনিবার্য তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বিভিন্নভাবে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষে। এছাড়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, এমন কি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনা দেখে মনে হয় মৃত্যু যেন ওঁত পেতে বসে আছে রাস্তার অলিতে-গলিতে।

নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলো-

অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং: সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং কে দায়ী করা হয়। পুলিশ রিপোর্টেও বলা হয় অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া গাড়ি দ্রুতবেগে ব্রিজে ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস অনেক রয়েছে।

অপ্রশস্ত রাস্তা: বাংলাদেশের অধিকাংশ রাস্তাই অপ্রশস্ত। যার ফলে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। ঢাকা থেকে যাতায়াতের সবচেয়ে ব্যস্ত ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে। এই রাস্তাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্ত নয়। ফলে এ দুটি পথেই দুর্ঘটনা ও হতাহত বেশি হয়। তাছাড়া দেশের সর্বত্র অপ্রশস্ত রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

ওভার লোডিং: ওভার লোড মানে ধারণক্ষমতার বেশি মাল বহন করা। ফলে চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়।

আইন অমান্য: সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ আইন অমান্য করা। এক জরিপে দেখা যায় ৯১ শতাংশ চালক জেব্রা ক্রসিংয়ে অবস্থানরত পথচারীদের আমলই নেয় না। পাশাপাশি ৮৫ ভাগ পথচারী নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পার হয়। তাছাড়া এক সমীক্ষায় বলা হয় ঢাকা শহরের ৮৪ শতাংশ রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়ম সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ।

জনসংখ্যার চাপ ও অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থা: দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে প্রতি কিলোমিটারে ২৪৭টির বেশি গাড়ি চলে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আওতাধীন মোট ২২৩.৩০ কিলোমিটার রাস্তায় আনুমানিক গাড়ি চলে ৫ লাখ ৫০ হাজার। অন্যান্য বড় শহরেও অনেকটা একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। ফলে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশে সড়ক পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার। এসব পথে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এই বিশাল যানবাহন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে আনার মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা এদেশে আজও গড়ে ওঠেনি।

প্রযুক্তির ব্যবহার: আধুনিক যুগ সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রযুক্তির ব্যবহার সঠিকভাবে না করলে অনেক সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। গাড়ির চালকরা গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলে, গান শোনে। ফলে অসতর্ক হয়ে পড়েন। এতে করে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালক, সড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার, অবৈধ স্থাপনা, বিকল্প রাস্তার ব্যবহার না করে যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, যানবাহনে ব্যবহৃত তেলে ভেজাল এবং রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা প্রভৃতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অসীম। এর ফলে কেবল মানুষের মৃত্যু নয়, অপূরণীয় আরো হাজারো ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় জনসাধারণের জীবনে। নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো- বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা World Health Organisation (WHO)-এর হিসাব মতে ২০১০ সালে সারা পৃথিবীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১০ লাখ ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। ২ কোটিরও বেশি মানুষ আহত হয় এবং প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। যা খুবই মর্মান্তিক ও অপ্রত্যাশিত। যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানের তুলনায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সালে সারা দেশে ৭০৪৮ জন সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় যার মধ্যে ৩,৭৬৪ জন নিহত ও ৩,২৮৪ জন আহত হয়।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, দুর্ঘটনায় হতাহতের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেক্টর (এআরসি)-এর গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১২০০০ এবং আহত হয় ৩৫,০০০ জন।

সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি: বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)- এর মতে, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৮০ হাজার শিশু মারা যায়। আর আহত হয় হাজার হাজার শিশু যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। ২০১০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৬ শতাংশ শিশু অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ।

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয় তার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপির দুই ভাগ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর হিসাব মতে আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৫২০ বিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে এর পরিমাণ ৬৫ বিলিয়ন ডলার।

সড়ক দুর্ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এর ফলে হঠাৎ করে বিপর্যয় নেমে আসে একটি পরিবারে। সেই শোক গোটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের বুকে শেলের মতো বিধে থাকে সারা জীবন। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সমাজ ও দেশ হারায় তার কৃতি সন্তানদের। এ দুর্ঘটনা অনেককে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়: সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য করণীয়-

১) বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং নিষিদ্ধকরণ। আর এ জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেয়া উচিত।

২) ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

৩) লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে।

৪) লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করতে হবে।

৫) ফিটনেস, সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো প্রতিরোধ করতে হবে।

