ডিজিটাল বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের ভূমিকা ও বাস্তবতা

আবু জাফর আহমেদ মুকুল
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম


বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে শিল্পবিপ্লবের ফলে। বর্তমান বিশ্বও টিকে আছে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ওপর। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট তিনটি শিল্পবিপ্লব ঘটেছে। এ শিল্পবিপ্লব-গুলো বদলে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ, বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারা।

১৭৮৪ সালে পানি ও বাষ্পীয় ইঞ্জিনের নানামুখী ব্যবহারের কৌশল আবিষ্কারের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিল প্রথম শিল্পবিপ্লব। এতে এক ধাপে অনেকদূর এগিয়ে যায় বিশ্ব। এরপর ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে একেবারেই পাল্টে যায় মানুষের জীবনের চিত্র।

কায়িক পরিশ্রমের জায়গা দখল করে নেয় বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি। শারীরিক শ্রমের দিন কমতে থাকে দ্রুততর গতিতে। এটিকে বলা হয় দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব। প্রথম শিল্পবিপ্লব থেকে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের প্রভাব আরও বিস্তৃত। দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের ঠিক ১০০ বছরের মাথায় ১৯৬৯ সালে আবিষ্কৃত হয় ইন্টারনেট। শুরু হয় ইন্টারনেটভিত্তিক তৃতীয় শিল্পবিপ্লব।

ইন্টারনেটের আবির্ভাবে তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের সময় তথ্যপ্রযুক্তির সহজ ও দ্রুত বিনিময় শুরু হলে সারা বিশ্বের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ম্যানুয়াল জগৎ ছেড়ে যাত্রা শুরু হয় ভার্চুয়াল জগতের। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসছে এ ভার্চুয়াল জগতেরই আরও বিস্তীর্ণ পরিসর নিয়ে। যেখানে মানুষের আয়ত্তে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অব থিংস বা যন্ত্রের ইন্টারনেট, যা সম্পূর্ণ রূপেই মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে! এ নিয়েই এখন তোলপাড় চলছে সারা দুনিয়াজুড়ে।

প্রযুক্তিনির্ভর এ ডিজিটাল বিপ্লবকেই বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণাটি প্রথম এপ্রিল, ২০১৩ সালে জার্মানিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মূলত তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বিপ্লব। এ বিপ্লবের ফলে নানামুখী সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে দেশের সামগ্রিক চালচিত্রে। যেমন- অটোমেশনের প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাস, উৎপাদন শিল্পে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে বড় পরিবর্তন, বিশেষায়িত পেশার চাহিদা বৃদ্ধি, সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। এ বিপ্লব অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক ভালো করেছে এবং বর্তমান বিশ্বের আধুনিক সব তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব এখন জোর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেওয়ার সময়ই আমাদের এই নতুন বিপ্লবে শামিল হতে সুযোগ করে দেন। বাংলাদেশও রয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা দ্বিতীয় শিল্প যুগের।যার ফলে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অনলাইন ক্লাস নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ, ২০২০ইং ইউজিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা সাময়িক ভাবে পূরণ করার লক্ষ্যে শিক্ষকদেরকে অনলাইন ক্লাস নিতে বলা হয়। গত ৬ এপ্রিল, ২০২০ইং আবারও এক বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানায় ইউজিসি।

ইউনেস্কো রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী যার মধ্যে ১৭.৩৩ মিলিয়ন প্রাথমিক, ১৫.৮৬ মিলিয়ন মাধ্যমিক আর ৩.১৫ মিলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের ৪৬টি পাবলিক, ১০৫টি প্রাইভেট এবং ৩টি আন্তর্জাতিকসহ (ইউজিসি ওয়েবসাইট কর্তৃক প্রাপ্ত) মোট ১৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।

শিক্ষাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘আমার ঘরে আমার স্কুল প্রোগ্রামের আওতায় সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে এই অনলাইন ক্লাস সরাসরি পরিচালিত হচ্ছে, যা দেশব্যাপী সব মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেমিস্টারের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কিছু কলেজেও সীমিত পরিসরে অনলাইন শিক্ষণ অ্যাপ্লিকেশন যেমন জুম, গুগল ক্লাসরুম, গুগল মিট বা সমমানের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে পাঠদান প্রক্রিয়া চালু রেখেছে ।

এদেশের সকল সেক্টরে অনলাইন ব্যবস্থার মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস করা জরুরি। করোনার এই পরিস্থিতিতে মানবিক শিক্ষক হওয়াটা খুব দরকার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থীদের সেসন জট নিরসনে নিম্নলিখিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারেঃ

১) বাংলাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এ বছর চলে যাবে। শিক্ষার্থীরা ১ বছরের সেসন জটে পড়বে এবং ৪ বছরের অনার্স ৫ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হবে। সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রেও তাদের বয়স কনসিডার করা হবে না । আবার, অনলাইন ক্লাস নেওয়া নিয়ে অনেকের ভ্রান্ত ধারনা আছে সকলকে উপস্থিতি থাকতে হবে, বিষয়টা সে রকম নয়। ক্লাসটি ও Course Materials সকল শিক্ষার্থীর ব্যাচ, Zoom ও Youtube এ সংরক্ষিত থাকবে। তাই যে কোন সময় একজন ছাত্র রেকর্ডকৃত ক্লাস ও Course Materials দেখে নিতে পারবে।

২) আমার কাজের অভিজ্ঞতা দেখে দেখছি প্রত্যেকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩% অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী রয়েছে । এমনকি প্রায় অধিকাংশ সাহায্য প্রার্থীরা সামাজিক মাধ্যম এবং স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে আর্থিক সাহায্য চেয়েছেন। তাই যারা বলছেন ব্যক্তিগত ল্যাপটপ নেই তারা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হতে পারেন। কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে, বাংলাদেশে স্বল্পতার মধ্যেও চালু হওয়া অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম আমাদের মতো শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরা স্মার্টফোনটি শুধু সামাজিক যোগাযোগ হিসেবে ব্যবহার না করে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি।

৩) যে সকল শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের Excuse দিয়ে ক্লাস করতে চায় না তারাও কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং প্রকৃতপক্ষে তারা দরিদ্র নয়। তবে এটি সত্যি যে, মান-সম্মানের ভয়ে প্রকৃত দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীরা সামাজিকভাবে কখনো বলতে চায় না তারা দরিদ্র।

৪) অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন অনলাইন শিক্ষার জন্য প্রধান বাধাঁ- ব্যান্ডইউথের গতি আর দাম। বাংলাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি নিম্ন আয়ের বা দরিদ্র শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের কোন মোবাইল অপারেটরের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি করে প্যাকেজ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে এবং চুক্তি অনুযায়ী ব্যান্ডইউথের গতি বিষয়ে নিশ্চয়তা দিবে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি। তবে সরকারের কাছে, অনেক অব্যবহ্নত ব্যান্ডউইথ রয়েছে যা কর্তৃপক্ষ চাইলে শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রমে ব্যবহার করতে পারে। এমনকি, অনেক মোবাইল কোম্পানির কাছে সরকার কয়েক হাজার কোটি বকেয়া টাকা পাবে। সরকার চাইলে সেটাও করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কল্যানে সমন্বয় করা সম্ভব।

৫) অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের অনেকের অংশগ্রহণের সক্ষমতা না থাকা এবং অনেকের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের লিস্ট করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করছেন। এমনকি, প্রত্যেকটি বিভাগের শিক্ষক, এলামনাই এসোসিয়েশন, বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় প্রশাসন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য এগিয়ে এসেছেন।

৬) অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনির্ধারিত এই ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ অন্যান্য সময়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া শুভংকরের ফাঁকি বলে আমি মনে করি এবং যা গুনগত শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক। এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সেসনজট নিরসনের জন্য কোন প্ল্যান উপস্থাপন করেনি এবং কোন কোন প্রকার জরিপ না করে বলছে তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র ও স্মার্ট ফোন নেই যা খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জরিপ-২০১৯ মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৮১ লাখ। এদের মধ্যে ৯ কোটি ২৪ লাখ মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী এবং বাকি ৪০ হাজার ওয়াইম্যাক্স ব্যবহারকারী। মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ, দেশের প্রায় ৬০% লোক স্মাট ফোন ব্যবহার করে। আগামি ২০২০ সালে নতুন স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৭ নম্বরে থাকবে বাংলাদেশ।

৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সংযোগসহ প্রযুক্তিগত অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের নির্বাচনি ইশতেহারের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্লাটফর্ম হিসেবে অনলাইন লার্নিং ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করা দরকার।

৮) যারা ভাবছেন, ঈদের ছুটির পর অবস্থা স্বাভাবিক হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে সকল কিছুর সমস্যা সমাধান করে ফেলবেন । তারা প্রকৃতপক্ষে অন্ধকারে আছেন বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে যেখানে আগামি এক বা দুই বছরের জন্য অনলাইন ক্লাসের পরিকল্পনা করছেন। সেখানে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় Physically Class নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছেন। তবে এটি সত্যি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের Physically Class নেওয়ার মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক করোনায় ঝূঁকি বাড়ার আশংকা রয়েছে।

৯) বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থায় ইনস্ট্রকটিজম, কনস্ট্রাকটিজম এবং কানেক্টিভিজম এই তিন ধরেন ক্লাসরুম শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগেুলো এখনো ক্লাস লেকচার বেইজ বা ইনস্ট্রকটিজম এবং মুখস্থ ভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকি পাশের দেশে ভারতে কনস্ট্রাকটিজমে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কনস্ট্রাকটিজম মূলত সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক লার্নিং।

১০) চলমান সেমিস্টারে যাদের ফাইনাল পরীক্ষা বাকি আছে। তাদেরকে ইউজিসি নির্দেশ অনুযায়ী, বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে প্রশ্ন প্রণয়ন করে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। অনেকে ছাত্র ভাবছেন, এ সেমিস্টারে পরীক্ষা ছাড়া অটো গ্রেড পাবেন কিংবা ক্লাস কম করে পরীক্ষা দিবেন! এ আশা কেবল স্বপ্ন দেখার মতো বাস্তবতা নয়।

১১) অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল ফর্ম, গুগল ক্লাসরুমসহ আরও বেশিকিছু থার্ড পার্টি অ্যাপস আছে যা দিয়ে আগে থেকে সময় নির্ধারণ করে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়, এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী ওই অ্যাপসটি বন্ধ করলে বা একই সময়ে অন্য কোনো এপস চালু করলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উত্তর না করতে পারলে তাদের পরীক্ষাটি বাতিল বলে গণ্য হয়। সুতরাং, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ খুব কম থাকে। একই পদ্ধতিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি ও মূল্যায়ন সম্ভব। ইমেইলের মাধ্যমে এসাইনমেন্ট নেওয়া এবং প্রেজেন্টেশন সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে।

১২) অনলাইন এসেসমেন্ট এর ক্ষেত্রে শিক্ষকগণকে সতর্ক থাকতে হবে । আমাদের শিক্ষার্থীরা যেহেতু গ্রামীন এলাকায়ও থাকে সেহেতু এসাইনমেন্ট বেশি ওয়ার্ডে না দিয়ে গবেষণার মতো মূল অ্যাবস্ট্রাক্ট এর মতো ১০০ শব্দে দেওয়া যেতে পারে। যার ফলে একজন শিক্ষার্থী স্মার্ট ফোন দিয়ে টাইপ করে যাতে সহজে এসাইনমেন্ট টি করতে পারে।

১৩) দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ধরনের একাডেমিক, টেকনিক্যাল বা প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য কোন MoU নেই। যার করোনার মহামারিতে অনলাইন শিক্ষাক্রমের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সহযোগিতা করতে পারছে না। তবে এ বিষয়টি প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষে আইকিউসি বা ইউজিসি এগিয়ে নিতে পারে।

১৪) বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন লার্নিং বাস্তবায়ন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সমন্বয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করে এবং প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল ও মনিটরিং কমিটি করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

১৫) শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি, মেডিকেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয় যেখানে ব্যবহারিক ক্লাস রয়েছে সেখানে সমস্যা রয়েই গেল। এক্ষেত্রে তত্ত্বীয় কোর্স চালানো সম্ভব হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাবহারিক ক্লাস নেয়া সম্ভব হবে না। তবে করোনা পরিস্থিতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক না হলে চলতি সেমিস্টারের ব্যাবহারিক কোর্স সমূহ পরবর্তী সেমিস্টারে অফার করার ব্যবস্থা করার বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে একাডেমিক বিশেষজ্ঞরা একটি সমাধান বের বের করতে পারবেন বলে মনে করি।

মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে প্রতিটি ঘটনা থেকে কিছু শেখে। সম্প্রতি, উচ্চ আদালতে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আদালতের বিচার কার্যক্রম শুরু করছে যা প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। বহির্বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোটামুটি সম্পূর্ণরূপেই একটি আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন ক্লাসে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কিছুটা সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করলে ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় খুব সহজে।

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছে তাতে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। আশা করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ও নীতি নির্ধারকগণ সে পথে হাঁটবে।


লেখকবৃন্দ: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে এর শিক্ষক।

ভাইস-চ্যান্সেলর ও বিশ্ববিদ্যালয় কড়চা

মো. মজনুর রশিদ


গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি ) এ অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চ শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির কলবর বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজ, শেখ হাসিনা কৃষি ও আইসিটি ইনস্টিটিউট এবং ৮টি অনুষদসহ ৩৪ টি বিভাগে পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

বিদেশী শিক্ষার্থীসহ এখন প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। রয়েছে ৫ টি আবাসিক হল। প্রায় ৫৫ একর ভূমি বেষ্টিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন পাস হয় ৮ জুলাই ২০০১ সালে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে সেই বছরের ২১ জুলাই প্রকল্পটি স্থগিত ঘোষণা করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক। পরের বছর ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রকল্পটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

দীর্ঘ সময় পরে নভেম্বর ২০০৯ সালে প্রকল্পটি পুনরায় চালু করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আলোর মুখ দেখে এবং অবকাঠামোগত কার্যক্রমের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘসূত্রতা থাকলেও উক্ত উন্নয়ন কার্যক্রম বর্তমানেও অব্যহত রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ সাল থেকে। ক্যাম্পাস ও একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ সালে।

নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ৭/ ৮ বছর পর ২০১৯/২০২০ সালে এসে বিভিন্ন ঘটনা-অঘটনার মধ্য দিয়ে সারা বাংলাদেশে বেশ পরিচিতি লাভ করে। সে পরিচিতি যতটা না ছিলো সুখকর তার চেয়ে ঢের বেশি দুর্ভাবনার ও নিরব সংঘাতের। আন্দোলন, অবরোধ, ক্লাস বর্জন, ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলানো, অনশণ, অস্থান কর্মসূচি প্রভৃতি ঘটনার কারণে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে পরে (দৈনিক সংবাদপত্র, বশেমুরবিপ্রবিসাস সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ২০১৯)।

এসব ঘটনাতে চরম ব্যাঘাত ঘটে শিক্ষা কার্যক্রমে। অনেকে মনে করে এ সবই ছিল বিগত ভাইস-চ্যান্সেলের হটকারি সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত পরিণতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের একক সিদ্ধান্তের নানা উদ্ভট কর্মকান্ড, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার আতুর ঘরে পরিণত হয়েছিল বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পাই সেই সময়ে।

অপর পক্ষে ছিলো কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি বর্গের নিরবিচ্ছিন্নভাবে কার্যকরী প্রশাসনকে অসহোযোগিতা করার বাস্তব চিত্র! অথচ একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশ ও দেশের বাহিরে বেশ সুনাম অর্জন করে তার মান সম্মত উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠরূপে পরিচালনার দক্ষতার জন্য। সে সবই আজ মরিচীকার মতো অতীত।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাতে এনেছে ছন্দ পতন ও বিপর্যয়। বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠতে চেষ্টার কমতি নেই সরকার প্রধানের। মহামারীর এমন সময়ে যখন সবকিছু বন্ধ তখন বশেমুরবিপ্রবির ক্যাম্পাসসহ দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলয়গুলো শিক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান হালচাল নিয়ে শঙ্কিত । কেননা দীর্ঘ বন্ধের পরে ব্যাহত হওয়া শিক্ষা কার্যক্রমকে কিভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায় সেই ভাবনা এখন সবার মাঝে।

শিক্ষা বান্ধব, যোগ্য নেতৃত্ব, প্রশাসনিক দক্ষতা, সাধারণ, সৎ, নিষ্ঠাবান, জবাবদিহিতা, দুরদর্শীতা, নিয়মানুবর্তিতা, ছাত্র-শিক্ষক বান্ধব ও দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ মেধাবী ভাইস চ্যান্সেলর পারবেন করোনা দুর্যোগ পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিকভাব পরিচালনা করতে। কিন্তু গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর নামে ও তাঁরই জন্ম ভূমির ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আজ ৮ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও স্থায়ী কোনো ভাইস-চ্যান্সেলর নেই। বিষয়টি সুষ্ঠুরুপে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তরায়। দেশের ক্লান্তিকালীন সময়ে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। স্থায়ী সর্বোচ্চ অবিভাবক প্রাপ্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে সামগ্রিক শৃঙ্খলা ফিরে আসতে পারে বলে অনেকেই মনে করে।

দৈনিক সংবাদপত্র ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বহুল প্রচারিত বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জের ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে সংগঠিত হয় তৎকালীন ভিসি অপসারণ আন্দোলন। ভিসি অপসারণের উক্ত আন্দোলন ছিলো ক্যাম্পাসের সব ধরনের অনিয়মের বিপক্ষে। আপাত দৃষ্টিতে বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন এনে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি, প্রগতি ও বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের আদর্শ ও কল্যাণকর ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা পূরণই ছিলো সে সব কিছুর প্রধান লক্ষ্য।