৬) পথচারীকে সতর্কভাবে চলাফেরা করা।

৭) অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করা।

৮) মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।

৯) সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি অর্থাৎ সিআরপিসির ৩০৪ বি ধারায় শাস্তির মেয়াদ ৩ বছর থেকে ১০ বছর করা।

১০) মোটরযান অধ্যাদেশের ১৪৩, ১৪৬ ও ১৪৯ ধারায় যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ আছে তা বাড়ানো।

১১) সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনের ভূমিকা আরো বেশি সক্রিয় করা।

১২) প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা।

১৩) প্রতিটি গাড়ির চালককে স্মরণ রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, গাড়ি চালক সমিতি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সরকার সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান করে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোট অথরিটি (বিআরটিএ) গঠন করা হয়। এর আগে সড়ক ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ১৯৬১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) গঠিত হয়। এছাড়া গঠিত হয়েছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড (ডিটিসিবি) এসব সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ গঠন করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করে চলেছে।

এছাড়া এর পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সড়ক বা মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ২০০৫ সালের ১১ জুন দেশের হাইওয়ে সড়কগুলিতে হাইওয়ে পুলিশ নিযুক্ত করা রয়েছে। সরকার এবং এসব সংস্থা যদি সর্বদা সতর্ক থাকে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের ভূমিকা ও বাস্তবতা

আবু জাফর আহমেদ মুকুল
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম


বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে শিল্পবিপ্লবের ফলে। বর্তমান বিশ্বও টিকে আছে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ওপর। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট তিনটি শিল্পবিপ্লব ঘটেছে। এ শিল্পবিপ্লব-গুলো বদলে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ, বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারা।

১৭৮৪ সালে পানি ও বাষ্পীয় ইঞ্জিনের নানামুখী ব্যবহারের কৌশল আবিষ্কারের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিল প্রথম শিল্পবিপ্লব। এতে এক ধাপে অনেকদূর এগিয়ে যায় বিশ্ব। এরপর ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে একেবারেই পাল্টে যায় মানুষের জীবনের চিত্র।

কায়িক পরিশ্রমের জায়গা দখল করে নেয় বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি। শারীরিক শ্রমের দিন কমতে থাকে দ্রুততর গতিতে। এটিকে বলা হয় দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব। প্রথম শিল্পবিপ্লব থেকে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের প্রভাব আরও বিস্তৃত। দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের ঠিক ১০০ বছরের মাথায় ১৯৬৯ সালে আবিষ্কৃত হয় ইন্টারনেট। শুরু হয় ইন্টারনেটভিত্তিক তৃতীয় শিল্পবিপ্লব।

ইন্টারনেটের আবির্ভাবে তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের সময় তথ্যপ্রযুক্তির সহজ ও দ্রুত বিনিময় শুরু হলে সারা বিশ্বের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ম্যানুয়াল জগৎ ছেড়ে যাত্রা শুরু হয় ভার্চুয়াল জগতের। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসছে এ ভার্চুয়াল জগতেরই আরও বিস্তীর্ণ পরিসর নিয়ে। যেখানে মানুষের আয়ত্তে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অব থিংস বা যন্ত্রের ইন্টারনেট, যা সম্পূর্ণ রূপেই মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে! এ নিয়েই এখন তোলপাড় চলছে সারা দুনিয়াজুড়ে।

প্রযুক্তিনির্ভর এ ডিজিটাল বিপ্লবকেই বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণাটি প্রথম এপ্রিল, ২০১৩ সালে জার্মানিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মূলত তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বিপ্লব। এ বিপ্লবের ফলে নানামুখী সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে দেশের সামগ্রিক চালচিত্রে। যেমন- অটোমেশনের প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাস, উৎপাদন শিল্পে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে বড় পরিবর্তন, বিশেষায়িত পেশার চাহিদা বৃদ্ধি, সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। এ বিপ্লব অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক ভালো করেছে এবং বর্তমান বিশ্বের আধুনিক সব তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব এখন জোর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেওয়ার সময়ই আমাদের এই নতুন বিপ্লবে শামিল হতে সুযোগ করে দেন। বাংলাদেশও রয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা দ্বিতীয় শিল্প যুগের।যার ফলে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অনলাইন ক্লাস নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ, ২০২০ইং ইউজিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা সাময়িক ভাবে পূরণ করার লক্ষ্যে শিক্ষকদেরকে অনলাইন ক্লাস নিতে বলা হয়। গত ৬ এপ্রিল, ২০২০ইং আবারও এক বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানায় ইউজিসি।