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে শুরু হওয়া ভিসি অপসারণ আন্দোলন ৩০ সেপ্টেম্বরে তৎকালীন ভিসির পদত্যাগের মাধ্যমে শেষ হয়। এবং আন্দোলন সফল হওয়াতে আনন্দ মিছিল ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। কঠোর শাষণ ও শৃঙ্খলা মুক্ত হয়ে ক্যাম্পাসে মুক্ত চিন্তা, বাক ও অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা, অবারিত জ্ঞান চর্চার স্বাধীনতা, নির্বিঘ্নে ছাত্র রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি, নানা বুদ্ধিভিত্তিক, সামাজিক, সাংকৃতিক ও জেলা সংগঠনের স্বাচ্ছন্দে নিজেদের কর্মযোগ্য পালনের উচ্ছ্বলতা প্রভৃতি কর্মযজ্ঞ ফিরে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস।

আপাতদৃষ্টিতে সফল আন্দোলন পরবর্তী কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ছিলো অত্যন্ত তিতে। স্বল্প পরিসরে উন্নয়নমূলক ও সংস্কারের কাজ ব্যতিত চরম প্রত্যাশা প্রাপ্তির ছাত্র-শিক্ষকের এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রাপ্তির বিষয়সমূহের অধিকাংশ আজও আলোর মুখ দেখতে পায়নি। শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ ও খতের স্থানটি তাই আজও দগদগে হয়ে রয়েছে। সেখান থেকে আবারও নতুন কোনো ক্ষতিকর ভাইরাস ছড়িয়ে পরার বিভিন্ন উপস্বর্গ দেখা দিচ্ছে ক্যাম্পাসের আঙ্গিনায় ও তার বাহিরে।

আন্দোলন পরবর্তী শিক্ষার্থীদের সবক্ষেত্রে আন্দোলনের দাবিকৃত বিষয়াবলির সমাধান বা অধিকার ফিরে পাবার আনন্দ তাঁদের মধ্যে কমই রয়েছে বলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী মনে করে। স্বরণ রাখতে হবে আন্দোলন সফল হওয়ার তৃপ্তি আর আন্দোলনের দাবী পুরণের স্বপ্ন এক নয়। সব স্তরের অধিকার বাস্তবায়নের সুখের হাসিই হতে পারে সত্যিকার আন্দোলনের স্বার্থকতা।

৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন জ্যেষ্ঠ প্রফেসর চলতি দায়িত্বে ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ পেলেও দায়িত্ব পালনে অনেক সীমাব্ধতা থাকাতে তিনি জটিল ও গুরুত্বপুর্ণ বিষয়াবলির সমাধানে আসতে অনেক ক্ষেত্রে কম সক্ষম হচ্ছেন। বিষয়টি অনেকটা ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দারের মতো অবস্থা। চলতি দায়িত্বে থাকা ভাইস-চ্যান্সেলরকেও স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, যদি সরকার তাঁকে উক্ত পদে যোগ্য মনে করেন।

সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল শিক্ষক হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে ক্যাম্পাসে। অথবা দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক যোগ্য প্রফেসর রয়েছেন, সেখান থেকে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের বিষয়টি দ্রুত সমাধানে না আসার ফলফল হতে পারে চরম বেমুরাং ও বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য আত্মঘাতী। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়বস্তুর সমাধান প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানটিতে সুষ্ঠভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।

১. অমিমাংসিত হয়ে পরে রয়েছে ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ইটিই বিভাগ থেকে ইইই বিভাগে রূপান্তরিত হবার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়। বেশ কিছু দিন আগের আন্দোলনের মুখে বিভাগের সব ধরণের ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে না বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। আমরণ অনশণ ও আন্দোলনের ৯১ তম দিনে ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীরা (তথ্য সুত্র: ১৫ জানুয়ারি, ২০২০, বশেমুরবিপ্রবিসাস)। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তের বেড়াজালে আটকে রয়েছে।

২. পূর্বের ভাইস-চ্যান্সেলরের বিভিন্ন সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত পার্ট টাইম স্টাফরা ৮ নভেম্বর ২০১৯ থেকে চলমান পার্ট টাইম কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। গত আগস্ট ২০১৯ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১০ মাস বেতন ছাড়া রয়েছে ১৭৬ জন স্টাফ। তাঁদের অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক ও দুর্দশাগ্রস্থ।

৩. ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে আন্দোলনে রয়েছে উক্ত বিভাগের ৪২৪ জন শিক্ষার্থী। ইউজিসি কর্তৃক নতুন ছাত্র উক্ত বিভাগে আর ভর্তি না করার নির্দেশ প্রদান করেন (৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০)। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

৪. শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি নেতিবাচক জবাবদিহিতার ঘটনা, শিক্ষক- ছাত্র সম্পর্কের চরম ভয়ংকর আস্থার অবনতি ও কখনো কখনো ক্লাস বর্জনের ঘটনা ছিলো, নিত্যদিনের ঘটনা করোনা ভাইরাসের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত। শিক্ষকদের তিন দিনের কর্ম বিরতি (তথ্যসুত্র: ২০/০১/২০২০, কালের কন্ঠ)

৫. আন্দোলন পরবর্তী প্রশাসনিক শিষ্টাচারের বাহির থেকে প্রশাসনিক অনেকগুলো পদের রদবদল।

৬. উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের আপগ্রেশন ও প্রমোশন না হওয়ার দিকটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। সেক্ষেত্রে শিক্ষকগণ হয়েছেন আর্থিক ও মর্যাদাগত দিক থেকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ।

৭. পাঠদানের শ্রেণি কক্ষ ও ল্যাব রুমের ভীষণ সংকট। শিক্ষার্থীদের শরীর ও মননশীল বিকাশের ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন অতিব জরুরী।

৮. অনেক বিভাগের শিক্ষক স্বল্পতা ও দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে শিক্ষক সংকট রয়েছে প্রকট, সেই সাথে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সংকট।

৯. অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থবিরতা যা সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যহত করছে।

১০. শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি বিষয়সমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে ছন্দপতন ঘটায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসকল বিষয় ছাড়াও অন্যন্য বিষয়গুলোর সঠিক সমাধান করা বর্তমানে জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পূর্বের ভিসির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যা বিভিন্ন সময়ে অনলাইন মিডিয়া ও সংবাদপত্রে উঠে এসেছে । বর্তমানে এসব অনেক বিষয় দুদকের তদন্তাধীনে রয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালের আন্দোলনের সময় ইউজিসি কতৃক দ্রুত পর্যবেক্ষণের সুপারিশে তৎকালীন ভিসির পদত্যাগের সুপারিশ করে। এর পরেই ভিসির পদত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে (৩০/০৯/২০২০, বিভিন্ন সংবাদ মিডিয়া)।

এতোকিছুর পরেও ২০১৯/২০ শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করে ভর্তি কার্যক্রমও শেষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুল কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন (১০ মার্চ, ২০২০)। প্রতিষ্ঠানটির অনেক দিকের অবস্থান ভঙ্গুর, নাজুক ও ভয়ঙ্কর দ্বান্দ্বিক! এসব সমস্যার সমাধানের একমাত্র উপায় বলে সকলেই মনে করে একজন যোগ্য এবং স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলরের নিয়োগ। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ দিন ধরে চলতি দায়িত্বে থাকা ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। এবং স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর না থাকাতে জটিল সব সমস্যার পাহাড় জমা হতে থাকে সেসব প্রতিষ্ঠানের। সেগুলোর সমাধান এসেছে স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের মাধ্যমে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং অব্যাহত রয়েছে তাদের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম। তার আগে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার অন্যতম কারণ। গোপালগঞ্জের পরে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অপসারণের আন্দোলনের যে ভাইরাস দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পরেছিল ঠিক তখনই প্রধান মন্ত্রীর সুচিন্তিত বক্তব্যের মাধ্যমে স্থিমিত হয় সেসব অপচেষ্টা।

তার সাথে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সতর্ক ও সজাগ হয়ে ওঠেন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরগণ। সামগ্রিক দিক পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ভাইস -চ্যান্সেলর ছাড়া সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা কষ্টকর ব্যাপার।

কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবার স্বল্প আয়ের শিক্ষার্থী ও স্টাফদের পাশে মানবতার হাত বারিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বশেমুরবিপ্রবি গোপালগঞ্জ ক্যাম্পাসও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এতো নেতিবাচকের পরেও কোভিড-১৯ তাঁদেরকে একত্রিত করে দেখিয়ে দিয়েছে প্রয়োজনে মানুষ ভালো কিছুর উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁরা গুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

১. শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গঠন করা হয় ‘কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি ফান্ড’ (৩১ মার্চ, ২০২০)। উক্ত ফান্ড থেকে চলমান রয়েছে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদান করা।

২. করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়তার নিদর্শন হিসেবে প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একদিনের সমপরিমান বেতনের অর্থ প্রদান।

৩. শিক্ষক সমিতি কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি ও মানবিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা প্রদান।

৪. ২০০ শিক্ষার্থীর পাশে দাড়াচ্ছেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকরা (৫ মে, ২০২০)। ৫. শিক্ষকদের হটলাইন সেবা চালু (৬ মে, ২০২০)।

৬. শিক্ষার্থীদের মেস ও বাসা ভাড়া মওকুফ করার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন (৭ মে, ২০২০)।

৭. ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সহায়তায় দরিদ্র ও অসহায় কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়ার চমৎকার উদ্দ্যোগ ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ (মে, ২০২০)।

৮. ১৭৬ জন পার্ট টাইম কর্মচারীদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন শেখ নাঈম (২১ এপ্রিল, ২০২০)।

৯. বশেমুরবিপ্রবি ও গোপালগঞ্জ জেলা রোভার কর্তৃক লিফলেট বিতরণ, জন সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও হাত ধোঁয়া সাবান বিতরণ কর্মসূচী পালন করা (৪ মার্চ, ২০২০)।

১০. গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সহায়তায় হ্যান্ড সেনিটাইজার তৈরি ও তা বিতরণ করে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা (২৩ মার্চ,২০২০) প্রভৃতি কর্মকান্ড ছিলো মহতি ও প্রশংসনীয় উদ্দ্যোগ এবং করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ ও অসহায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার লক্ষ্যে।

এতোসব ভালো উদ্দ্যোগের মাঝে ছাত্র কল্যাণ ফান্ড নামে একটি বড় অংকের ফান্ড রয়েছে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই ফান্ড থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারীর এমন দুর্যোগকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যবহারের জন্য জোর দাবী রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক ফান্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের কার্যকরী কর্মপন্থা ও সুনজর প্রয়োজন।

মনে রাখা প্রয়োজন, কিছুদিন আগে জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা মহামারী মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় কৃষিতে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রনোদনা, ৯ হাজার কোটি টাকার কৃষি উপকরণে ভুর্তুকী প্রদান এবং ৭২ হাজার কোটি টাকা ব্যবসা বাণিজ্যে বিশেষ প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন। দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণই হচ্ছে এসব পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

বঙ্গবন্ধুর পূণ্যভূমিতে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি সময় অতিবাহিত করছে নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে। ইউজিসি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর এসব বিষয়ে অবহিত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। দীর্ঘ দিনের অবহেলিত ভাটির এই অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার আশার আলোর প্রদ্বীপ। বিশ্ববিদ্যালয়টির এসব ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকাতে সংবাদ ও নিবন্ধও প্রকাশ হয়েছে। প্রায় বছর হতে গেলেও আজ অব্দি পর্যন্ত স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের প্রত্যাশায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরের পরিবার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিবে। প্রাণ চঞ্চল্য হয়ে ওঠবে দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষ ও আঙ্গিনা। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে এক দিনের জন্যও যেনো শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ না থাকে সে ব্যাপারে সকলকে যত্নবান হতে হবে। প্রাণ প্রিয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জটের দুর্ভাবনা থেকে চিন্তা মুক্ত রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে উদ্দ্যোগী হবার এখনই সময়। প্রকৃতিক নিয়মে বাধ্য হয়ে অনেক দিনের শিক্ষা বিরতির মধ্যে রয়েছে তারা।

সে সব সমস্যা থেকে শিক্ষক সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকা পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিকভাবে পরিচালানায় সহযোগিতা করে একটি সুন্দর দেশ বিনির্মান করতে। প্রধান মন্ত্রীর নিকট একটাই নিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের অমীয় সম্ভাবনার দিকটি সদয় বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ নামে ও প্রধান মন্ত্রীর নিজ জেলায় প্রতিষ্ঠিত সর্বোচ্চ জ্ঞান চর্চার এই বিদ্যাপিঠের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

অতি দ্রুত এ অবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরী। তা না হলে হাজার হাজার দরিদ্র শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন চরম ক্ষতির ও দুর্ভাবনার মধ্যে নিপতিত হবে। এমন অবস্থার মুখোমুখি হবার কারোরই কাম্য না। প্রত্যাশা থাকবে উচ্চ শিক্ষার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে সব বাঁধা পেরিয়ে জ্ঞান আহরণ, জ্ঞান বিতরণ ও দেশ গড়ার তীর্থ ভূমিতে পরিণত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র প্রাঙ্গণ।


লেখকঃ চেয়ারম্যান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এবং সম্পাদক, বাংলাদেশ স্কাউটস গোপালগঞ্জ জেলা রোভার।

১৭ই মে, ১৯৮১ বাংলাদেশের পুনর্জন্মের ভিত্তি

মোঃ মেজবাহুল ইসলাম


১৯৭৫ সালের ৩০শে জুলাই ছোটবোন শেখ রেহেনা, পুত্র জয়, কন্যা পুতুলকে নিয়ে জার্মানিতে স্বামী ড.এম.ওয়াজেদ মিয়ার কাছে যান বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা। কথা ছিল শেখ রেহেনা বোনের সাথে কিছুদিন থেকে দেশে ফিরে আসবেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সহ তাঁর পুরো পরিবারকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ১৫ই অগাস্ট, ১৯৭৫ – শেখ হাসিনা, তাঁর স্বামী ডক্টর ওয়াজেদ মিয়া আর বোন শেখ রেহানা সেদিন ব্রাসেলস-এ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের কাছে ছিলেন।

ব্রাসেলস থেকে ওঁদের প্যারিস যাওয়ার কথা। কিন্তু আগের দিন গাড়ির দরজায় ডক্টর ওয়াজেদের হাত চিপে গিয়েছিল।ওঁরা আলোচনা করছিলেন ওই অবস্থায় প্যারিস যাবেন কী-না।

১৫ই আগস্ট সকালে জার্মানির তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ন রশীদ চৌধুরী ব্রাসেলসের রাষ্ট্রদূত সানাউল হককে ফোন দিয়ে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর ক্যু সম্পর্কে জানান এবং তাকে শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা ও ওয়াজেদ মিয়াকে প্যারিসের বদলে জার্মানির বনে পাঠাতে বলেন।যে মুহূর্তে সানাউল হক শুনলেন যে সেনা বিদ্রোহে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন, তখনই তাঁর দুই কন্যা এবং জামাতাকে কোনও রকম সাহায্য করতে অস্বীকার করলেন। উপরন্তু নিজের ঘর থেকেও তাঁদের চলে যেতে বলেন।

তবে তাঁরা কোনও মতে জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর কাছে পৌঁছেছিলেন।তখনও বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয় বাংলাদেশ ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী উপায়ন্তর না দেখে বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একজন সাধারণ রাষ্ট্রদূত হিসেবে ১৯শে আগস্ট তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে কূটনীতিক প্রটোকল ভেঙে ফোন দিয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে রাজী হয়ে গিয়েছিলেন মিসেস গান্ধী। “২৪শে অগাস্ট এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারের বাকিরা দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নেমেছিলেন।সেখান থেকে তাদের অতি গোপনে একটি “সেফ হাউসে” নেয়া হয়।সেসময় ভারতে জরুরি অবস্থা চলছিল বলে তৎকালীন ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকান্ড সম্পর্কে তেমন খবর ছিলনা বলেই শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার পুরো ঘটনা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেননা।

৪ঠা সেপ্টেম্বর মিসেস গান্ধী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন এবং সেখানে উপস্থিত একজন অফিসার শেখ হাসিনাকে জানান তাঁর পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই।এটা শুনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন শেখ হাসিনা।

ইন্দিরা গান্ধী হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তোমার যা ক্ষতি হয়েছে, তা তো পূরণ করা যাবে না। তোমার তো এক ছেলে, এক মেয়ে আছে। আজ থেকে ছেলেকে নিজের বাবা আর মেয়েকে নিজের মা বলে মনে কোরো।”শেখ রেহানার সে বছরই দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনাবলীর জন্য তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে শান্তিনিকেতনে তাঁর ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে নিরাপত্তা-জনিত কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছিল।

২৪শে জুলাই, ১৯৭৬ – শেখ রেহানার বিয়ে হয় লন্ডন-প্রবাসী শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তাঁর স্বামী ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। ভারতের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রীত্ব হারালে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।এরমধ্যেই বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন।১৯৮০ সালে মিসেস গান্ধী পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় কেটে যায়।

এর মাঝেই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেত্রী বৃন্দ শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে তাঁকে দেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।কিন্তু স্বামী ওয়াজেদ মিয়া দেশের এই গোলযোগপূর্ণ অবস্থায় শেখ হাসিনার দেশে ফিরা ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন।এরমধ্যেই ৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে না জানিয়েই আস্থা ও ঐকের প্রতীক হিসেবে সভানেত্রী নির্বাচিত করেন।

১৯৮১ সালের ১৭ই মে ৩ই জৈষ্ঠ্য ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ শেখ হাসিনা ঘাতকের চেনা মুখ ও শ্বাপদের বুলেটের আঘাতের সমূহ আশংকা নিয়ে চোখের জলে ভেজা পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে মেয়ে পুতুল, আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ আর কোরবান আলীর সঙ্গে ঢাকা পৌঁছান। ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পুরো-পরিবারকে হত্যার ফলে বাংলার আকাশে যে কালো মেঘের সৃষ্টি হয়েছিল ও হত্যার দীর্ঘ ৬ বছর যে বিভীষিকাময় দিন কাটিয়েছিল বাংলার জনগণ তাঁরই সারমর্ম ছিল ৮১ এর ১৭ই মে এর প্রকৃতিতে।বঙ্গবন্ধু কন্যার আগমনে শুরু হয়ে গিয়েছিল স্বস্তির বৃষ্টি।

বঙ্গবন্ধুর কন্যার আগমনে বাংলাদেশ পুনঃ জন্মর ভিত্তি রচিত হয়েছিল। ৩৯ বছর আগের এই দিনে জননেত্রী শেখ হাসিনা ছয় বছর প্রবাস জীবন থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর তাঁকে এক নজর দেখার জন্য কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে অগণিত মানুষ বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টীমার ও ট্রেনযোগে দেশের দূরদূরান্ত থেকে ঢাকা এসে সমবেত হয়।

এদিকে সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল তথা গণতন্ত্রকামী লাখো জনতার কণ্ঠে গগনবিদারী শ্লোগান ওঠে, ‘ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আদর্শের মৃত্যু নেই, হত্যাকারীর রেহাই নেই, শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলানগর পর্যন্ত জনসমুদ্র। রাজধানীর সব পথ মিশে গিয়েছিল বিমানবন্দরে।

সবার লক্ষ্য ছিল বিমানবন্দর। শাসক মহলের কাছে তো ছিল কল্পনার অতীত। শাসক মহল ধারণা করতে পারেনি যে এভাবে মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে ছুটে আসবে। সত্যিকার অর্থে দেশবাসী তো চাইছিল অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি।

সমবেত প্রায় ১৫ লক্ষ জনতার সামনে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন-পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছেন। সব হারিয়ে নতুন করে হারাবার তাঁর আর কিছু নেই। এছাড়া তিনি আরও বলেন-আমি সাধারণ মেয়ে,নেতা নই।বঙ্গবন্ধুর আর্দশ প্রতিষ্ঠার সাধারণ একজন কর্মী।

বঙ্গবন্ধু যেমন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া আওয়ামী লীগ গঠনের জন্য গ্রামে গ্রামে গিয়েছিলেন ঠিক তেমনিভাবে যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা হিসেবে তিনিও আওয়ামী লীগ পুনঃগঠনের উদ্দেশ্যে সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। বার বার হত্যার উদ্দেশ্য হামলা হলেও তাঁর মনোবল থেকে তাঁকে একচুলও নড়াতে পারেনি কেউ।

তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি শুধু এখন দেশের সম্পদ নয়, সারা বিশ্বের সম্পদ।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু


লেখকঃ সহ-সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

করোনাকালের চোর চতুর্দশী

এমদাদুল হক সরকার


সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষের মধ্যে চুরির নেশা বিদ্যমান। সাহিত্যে চুরিকে প্লেজিয়ারিজম বা কুম্ভীলক বলে। ইংরেজ নাট্যকার বেন জনসন ১৬০১ সালে ‘প্লেজিয়ারিজম’ শব্দটিকে ইংরেজি সাহিত্যে পরিচয় করিয়ে দেন।

কারণ তারই এক বন্ধু ফ্লবে আত্র ‘ডিফল্টার’ নামে তাঁর এক নাটক ফরাসি ভাষায় হুবহু চুরি করে লিখেছিলেন।

আর বাংলা লোকসাহিত্যের ভান্ডার তো চোরের বুদ্ধিমত্তা ও চাতুর্যের নানা গল্পে পরিপূর্ণ। হাজার বছর পূর্বে রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদেও রয়েছে চোরের কথা।
আর প্রবীর মুখোপাধ্যায় তো সেই চৌর্যবৃত্তির গল্পগুলো নিয়ে বই সংকলন করে ফেললেন। উইলিয়াম কেরী, গিরিশচন্দ্র বসু, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, রেভারেন্ড লালবিহারী দে প্রমুখের লেখা চোরের গল্প নিয়ে প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের চমত্কার সংকলন সম্পাদনা ‘চোর চতুর্দশী’ ।

চোর চতুর্দশীর চোরেরা বুদ্ধিমান ও কৌশলী। তারা যেটুকু ক্ষতি করে তার পেছনে সামাজিক প্রশ্রয় আছে। উপেন্দ্রকিশোরের ঝানু চোর চানু তো রাজাকে বলে কয়ে বুদ্ধি করে ঠকিয়ে রাজকন্যা লাভ করল। চোর চতুর্দশীতে সংকলিত উইলিয়াম কেরির ইতিহাসমালায় রয়েছে এক চমকপ্রদ কাহিনি: চোর কীভাবে নিজের বুদ্ধির বলে রাজার শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার পর উল্টো রাজাকে মুগ্ধ করে সোজা তারই রাজসভায় তৎক্ষণাৎ মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেল।

চৌর্যবৃত্তির সেই ধারা বাংলায় আজো বজায় রয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী করোনায় অসহায়দের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করতে গিয়ে ২৫ জেলায় চাল চুরি হয়েছে ৩৪১ টন, মামলা হয়েছে ৯১টি এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৯ জনকে। সরকারি চাল আত্মসাতের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ১৯ জন চেয়ারম্যান, ৩১ জন সদস্য, একজন জেলা পরিষদ সদস্য এবং একজন পৌর কাউন্সিলরসহ মোট ৫২ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এমনকি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঈদ উপহারের আর্থিক সহায়তার তালিকায়ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯৯ ব্যক্তির নামের পাশে একজনের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাইয়ের বিরুদ্ধে।

বাগেরহাটের শরণখোলায় ৪০ জনের নামের সঙ্গে নিজের ফোন নম্বর জুড়ে দিয়েছেন এক ইউপি সদস্য। সরকার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহায়তার অর্থ পাঠায় বলে এ ধরনের কৌশল বেছে নিচ্ছেন অনেক অসাধু জনপ্রতিনিধি। তারা নিজের পরিবার, আত্মীয়, সমাজের বিত্তশালীদের ফোন নাম্বার দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে চেষ্টা করছে।

প্রশ্ন জাগে ত্রাণের নামে চাল, অর্থ চুরি করা ব্যক্তিরা জনপ্রতিনিধি হলেন কিভাবে? তারাও কি চোর চতুর্দশীর উইলিয়াম কেরির গল্পের চোরের ন্যায় নিজের বুদ্ধি বলে কিংবা আমলাদের সামাজিক প্রশ্রয়বলে কৃত চৌর্যবৃত্তিকে ঢেকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার মাধ্যমে তথাকথিত রাজকন্যা কিংবা মন্ত্রীত্ব লাভ করলেন?

বাংলার চোরের কৌশলি খপ্পর থেকে রেহাই পাননি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও। ১৯১৮ সালে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে তাঁর খুব প্রিয় একটি ফাউন্টেন পেন চুরি হয়ে যায়। ২০০৪ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরায়নের রবীন্দ্র জাদুঘর থেকে রহস্যজনকভাবে ‘নোবেল পদক’ সহ চুরি যায় কবির ব্যবহার্য অন্তত অর্ধশত মূল্যবান জিনিস। এ জন্যই হয়তো রবিঠাকুর বঙ্গমাতা কবিতায় প্রিয় মাতৃভূমির কাছে নালিশ করে গেছেন,

“সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।”

করোনা মহামারির মতো এমন পরিস্থিতিতেও চুরি প্রমাণ করে প্রাচীন চুরির সে ধারা বাঙ্গালী আজও বজায় রেখে চৌর্যবৃত্তিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। হয়তো প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের ন্যায় বাংলা সাহিত্যেও কোনো লেখকের জন্ম হবে যিনি করোনাকালে চাল, তেল আর অর্থ চুরির সেই গল্পগুলো সংকলন করে রচনা করবেন।

এতে ঝানু চোর চানু চরিত্রে থাকবেন হালের তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা। আর বাংলা সাহিত্যের পাঠকরা রসিকতার সঙ্গে সেই চোরদের গল্প পড়ে মজা পাবেন।


তথ্যসূত্র: প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের ‘চোর চতুর্দশী’, আন্দবাজার পত্রিকা, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলার আকাশে নক্ষত্রের পতন