ইউনেস্কো রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী যার মধ্যে ১৭.৩৩ মিলিয়ন প্রাথমিক, ১৫.৮৬ মিলিয়ন মাধ্যমিক আর ৩.১৫ মিলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের ৪৬টি পাবলিক, ১০৫টি প্রাইভেট এবং ৩টি আন্তর্জাতিকসহ (ইউজিসি ওয়েবসাইট কর্তৃক প্রাপ্ত) মোট ১৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।

শিক্ষাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘আমার ঘরে আমার স্কুল প্রোগ্রামের আওতায় সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে এই অনলাইন ক্লাস সরাসরি পরিচালিত হচ্ছে, যা দেশব্যাপী সব মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেমিস্টারের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কিছু কলেজেও সীমিত পরিসরে অনলাইন শিক্ষণ অ্যাপ্লিকেশন যেমন জুম, গুগল ক্লাসরুম, গুগল মিট বা সমমানের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে পাঠদান প্রক্রিয়া চালু রেখেছে ।

এদেশের সকল সেক্টরে অনলাইন ব্যবস্থার মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস করা জরুরি। করোনার এই পরিস্থিতিতে মানবিক শিক্ষক হওয়াটা খুব দরকার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থীদের সেসন জট নিরসনে নিম্নলিখিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারেঃ

১) বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এ বছর চলে যাবে। শিক্ষার্থীরা ১ বছরের সেসন জটে পড়বে এবং ৪ বছরের অনার্স ৫ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হবে। সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রেও তাদের বয়স কনসিডার করা হবে না । আবার, অনলাইন ক্লাস নেওয়া নিয়ে অনেকের ভ্রান্ত ধারনা আছে সকলকে উপস্থিতি থাকতে হবে, বিষয়টা সে রকম নয়। ক্লাসটি ও Course Materials সকল শিক্ষার্থীর ব্যাচ, Zoom ও Youtube এ সংরক্ষিত থাকবে। তাই যে কোন সময় একজন ছাত্র রেকর্ডকৃত ক্লাস ও Course Materials দেখে নিতে পারবে।

২) আমার কাজের অভিজ্ঞতা দেখে দেখছি প্রত্যেকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩% অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী রয়েছে । এমনকি প্রায় অধিকাংশ সাহায্য প্রার্থীরা সামাজিক মাধ্যম এবং স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে আর্থিক সাহায্য চেয়েছেন। তাই যারা বলছেন ব্যক্তিগত ল্যাপটপ নেই তারা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হতে পারেন। কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে, বাংলাদেশে স্বল্পতার মধ্যেও চালু হওয়া অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম আমাদের মতো শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরা স্মার্টফোনটি শুধু সামাজিক যোগাযোগ হিসেবে ব্যবহার না করে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি।

৩) যে সকল শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের Excuse দিয়ে ক্লাস করতে চায় না তারাও কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং প্রকৃতপক্ষে তারা দরিদ্র নয়। তবে এটি সত্যি যে, মান-সম্মানের ভয়ে প্রকৃত দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীরা সামাজিকভাবে কখনো বলতে চায় না তারা দরিদ্র।

৪) অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন অনলাইন শিক্ষার জন্য প্রধান বাধাঁ- ব্যান্ডইউথের গতি আর দাম। বাংলাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি নিম্ন আয়ের বা দরিদ্র শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের কোন মোবাইল অপারেটরের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি করে প্যাকেজ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে এবং চুক্তি অনুযায়ী ব্যান্ডইউথের গতি বিষয়ে নিশ্চয়তা দিবে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি। তবে সরকারের কাছে, অনেক অব্যবহ্নত ব্যান্ডউইথ রয়েছে যা কর্তৃপক্ষ চাইলে শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রমে ব্যবহার করতে পারে। এমনকি, অনেক মোবাইল কোম্পানির কাছে সরকার কয়েক হাজার কোটি বকেয়া টাকা পাবে। সরকার চাইলে সেটাও করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কল্যানে সমন্বয় করা সম্ভব।

৫) অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের অনেকের অংশগ্রহণের সক্ষমতা না থাকা এবং অনেকের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের লিস্ট করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করছেন। এমনকি, প্রত্যেকটি বিভাগের শিক্ষক, এলামনাই এসোসিয়েশন, বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় প্রশাসন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য এগিয়ে এসেছেন।