আবু জাফর সালেহ


মাত্র সতেরো দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারাল তার পরম দুই রত্ন কে। জাতীয় অধ্যপক ড. জামিলুর রেজার পর বিদায় নিলো ড. আনিসুজ্জামান। স্বাধীনতা বাংলার সমস্ত বড় ভৌত কাঠামোর মধ্যে যেমন অমর রবেন জামিলুর রেজা স্যার তেমনি আনিসুজ্জামান স্যারও বাঙ্গালীর অভ্যান্তরীণ সাহিত্যআত্মায় বেঁচে রবেন চিরকাল।

জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। পিতা এ টি এম মোয়াজ্জেম ছিলেন একজন হোমিও চিকিৎসক। লেখালেখির হাত ছিল মা সৈয়দা খাতুনের পরবর্তী জীবনে আনিসুজ্জামানের উপর এর প্রভাব পরে।

স্ত্রী সিদ্দিকা জামান, মেয়ে রুচিতা জামান ও শুচিতা জামান এবং ছেলে আনন্দ জামান নিয়েই ছিল তার স্বর্গ।

“রাষ্ট্র ভাষা কি ও কেন” লিখলেন ভাষা আন্দোলনের সময়ে। করলেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান অংশগ্রহণ , ১৯৭১ সালে করলেন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনোত্তর বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের বক্তৃতা গুলো অনেকটি হাত হাতেই লিখা। চষে বেড়িয়েছেন কলকাতা থেকে শিকাগো পর্যন্ত নিজের জ্ঞানের ঝুড়ি সমৃদ্ধ করতে।

কলকাতার পার্ক সার্কাসে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ৪৭ দেশভাগের পর তিনি খুলনা জিলা স্কুলে ও ঢাকায় প্রিয়নাথ হাইস্কুলে পড়েন।১৯৫১ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতকে ও ১৯৫৭ সালে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পিএইচডি ডিগ্রি করেন ‘ইংরেজ আমলে বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা’ নিয়ে। ১৯৫৬ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্র জীবনের মত তার পেশাগত জীবনেও তিনি সাফল্য। মাত্র ২২ বছর বয়সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু। এরপর ১৯৬৯ জুনিয়র রিডার হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭১ সালে ভারতে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে শিক্ষা কমিশনের সদস্য পদে কাজ করেন। কমনওয়েলথ একাডেমি স্টাফ ফেলো হিসেবে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে গবেষণা করেন ৭৪ সালে।

১৯৮৫- ২০০৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করেন। এরপর সংখ্যাতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে স্বরূপের সন্ধানে, পুরোনো বাংলা গদ্য, মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, আঠারো শতকের বাংলা চিঠি, ইত্যাদি।

তিনি ১৯৮৫ সালে ‘একুশে পদক’, ২০১৫ সালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ এবং ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ পদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া তিনি দুবার আনন্দবাজার পত্রিকার ‘আনন্দ পুরস্কার’, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি-লিট’, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী’ পদক পান।

৮৩ বছরের বর্ণিল জীবনের ইতি টানে ১৪ মে বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

তিনি যেমন শহীদুল্লাহ্, মুনীরের মত শিক্ষাগুরু পেয়েছিলেন তেমনি রেখেও গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ শত যোগ্য শিক্ষার্থীদের। দেশ-বিদেশে তার এই গুণগ্রাহীরাই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনাও আমাদের মানুষ করতে পারেনি!

এমদাদুল হক সরকার


এক, করোনা মহামারির প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত যখন পর্যটকশূন্য তখনই দেখা মিললো বিরল গোলাপি ডলফিনের। সৈকতের কাছে সমুদ্রের নীল পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে বেড়াচ্ছে ডলফিনের দল, খেলছে মনের আনন্দে। দুটি দলে প্রায় ২৫ টির মত ডলফিন দেখা যায়। একটি দলে বড় আকারের একটি গোলাপি ডলফিনেরও দেখা মিলে।

গত কয়েক দশকেও এমন বিরল দৃশ্য দেখা যায়নি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। স্থানীয় একজনের ধারন করা ডলফিনের খেলা করা সেই ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জনমনে খুশির ঢেউ বয়ে যায়, কক্সবাজারের প্রকৃতি বুঝি আবার পুরোনো রূপে ফিরেছে।

দুই, করোনার কারণে পর্যটকশূন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে খেলা করা ডলফিনের পুরো দলটিকে হত্যা করা হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার সময় জেলেদের ফাঁদে আটকা পড়ায় ডলফিনগুলো হত্যা করা হয়। মৃত ডলফিনগুলো কক্সবাজারের সৈকতে ভেসে আসছে। প্রত্যেক ডলফিনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও জালের আঘাত রয়েছে। এমনকি জালে আটকানো মৃত ডলফিনও ভেসে আসছে। কতটা অমানবিক হলে এমন কাজ করা যায়!

তিন, গত মার্চে হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। সেই হালদাতে এবার ডলফিনের মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন ধরনের নৃশংসতা। গত ৯ মে সকালে রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নে হালদা সংলগ্ন এলাকায় একটি ডলফিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ডলফিনের চর্বি থেকে তৈরি তেল নারীদের রোগমুক্তি ঘটে— এমন কুসংস্কারের বশে এ ডলফিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

চার, নজিরবিহীন দাবানলে গত বছরের শেষের দিকে ছারখার হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল ও পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন বনের বিরাট একটি অংশ। সেখানকার বিলিয়ন বিলিয়ন প্রাণী মারা গেছে। প্রকৃতিবিদদের মতে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও গ্রীনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির কারনে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, বিলুপ্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণী, পাখি ও কীট-পতঙ্গ। একই সাথে পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটছে। ফলে দাবানলের মত প্রাকৃতিক দৃর্যোগ দেখা দিচ্ছে। যার জন্য মানবজাতি দায়ী। এভাবে প্রকৃতির প্রতি নিষ্ঠুরতা চলতে থাকলে মানবজাতির অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে হুশিয়ার করেছেন প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা। তবুও প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ, বন উজার থেমে নেই।

পাঁচ, এই মহামারিতে প্রকৃতি যখন আপন রূপে ফিরছে ঠিক তখনই জুম চাষের নামে রাঙামাটির দুর্গম সাজেক এলাকায় শত শত একর সংরক্ষিত পাহাড়ি বনাঞ্চল ও আশপাশের নানা প্রজাতির গাছপালা ও লতাগুল্ম আগুনে পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। ডেইলিস্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগুনের লাগামহীন লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ছে পাহাড় থেকে পাহাড়ে। আর ধ্বংস হচ্ছে শত শত একর সংরক্ষিত পাহাড়ি বনাঞ্চল। অনেক সময় আগুনের শিখা থেকে বাদ পড়ছে না বসত ঘরগুলোও। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। মনে হচ্ছে করোনাও যেন আমাদের মানুষ করতে পারেনি।

করোনা পরিস্থিতিতে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ, তখন প্রকৃতি ফিরেছে তার আপন রূপে। মানুষের অত্যাচারে কোণঠাসা পশু পাখি ও বিভিন্ন শ্রেনির বিরল প্রাণীরা এখন অবাধে বিচরণ করছে। আমাদের বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের জন্য এটা আশির্বাদ। বহু আন্দোলন করেও প্রকৃতিপ্রেমীরা যেটা করতে পারছেনা এই মহামারিতে আপনা আপনি সেটা সম্ভব হচ্ছে। এমন পরিস্থিতেও ডলফিন হত্যা, বৃক্ষনিধন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মত। যার যার অবস্থান থেকে প্রাণীদের প্রতি মানবিক হওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে প্রাণিকুলের ঋণ শোধ করার।

রাস্তায় মানুষ চলবে, গাড়ির চাকায় সভ্যতা এগিয়ে যাবে। প্রকৃতি নিজের মতন স্থান করে নেবে পৃথিবীর বুকে। প্রাণিকুল অরণ্যে, সমুদ্রে, পাহাড়ে নির্ভয়ে যার যার নিজের জায়গায় থাকবে। অর্থাৎ ‘বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’।

করোনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত, প্রকৃতির ওপর মানুষ নিষ্ঠুর আচরণ করলে প্রকৃতিও প্রতিশোধ পরায়ন হবে। কাজেই আমাদের অস্তিত্বের জন্য প্রকৃতির প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণির প্রতি আমাদের সদয় হতে হবে। আগামী ২২ই মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। এবারের জীববৈচিত্র্য দিবসের শ্লোগান হোক, “প্রকৃতি বাচলে বাচবে মানুষ রেখো একথা স্মরণ, জীবের প্রতি আর নয় নিষ্ঠুর আচরণ”।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল: amdadulh008@gmail.com

কভিড ১৯: প্রভুর নিকট ফিরে আসার সতর্কবাণী

মাহমুদুল হাসান


মানব সৃষ্টির আদিকাল থেকেই নানা সময়ে এই পৃথিবীর নানা অঞ্চলে নানা সময়ে নানান রকমের মহামারী এসেছিল।আর এই ধারাবাহিকতা ততোদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে যতোদিন এই পৃথিবী নামক গ্রহটিতে থাকবে মানুষের বসবাস।

বর্তমান সময়ে পৃথিবী বাসী করোনা নামক একটি অদৃশ্য ভাইরাসের ভয়ে থমকে গেছে। গৃহবন্দী আজ কোটি কোটি মানুষ। অনাহারে মরছে ছিন্নমূল মানুষেরা। পৃথিবীর এত বড় বড় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো আজ অদৃশ্য একটি ভাইরাসের সামনে অসহায়।

একজন মানুষকে অসুস্থ করতে ৭০ বিলিয়ন ভাইরাসের প্রয়োজন। ৭০ বিলিয়ন ভাইরাসের ওজন ০.০০০০০০৫ গ্রাম।বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। তাহলে বিশ্বের সমস্ত আক্রান্তদের দেহে সমস্ত ভাইরাসের মোট ওজন ২ গ্রাম। অর্থাৎ দুই ফোঁটা পানির সমান। এর পরেও কিসের এতো অহংকার!