৬) অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনির্ধারিত এই ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ অন্যান্য সময়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া শুভংকরের ফাঁকি বলে আমি মনে করি এবং যা গুনগত শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক। এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সেসনজট নিরসনের জন্য কোন প্ল্যান উপস্থাপন করেনি এবং কোন কোন প্রকার জরিপ না করে বলছে তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র ও স্মার্ট ফোন নেই যা খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জরিপ-২০১৯ মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৮১ লাখ। এদের মধ্যে ৯ কোটি ২৪ লাখ মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী এবং বাকি ৪০ হাজার ওয়াইম্যাক্স ব্যবহারকারী। মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ, দেশের প্রায় ৬০% লোক স্মাট ফোন ব্যবহার করে। আগামি ২০২০ সালে নতুন স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৭ নম্বরে থাকবে বাংলাদেশ।

৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সংযোগসহ প্রযুক্তিগত অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের নির্বাচনি ইশতেহারের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্লাটফর্ম হিসেবে অনলাইন লার্নিং ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করা দরকার।

৮) যারা ভাবছেন, ঈদের ছুটির পর অবস্থা স্বাভাবিক হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে সকল কিছুর সমস্যা সমাধান করে ফেলবেন । তারা প্রকৃতপক্ষে অন্ধকারে আছেন বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে যেখানে আগামি এক বা দুই বছরের জন্য অনলাইন ক্লাসের পরিকল্পনা করছেন। সেখানে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় Physically Class নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছেন। তবে এটি সত্যি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের Physically Class নেওয়ার মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক করোনায় ঝূঁকি বাড়ার আশংকা রয়েছে।

৯) বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থায় ইনস্ট্রকটিজম, কনস্ট্রাকটিজম এবং কানেক্টিভিজম এই তিন ধরেন ক্লাসরুম শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগেুলো এখনো ক্লাস লেকচার বেইজ বা ইনস্ট্রকটিজম এবং মুখস্থ ভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকি পাশের দেশে ভারতে কনস্ট্রাকটিজমে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কনস্ট্রাকটিজম মূলত সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক লার্নিং।

১০) চলমান সেমিস্টারে যাদের ফাইনাল পরীক্ষা বাকি আছে। তাদেরকে ইউজিসি নির্দেশ অনুযায়ী, বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে প্রশ্ন প্রণয়ন করে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। অনেকে ছাত্র ভাবছেন, এ সেমিস্টারে পরীক্ষা ছাড়া অটো গ্রেড পাবেন কিংবা ক্লাস কম করে পরীক্ষা দিবেন! এ আশা কেবল স্বপ্ন দেখার মতো বাস্তবতা নয়।

১১) অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল ফর্ম, গুগল ক্লাসরুমসহ আরও বেশিকিছু থার্ড পার্টি অ্যাপস আছে যা দিয়ে আগে থেকে সময় নির্ধারণ করে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়, এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী ওই অ্যাপসটি বন্ধ করলে বা একই সময়ে অন্য কোনো এপস চালু করলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উত্তর না করতে পারলে তাদের পরীক্ষাটি বাতিল বলে গণ্য হয়। সুতরাং, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ খুব কম থাকে। একই পদ্ধতিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি ও মূল্যায়ন সম্ভব। ইমেইলের মাধ্যমে এসাইনমেন্ট নেওয়া এবং প্রেজেন্টেশন সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে।

১২) অনলাইন এসেসমেন্ট এর ক্ষেত্রে শিক্ষকগণকে সতর্ক থাকতে হবে । আমাদের শিক্ষার্থীরা যেহেতু গ্রামীন এলাকায়ও থাকে সেহেতু এসাইনমেন্ট বেশি ওয়ার্ডে না দিয়ে গবেষণার মতো মূল অ্যাবস্ট্রাক্ট এর মতো ১০০ শব্দে দেওয়া যেতে পারে। যার ফলে একজন শিক্ষার্থী স্মার্ট ফোন দিয়ে টাইপ করে যাতে সহজে এসাইনমেন্ট টি করতে পারে।

১৩) দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ধরনের একাডেমিক, টেকনিক্যাল বা প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য কোন MoU নেই। যার করোনার মহামারিতে অনলাইন শিক্ষাক্রমের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সহযোগিতা করতে পারছে না। তবে এ বিষয়টি প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষে আইকিউসি বা ইউজিসি এগিয়ে নিতে পারে।

১৪) বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন লার্নিং বাস্তবায়ন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সমন্বয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করে এবং প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল ও মনিটরিং কমিটি করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

১৫) শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি, মেডিকেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয় যেখানে ব্যবহারিক ক্লাস রয়েছে সেখানে সমস্যা রয়েই গেল। এক্ষেত্রে তত্ত্বীয় কোর্স চালানো সম্ভব হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাবহারিক ক্লাস নেয়া সম্ভব হবে না। তবে করোনা পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক না হলে চলতি সেমিস্টারের ব্যাবহারিক কোর্স সমূহ পরবর্তী সেমিস্টারে অফার করার ব্যবস্থা করার বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে একাডেমিক বিশেষজ্ঞরা একটি সমাধান বের বের করতে পারবেন বলে মনে করি।

মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে প্রতিটি ঘটনা থেকে কিছু শেখে। সম্প্রতি, উচ্চ আদালতে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আদালতের বিচার কার্যক্রম শুরু করছে যা প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। বহির্বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোটামুটি সম্পূর্ণরূপেই একটি আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন ক্লাসে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কিছুটা সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করলে ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় খুব সহজে।

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে তাতে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। আশা করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ও নীতি নির্ধারকগণ সে পথে হাঁটবে।


লেখকবৃন্দ: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে এর শিক্ষক।

১৭ই মে, ১৯৮১ বাংলাদেশের পুনর্জন্মের ভিত্তি

মোঃ মেজবাহুল ইসলাম


১৯৭৫ সালের ৩০শে জুলাই ছোটবোন শেখ রেহেনা, পুত্র জয়, কন্যা পুতুলকে নিয়ে জার্মানিতে স্বামী ড.এম.ওয়াজেদ মিয়ার কাছে যান বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা। কথা ছিল শেখ রেহেনা বোনের সাথে কিছুদিন থেকে দেশে ফিরে আসবেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সহ তাঁর পুরো পরিবারকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ই অগাস্ট, ১৯৭৫ – শেখ হাসিনা, তাঁর স্বামী ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া আর বোন শেখ রেহানা সেদিন ব্রাসেলস-এ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের কাছে ছিলেন।

ব্রাসেলস থেকে ওঁদের প্যারিস যাওয়ার কথা। কিন্তু আগের দিন গাড়ির দরজায় ডক্টর ওয়াজেদের হাত চিপে গিয়েছিল।ওঁরা আলোচনা করছিলেন ওই অবস্থায় প্যারিস যাবেন কী-না।

১৫ই আগস্ট সকালে জার্মানির তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ন রশীদ চৌধুরী ব্রাসেলসের রাষ্ট্রদূত সানাউল হককে ফোন দিয়ে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর ক্যু সম্পর্কে জানান এবং তাকে শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা ও ওয়াজেদ মিয়াকে প্যারিসের বদলে জার্মানির বনে পাঠাতে বলেন।যে মুহূর্তে সানাউল হক শুনলেন যে সেনা বিদ্রোহে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন, তখনই তাঁর দুই কন্যা এবং জামাতাকে কোনও রকম সাহায্য করতে অস্বীকার করলেন। উপরন্তু নিজের ঘর থেকেও তাঁদের চলে যেতে বলেন।

তবে তাঁরা কোনও মতে জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর কাছে পৌঁছেছিলেন।তখনও বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয় বাংলাদেশ ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী উপায়ন্তর না দেখে বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একজন সাধারণ রাষ্ট্রদূত হিসেবে ১৯শে আগস্ট তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে কূটনীতিক প্রটোকল ভেঙে ফোন দিয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে রাজী হয়ে গিয়েছিলেন মিসেস গান্ধী। “২৪শে অগাস্ট এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারের বাকিরা দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নেমেছিলেন।সেখান থেকে তাদের অতি গোপনে একটি “সেফ হাউসে” নেয়া হয়।সেসময় ভারতে জরুরি অবস্থা চলছিল বলে তৎকালীন ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকান্ড সম্পর্কে তেমন খবর ছিলনা বলেই শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার পুরো ঘটনা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেননা।

৪ঠা সেপ্টেম্বর মিসেস গান্ধী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন এবং সেখানে উপস্থিত একজন অফিসার শেখ হাসিনাকে জানান তাঁর পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই।এটা শুনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন শেখ হাসিনা।