আমরা অনেকেই জানিনা, কেন এই মহামারী আসে। কখনো জানতেও চাইনা। ভাবি, মহামারী এসেছে আবার একসময় চলেও যাবে। মহামারী আসার প্রকৃত কারণ যদি মানবজাতি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারতো তাহলে এই পৃথিবীতে এতো অশান্তি, মারামারি, গণহত্যা, ধর্ষণ, যেনা-ব্যভিচার থাকতোনা।

বিপদ/ মহামারী কে ঘৃণা করার কোন সুযোগ নেই। এটা কারো জন্য পৌষ মাস আবার কারো জন্য সর্বনাশ। অনেক সময় মহামারী এবং বিপদের কারণেই মানুষ তার পাপের রাজ্য থেকে প্রভূর ছায়াতলে ফিরে আসে।আবার যখন মানুষ পাপের দিক থেকে সীমালঙ্ঘন করে ফেলে তখন তাকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে এই মহামারীর আবির্ভাব হয়।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মাঝে মাঝে তার বান্দাদের ভয়, মুসিবত ও বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। সুতরাং এই সময়ে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার দ্বারা। আর তুমি ধৈর্য্য শীলদের সুসংবাদ দাও” ~ (সূরা বাকারা-১৫৫)।

হাদীস শরীফে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “যখন কোন সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যভিচার ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পরে তখন সেখানে মহামারী দেখা দেয়। ~(ইবনে মাজাহ)।

মহান আল্লাহ মানুষের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে দিয়েছে আল কোরআন। কোরআনের বিধান মেনে চলা প্রত্যেক মানুষের জন্য আবশ্যক। এর ব্যত্যয় ঘটলে আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় নেমে আসে শাস্তি যার ফল অনেক নিরপরাধ মানুষকেও ভোগ করতে হয়।

তাই আসুন, মহামারীর এই সময় টাতে সারাবিশ্বের সামনে ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরি। অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে ভালোবাসা দিয়ে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলতে পারি। বিপদের এই সময়টিতে আমরা সবাই দুঃস্থ ও দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াই এবং পাপের পথ থেকে প্রভুর দিকে ফিরে আসি।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সত্যজিৎ রায়ের ‘গণশত্রু’ ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

এমদাদুল হক সরকার


বিখ্যাত নরওয়েজিয়ান নাট্যকার হেনরিক ইবসেনের “ An Enemy of the People” এর ওপর ভিত্তি করে “সত্যজিৎ রায় নির্মিত ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া“গণশত্রু” চলচ্চিত্রের মূল গল্প একজন প্রগতিশীল ডাক্তারকে কেন্দ্র করে। ডাক্তার আশোক গুপ্ত তার এলাকার রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে অনুধাবন করেন যে অধিকাংশ রোগীই জন্ডিসে আক্রান্ত।

আর এরা বেশিরভাগই ডাক্তারের এলাকার মন্দিরের চরণামৃত পান করে রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ডাক্তার এই রিসার্চ নিয়ে পরবর্তী সময়ে একটি প্রতিবেদন পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন । চণ্ডীপুর মানে ডাক্তারের নিজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ বিশেষ করে ডাক্তারের ভাই ও অন্যান্য ব্যক্তিগণ যখন বিষয়টি জানতে পারেন তখন ডাক্তারকে নানাভাবে বাঁধা দেন যাতে এ বিষয়ে আর কোন পদক্ষেপ না নেন। তার কারণ মন্দিরের পবিত্র জলে রোগের জীবাণু আছে এটা জানলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ধর্ম বিভ্রম তৈরি হতে পারে।

কিন্তু ডাক্তার বিভিন্নভাবে রিসার্চ করে এবং পত্রিকার সম্পাদক হরিদাস বাগচীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে, ধর্মীয় বিভ্রম সৃষ্টিটা মুখ্য নয় বরং এই কাজে বাঁধা দেবার ব্যাপারে প্রত্যেকের ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত। অতঃপর ডাক্তার একটি সাধারণ সভার আয়োজন করেন। কিন্তু সে সভায়ও তার ছোট ভাই ধর্মীয় বিভ্রান্তি তুলে দিয়ে সভা পণ্ড করে দেন। তার কারণ ডাক্তার হিন্দু ধর্মীয় অনেক বিধি-বিধান মানেন না। এভাবে মৌলিক বিষয়টাই এক পর্যায়ে সবার কাছে চাপা থেকে যায়। প্রগতিশীল ডাক্তার পরিণত হন গণশত্রুতে। এই চলচ্চিত্রটি যেন বর্তমান করোনা পরিস্থিতির বাস্তব প্রতিফলন।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান নগর হতে সৃষ্ট নোবেল করোনা ভাইরাস এক এক করে সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে মানুষের দেহে প্রবেশ করে কেড়ে নিচ্ছে জীবনীশক্তি। তার সংক্রমণে সারা বিশ্ব আজ কাবু। রাজা-প্রজা, ধনী-গরিব, ধবল-কৃষ্ণ কেউ বাদ যায়নি । সবাইকে নাকানি চুবানি খাইয়েছে সে।

এমন পরিস্থিতিতেও সমাজের কতিপয় জনপ্রতিনিধি ডাক্তার অশোক গুপ্তের ভাই ও অন্যান্য গন্যমান্য ব্যক্তিদের ন্যায় দরিদ্র অসহায় মানুষকে সহযোগীতার পরিবর্তে ত্রাণ চুরিতে লিপ্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

“A pandemic of corruption: $40 masks, questionable contracts, rice-stealing bureaucrats mar coronavirus response”

শিরোনামে এই প্রতিবেদনের মধ্যে বাংলাদেশের চাল কেলেঙ্কারি পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে লক-ডাউনে ঘরে আটকা পড়া মানুষজনের জন্য খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলেও ৬ লাখ পাউন্ড বা ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার (২ লাখ ৭২ হাজার কেজি) চালের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় ৪০ জন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কয়েকজন আমলার বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে বাংলাদেশে করোনার মধ্যে ‘বিতর্কিত’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বাড়ছে৷ আর এই আইনটি এই সময়ে সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়দের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে৷ সম্প্রতি, সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, লেখকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) মামলা এবং মামলার পরপর তাদের ১১ জন গ্রেপ্তার, কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আটককৃতদের মুক্তি ও আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রকাশ করা এবং প্রশাসনের ব্যর্থতা তুলে ধরা মিডিয়ার সহজাত কর্তব্য ও দায়িত্ব। মহামারি এবং এর বিপর্যয়কর পরিণতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সরকার যখন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, তখন এটি আরও প্রয়োজনীয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দমনে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে, এই ভয়ে সম্পাদক পরিষদ শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছে। গণমাধ্যমের জন্য আমাদের সেই ভয় এখন দুঃস্বপ্নের মতো বাস্তবতা। সম্পাদকদের মতে ডিএসএ আইন সংবাদ মাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি প্রকাশ্য হুমকি।

অতএব বলা চলে এ আইনের মাধ্যমে সরকার গণশত্রু মুভির ন্যায় মানুষকে সত্য প্রকাশে ও সরকারের সমালোচনা বন্ধ করতে ব্যবহার করছে।

এদিকে করোনা মহামারিতেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে। সাহায্যের পরিবর্তে অসদ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চড়ামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করছেন।

সমাজের কল্যান করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভালো মানুষগুলো বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। নিজের ও পরিবারের জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিটাকেও আমরা ছাড় দেই না। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত এক চিকিৎসকের পরিবারের ১৭ সদস্যের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে হাসপাতালে স্থানান্তর করার দাবি জানিয়ে জনসাধারণের বিক্ষোভ করার ঘটনা ঘটেছে।

বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় বহু আগেই সমাজের অনিয়মগুলো তার চলচিত্রে চিত্রিত করেছেন। আসুন আমরা লকডাউনে সত্যজিৎ রায়ের চলচিত্র দেখি ও সমাজের অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াই এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল:amdadulh008@gmail.com