ইন্দিরা গান্ধী হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তোমার যা ক্ষতি হয়েছে, তা তো পূরণ করা যাবে না। তোমার তো এক ছেলে, এক মেয়ে আছে। আজ থেকে ছেলেকে নিজের বাবা আর মেয়েকে নিজের মা বলে মনে কোরো।”শেখ রেহানার সে বছরই দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনাবলীর জন্য তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে শান্তিনিকেতনে তাঁর ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে নিরাপত্তা-জনিত কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছিল।

২৪শে জুলাই, ১৯৭৬ – শেখ রেহানার বিয়ে হয় লন্ডন-প্রবাসী শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তাঁর স্বামী ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। ভারতের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রীত্ব হারালে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।এরমধ্যেই বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন।১৯৮০ সালে মিসেস গান্ধী পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় কেটে যায়।

এর মাঝেই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেত্রী বৃন্দ শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে তাঁকে দেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।কিন্তু স্বামী ওয়াজেদ মিয়া দেশের এই গোলযোগপূর্ণ অবস্থায় শেখ হাসিনার দেশে ফিরা ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন।এরমধ্যেই ৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে না জানিয়েই আস্থা ও ঐকের প্রতীক হিসেবে সভানেত্রী নির্বাচিত করেন।

১৯৮১ সালের ১৭ই মে ৩ই জৈষ্ঠ্য ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ শেখ হাসিনা ঘাতকের চেনা মুখ ও শ্বাপদের বুলেটের আঘাতের সমূহ আশংকা নিয়ে চোখের জলে ভেজা পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে মেয়ে পুতুল, আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ আর কোরবান আলীর সঙ্গে ঢাকা পৌঁছান। ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পুরো-পরিবারকে হত্যার ফলে বাংলার আকাশে যে কালো মেঘের সৃষ্টি হয়েছিল ও হত্যার দীর্ঘ ৬ বছর যে বিভীষিকাময় দিন কাটিয়েছিল বাংলার জনগণ তাঁরই সারমর্ম ছিল ৮১ এর ১৭ই মে এর প্রকৃতিতে।বঙ্গবন্ধু কন্যার আগমনে শুরু হয়ে গিয়েছিল স্বস্তির বৃষ্টি।

বঙ্গবন্ধুর কন্যার আগমনে বাংলাদেশ পুনঃ জন্মর ভিত্তি রচিত হয়েছিল। ৩৯ বছর আগের এই দিনে জননেত্রী শেখ হাসিনা ছয় বছর প্রবাস জীবন থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর তাঁকে এক নজর দেখার জন্য কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে অগণিত মানুষ বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টীমার ও ট্রেনযোগে দেশের দূরদূরান্ত থেকে ঢাকা এসে সমবেত হয়।

এদিকে সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল তথা গণতন্ত্রকামী লাখো জনতার কণ্ঠে গগনবিদারী শ্লোগান ওঠে, ‘ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আদর্শের মৃত্যু নেই, হত্যাকারীর রেহাই নেই, শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলানগর পর্যন্ত জনসমুদ্র। রাজধানীর সব পথ মিশে গিয়েছিল বিমানবন্দরে।

সবার লক্ষ্য ছিল বিমানবন্দর। শাসক মহলের কাছে তো ছিল কল্পনার অতীত। শাসক মহল ধারণা করতে পারেনি যে এভাবে মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে ছুটে আসবে। সত্যিকার অর্থে দেশবাসী তো চাইছিল অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি।

সমবেত প্রায় ১৫ লক্ষ জনতার সামনে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন-পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছেন। সব হারিয়ে নতুন করে হারাবার তাঁর আর কিছু নেই। এছাড়া তিনি আরও বলেন-আমি সাধারণ মেয়ে,নেতা নই।বঙ্গবন্ধুর আর্দশ প্রতিষ্ঠার সাধারণ একজন কর্মী।

বঙ্গবন্ধু যেমন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া আওয়ামী লীগ গঠনের জন্য গ্রামে গ্রামে গিয়েছিলেন ঠিক তেমনিভাবে যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা হিসেবে তিনিও আওয়ামী লীগ পুনঃগঠনের উদ্দেশ্যে সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। বার বার হত্যার উদ্দেশ্য হামলা হলেও তাঁর মনোবল থেকে তাঁকে একচুলও নড়াতে পারেনি কেউ।

তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি শুধু এখন দেশের সম্পদ নয়, সারা বিশ্বের সম্পদ।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু


লেখকঃ সহ-সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশের ৯ জেলা এবং রাজধানীর ১৮ এলাকায় করোনা রোগী

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের ৯ জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। এরই মধ্যে শুধু রাজধানী ঢাকায় ৩৬ জন শনাক্ত হয়েছে। রাজধানীর ১৮ এলাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছ। –দি বাংলাদেশ টুডে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ওয়েবসাইটে এই সব তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৯টি জেলা- ঢাকা, গাইবান্ধা, কক্সবাজার, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, কুমিল্লা ও গাজীপুর।

রাজধানী ঢাকার ১৮টি এলাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে- মণিপুর (পাঁচজন), বাসাবো (চারজন), পুরান ঢাকার বাংলাবাজার (তিনজন), লালমাটিয়া, হাজারীবাগ, মগবাজার, সেনপাড়া, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও উত্তরখান (দুজন করে) এবং মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বর, বনানী-গুলশান, বারিধারা ও খিলক্ষেত যাত্রাবাড়ী, আজিমপুর, কলাবাগান, রামপুরা, মহাখালী, (একজন করে)।

রাতের নষ্ট ভাত শুকাচ্ছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা, চাল হলে রান্না করবেন

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


নাম সাবিয়া বেগম। বয়স ৭০ বছর। থাকেন নওগাঁ শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া বিহারি কলোনি মহল্লার ছোট যমুনা নদীর গাইড ওয়াল-সংলগ্ন সরকারি জমিতে ঝুপড়ি ঘর করে গত কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি।

২৫ বছর আগে স্বামী নুরু মিয়া মারা গেছেন। মেয়ে সন্তানের বয়স যখন ঠিক ৮ মাস তখন স্বামী মারা যান। বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে জীবন চলত তার। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর এখন একা থাকেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষা করে দিন চলে তার।

০৩ এপ্রিল, শুক্রবার দুপুরে উত্তপ্ত রোদে বিহারি কলোনি মাঠে একটি টিনের ওপর নষ্ট ভাত শুকাচ্ছেন। এমন দৃশ্য দেখে মোবাইলে ছবি তুলে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে দেওয়া পোস্ট দেকে অনেকে মর্মাহত হন।

করোনার তাণ্ডবে সারাদেশের মতো নওগাঁয়ও চলছে অঘোষিত লকডাউন। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী দিলেও তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় অনেকেই পাচ্ছেন না।

এই দুঃখের গল্প শুধু সাবিয়া বেগম নন, ওই কলোনির প্রায় ২০-২৫টি পরিবারের একই অবস্থায় দিন কাটছে। করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের জীবন ধারণ। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

এ বিষয়ে বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে এক প্রতিবেশী ভাত দিয়েছেন। রাতে কিছু খেয়ে রেখে দিয়েছি। সকালে দেখি ভাত নষ্ট হয়ে গেছে। ওই নষ্ট ভাত পানিতে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিয়েছি। ভাত শুকিয়ে চাল হলে পরে রান্না করে খাব। গতে কয়েকদিন থেকে ঘরে বাইরে যেতে পারিনি। ঘরে কোনো খাবার নেই আমার। খুব কষ্ট করে চলছি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।

নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজ খান ভাত শুকানোর দৃশ্য মোবাইলে ধারণের পর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ফেসবুকে ঢুকলেই দেখি ওখানে-সেখানে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। তবুও আজ এমন দৃশ্য দেখতে হলো। বৃদ্ধাকে ভাত শুকাতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম কি করবেন এগুলো দিয়ে? উত্তরে বৃদ্ধা বললেন কাজ নেই, তাই বাজার করতে পারিনি। ঘরে তরকারি নেই, চালও শেষ। তাই নষ্ট হয়ে যাওয়া ভাত শুকাচ্ছি। ভাত শুকিয়ে চাল হলে আবার রান্না করে খাব। এগুলো নষ্ট ভাত। তবুও এই মুহূর্তে জীবন ধারণের জন্য বিকল্প পথ নেই। বাঁচতে হলে এগুলোতেই খেতে হবে। কারণ কেউ আমাদের ত্রাণ দেয় না।

নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরও লিখেছেন, যারা ত্রাণ বা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বিতরণে নিয়োজিত আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেছি; আপনারা এই অসহায় মানুষটার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।।