অফুরন্ত অবসর: শিক্ষার্থীদের করণীয়

মাহমুদুল হাসান


পুরো পৃথিবী আজ একটি ভয়াবহ দুর্যোগের সামনে দাঁড়িয়ে। মানবজাতি আজ মৃত্যুভয়ে যার যার ঘরে স্বেচ্ছায় বন্দী জীবনযাপন করছে।পুরোপৃথিবীর অর্থনীতির চাঁকায় আজ যেন মরচে ধরে গেছে।সকল অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো আজ ভুতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে।

অফুরন্ত এক অবসর যেন শেষ হবার কোন লক্ষণ নেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলা যায়ঃ- “সামনে যতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি চলে যায়,ছুটি ধূ ধূ করিতেছে; পরীক্ষা নাই, উমেদরি নাই, চাকরি নাই।”

এই অবকাশের মরুভূমির মধ্যে সবার হৃদয় আজ আতঙ্কগ্রস্ত। এই মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হওয়ার বিকল্প কিছুই নেই। আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।যতটুকু সম্ভব ঘরে বসে কাজ করতে হবে।এই অফুরন্ত অবসরকে নষ্ট না করে বরং সময়টাকে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হিসেবে তৈরি করতে হবে।বিশেষ করে যারা পিএসসি, জেএসসি/জেডিসি, এসএসসি/দাখিল, এইচএসসি/আলিম এবং এডমিশন টেস্ট দিবে তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই লিখাটি। অনেকেই হয়ত অবাক হচ্ছো, আবার অনেকে হয়ত বিরক্ত। তবে হ্যাঁ, কিভাবে এই সময়কে সবচাইতে মূল্যবান করে তোলা যায় তা নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

১. অনেক শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা আছো যারা নর্মালি একাডেমিক পড়াশোনার কারণে ধর্মীয় কাজগুলো নিয়মিত করতে পারোনা অথবা অথবা ধর্মীয় শিক্ষায় ও হয়তো বিঘ্ন ঘটে। সো, আমি পরামর্শ দিবো লকডাউনের এই সময়টাতে আমরা বেশি বেশি নামাজ, তাসবীহ তাহলীল, কোরআন তিলাওয়াত(অর্থ সহ) করবো। যারা কোরআন পড়তে পারোনা তারা এই সুযোগে শিখে নিতে পারো। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী যারা আছো তারাও নিজ নিজ ধর্ম পালনে সময় দিতে পারো।

২. একটা রুটিন তৈরি করে নাওঃ প্রতিদিন তুমি কি কি পড়বে সেটা আগের দিন রাতেই লিস্ট করে ফেলো। (যে বিষয়গুলোতে দুর্বল সেগুলোকে প্রায়োরিটি দিবে) এবং প্রতিটি সাবজেক্টকে সময় অনুযায়ী ভাগ করবে।

৩.অসমাপ্ত পড়ার লিস্ট তৈরি করোঃ একই সাথে আজকে কোন পড়াগুলো তুমি পড়তে পারোনি সেগুলোও প্রতিদিন লিস্ট করে নাও।এতে নিজের মধ্যে খারাপ লাগা জন্ম নেবেনা এবং না পড়তে পারা পড়ার হারও দিন দিন কমে যাবে।

“Let our advance worrying become our advance thinking and planning. ” ~Winston Churchill.

৪. পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করে রেখোঃ যখন তুমি পড়ছো তখন যদি একটু পর পর ফেইসবুক,ইমেইল কিংবা টেক্সট আসার শব্দ তোমার কানে বাজে তাহলে পড়ায় বিঘ্ন ঘটাবে তাই পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করে রেখো।

৫. ফেইসবুকের যথাযথ ব্যবহার করোঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেইসবুক আমাদের অনেক কাজে লাগে।কিন্তু এটাও চরম সত্য যে ফেইসবুকের কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। তাই প্রয়োজন ছাড়া ফেইসবুক থেকে দূরে থাকো।

৬. ভালো ভালো মুভি দেখোঃ অনেকেই হিন্দি সিরিয়াল দেখে সময় নষ্ট করছো।এগুলোতে শিক্ষণীয় কিছুই নেই।আবার অনেকে ফ্রি-ফায়ার,পাবজিতে ডুবে গেছো। এগুলো বাদ দিয়ে ইংরেজি, তুর্কি, ইরাণী বিখ্যাত মুভিগুলো ইংরেজি সাবটাইটেল সহকারে দেখতে পারো।এতে করে ইংরেজিতে কথা বলা শিখতে পারবে পাশাপাশি ভেতর থেকে প্রেশার ও রিলিজ হবে এবং অনেক কিছুই শিখতে পারবে।

৭. প্রেসার নিয়ে কাজ করবেনাঃ যদি একটানা ১২ ঘন্টা পড়াশোনা করে সব শেষ করার পরিকল্পনা করো তাহলে বলবো এটা পরিহার করো। আমার মতে পড়াটাকে ছোট ছোট সময়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নাও।ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পড়ো।এতে বিশ্রাম ও হবে এবং পড়ার প্রতি মনযোগ ও বাড়বে।

৮. লকডাউন পরবর্তী সময়ে খুব দ্রুতই একটার পর একটা পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। তাই এই সময়টাকে ভুলেও নষ্ট করোনা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এডমিশন কেন্দ্রিক পড়াশোনা করো।

৯.আর্টসের শিক্ষার্থীরা বাংলা,ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞানের উপর প্রিপারেশন নাও। মেডিকেলে যারা পরীক্ষা দিবে ভাবছো তারা মেডিকেলের পাশাপাশি বাংলা টাও পড়ে নাও এই সুযোগে। তাহলে মেডিকেলে যদি নাও হয় তবু্ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-ইউনিট তোমাদের জন্য খোলা রয়েছে। অন্যান্য গ্রুপের যারা আছো তারাও নিজেদের লক্ষ্য স্থির করে সে অনুযায়ী এডমিশনের প্রিপারেশন নাও।

১০.তোমাদের মধ্যে অনেকেই আছো যারা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অথবা কারো অনেক সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। কেউ ভালো ছবি আঁকতে পারো, কেউ বা ক্রাফটিং করতে পছন্দ করো সর্বোপরি যে যে বিষয়ে পারদর্শী বা পারদর্শীতা অর্জন করতে চাও তাদের জন্য কিন্তু এই সময়টা বেস্ট সময় নিজেকে কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

তোমরা চাইলেই এই সময়টাকে অর্থবহ করে তুলতে পারো।ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরী করতে পারো। মনে রাখবেঃ- “সময়=জীবন।তাই সময় নষ্ট মানে জীবনের অংশ নষ্ট করা।সময়কে কাজে লাগাও।জীবনও অর্থপূর্ণ হবে।”–এ্যালান লাকেইন।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষক বহিষ্কার ও বিসিএস শিক্ষা সমিতির উদাসীনতা

প্রফেসর ড. শেখ মকছেদুর রহমান


করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত হয়ে ডাক্তারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেসবুকে লেখার জন্য সরকারি কলেজের দু’জন শিক্ষক ময়মনসিংহের জনাব কাজী জাকিয়া ফেরদৌসী ও বরিশালের জনাব সাহাদাত উল্লাহ কায়সার’ কে বরখাস্তের ঘটনায় আমরা মর্মাহত।

শিক্ষা প্রশাসন কতৃক বরখাস্তের এ অন্যায় আদেশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষা-উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম বিবৃতি দিয়ে এ অন্যায় আদেশ প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছে, এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ফোরামকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, সরকারি কলেজ শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও যৌক্তিক দাবী আদায়ের সংগঠন ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’ নির্বিকার কেন? সমিতি কি কোন প্রতিবাদ করবে না? বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ ক্যাডাদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি কি এ অন্যায় আদেশ মেনে নিবে?

যদি এ আদেশ প্রত্যাহারের জন্য সমিতি থেকে উদ্যোগ না নেয়া হয় তবে সমিতি থাকার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সবাইকে যদি আমলাদের ভয়ে গা বাচিয়ে চলতে হয়, উচিৎ কথা বলতে ভয় লাগে তবে সংগঠনের দরকার কী? দু-একজন এ অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছে, আমার দৃষ্টিতে এটা মোটেই পর্যাপ্ত নয়, সবাইকে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে।

যতদূর জানি শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাচ ভিত্তিক ফোরাম আছে কিন্তু কোন ফোরাম থেকেও কোন টু শব্দ নেই। ফোরাম কি শুধু নেতা সেজে ঢাকায় থাকার ধান্দায়? নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য?

মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়কে বলছি, শুনেছি আপনার পদটি সচিবের পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। আপনার সাথে এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রনালয় কতৃপক্ষের কি কোন আলোচনা হয়েছে? আপনি নিশ্চয় কলেজ শিক্ষক, তাই কলেজ শিক্ষকদের স্বার্থ দেখা উচিৎ। আপনাকে মেরুদন্ড শক্ত করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, বিসিএস ক্যাডার অফিসারদের শাস্তি দিতে হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগে। নজিরবিহীন দ্রুততার সাথে শাস্তির আদেশ জারির পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার।


লেখক: প্রফেসর ড. শেখ মকছেদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ,

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।